অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারে যত ঝুঁকি,কম্পিউটার অতিরিক্ত ব্যবহারের যত ঝুঁকি

Google Adsense Ads

কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যার দ্বারা আজ আমরা অনেক সমস্যার সমাধান এক নিমেষে করতে পারি। বড় মাপের যোগ বিয়োগ হোক কি চাকরির পরীক্ষা সব কিছুতেই আমরা কম্পিউটারের সাহায্যে নিতে পারি।

কম্পিউটার প্রচন্ড ভাবে আমাদের সময় বাঁচায় এবং আমাদের জীবন যাত্রাকে সরল করে তোলে। কম্পিউটারের উপকার আমাদের জীবনে যেমন অনস্বীকার্য।

আবার এই কম্পিউটারের দৌলতে সারাদিন একভাবে বসে থেকে এবং একনাগাড়ে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আমাদের শরীরে এবং মনে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তাহলে মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?

অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারে যত ঝুঁকি,কম্পিউটার অতিরিক্ত ব্যবহারের যত ঝুঁকি

ডিজিটাল এই যুগে কম্পিউটার ব্যবহার ছাড়া জীবন প্রায় অচল। কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহার না করায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা। চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণত ৪ ঘণ্টা বা তার বেশি কম্পিউটার ব্যবহারে অনেক রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কম্পিউটারের কি বোর্ড ও মাউসের দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের ফলে হাতের রগ, স্নায়ু, কবজি, বাহু, কাঁধ ও ঘাড়ে অতিরিক্ত টান বা চাপ পড়ে। কাজেই কাজের ফাঁকে যথেষ্ট বিশ্রাম না নিলে এসব অঙ্গ ব্যথাসহ নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে? প্রতিকারের উপায়ই বা কী? জেনে নিন সেগুলো।

১। পেশির সমস্যা
যারা বেশি কম্পিউটার ব্যাবহার করেন, তারা প্রায়ই এই সমস্যায় ভোগেন। বসার অবস্থান যদি ঠিক না হয়, তাহলে পিঠ, ঘাড় কিংবা কোমরে ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রতিকারের উপায়

  • চেয়ার এবং কম্পিউটার টেবিল এমন ভাবে রাখতে হবে যেন মনিটরের স্ক্রিন চোখের সমানে থাকে।
  • মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে।
  • পা দু’টোকেও সোজা ছড়িয়ে রাখতে হবে। ফলে পেশিতে টান লাগবে না।
  • কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে হাঁটতে হবে।


২। ঘাড়, আঙুল এবং কাঁধে ব্যথা
অনেকক্ষণ মাউস ধরে কাজ করলে আঙুলে রক্তসঞ্চালন কম হয়। ফলে আঙুলে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কাঁধের পেশিতেও ব্যথা হতে পারে। কব্জি ও আঙুলে কার্পাল টানেল সিনড্রোম দেখা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

প্রতিকারের উপায় 

  • মাউসটাকে কি বোর্ডের পাশে এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে পুরো হাতটা নড়াচড়া করতে পারে।
  • মাউস ব্যবহার করার সময় কবজি ও হাত একসাথে ব্যবহার করুন, শুধু কবজি ব্যবহার করবেন না।
  • হালকা এবং আলতো করে টাইপ করুন। টাইপ করার সময় কবজিকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় না রেখে কাজ করাই ভালো।
  • যখন টাইপ করবেন না, তখন কি বোর্ড থেকে হাত সরান, হাতটাকে স্ট্রেচ করুন। হাত শিথিল হতে দিন।

৩। চোখের সমস্যা
মানুষের চোখ গঠনগতভাবে ছয় মিটারের বেশি দূরের বস্তুর দিকে তাকাতে পছন্দ করে, তাই বেশি কাছ থেকে যেকোনো কাজ আপনার চোখের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন ও দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করলে চোখে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়, একে বলা হয় কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম। এই সিনড্রেমের মধ্যে রয়েছে চোখ জ্বালাপোড়া করা, চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকানো, চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া।

প্রতিকারের উপায়:

  • মনিটরের স্ক্রিন যেন অবশ্যই চোখ থেকে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দূরে থাকে।
  • প্রতিফলন বা একদৃষ্টি এড়াতে স্ক্রিনটি সামান্য কাত করে রাখুন।
  • কোনও ডকুমেন্ট হোল্ডার ব্যবহার করলে তা অবশ্যই স্ক্রিনের কাছাকাছি রাখবেন।
  • মাথার ওপরে থাকা বাতির আলো এবং টেবিলের বাতির আলো এমনভাবে কমিয়ে দিতে হবে যেন যেন আপনার চোখে বা কম্পিউটারে পর্দায় না পড়ে।
  • এক দৃষ্টিতে  স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। চোখ দু’টো মাঝে মাঝে বন্ধ করুন। প্রতি ১০ মিনিট পর
  • পর কিছুক্ষণের জন্য দূরের কোনও কিছুর দিকে তাকাবেন, এতে চোখ আরামবোধ করবে।
  • স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে কাজ করুন। যাতে চোখের উপর বেশি চাপ না পড়ে।

৪। মাথা ব্যথা
মাথা ও ঘাড়ের পেশি ঠিক মতো সঞ্চালন না হলে মাথা যন্ত্রণা করতে পারে। প্রতিদিন অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে চোখের সমস্যা থেকে মাথা ব্যথাও হতে পারে।

প্রতিকারের উপায় 

Google Adsense Ads

  • নিয়মিত চোখের চেকআপ করান। ঘাড় গুঁজে কাজ না করাই ভালো। ঘাড় সোজা রেখে কাজ করার চেষ্টা করুন।

কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম
যাঁরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই রোগের উপসর্গ হলো চোখ ক্লান্ত হওয়া, চোখ শুষ্ক হওয়া, চোখে ব্যথা ও মাথা ব্যথা করা। এ ছাড়া ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে একটানা তাকালে ঘাড় ব্যথা ও পিঠের উপরিভাগে ব্যথা হতে পারে।



চোখ শুকিয়ে যাওয়া
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, চোখের পলক ফেলার হার কমে যাওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সময় চোখের পলক পড়া ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় চোখের যেসব পলক পড়ে, সেগুলো অসম্পূর্ণ হতে পারে। স্ক্রিনের আলোর তীব্রতা ও ব্যবহারকারীরা কী করছেন, তার ওপর ভিত্তি করে চোখের পলক ফেলার হার ব্যক্তিভেদে কমবেশি হতে পারে। চোখের পলক পড়ার সংখ্যা যত কমে, আর্দ্রতা তত কমে যায়। এভাবে একসময় চোখ শুকিয়ে যায়, যাকে ড্রাই আই ডিজিজ বা শুষ্ক চোখ বলে।

মায়োপিয়া
সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার (দূরের জিনিস ঝাপসা দেখা) হার বেড়েছে । মায়োপিয়াকে বলে চোখের প্যান্ডেমিক। গবেষকেরা ধারণা করছেন, যে হারে মায়োপিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে ২০৫০ সালে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন লোকের চোখে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষকেরা অনেকটা নিশ্চিত যে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার কারণে মায়োপিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যেসব শিশুর উচ্চ মায়োপিয়া রয়েছে, তাদের চোখের ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, গ্লুকোমা ও রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়ার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে।

চোখের অন্যান্য ক্ষতি
ডিজিটাল ডিভাইসের নীল আলোয় উভয় চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অথবা ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে (সপ্তাহে মোট ২৪ ঘণ্টার বেশি হলে) ক্রমাগত ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের নীল আলো চোখের আলো সংবেদনশীল কোষে পৌঁছে সেখান থেকে রেটিনার ম্যাকুলা ও দৃষ্টিসীমার কেন্দ্রীয় অংশ নষ্ট হয়ে যায়। এটি নিরাময় অযোগ্য রোগ।  

পরিশেষে : কম্পিউটার ব্যবহারে স্বাস্থ্যর ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে নিন

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Google Adsense Ads

Leave a Comment