আইয়ুব খানের রাজনৈতিক নিপীড়নের বর্ণনা দাও,আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনসমূহ আলোচনা কর, আইয়ুব খানের অবসান ও ইয়াহিয়ার শাসনকাল বিশ্লেষণ কর

প্রশ্ন সমাধান: আইয়ুব খানের রাজনৈতিক নিপীড়নের বর্ণনা দাও,আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনসমূহ আলোচনা কর, আইয়ুব খানের অবসান ও ইয়াহিয়ার শাসনকাল বিশ্লেষণ কর

আইয়ুব খানের রাজনৈতিক নিপীড়নের বর্ণনা দাও

 ভূমিকা : আইয়ুব খান ছিলেন স্বৈরাচারী শাসক। সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সামরিক শাসক হওয়ায় পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়। আইয়ুব খানের কোনো জনসম্পৃক্ততা ছিল না। আইয়ুব খান তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত দীর্ঘস্থায়ী করতে রাজনৈতিক দমন পীড়ন
শুরু করেন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বহু রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড সভা সমাবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।


আইয়ুব খানের রাজনৈতিক নিপীড়ন : আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের পর ছাত্র ও রাজনীতিবিদদের নির্যাতন ও নিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যায়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আইয়ুব খান সামরিক শাসনের অধীনে একটানা ৪৪ মাস দেশে স্টিমরোলার চালায়। নিচে আইয়ুব খানের রাজনৈতিক নিপীড়ন বর্ণনা করা হলো :


