৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায় ‘ওঁরাও’

৮ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একাদশ অধ্যায় ‘ওঁরাও’

পরীক্ষা প্রস্তুতি Writing Side শিক্ষা

Google Adsense Ads

ওঁরাও হচ্ছে ভারতের ওড়িশা প্রদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়। ওড়িশা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড় ও পশ্চিমবঙ্গে এরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ভারতের বাইরে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে (রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও রাজশাহী জেলা), নেপাল ও ভুটানে এদের দেখা যায়।

নৃতাত্ত্বিক বিচারে ওঁরাওরা আদি-অস্ট্রেলীয় (প্রোটো-অস্ট্রেলীয়) জনগোষ্ঠীর উত্তর পুরুষ। এদের গায়ের রং কালো, নাক অনুচ্চ, চুল কালো ও কুঞ্চিত, উচ্চতা মাঝারি। নৃতাত্ত্বিকবিদদের মতে, একই অঞ্চলের মুণ্ডা, মালপাহাড়ি ও সাঁওতালদের সঙ্গে ওঁরাওদের ঘনিষ্ঠ জনতাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে।

ভারতীয় নৃতাত্ত্বিক সোসাইটির মতানুসারে কুরুখ জাতি বা ওঁরাওদের আদিবাস ছিল কঙ্কণ অঞ্চলে, যেখান থেকে তারা অভিবাসিত হয়ে উত্তর ভারতে চলে আসে।

বাংলাদেশে ১৮৮১ সালে লোকগণনায় দেখা যায় যে উত্তরবঙ্গ ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলায় কিছুসংখ্যক ওঁরাও আদিবাসী রয়েছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে ওঁরাও জনসংখ্যা ছিল প্রায় ছয় হাজার।

ওঁরাওদের প্রধান উপাস্য শক্তি হলো ‘ধার্মেস’। ধার্মেস এক ও অদ্বিতীয় সর্বশক্তিমান দেবতা। এরা মনে করে, এই জগৎ আগে অন্ধকারময় ছিল এবং ঊর্ধ্বে ও নিম্নে ছিল শুধু পানি। ধার্মেস প্রথমে জলজ ও পরে স্থলজ প্রাণী সৃষ্টি করেন এবং সব শেষে তিনি মাটির পুতুল বানিয়ে সেগুলোতে জীবন দান করে মানুষ সৃষ্টি করেন। এই সর্বশক্তিমান সত্তার অবস্থান সূর্যে। তাই ধর্মীয় প্রায় সব অনুষ্ঠানে এরা সূর্যকে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া ওঁরাও সমাজ নানা দেবতায় বিশ্বাসী। এ সব দেবতার প্রতীকী অবস্থান গ্রাম, কৃষিসম্পদ, অরণ্য, মহামারি ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে।

ওঁরাওদের সমাজজীবনে সংগীতের একটি বিশাল প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন ব্রত বা উৎসবে মেয়েরা দলবদ্ধভাবে নাচ-গান করে। এদের বিবাহ পারিবারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে হলেও পাত্র-পাত্রীর মতামত প্রাধান্য পায়। এদের পোশাক অত্যন্ত সাদাসিধা। মেয়েরা মোটা শাড়ি পরে। ফুল এদের প্রধান অলংকার। নারী-পুরুষ উভয় শরীরে উল্কিচিহ্ন ধারণ করে। আগে পুরুষরা নেংটি জাতীয় কাপড় কোমরে জড়িয়ে রাখত। বর্তমানে এরা ধুতি, লুঙ্গি, গামছা পরে। একালের শিক্ষিত সচ্ছল পুরুষরা শার্ট-প্যান্ট বা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে।

এদের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতের সঙ্গে শাক-সবজি, মাছ বা মাংস আহার করে। এ ছাড়া ঘরে তৈরি মদ ‘পচাই’ তাদের প্রধান পানীয়। সাধারণত ভাত পচিয়ে ‘পচাই’ তৈরি করা হয়। আদিতে এরা ছিল সম্পূর্ণ বনচারী। বর্তমানে পুরোপুরি কৃষিজীবী।

J.S.C

Google Adsense Ads

Google Adsense Ads

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *