Google Adsense Ads
আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা আমার দেখা নয়া চীন,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা আমার দেখা নয়া চীন, আমার দেখা নয়া চীন কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি আমার দেখা নয়া চীন
বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে নতুন আগমনী বার্তা জানান দেয় ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজেছে। এই ঋতুরাজ বসন্তেই জন নিয়েছিলেন। বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা, এ জাতির বটবৃক্ষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, পোয়েট অব পলিটিক্স, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বাঙালি জাতিকে উপহার দেন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। জাতির পিতার যে বসন্তেই জন্ম, ঠিক সেরকমই আরেকটি বসন্তে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় “আমার দেখা নয়া চীন’ প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে। যথারীতি গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেন তারিক সুজাত; প্রকাশ করেন বাংলা একাডেমি: পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৯৯: মূল্য 800 টাকা এবং বইটির ধরন আত্মজীবনী।
গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম । ২-১২ অক্টোবর, ১৯৫২ সালে গণচীনের পিকিংয়ে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে ভারত ও পাকিস্তানের ডেলিগেটরাও অংশ নেন। সেই সম্মেলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান খান, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, খন্দকার মো. ইলিয়াসসহ আরো কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম চীন সফর। এই সফরে চীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও সে তুং এর সাথে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়। এসময় তিনি চীনের রাজনৈতিক ও আর্থ- সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। এছাড়াও ১৯৫৭ সালে শিল্প,
বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ-এইড দফতরের মন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে দ্বিতীয়বার চীন সফর করেন। চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ১৯৫৪ সালে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় একটি ডায়েরি লেখেন ।
সেই ডায়েরি’র পরিমার্জিত রূপ ‘আমার দেখা নয়া চীন’। * আমি লেখক নই, আমার ভাষা নাই, তাই সৌন্দর্যটা অনুভব করতে পারছি, কিন্তু গোছাইয়া লেখতে পারি না। পাঠকবৃন্দ আমায় ক্ষমা করবেন। সহজ-সরল অকপট স্বীকারোক্তির মাধ্যমে জাতির পিতা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থে শিল্পিত মন ও সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে সদ্য বিপ্লবোত্তর গণচীনের শাসনব্যবস্থা ও জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়।
এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর সাম্রাজ্যবিরোধী মনোভাব, অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার গভীর পরিচয় মেলে। চীন, রাশিয়া বা আমেরিকার মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধুর বোধের স্বচ্ছতা ও সত্যনিষ্ঠা বাঙালি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিরল। একজন তরুণ রাজনীতিকের মনন-পরিচয়, গভীর দেশপ্রেম এবং নিজ দেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামী প্রত্যয় ফুটে উঠেছে রচনার পরতে পরতে। অপার সৌন্দর্যপ্রিয়তা, জীবন- সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি মুগ্ধদৃষ্টি এবং সঞ্জীবন তৃষ্ণা এ গ্রন্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৩২ বছর ব্যাগের টগবগে তরুণ নেতার নয়া চীন ভ্রমণ, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতা সবকিছুই দারুণ দক্ষতা ও মমতায় তুলে ধরেন ৩৪ বছর বয়সে। চীন দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা বঙ্গবন্ধুর অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই গ্রন্থের শুরুতে তিনি লেখেন, “জেলে থাকতে ভারতাম, আর মাঝে মাঝে মাওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেখে যেও।”