১. এবডো (EBDO) : জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যতে যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনরূপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে তার প্রয়াস চালান আইয়ুব খান। এজন্য তিনি বিভিন্ন কালাকানুন প্রবর্তন করেন। আইয়ুব খান তার ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে ১৯৫৯ সালের ৭ আগস্ট এবডো (Elective Bodies Disqualification Order) নির্বাচিত সংস্থাসমূহের অযোগ্যতার আদেশ। এ আদেশ বলে যে কোনো নির্বাচনি সংস্থার প্রতিনিধিকে অসদাচরণের জন্য সাজা দেয়া যেত। রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপ, অসদুপায় অবলম্বন, দুর্নীতি প্রভৃতি অসদাচরণের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়। মূলত আইয়ুব খান রাজনৈতিক দমন ও নিপীড়নের জন্য এ আইন পাস করেন। এ আইন জারি করে আতাউর রহমান খান, আবু হোসেন সরকারসহ পাকিস্তানের উভয় অংশের মোট ৮৭ জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়।
২. পড়ো (PODO) : সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বিচারের জন্য PODO (Public Office Disqualification Order) জারি করা হয়। স্বজনপ্রীতি, প্রিয়তোষণ ও ইচ্ছাকৃত কুশাসনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। রাজনৈতিক দমন, বিরোধী শক্তি এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়।
৩. প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশ সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণ : আইয়ুব খান সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড শক্তহাতে দমনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি সরকার বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অধ্যাদেশ সংশোধন করেন। বিশেষ অবস্থায় সংবাদপত্র ও অন্যান্য প্রকাশনা বন্ধ অথবা বাজেয়াপ্ত করা যাবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়।
৪. ভোটাধিকার হরণ : আইয়ুব খান মনে প্রাণে গণতন্ত্র বিশ্বাসী ছিলেন না। ১৯৬২ সালে সংবিধান কার্যকর করে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভোটাধিকার হরণ করেন। সৃষ্টি হয় ১৫৬ সদস্যবিশিষ্ট ক্ষুদ্রাকৃতির জাতীয় কাউন্সিল। যা উভয় প্রদেশের মধ্যে সমানভাবে বিভক্ত ছিল। এ খর্বাকৃতির আইনসভাটি সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতো না। ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচক মণ্ডলী কর্তৃক তারা নির্বাচিত হতো। মৌলিক গণতন্ত্রীরা আইয়ুব খানের সৃষ্টি এবং তারা আইয়ুব খানের প্রতি অনুগত ছিল।
৫. ‘৬২ এর ছাত্র আন্দোলন ও দমনপীড়ন : আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। মৌলিক অধিকার স্থগিত, সভা সমাবেশ ও সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন ছাত্র সমাজ, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিবিদগণ রাজনৈতিক আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় রূপান্তরিত করে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে আইয়ুব বিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা চালায়।
৬. রাজনৈতিক দলবিধি জারি : আইয়ুব খান রাজনৈতিক দল বিধি জারি করে রাজনীতিবিদদের তাদের ইচ্ছামতো কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া থেকে বঞ্চিত।
৭. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতার : ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার হঠাৎ করেই করাচিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। এ সময় ছাত্রসমাজকে চরম নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৬ ফেব্রুয়ারি আবুল মনসুর আহমদ, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রনেশ দাসগুপ্ত, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রমুখকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
৮. ছাত্র আন্দোলন দমন : “শরীফ শিক্ষা কমিশন’ শিক্ষা ব্যবস্থায় সংকোচনের চেষ্টা করলে ‘৬২ সালে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কমিশনের গণবিরোধী সুপারিশে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র সমাজ শিক্ষা দিবস পালন করে। এদিন ছাত্রসমাজের উপর নেমে আসে দমননীতির স্টিমরোলার। কার্জন হল এবং জগন্নাথ কলেজের ছাত্রদের মিছিলে সশস্ত্র বাহিনী গুলি চালায়।
৯. মুসলিম লীগের ভাঙন : আইয়ুব খান সর্বদা রাজনীতি ও গণতন্ত্র বিরোধী ছিলেন। ১৯৬৩ সালের মে মাসে তার নিজের নির্বাচন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে তিনি মুসলিম লীগকে বিভক্ত করার ব্যবস্থা করেন এবং এর এক অংশের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে মুসলিম লীগের ভাঙন নিশ্চিত হয়।
১০. ছয় দফা দমন : আইয়ুব খান পূর্ব বাংলার উপর বেশি দমন পিড়ন ও বৈষম্য সৃষ্টি করে। এর বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয়দফা উত্থাপন করেন। ছয়দফা ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবী। ফলে পূর্ব বাংলার সর্বত্রই ছয়দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে এবং আইয়ুব খান এ আন্দোলন দমন করতে এ গণদাবীকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে অভিহিত করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের গুলিতে নারায়ণগঞ্জে ১০ জন নিহত হয়।
১১. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা : শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা দাবি ছিল বাঙালির বাঁচার দাবি। এ দাবির সমর্থনে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়। এতে আইয়ুব বিরোধী তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়। ছয় দফা আন্দোলনে আইয়ুব খান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরে এবং ১৯৬৮ সালে ৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে আগরতলা মামলা দায়ের করেন। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আইয়ুব খান পূর্ব বাংলার জনগণের ন্যায্য দাবি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দমন ও নিপীড়ন চালায়। দমন, নিপীড়ন ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য ১৯৬৯ সালে ছাত্র সমাজ তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা দাবির প্রতি সর্বস্তরের জনতা আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁড়িয়ে পড়ে। অবশেষে
১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব খান রাজনীতির মঞ্চ থেকে বিদায় নেয়। সমাপ্ত হয় আইয়ুব খানের দমন ও নিপীড়ন।


আরো ও সাজেশন:-

আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনসমূহ আলোচনা কর 

ভূমিকা : পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ১৯৫৮ সালে ইস্কান্দার মির্জা সামরিক শাসন জারি করেন। ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল আইয়ুব খানকে সর্বাধিনায়ক করেন। সুযোগ বুঝে আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জার হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। শুরু করে লৌহ মানবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। তাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ধৈর্য হারিয়ে অবশেষে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়।


আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট : জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করার মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোতে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বিলোপসাধন করেন। তার সামরিক শাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল কেন্দ্রীকরণ। তিনি নিজের হাতে সকল নির্বাহী ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখেন। এমনকি প্রাদেশিক সরকারের উপরও তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশে সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। দুর্নীতি দমনের নামে দেশে অনেক জনপ্রিয় ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতার উপর উৎপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ প্রবর্তনের মাধ্যমে আইয়ুব খান নিজস্ব অনুগত বাহিনী গঠন করেন যা দেশের কোন কল্যাণসাধন করতে সক্ষম হয়নি।

