বাংলা সাহিত্য বইয়ের ‘পল্লিসাহিত্য’ প্রবন্ধে প্রবাদের উল্লেখ আছে

Google Adsense Ads

প্রবাদ প্রবচন প্রতিটি ভাষার অমূল্য সম্পদ। বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি তথা সামগ্রিক জীবনাচরণে প্রবাদ প্রবচন সমৃদ্ধ একটি ধারা হিসেবে বিবেচিত। প্রবাদ প্রবচনের মাধ্যমে বাঙালির জীবন, ধর্ম, সংস্কৃতি, আচার, বিশ্বাস ও রসবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।

প্রবাদ ও প্রবচন প্রায় একই অর্থে এবং পাশাপাশি ব্যবহৃত হলেও এর মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।

লোকপরম্পরাগত বিশেষ উক্তি বা কথন হচ্ছে প্রবাদ। প্রবাদ জীবন, জগৎ ও সমাজ সম্পর্কে মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত  লোকসাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা।

অতীতের বিষয় হয়েও প্রবাদ সমকালকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে। আধুনিক যুগে প্রায় সব ধরনের রচনায় প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন, বক্তৃতা, এমনকি দৈনন্দিন কথাবার্তায়ও প্রবাদের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

প্রবাদ যেহেতু বুদ্ধিপ্রধান রচনা, সেহেতু অনুমান করা হয় যে মানুষ প্রবাদের সৃষ্টি ও প্রয়োগ-কৌশল লোকসাহিত্যের অন্যান্য শাখার তুলনায় অপেক্ষাকৃত পরে আয়ত্ত করেছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে মিসরের প্যাপিরাসের গল্পে প্রবাদের প্রয়োগ আছে। ভারতীয় বেদ-উপনিষদেও প্রবাদ আছে। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদে কয়েকটি প্রবাদ আছে। ‘আপনা মাসে হরিণা বৈরী’ প্রবাদটি চর্যাপদকর্তা ভুসুকু ব্যবহার করেন।

যে দেশের মানুষ যেমন, সে দেশের প্রবাদও তেমন। অর্থাৎ একটি দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, জীবজন্তু, জাতীয় জীবনের নানা ধারা, তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজ, পরিবার ইত্যাদি বিচিত্র বিষয় নিয়ে প্রবাদ রচিত হয়। প্রবাদে একটি দেশ ও জাতির জীবনপ্রবাহের নানা চিত্র পাওয়া যায়।

সেগুলো খণ্ড হলেও খাঁটি চিত্র; কারণ প্রবাদ লোকমনের সত্যরূপ বহন করে। যে পটভূমি বা বিশেষ অর্থে একটি প্রবাদ সৃষ্টি হয়, প্রয়োগকালে তার অর্থব্যাপ্তি ঘটতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে মূলের স্থান-কাল-পাত্র পরিবর্তিত হয়ে যায়। ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’ প্রবাদটির জন্ম হয়তো কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে; কিন্তু বর্তমানে এর প্রয়োগে ব্যাপ্তি ঘটেছে। বাইরে সদ্ভাব রেখে ভেতরে অসৎ উদ্দেশ্য পোষণ করা এমন যেকোনো আচরণ বোঝাতে এখন প্রবাদটি ব্যবহার করা হয়।

‘চোরের মার বড় গলা’, ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি’, ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ ইত্যাদি প্রবাদ দ্বারা শুধু চোর ও চৌর্যবৃত্তির কথাই বোঝায় না, বরং নানা শ্রেণির অসৎ ও নির্বোধ ব্যক্তি ও তাদের কর্মকাণ্ডও বোঝায়।

প্রবাদ একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য থেকে ছন্দোবদ্ধ দুই চরণ পর্যন্ত হতে পারে। ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’, ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে, ‘জোর যার, মুলুক তার’ ইত্যাদি প্রবাদের গড়ন আঁটসাঁট; বাড়তি একটি শব্দও নেই। স্বল্প কথায় এত বেশি অর্থবহনক্ষমতা প্রবাদ ছাড়া লোকসাহিত্যের অন্য কোনো শাখার নেই।

প্রবাদ ভাষার এক অমূল্য সম্পদ। প্রবাদ বক্তব্যকে সুসংহত ও অর্থবহ করে, জোরালো ও ধারালো করে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায় ‘সুন্দরীর অলক-তিলকের ন্যায় প্রবাদ বাক্যগুলি ভাষায় সৌন্দর্য ফুটাইয়া তোলে।’ যুগ যুগ ধরে রচিত প্রবাদগুলো বাংলা ভাষার শক্তি ও  সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

Google Adsense Ads

Google Adsense Ads

Leave a Comment