অপারেশন জ্যাকপট,অপারেশন জ্যাকপট কি,অপারেশন জ্যাকপট মুভি,অপারেশন জ্যাকপট ১৯৭১,মুক্তিযুদ্ধকালীন অপারেশন

অপারেশন জ্যাকপট,অপারেশন জ্যাকপট কি,অপারেশন জ্যাকপট মুভি,অপারেশন জ্যাকপট ১৯৭১,মুক্তিযুদ্ধকালীন অপারেশন

অপারেশন জ্যাকপট

  • বঙ্গোপসাগরকে শত্রুমুক্ত করতে ১০নং সেক্টরের নৌবাহিনীর সদস্যরা যে অভিযান। পরিচালনা করে তার সাংকেতিক নাম অপারেশন জ্যাকপট ।
  • নৌ কমান্ডো পরিচালিত গেরিলা বাহিনী (৩১ জন) অপারেশনের জন্য যাত্রা শুরু করে ১৪ আগস্ট পলাশীর হরিণা থেকে
  • অপারেশন পরিচালনার জন্য দুটি গানকে সংকেত হিসেবে ধরে অপারেশন পরিচালনা করা হয়- প্রথম সংকেত পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া “আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম”। এই গানের অর্থ হল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রমণ করতে হবে।
  • দ্বিতীয় সংকেত ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া “আমার পুতুল যাবে শ্বশুরবাড়ী” । যার অর্থ আক্রমণের জন্য ঘাঁটি ত্যাগ কর

আরো ও সাজেশন:-

বাঙালি মাত্রই গান ভালোবাসেন। এর বাণী হূদয়কে করে পুলকিত ও বিকশিত। আবার এ গানই যে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিতে পারে বা রণাঙ্গনে হামলার সিগন্যাল হতে পারে, সে কথা কি কেউ ভেবেছে কোনো দিন? বিস্ময়কর ব্যাপার হলেও সত্যি যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুটি গান শত্রু পাকিস্তান বাহিনীর ওপর হামলা পরিচালনার সংকেত বা সিগন্যাল হিসেবে ব্যবহূত হয়েছিল। আর এই অভিনব পদ্ধতিতে সিগন্যাল পেয়েই ১৯৭১ সালের মধ্য আগস্ট সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক ও নদীবন্দরে একই সময়ে একযোগে পরিচালনা করা হয়েছিল সফল নৌ-কমান্ডো অভিযান। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে শুনেছিল আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। অপারেশন জ্যাকপটের কথা।

১৯৭১ সালে নৌ-কমান্ডো হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। নয় সদস্যবিশিষ্ট আত্মঘাতী দলের দলনেতা হিসেবে অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে প্রথম নৌ-অপারেশন পরিচালনা করি।

প্রশিক্ষণ শেষে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন সামুদ্রিক ও নৌবন্দরে অপারেশন পরিচালনার জন্য কয়েকটি দল গঠন করা হয়। দুটি দলকে সড়কপথে পাঠানো হয় খুলনায়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে আক্রমণ পরিচালনার জন্য তিনটি দলকে সেনাবাহিনীর লরিতে করে ব্যারাকপুর সেনানিবাস হয়ে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। একটি দলে ছিলাম আমি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ডাকোটা বিমানে করে আমাদের পৌঁছে দেওয়া হয় আগরতলায়। এটা ছিল আমার জীবনে প্রথম বিমানভ্রমণ। আমাদের একটি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। নাম ছিল ‘নিউ ক্যাম্প’।

৫ বা ৬ আগস্ট সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ (এ ডব্লিউ) চৌধুরীর (বীর উত্তম) নেতৃত্বে ৬০ জন কমান্ডো সড়কপথে হরিণা ক্যাম্প হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। তাদের টার্গেট ছিল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। আমরা বাকিরা নারায়ণগঞ্জে রওনা দেওয়ার অপেক্ষায় থাকি।

৭ বা ৮ আগস্ট। ভারতীয় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট দাস আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তুমি তো সাবমেরিনার আবিদুর রহমানের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ অপারেশনে যাচ্ছ?’ আমি হ্যাঁসূচক জবাব দিতেই তিনি বললেন, ‘না, তোমাকে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে না। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে অপারেশন পরিচালনার জন্য নয় সদস্যবিশিষ্ট স্বতন্ত্র একটি কমান্ডো দল হবে। তোমাকে এ দলের লিডার বা দলনেতা মনোনীত করা হয়েছে।’