তার ভূমিসংস্কার কাগজে-কলমেই থেকে যায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তাছাড়া আইয়ুব খান কর্তৃক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আকস্মিক গ্রেফতার, গণবিরোধী শরীফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ইত্যাদি। আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ছাত্র ও রাজনীতিকদের উৎসাহ যোগায়। আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলন মূলত ছাত্রনেতৃবৃন্দ দ্বারা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে সাহায্য করে।


আইয়ুববিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা : লৌহমানব নামে খ্যাত আইয়ুব খান তার শাসনামলেও স্থায়ী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৬১ সালের শেষের দিকে মুজিব ও মানিক মিয়া এবং মণিসিংহ ও খোকা রায়ের মধ্যে বৈঠকের পরপরই ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপিত হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, আইয়ুব খান কর্তৃক শাসনতন্ত্র ঘোষণার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করবে এবং তারপর ক্রমে ক্রমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ বৈঠকে আরো সিদ্ধান্ত হয় যে, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে কাজ করবে।
নিচে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের ধারা আলোচনা করা হলো :


১. সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতারের প্রতিবাদ : ১৯৬১ সালের শেষের দিকে মুজিব ও মানিক মিয়া এবং মণিসিংহ ও খোকা রায়ের মধ্যে বৈঠকের পরপরই ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয় এর প্রতিবাদে ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ধর্মঘট ১ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ৬ ফেব্রুয়ারি (ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পৃষ্ঠা- ৩০৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রমুখ রাজনীতিবিদগণ এবং অনেক ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার সরকার করে। ফলে আইয়ুব শাসনবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠে।


২. সংবিধানবিরোধী আন্দোলন : সামরিক আইন চলাকালীন সময়েই ছাত্ররা আইয়ুব খান প্রণীত সংবিধানবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। কেননা, উক্ত সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানিদের দাবিদাওয়া চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়। নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়, ভোটাধিকার সংরক্ষিত মৌলিক গণতন্ত্রী নামে একটি শ্রেণি সৃষ্টি করা হয় যারা শাসকগোষ্ঠীর তল্পীবাহক হিসেবে কাজ করবে। উক্ত সংবিধান ঘোষিত হওয়া মাত্র পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং ক্লাস বন্ধ করে। সরকার এ সময় প্রচণ্ড আকারে ছাত্র দমন শুরু করে। বহুসংখ্যক ছাত্রনেতাকে এ সময় গ্রেফতার করা হয়। নতুন সংবিধানের আওতায় যে নির্বাচন ঘোষিত হয়েছিল ছাত্ররা তা বয়কট করে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের নির্বাচন বয়কটের আহ্বানে সাড়া না দিলেও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা হামিদুল হক চৌধুরী, নুরুল আমিন, আতাউর রহমান খান, সৈয়দ আজিজুল হক, মোহামেনউদ্দিন আহমদ গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেন। সে দাবিতেও
সামরিক কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। অবশেষে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হলে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের মুক্তি দেয়া হয়।


৩. ১৯৬২ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন : ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে ছাত্ররা আরেকটি আন্দোলন সংঘটিত করেছিল তা ইতিহাসে ‘বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন’ নামে অভিহিত। আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের নামে যে চমক দেখান, শিক্ষা সংস্কারের চেষ্টা তার মধ্যে একটি। ১৯৫৯ সালের ৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান শিক্ষা সচিব ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এম, এম শরীফকে সভাপতি করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করেন। এটি শরীফ শিক্ষা কমিশন নামে খ্যাত। ১৯৬২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শরীফ কমিশন রিপোর্ট প্রকাশ পায় এবং সরকার এর সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শরীফ কমিশন রিপোর্টকে ছাত্রসমাজ গণবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল, শিক্ষা সংকোচন, শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে গণ্য, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা ব্যাপক প্রচারণা, সভা সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট চালিয়ে যেতে থাকে। দ্রুত এ আন্দোলন সমগ্র প্রদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং আইয়ুব সরকারের ভিত নড়ে উঠে। এ কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ঢাকা কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা “ডিগ্রি স্টুডেন্টস ফোরাম” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এ ফোরামের ব্যানারে ছাত্রনেতৃবৃন্দ ঢাকা শহরের অন্যান্য কলেজেও প্রতিবাদ সভা করে এবং শীঘ্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতৃবৃন্দ এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।


৪. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ : ১৯৬৪ সালের ৭ জানুয়ারি সরকারের ইঙ্গিতে অবাঙালি মুসলমানেরা ঢাকা শহরে এবং আশপাশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু করে। ১০ জানুয়ারি এ দাঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং তা বাঙালি অবাঙালির দাঙ্গায় পরিণত হয়। এ দাঙ্গায় হিন্দুদের রক্ষা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নজরুল ফোরামের সভাপতি কবি আমির হোসেন চৌধুরী এবং ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় নটরডেম কলেজের অধ্যাপক ফাদার নোভাক নিহত হন। ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নেতৃত্বে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয় এবং কমিটির উদ্যোগে ১৭ জানুয়ারি ইত্তেফাক, সংবাদ ও দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে একটি আবেদনপত্র প্রকাশ করা হয়। এতে ঢাকার সচেতন ছাত্রসমাজ দাঙ্গার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। বিশেষ করে ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেরা দাঙ্গা প্রতিরোধ এবং দাঙ্গায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের কাজে আত্মনিয়োগ করে।


৫. নয় নেতার বিবৃতি : জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক একটানা ৪৪ মাস সামরিক আইনের দ্বারা দেশ শাসনের পর ১৯৬২ সালের ১ মার্চ তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে উপর থেকে নিয়ন্ত্রিত পরোক্ষ নির্বাচন। এক ব্যক্তি এক ভোট এবং কেন্দ্রীভূত নতুন শাসন জারি করে।
এ সংবিধানের অধীনে দলবিহীনভাবে মৌলিক গণতন্ত্রীদের দিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন করিয়ে নেয়া, ১৯৫৯ সালে সামরিক আদেশ বলে জারিকৃত EBDO—’Elective Bodies Disqualification Order’ আইনে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করে। এমতাবস্থায় ১৯৬২ সালের ৪ জুন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন দলের নয় জন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা একটি যুক্ত বিবৃতি দেন এটি নয় নেতার বিবৃতি নামে খ্যাত। এতে যারা স্বাক্ষর করেন তারা হলেন : নূরুল আমিন (মুসলিম লীগ) হামিদুল হক, আবু হোসেন সরকার, ইউসুফ আলী চৌধুরী ওরফে মোহন মিয়া, সৈয়দ আজিজুল হক ওরফে নান্না মিয়া (৪ জন কৃষক-শ্রমিক পার্টি), আতাউর রহমান ও শেখ মুজিবুর রহমান (আওয়ামী লীগ), মাহমুদ আলী (ন্যাপ), পীর মোহসেন উদ্দিন আহমেদ ওরফে দুদু মিয়া (নিজাম-ই-ইসলাম)। নয় নেতার বিবৃতি ছিল মূলত আইয়ুব খান প্রবর্তিত ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রের প্রত্যাখ্যান।


৬. ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট : National Democratic Front মূলত কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। এটি ছিল আইয়ুব বিরোধী একটি রাজনৈতিক মোর্চ বা প্লাটফর্ম। এর লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের জন্য একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র লাভ। NDF এর গঠন ছিল সময়ের দাবি। আইয়ুব দীর্ঘ সামরিক শাসন আমলে রাজনৈতিক দলের তৎপরতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। ১৯৬২ সালের ১ মার্চ রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান একটি শাসনতন্ত্র জারি করলেও সামরিক শাসন প্রত্যাহার হয় আরো পরে। অবশেষে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করা হলেও রাজনৈতিক দলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তখনও অব্যাহত থাকে। ১৯৬২ সালের ১৫ জুলাই রাজনৈতিক দল বিধির আওতায় কতিপয় শর্তসাপেক্ষে রাজনৈতিক দল গঠন বা পুনরুজ্জীবনের অনুমতি প্রদান করা হয়। এরপর ১৯৬২ সালের ৪ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের আইয়ুব সরকারবিরোধী সদস্যের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নামে একটি গ্রুপ গঠিত হয়।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃপক্ষে আইয়ুব সরকার আমলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় কোন দল এককভাবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। মূলত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনই আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

আইয়ুব শাসনের পতনের কারণ ও ইয়াহিয়ার শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর,

ভূমিকা : আইয়ুব খান ১৯৫৮ সাল হতে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১১ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার শাসন আমলে দমনপীড়নের ফলে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। অবশেষে আইয়ুব খানের পতন হয় তখন শাসন ক্ষমতায় ইয়াহিয়া খান আসীন হন। ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। এ সময় ইয়াহিয়ার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
আইয়ুব খান হতে ইয়াহিয়া খানের প্রত্যাবর্তন : ১৯৫৮ সালের ইস্কান্দার মির্জা সামরিক সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। এ সময় সর্বাধিনায়ক হিসেবে আইয়ুব খানকে পদচ্যুত করার চেষ্টা করলে আইয়ুব খান ক্ষমতা
দখল করে সামরিক শাসন জারি করেন। আইয়ুব শাসনামলে’ মৌলিক গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, দমন নিপীড়ন, রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব প্রভৃতি ছিল পূর্ণ। অতঃপর মুজিবের ছয় দফা দাবি উত্থাপন হলে আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে ভারতের দোসর আখ্যায়িত করেন এবং আগরতলা মামলা দায়ের করেন। এতে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয় ও এক পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আগরতলা মামলা বাতিল ও আইয়ুব খানের পদত্যাগের দাবিতে ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ ও মওলানা ভাসানী ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। DAC গঠন করা হয় এবং আন্দোলনে বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়। ১৪৪ ধারা ছাত্রজনতা ভেঙে ফেলে এবং ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আসাদুজ্জামান নিহত হন। এ পর্যায়ে আইয়ুব শাসন-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত রূপ নেয়। ফলে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে আইয়ুব খান বাধ্য হন এবং ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন এবং ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।
আইয়ুব খানের পতনের কারণ : আইয়ুব খান ছয় দফা প্রত্যাহার করে মামলা হামলার আশ্রয় নেন। আইয়ুব খান মামলার মাধ্যমে দমননীতির আশ্রয় নেন। কিন্তু ছাত্রজনতার গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয় ফলে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হন। এর পিছনে কতিপয় কারণ বিদ্যমান ছিল নিচে তা
আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক অধিকার খর্ব : ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করার মধ্য দিয়ে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেন। এতে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে গণআন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের বিরোধিতা করে ফলে আইয়ুব সরকারের পতন হয়।
২. ছয় দফার ভূমিকা : আইয়ুব সরকার পতনের জন্য শেখ মুজিবের ছয় দফার ভূমিকা ছিল প্রধান। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বায়ত্তশাসন চায় ও পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলনের রূপ ধারণ করে তাতে আইয়ুব সরকার দমন নির্যাতন চালায় এতে গণআন্দোলন আরো তীব্র হয় ফলে আইয়ুব সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
৩. পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য : আইয়ুব শাসন আমলে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য বিরাজমান ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতো। পূর্ব পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হতো পশ্চিম পাকিস্তানে, ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইয়ুব সরকারের বিরোধিতা করে।
৪. ছাত্র আন্দোলন : ছাত্র আন্দোলন আইয়ুব সরকার পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। শরিফ শিক্ষা কমিশন অনুযায়ী শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে গণ্য, ব্যয়বহুল, বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা ব্যাপক প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট, চালিয়ে যেতে থাকে। দ্রুত এ আন্দোলন সমগ্র
প্রদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বস্তরের ছাত্ররা এত অংশগ্রহণ করে। এতে আইয়ুব সরকারের পতনের ভিত্তিস্থাপন হয়।
৫. সাংস্কৃতিক আগ্রাসন : আইয়ুব খান শরীফ কমিশনের মাধ্যমে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ও চাকরি ক্ষেত্রে ইংরেজির সাথে উর্দু ভাষাকে প্রাধান্য দেয়। এছাড়া এ আদেশ বলে “নববর্ষ” পালন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।
. পাক-ভারত যুদ্ধ : ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব-বাংলা অরক্ষিত বা নিরাপত্তাহীনতায় ছিল। এ সময় পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে এ সম্বন্ধে ভাবিয়ে তোলে। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বুঝতে পারে আইয়ুব সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বা চায় না। তাই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ত্বরান্বিত করে।
৭. প্রচারমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ : ১৯৬৬ সালে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল প্রচারিত বাংলা পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক বন্ধ ও মুদ্রণযন্ত্র বাজেয়াপ্ত করে। এতে আইয়ূব সরকারের মুখোশ খুলে যায়, যা তার পতনের অন্যতম কারণ ছিল ।
৮. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব : আইয়ুব সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে। ফলে মানুষ দ্বিধাবিভক্ত জীবনযাপন করে। অন্যায়, নির্যাতন, দমনপীড়ন বৃদ্ধি পায়। এতে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

