তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়, তীব্র গরমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়

তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়, তীব্র গরমে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এপ্রিলজুড়ে গরমের অসহনীয় তীব্রতা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে গরমের তীব্রতা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।এই গরমে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিতে। তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি।

প্রচণ্ড গরমে যেসব অসুখ দেখা তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক। তীব্র গরমের কারণে সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, এমন তীব্র গরমে মানুষের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও নিরাপদ ও ভালো থাকা যায়। যেমন- এ সময় বাইরে বের হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

শরীরের কোনো অংশে সরাসরি রোদ লাগানো যাবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, সানগ্লাস ও ছাতা, মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার পানি বা সরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে অবশ্যই নিরাপদ খাবার পানি নিতে হবে।

তীব্র গরমের এমন অবস্থায় কীভাবে সুস্থ থাকা যায় জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, হঠাৎ করেই তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এই গরমে সরাসরি রোদে যত কম যাওয়া যায়, ততই ভালো।

 ১। পানিশূন্যতা :  এই গরমে সব থেকে বেশি যে সমস্যা হয় সেটা হলো পানিশূন্যতা। তীব্র গরমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, সেই সঙ্গে বাতাসের আদ্রতা কম থাকার কারণে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এই গরমে পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় পানি বা তরল খাবার খেতে হবে, সেই সাথে বাইরে গেলে অবশ্যই ছাতা এবং পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। যতটা সম্ভব বাইরের পানীয় এবং খাবার পরিহার করতে হবে।

 ২। মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি : তীব্র গরমে অনেকের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। প্রচণ্ড গরমে মানুষের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় যেটা তীব্র মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের সম্মুখীন করে। গরমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে প্রয়োজনীয় ঘুম দরকার। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নেয়া যাবেনা। বেশি বেশি পানি বা পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে।

 ৩। হিটস্ট্রোক : সাধারণত অতিরিক্ত রোদে থাকার কারণে হিটস্ট্রোক হয়ে থাকে। হিটস্ট্রোক হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এমনকি তাপমাত্রা বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি বা তার বেশি হতে পারে সেই সঙ্গে শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়। বয়স্কব্যক্তি, শিশু, যারা কায়িক শ্রম করেন, হৃদরোগী এবং ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, ক্রীড়াদিবদের সাধারণত হিটস্ট্রোকের ঝুকি বেশি থাকে। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া ভালো :

– শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া

– দ্রুত হ্রদস্পন্দন এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস

– বিভ্রান্তি এমনকি খিচুনিও হতে পারে, এলোমেলো আচরণ

– তীব্র মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব

– মাংসপেশী ক্রাম্প বা দুর্বলতা

– ত্বকে ফুসকুড়ি, অতিরিক্ত ঘাম/ ঘাম না হওয়া

– অবচেতন হয়ে যাওয়া।

 ৪। চর্মরোগ : অতিরিক্ত গরমে যাদের ঘাম বেশি হয় তাদের শরীরে চর্মরোগ দেখা দেয়া, যেমন- ঘামাচি/ ছত্রাক সংক্রমণ। অনেকেই ঘামাচি হলে সেখানে চুলকায় এবং সংক্রমণের সৃষ্টি হয়। ঘামাচি থেকে রক্ষা পেতে ঘামে ভেজা জামাকাপড় পরেরদিন না ধুয়ে পরা উচিৎ না।

 ৫। ডায়রিয়া/বদহজম : অতিরিক্ত গরমে অনেকের হজমে সমস্যা দেখা দেয়। গরমে খাবার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় যেটা খেলে ফুডপয়জনিং বা বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই পচা-বাসি খাবার, রাস্তাঘাটের খোলা খাবার, লেবুর শরবৎ, আখের রস এসব না খাওয়াই ভালো এবং ফ্রিজের খাবার খাওয়ার আগে

গরম থেকে রক্ষা পেতে যা করবেন

১. পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন

২. বাড়ির বাইরে থাকার সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন

৩. শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করতে হবে

৪. স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে স্যালাইন পান করুন।

৫. গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি তাজা জুস পান করুন

৬. মাংস এড়িয়ে বেশি করে ফল ও সবজী খান

৭. প্রস্রাবের রঙ খেয়াল করুন। প্রস্রাবের গাঢ় রঙ পানি স্বল্পতার লক্ষণ।

৮. সব সময় ছাতা বা টুপি সাথে রাখুন

৯. ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

১০. চেষ্টা করুন যেন দিনে কম বাইরে যেতে হয়

অবশ্যই ভালো করে গরম করে নিতে হবে। ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণ পানি, স্যালাইন ও ডাবের পানি খেতে হবে।

পরিশেষে : প্রচন্ড গরমে নিরাপদ থাকার উপায়?,তীব্র গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার ১০ উপায়, তীব্র তাপদাহের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও সুস্থ থাকবেন যেভাবে

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

Leave a Comment