গ্রন্থটির শুরুতে চীনে যাওয়ার বর্ণনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মিয়ানমারের ইয়াংগুন, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও হংকং এর বর্ণন তুলে ধরেছেন নিপুণ তুলির আঁচড়ে। ব্রহ্মদেশ বা মিয়ানমারের রেসুনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি লেখেন,
আরো ও সাজেশন:-
‘ব্রহ্মদেশের অবস্থা খুবই খারাপ। বিপ্লবীরা বহু স্থান দখল করে আছে। আর মাঝে মাঝেই রেঙ্গুন শহরের পানি বন্ধ করে দেয়। আর একটা ভয়াবহ খবর পেলাম ” ব্যান্ডিটরা” দিনে দুপুরে ডাকাতি করে। ভয়েতে দিনের বেলায়ও কেই জানাশোনা মানুষ না হলে দরজা খোলে ১৯৪৯ সালে চীনের মহান নেতা মাও সেতুং এর নেতৃত্বে নয়াচীনের জনগণ দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে। স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে উন্নয়নের যাত্রা শুরুসহ নানান বর্ণনা বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন আলোচ্য গছে।
বিপ্লবের পর সামাজিক ক্ষেত্রে যে একটা পরিবর্তন আসে তা নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশ কীভাবে পরিচালিত করা যায় তা বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। চীনের জনগণের চরিত্র সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থের ৬৪ পৃষ্ঠায় লেখেন,
‘এদেশের লোকের মনে অহংকার নাই। সকলকেই আপন করতে চায়। সকলেই মনে করে “রাষ্ট্র আমাদের” একে গড়ে তুলতে হবে।’ নয়া চীন সরকার কায়েম হবার পর তারা ‘লাঙল যার, জমি তার’ প্রথা প্রবর্তন করলো। বড় বড় জমিদারের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকের মধ্যে বণ্টন করা হল। অনাবাদি খাস জমিও কৃষকের মাঝে চাষের জন্য বণ্টন করে দেয়া হল। যখন কৃষক বুঝতে পারলো, এ জমিতে চাষ করলে কেউ আর ফাঁকি দিতে পারবে না, তখন তারা পুরো উদ্যমে চাষাবাদ শুরু করলো। শুরু হলো নয়া চীনের নবতর যাত্রা। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ৮৯-৯০ পৃষ্ঠায় লেখেন, নয়া চীনে একখণ্ড জমি দেখলাম না, যা অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। রেললাইনের পাশে যে গর্তগুলি পড়ে থাকে সেগুলিতেও ফসল করা হয়েছে। যদি কোন জমি ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে থাকে তাহলে সরকার কঠোর শান্তি দেয়।…..
শুধু আইন করে নয়; জনমত গঠন, মানবীয় ব্যবহার, প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় কাঠোর আচরণ, কর্মসংস্থান বাসস্থান সৃষ্টির মধ্যদিয়ে নয়া চীন ভিক্ষাবৃত্তি, বেকার সমস্যা, ডাকাতি, আফিম নেশামুক্তি, বেশ্যাবৃত্তিকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
‘আইন করে কোনো অন্যায় কাজই বন্ধ করা যায় না, অন্যায় বন্ধ করত হলে চাই সুষ্ঠু সামাজিক কর্মপন্থা, অর্থনৈতিক সংস্কার ও নৈতিক পরিবর্তন। মাত্র তিন বছরের মধ্যে চীনের শিক্ষা ব্যবস্থায় আসে আমূল পরিবর্তন। সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধুর আগ্রহ ছিল। এজন্য বঙ্গবন্ধু চীন ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে লেখেন,
পয়দা করার “আমাদের দেশের মতো কেরানী পয়দা শিক্ষাব্যবস্থা আর নাই। কৃষি শিক্ষা, শিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনিক্যাল শিক্ষা দেয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
চীনের শান্তি সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ শাস্তির সপক্ষে বক্তব্য প্রদান করেন। পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলা থেকে যে সকল প্রতিনিধি এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাংলায় বক্তব্য প্রদান করেন। তবে অনেকেই মাতৃভাষায় বক্তব্য না দিয়ে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য প্রদান করেন যা বঙ্গবন্ধুর নিকট ভালো লাগেনি। এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু লেখেন,