  1. National Democratic Front (NDF) গঠন : আইয়ুব সরকার সকল প্রকার রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ১৯৬২ সালে আইয়ুববিরোধী সদস্যরা পূর্ব পাকিস্তানে এডভোকেট আফসার উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে National Democratic Front গঠন করে আইয়ুব সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে।
    ১০. ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান : ১৯৬৯ সালে ডাকসুর সহসভাপতি তোফায়েল আহমেদ ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন বিস্ফোরণ আকার ধারণ করে। আইয়ুব খানের ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্রজনতা আন্দোলনের মুখে অবশেষে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইয়ুব সরকারের পতন হয়।
    ইয়াহিয়া শাসনের বৈশিষ্ট্য : ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আইয়ুব খানের পতন হলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে। তার শাসন আমলের তপয় বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত নিচে তা আলোচনা করা হলো :
    ১. রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসীন : আইয়ুব সরকার ব্যর্থ হলে তিনি সামরিক শাসন জারি করতে চাইলে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি ২৪ মার্চ একপত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বভার গ্রহণে আমন্ত্রণ জানান। ইয়াহিয়া খান এভাবে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হন।
    ২. জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল : ইয়াহিয়া খানের ১৯৬২ সালের সংবিধান, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ বাতিল ঘোষণা করেন । এটা ইয়াহিয়া খানের শাসন আমলের প্রধান ও প্রথম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা বলে গ্রহণযোগ্যতা পায় ।
    ৩. নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি প্রদান : ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, শীঘ্রই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এ লক্ষ্যে তিনি নির্বাচনি কার্যক্রম চালু করেন ও ১৯৭০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
    ৪. রাজনৈতিক কার্যক্রম চালু : ইয়াহিয়া খান নির্বাচন কার্যক্রম চালু করার পূর্বে ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি হতে রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধ তুলে নেন, এতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে আর বেগ পেতে হয় না। এতে গণতন্ত্র প্রক্রিয়া সুসংহত হয়।
  2. (LFO) Legal Framework order গঠন : ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে Legal framework order জারি করেন। আইনগত কাঠামো আদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল নিম্নরূপ :
    ক. সাধারণ নির্বাচন সংক্রান্ত বিধান :
    ১. সর্বজনীন ভোটাধিকার;
    ২. “এক ব্যক্তি” এক ভোট নীতি-
    ৩. প্রত্যেক প্রদেশ বা অঙ্গরাষ্ট্রের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংখ্যা বণ্টন।
    ৪. প্রদেশগুলো পুনরুজ্জীবিতকরণ : ইয়াহিয়া খান নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রদেশগুলোর পুনরুজ্জীবিত করেন। যা আইয়ুব সরকার বাতিল করেছিল। প্রদেশে জনসংখ্যার ভিত্তি তিনি আসন বণ্টন করেন। যেমন- পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯, পাঞ্জাবে ৮৫, সিন্ধু ২৮ ইত্যাদি।
    ৫. দুর্যোগ উপেক্ষা : ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর ইয়াহিয়া খানের শাসনামলে সমুদ্র উপকূলে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে ৫,০০,০০০ লোক মারা যায়। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এলাকায় মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকা। বাঙালির রাজনৈতিক নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দুর্গতদের পাশে এলেভ ইয়াহিয়া খান এ দুর্যোগকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment