অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায়ে ওঁরাওয়ের

Google Adsense Ads

ওঁরাও বাংলাদেশের একটি নৃগোষ্ঠী। এদের বাসস্থান বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, এরা অস্ট্রিক ও ভাষাতাত্ত্বিক সূত্রে দ্রাবিড়। এ কারণে অধিকাংশ গবেষক মনে করেন, ওঁরাওরা দ্রাবিড়ভাষী কুড়ুখ জাতির উত্তর পুরুষ। ১৮৮১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, এরা বরেন্দ্র অঞ্চল ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় বসবাস করত।

১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওঁরাওদের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ২৯৬। এরা বর্তমানে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাজীপুর, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করছে। এদের ভগবানের নাম ধরমী বা ‘ধার্মেশ’ বা ‘ধরমেশ’।

এদের মতে, এ ধরমেশই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সূর্যে অবস্থান করেন। এ ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে এরা সূর্যকেও দেবতা হিসেবে জ্ঞান করে। এ ছাড়া অনেক ওঁরাও হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পূজাও করে। এরা গায়ে উল্কি আঁকে। বড় হওয়ার আগেই ছেলে-মেয়েদের উল্কি আঁকতে হয়, এটি এদের ধর্মীয় আচার। ওঁরাওরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত।

যেমন—লাকড়া, তিগগ্যা, তিরকী, বিন্ডো, খাঁ খাঁ, করকেটা, টপ্য, এক্কা, খালকো, লিন্ডা, মিনজী, বাকলা, বাড়া, ক্ষেস, গান্না, বেক ও কিসপট্টা ইত্যাদি। একই গোত্রের সদস্যকে এরা একই বংশের সন্তান বলে মনে করে এবং নিজেদের ভাই-বোন হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে এদের একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ সম্পর্ক সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যাবতীয় বিবাদ মেটানো ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম সংগঠন আছে, যাকে বলা হয় পাঞ্চেস।

প্রতিটি গ্রামে একজন হেডম্যান বা মহাতোষ থাকে এবং একজন পুরোহিত বা নাইগাস থাকে। গ্রামের বয়স্ক সাত-আটজন ব্যক্তি দ্বারা পাঞ্চেস গঠিত হয়। ওঁরাওদের ভাষার নাম কুরুক। এই ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই। এদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ছিল অতি সংক্ষিপ্ত।

পুরুষদের নেংটি আর নারীদের ফতা নামের গায়ের ওপরে-নিচে দুই খণ্ড ক্ষুদ্র বস্ত্র। এখন তাদের পুরুষরা লুঙ্গি ও ধুতি পরে। নারীরা শাড়ি পরে। ওঁরাও নারীরা বিভিন্ন অলংকার পরিধান করে। ভাত এদের প্রিয় খাদ্য। এদের সমাজে অতিথি আপ্যায়ন ও উৎসব-অনুষ্ঠানে নেশাদ্রব্য পান করা একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস। এদের সমাজে নৃত্য ও সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এরা এদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র নিজেরাই তৈরি করে। এসব বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঢোল, মাদকল, বাঁশি, তাল, নাগরা, খঞ্জনি, ঘুটুর ইত্যাদি।

J.S.C

Google Adsense Ads

Google Adsense Ads

Leave a Comment