লেফটেন্যান্ট দাসের কথা শুনে আমি বিস্মিত এবং একই সঙ্গে আনন্দিত ও রোমাঞ্চিত হই। কারণ সব লক্ষ্যস্থলে অপারেশনের জন্য নৌ-কমান্ডোদের দলনেতা হিসেবে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাবমেরিনারদেরই নিয়োগ করা হয়েছে। আমাকে দলনেতা করা ব্যতিক্রম। অন্যদিকে রোমাঞ্চিত ও আনন্দিত এই ভেবে যে একটি স্বতন্ত্র নৌ-কমান্ডো দলের নেতৃত্ব পাওয়া আমার জন্য খুবই গর্বের এবং সম্মানের বিষয়।

লেফটেন্যান্ট দাস আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘সামরিক দিক বিবেচনায় দাউদকান্দি ফেরিঘাট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেরিঘাটটি মেঘনা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আনীত শত্রুপক্ষের সামরিক সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ইত্যাদি পারাপার করা হয়ে থাকে এই ফেরিঘাটের মাধ্যমে। এ জন্য দাউদকান্দি ফেরিঘাটটি ধ্বংস করে দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ঘাটের পন্টুনসহ আশপাশে যে কটি ফেরি রয়েছে সেগুলো ধ্বংস করে দিতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে তোমরা এ অভিযানে সফলকাম হবে। তোমার সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে কমান্ডো মতিউর রহমান (বীর উত্তম)।

আলোচনার এক ফাঁকে বললেন, গান শুনবে—বাংলা গান? আমি মাথা নেড়ে সায় দিতেই তিনি উঠে গিয়ে একটি টেপরেকর্ডার এনে পরপর দুটো পুরোনো দিনের বাংলা গান আমাকে বাজিয়ে শোনালেন। গানগুলোর অন্তরা বা প্রথম কলি ছিল—‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান/ তার বদলে আমি চাই নে কোনো দান’ এবং ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি/ ওরে, তোরা সব উলুধ্বনি কর।’

শেষে লেফটেন্যান্ট দাস বললেন, আসল কথা। এ গান শুধু গানই নয়, এ গানের আরও অর্থ আছে। আমি অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘তোমরা যখন টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছে কোনো গোপন হাইডআউটে থাকবে তখন আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে এ গান দুটো শুনতে পাবে। আর গানের মাধ্যমেই সিগন্যাল পাবে কোন দিন এবং কখন নির্ধারিত টার্গেটে হিট করতে হবে। প্রথম গানটি শোনার পর মহিলা শিল্পীর কণ্ঠে গাওয়া দ্বিতীয় গানটি শোনার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে। দ্বিতীয় গানটি যখন শুনবে তখন বুঝবে, ২৪ ঘণ্টা পর টার্গেটে আঘাত করতে হবে। এর ভিত্তিতে তোমাদের জিরো আওয়ার ঠিক করে নিতে হবে। সাবধান আর কেউ যেন, এমনকি তোমার সহযোদ্ধাদের মধ্যেও কেউ যেন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে অপারেশনের সিগন্যাল প্রেরণের বিষয়টি জানতে বা বুঝতে না পারে। দলনেতা হিসেবে তোমাকে একটি ছোট ট্রানজিস্টার দেওয়া হবে।

আবহাওয়ার রিপোর্ট, চন্দ্র-তিথি, জোয়ার-ভাটা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে অপারেশনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। আগস্ট মাসের ১১ তারিখ সন্ধ্যার পর আমি আমার কমান্ডো দলকে নিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বকসনগর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। চাঁদপুরের দলও আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সাবমেরিনের আমিন উল্লাহ শেখ (বীর বিক্রম)। আমাদের পথ দেখিয়ে গন্তব্যস্থানে নিয়ে যাওয়া এবং গোপন হাইড আউটে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য সঙ্গে দুজন করে গাইড দেওয়া হয়। প্রত্যেক দলের জন্যই গাইডের ব্যবস্থা ছিল। আমাদের সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল একটি করে অটোমেটিক স্টেনগান। প্রয়োজনীয় গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন। প্রত্যেকের জন্য এক জোড়া সাঁতার কাটার ফিন্স, একটি লিমপেট মাইন এবং একটি দুদিকে ধারালো কমান্ডো নাইফ। অতিরিক্ত হিসেবে আমার কাছে ছিল একটি ট্রানজিস্টার।

বকসনগর থেকে রওনা হয়ে আমরা কখনো ধানখেতের আইল ধরে, আবার কখনো বা পায়ে চলা পথ ধরে হেঁটে সামনের দিকে এগোতে থাকি। কিছু দূর যাওয়ার পর চাঁদপুরের দল ভিন্ন পথ ধরে গন্তব্যের দিকে যায়। আর আমরা কুমিল্লার কংশনগর বাজার হয়ে বন্ধরামপুর পৌঁছি।