“বাংলা আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষায় বক্তৃতা করাই উচিত। কারণ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের কথা দুনিয়ার সকল দেশের লোকই কিছু কিছু জানে। মানিক ভাই, আতাউর রহমান খান ও ইলিয়াস বক্তৃতাটা ঠিক করে দিয়েছিল। দুনিয়ার সকল দেশের লোকই যার যার মাতৃভাষায় বক্তৃতা করে। শুধু আমরাই ইংরেজি ভাষায় বক্তৃতা করে নিজেদের গর্বিত মনে করি।’
জাতির পিতা একই সাথে চীনাদের ভাষাপ্রেম দেখে অভিভূ হন। তাদের অনেকেই খুব ভালো ইংরেজি জানা সত্ত্বেও নিজ ভাষা ব্যতীত কথা বলেন না। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন,
“চীনে অনেক লোকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। অনেকেই ইংরেজি জানেন, কিন্তু কথা বলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ইংরেজি জানেন, কিন্তু আমাদের অভ্যর্থনা করলেন চীনা ভাষায়। যদিও তিনি ভালো ইংরেজি বলতে রন, একেই বলে জাতীয়তাবোধ। নয়া চীন ভ্রমণকালে বঙ্গবন্ধু প্রত্যক্ষ করেছেন, নয়া চীনে নারী- পুরুষ প্রকৃত অর্থেই সমানাধিকার ভোগ করছে। নারী-পুরুষ সমানভাবে দেশের জন্য কাজ করছে, আয় রোজগার করছে:
কেউ কারও উপর নির্ভরশীল হচ্ছে না। সমাজ থেকে নারী-পুরুষ সমান সম্মান পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু খেদ করেই লেখেন, “আমাদের দেশের কথা চিন্তা করে দেখুন। যদিও আইনে আমাদের দেশে নারী পুরুষের সমান অধিকার, তথাপি আমাদের দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত লোকের মনে এই ধারণা যে, পুরুষের পায়ের নিচে মেয়েদের বেহেশত। পুরুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। মেয়েদের নীরবে সব অন্যায় সহ্য করতে হবে বেহেশতের আশায়।
মহান নেতা মাও সেতুং এর নেতৃত্বে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল চিয়াং কাইশেকের পতন হয়। বিপ্লব পরবর্তী সময় নয়া চীনের মনোজগতে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। ধনী-গরীব, কৃষক-মহাজন, শ্রমিক-মালিকের মধ্যে ব্যবধান কমে আসে। নয়া চীন মাত্র তিন বছরে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে থাকে। গ্রন্থের ৫১ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু বলেন,
“আমার একটা অভ্যাস আছে। নিজের দাড়ি নিজেই শেষ করি। কোনোদিন সেলুন বা কোথাও শেভ করি না। আমার যে ব্রেড ছিল তাহা হঠাৎ ফুরিয়ে গেল। আমি বাজারে গেলাম ব্লেড কিনতে। সমস্ত দোকান খুঁজলাম, ব্লেড পেলাম না …… আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাই সমস্ত পিকিং শহরে একটা ব্রেড পেলাম না, কারণ কী? দোকানদার ভাঙা ভাঙা ইংরেজি জানে।
আমাকে বললো, বিদেশ থেকে এই সমস্ত জিনিস আমরা আনি না। আমাদের নিজেদের ঘরে যে ক্ষুর তৈরি হয় তা দিয়েই শেভ করি। যে পর্যন্ত আমরা ব্রেড ফ্যাক্টরি করে নিজেরা তৈয়ার করতে না পারবো, সে পর্যন্ত রেড কেউই ব্যবহার করবো না। আমরা বিদেশকে কেন টাকা দিবো? জাতির পিতা মাত্র ৩২ বছর বয়সে অনুভব করেছিলেন, দুর্নীতি মারাত্মক ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু লেখেন,
“দুর্নীতি সমাজের ক্যানসার রোগের মতো। একবার সমাজে এই রোগ ঢুকলে সহজে এর থেকে মুক্তি পাওয়া কষ্টকর।
ব্রিটিশরা আমলা-পুলিশদের মাধ্যমে বাংলাকে শাসন করেছিল। প্রায় দুইশ বছর। এ কারণেই হয়তোবা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এদেশের আমলা ও পুলিশ থেকে শুরু করে সকলেই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল সেটিই বঙ্গবন্ধু উপস্থান করেন তাঁর লেখনির মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন,
জেলখানা, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট, কাস্টমস, কোর্ট-কাচারি, সাব-রেজিস্টার অফিস, ইনকাম ট্যাক্স, কারো চেয়ে কেউ কম না, এই ধারনাই আমার শেষ পর্যন্ত হয়েছে।
তরুণ বয়সেই বঙ্গবন্ধু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অসাম্প্রদায়িক মানবিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতায় রূপান্তরিত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, যাক বাবা, আমেরিকার বিরুদ্ধে সত্যকথা লিখে বিপদে পড়তে চাই না, কারণ আজ আমেরিকা পাকিস্তানের “একমাত্র বন্ধু’। এক মুসলিম লীগের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলেই প্রত্যেক বৎসর জেল খাটি। আবার এদের বিরুদ্ধে বলে কি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবো?’
বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল বাংলার জনগণের মধ্যে শাস্তি বজায় রাখার। সে লক্ষ্যে তিনি চীনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কম্যুনিস্ট না হয়েও অংশগ্রহণ করেছিলেন। কারণ, পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক। তিনি লেখেন,
…… দুনিয়ার আজ যারাই শান্তি চায়, তাদের শাস্তি সম্মেলনে আমরা যোগদান করতে রাজি। রাশিয়া হউক, আমেরিকা হউক, ব্রিটেন হউক, চীন হউক যেই শান্তির সংগ্রাম করবে তাদের সাথে আমরা সহস্র কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে রাজি আছি, আমরা শান্তি চাই।
‘আমার দেখা নয়া চীন ভ্রমণকাহিনীতে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন পাকিস্তান ও চীনের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক অবস্থার তুলনা, কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের চর্চা প্রভৃতি বিষয়াদি প্রাঞ্জলভাবে আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষাবোধ যে সাহিত্যিক বোধে
Google Adsense Ads
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
কালোত্তীর্ণ তা তাঁর পরিমিতি ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমেই অবগত হওয়া যায়। “আমি লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র লেখার ভিতর দিয়া প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই।’
জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রন্থের ভূমিকাতে বঙ্গবন্ধুর ভাষাবোধের সাহিত্যমান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন, *এই ভ্রমণ কাহিনী অতি প্রাঞ্জল বর্ণনা দিয়ে তিনি পাঠকের জন্য উপভোগ্য করেছেন। প্রতিটি শব্দ, বাক্য রচনার যে পারদর্শিতা আমরা দেখি, তাতে মুগ্ধ হয়ে যাই।” প্রকৃতি বর্ণনায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নয়া চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থে লেখেন,
“সবুজ ধানের ক্ষেত, চারদিকে বড় বড় গাছ। মাঝে মাঝে মাটির ঘরের গ্রাম, ছোট ছোট নদী, ট্রেনটা পার হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার কোদাল দিয়া জমি ঠিক করছে। জাতির পিতা নয়া চীনকে চেনানোর পাশাপাশি নিজেকেও চিনিয়েছেন ভিন্নভাবে।
ভ্রমণ কাহিনী পড়তে পড়তে পাঠকের যেন কোনোরূপ বিরক্তি না আসে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু রসবোধের পরিচয় দিয়ে প্রধান অনুষঙ্গগুলোকে উপজীব্য করে তুলতে সঙ্গতিপূর্ণ ভ্রমণের মজার ঘটনাগুলোকে তুলে ধরেছেন। গ্রন্থের ২৮ নং পৃষ্ঠায় লেখেন, “আতাউর রহমান সাহেব, মানিক ভাই, ইলিয়াস ও আমি রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়েছি। হঠাৎ ১৬/১৭ বছরের একটা মেয়ে আতাউর রহমান সাহেবের কোটে একটা গোলাপ ফুল লাগাইয়া দিতে অগ্রসর হয়।
মেয়েটি কলারে হাতও দিয়াছে, খান সাহেব হঠাৎ যেন চমকাইয়া উঠলেন। পরে ধাক্কা দিয়া ফুল ছুঁড়ে ফেলে রাগে ঘোঁতঘোঁত করতে করতে এগিয়ে চললেন।
“আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থের বিশেষত্ব হলো- বঙ্গবন্ধু শুধু ভ্রমণের ইতিবৃত্তই বলেননি, তিনি পরোক্ষভাবে আমাদের শিক্ষা দানও করেছেন। নানাবিধ প্রশ্নের অবতারণা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চরিত্রের মাধ্যমে নানাবিধ তথ্য প্রদান করেছেন। অতি তুচ্ছ ঘটনাও যে বর্ণনাভঙ্গি ও রচনাশৈলী গুণে রসলোকের সামগ্রী হতে পারে তা তিনি গ্রন্থের পরতে পরতে তুলে ধরেছন। এ গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লেখেন,
“মানিক ভাই যে এত খেতে পারেন, সে ধারণা আগে আমার কোনোদিন ছিল না। হয়তো কোনোদিন একটা মুরগীই খেয়ে ফেলে, সাথে সাথে ডিম, মাছ, ফলফলাদি, বসে বসে শুধু যায়। এ ভ্রমণকাহিনী রচনার পটভূমি, বহু ঘাত-প্রতিঘাতে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ, বর্তমান গ্রন্থ প্রকাশের ইতিবৃত্ত এবং দুর্লভ আলোকচিত্র গ্রন্থটিকে আকর্ষণীয় করেছে।
যেকোনো ভ্রমণকাহিনী লেখার উদ্দেশ্য থাকে পাঠককে সেই অবস্থান বা পরিবেশ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা প্রদান করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শুধু সামগ্রিক ধারণাই দিয়ে যাননি, একইসাথে তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির বিষয়টিই পরোক্ষভাবে উল্লেখ করে ভ্রমণকাহিনীর মূল উদ্দেশ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। এ সম্পর্কে ।
বইটির ভূমিকা অংশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘এই ভ্রমণকাহিনী যতবার পড়েছি, আমার ততবারই মনে হয়েছে যে তিনি গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রে। তার কারণ হলো, তাঁর ভেতরে যে সুপ্ত বাসনা ছিল বাংলার মানুষের মুক্তির আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জন, সেটাই বারবার ফুটে উঠেছে আমার মনে এ কথাটাই অনুভব করেছি।
পরিশেষে বলা যায়, চীনা সমাজ বা সংস্কৃতির গবেষণাপূর্বক ওই জনগোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করে সামগ্রিক চিত্র নিখুঁত তুলির আঁচড়ে তুলে ধরেছেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধুর চীন সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ ও বর্তমান বাস্তবতা কিংবা তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সবই আজ দিবালোকের মতো সত্য। বঙ্গবন্ধু আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তাদের উজ্জ্বলতম ও অভূতপূর্ব উন্নয়নের। এই মহাকবির বাক্য আজ সর্বাংশে সত্য হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন গবেষক বা পর্যবেক্ষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সফল।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- একটি কোম্পানির সিএসআর পলিসি প্রস্তুতির পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর
- স্বেচ্ছাসেবক সিএসআর রিপোর্ট এর বিতর্কসমূহ বর্ণনা কর
- সিএসআর এবং কর্পোরেট কৌশল বলতে কি বুঝায়
- কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার সূচক সমূহ কি কি
- ব্যবসার সামাজিক দায়িত্ব বলতে কী বোঝায়,কারবারের সামাজিক দায়িত্ব বলতে কি বুঝ
- সরকারের সিএসআর কি বুঝ
Google Adsense Ads