১৩ আগস্ট, ১৯৭১ আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে কাঙ্ক্ষিত সেই গানটি প্রচারিত হয়। আমার অন্য সঙ্গী কমান্ডোরাও আমার সঙ্গে ট্রানজিস্টারে গান শুনছিল। এ গানের মর্মার্থ তারা না বুঝলেও আমি বুঝে গেলাম। ৪৮ ঘণ্টা পর আমাদের অপারেশনে যেতে হবে। গানটি শুনে আমি কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। তবে দ্রুতই আমার আবেগ সংবরণ করি। অপারেশনের প্রাথমিক সিগন্যাল পেয়ে গেছি, এটা কাউকেই বুঝতে দিইনি। রাতের বেলা আমি সহদলনেতা মতিউর রহমানকে (বীর উত্তম) পরামর্শের ছলে বললাম, সফলভাবে অপারেশন পরিচালনা করতে হলে টার্গেট এলাকা আগেভাগে রেকি করে নিলে ভালো হয়। আমার কথায় মতি রাজি হয়ে গেল।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

আমি ও মতি লুঙ্গি ও হাফ শার্ট পরে ভাড়া করা একটি ছইওয়ালা নৌকায় ১৪ আগস্ট সকাল আনুমানিক নয়টার দিকে দাউদকান্দির উদ্দেশে রওনা হই। আমাদের সঙ্গে চটের ব্যাগে ফোল্ডিং করে লুকিয়ে রাখা স্টেনগানটি ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। দাউদকান্দি ফেরিঘাটের উত্তর-পশ্চিমে মেঘনা নদী, আর দক্ষিণে গোমতী নদী। তখন ফেরিঘাটের উত্তর-পশ্চিম দিকে মেঘনা নদীর মাঝখানে একটি ছোট্ট চর ছিল। চর থেকে ফেরিঘাটের সবকিছু দেখা যেত। চরের পাশে কিছুক্ষণের জন্য নৌকা রেখে আমরা লক্ষ করলাম যে ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে একটু দূরে পশ্চিম দিকে নদীতে দুটি ভাসমান ফেরি নোঙর করা অবস্থায় আছে। এ দুটি ফেরি আর পন্টুনই হলো আমাদের টার্গেট। অপারেশন এলাকা ও টার্গেট ঠিক করার সময় আমাদের নৌকাটি চলছিল। একপর্যায়ে নৌকার গতি কমিয়ে আমি একটি গামছা পরে নদীতে নেমে পড়ি। ভাবটা এমন যে নদীর পানিতে গোসল করতে নেমেছি। নামার উদ্দেশ্য নদীর পানির স্রোতের বেগ ও গতিধারা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ। তখন বর্ষাকাল ছিল। ফেরিঘাটটি মেঘনা ও গোমতী নদীর সঙ্গমস্থলে। আরও লক্ষ করলাম বর্ষাকালের ভরা নদীতে স্রোত তেমন নেই। উজানে এবং ভাটিতে সহজেই সাঁতার কেটে যাওয়া যায়। তবে নদীর তীরবর্তী ফসলের জমিতেও অথই পানি থাকায় কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই।

বন্ধরামপুরে ফিরে আসার পর থেকে শুরু হলো আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় গানটি শোনার জন্য অপেক্ষার পালা। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার পর আকাশবাণীর নিয়মিত অনুষ্ঠানে হঠাত্ ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি, ও রে! তোরা সব উলুধ্বনি কর’ গানটি শুনতে পেলাম। তার অর্থ তখন থেকে ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর টার্গেটে আঘাত হানতে হবে। আমি মনে মনে হিসাব করে দেখলাম, ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে অর্থাত্ ১৫-১৬ আগস্ট মধ্যবর্তী রাত আমাদের জন্য জিরো আওয়ার। ওই সময় এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে হবে।

সেই রাতে সঙ্গী কমান্ডোদের কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ থাকলাম। ১৫ আগস্ট সকালে সবাইকে ডেকে বললাম, আজ রাতেই আমাদের অপারেশনে যেতে হবে। সন্ধ্যার পর খাওয়া-দাওয়া করে, গায়ে সরিষার তেল মেখে, সুইমিং কস্টিউমসহ যার যার লিমপেট মাইন ও ফিন্স নিয়ে একটি খোলা নৌকাযোগে অপারেশনে বের হয়ে পড়লাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পথিমধ্যে প্রচণ্ড ঝড়-তুফানে পড়ে আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলি। তার ওপর গাইড ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে শীতে কাঁপতে থাকে। অসুস্থ বোধ করায় সে আমাদের সঙ্গে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। আমরা তাকে কোনোমতেই যেতে রাজি করাতে পারছিলাম না। এদিকে রাতও প্রায় শেষ হয়ে পূর্ব আকাশে ভোরের আলোর আভা ফুটে উঠতে থাকে। এ সময় অপারেশনে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। এমতাবস্থায় আমাদের অনন্যোপায় হয়ে ওই দিনকার মতো অপারেশন স্থগিত করে অস্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরে আসতে হয়।

যা-ই হোক সংকল্পে অটুট থেকে আমরা পুনরায় প্রস্তুতি নিয়ে ১৬ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক একটার সময় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের একটি পন্টুন ও দুটি ফেরিতে নৌ-কমান্ডো হামলা পরিচালনা করি। ওই তিনটি টার্গেটে মাইন ফিট করে আমরা পূর্ব নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত নৌকায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিক প্রকম্পিত করে একে একে মাইনগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। আর নৌকায় নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমাদের চোখমুখ বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। এরপর আর কালবিলম্ব না করে আমরা আমাদের গোপন আস্তানা বন্ধরামপুরের উদ্দেশে নৌকাযোগে দ্রুত রওনা হই। আমাদের হামলায় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের একমাত্র পন্টুনটিসহ অদূরে নোঙর করা দুটি ফেরি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানিতে ডুবে যায়।

আমাদের মতো অন্যান্য দলও ১৫ আগস্ট, ১৯৭১ সালের মধ্যরাতের পর একই সঙ্গে এই সময়ে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর, মংলা সামুদ্রিক বন্দর, খুলনা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জে সিরিজ নৌ-কমান্ডো হামলা পরিচালনা করে। তারা ডুবিয়ে দেয় সমুদ্রগামী জাহাজ ও বার্জ। ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় বহুসংখ্যক নৌযান ও পন্টুন। সব নৌপথে সৃষ্টি হয় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। আলোড়ন পড়ে যায় সারা বিশ্বে। এভাবেই সমাপ্ত হয় একটি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গানের মাধ্যমে পাওয়া সিগন্যাল অনুযায়ী পরিচালিত আমাদের দুর্ধর্ষ নৌ-কমান্ডো অভিযান।

এরপর বিদেশি জাহাজ চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। সামরিক ভাষায় এই নৌ-কমান্ডো হামলা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে খ্যাত। নৌ-কমান্ডোদের দুর্ধর্ষ ও সফল হামলার পরদিন যুদ্ধবাজ পাকিস্তানি সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণ দেয় এবং বলে, ভারতীয় নৌবাহিনীর ডুবুরিরা এসব আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু তারা ভাবতেই পারেনি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরাই চালিয়েছে এসব আত্মঘাতী কমান্ডো হামলা। চূর্ণ করে দিয়েছে তাদের সব অহংকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন সমুদ্র ও নদীবন্দরে একই সময় পরিচালিত এই সফল নৌ-কমান্ডো হামলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ এবং বিজয় ত্বরান্বিত করে।

আপনার জন্য আমাদের ক্যাটাগরি


প্রশ্ন সমাধান
সাজেশন
চাকরি
ধর্ম
মতামত
শিক্ষা
শিক্ষা সংবাদ
নিয়োগ পরীক্ষা
জানা অজানা
Writing Side
অনার্স ও মাস্টার্স
এইচ এস সি
এসএসসি
ডিগ্রি ও উন্মুক্ত
স্বাস্থ্য
উদ্ভিদ ও প্রাণী
ঔষধি গুন
গোপন সমস্যা
রূপচর্চা
রেসিপি
রোগ প্রতিরোধ
রচনা ,প্রবন্ধউত্তর লিংক ভাবসম্প্রসারণউত্তর লিংক Paragraphউত্তর লিংক
আবেদন পত্র ও Applicationউত্তর লিংক অনুচ্ছেদ রচনাউত্তর লিংক Compositionউত্তর লিংক
চিঠি Letterউত্তর লিংক প্রতিবেদনউত্তর লিংক CVউত্তর লিংক
ইমেলEmailউত্তর লিংক সারাংশ ও সারমর্মউত্তর লিংক Seen, Unseenউত্তর লিংক
Essayউত্তর লিংকCompleting Storyউত্তর লিংকDialog/সংলাপউত্তর লিংক
অনুবাদউত্তর লিংকShort Stories/Poems/খুদেগল্পউত্তর লিংকSentence Writingউত্তর লিংক

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment