৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘তৈলচিত্রের ভূত’ প্রবন্ধে শ্রাদ্ধের উল্লেখ আছে

হিন্দুশাস্ত্র মতে, পিতৃপুরুষের উদ্দেশে দান-ধ্যান ও অতিথিভোজন অনুষ্ঠান হলো শ্রাদ্ধ। সাধারণত মৃত ব্যক্তির সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনরা এ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

শ্রাদ্ধ প্রধানত তিন প্রকার, যথা— আদ্যশ্রাদ্ধ, আভ্যুদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ও সপিণ্ডীকরণ। আদ্যশ্রাদ্ধ অশৌচ অবস্থার শেষ দিন মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির উদ্দেশে আয়োজন করা হয়। গোত্রভেদে ব্যক্তির মৃত্যু দিবসের ১১, ১৫ বা ৩০ দিন পরে এটি অনুষ্ঠিত হয়। মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন এই কদিন ফলমূল,

নিরামিষ ও লবণ ছাড়া আতপ চালের ভাত খায়। শ্রাদ্ধের আগের দিন মৃত ব্যক্তির পুত্ররা মাথার চুল ফেলে দেয় এবং শাস্ত্রীয় নিয়ম-কানুন পালন করে। শ্রাদ্ধের দিন সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ায়। নিকট অতীতে ধনী ব্যক্তিরা কয়েক হাজার পর্যন্ত লোককে খাওয়াত। এখন আর্থ-সামাজিক ও মানুষের ব্যস্ততার কারণে সেই মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শ্রাদ্ধ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-স্বজনদের নানা রকম দান-দক্ষিণাও করা হয়।

আরেক ধরনের শ্রাদ্ধ আছে, যেটা উপনয়ন, বিবাহ ইত্যাদি শুভকাজের আগে পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি ও তাদের আশীর্বাদ কামনায় পালন করা হয়। এটি আভ্যুদয়িক বা বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ নামে পরিচিত। আর ব্যক্তির মৃত্যুর এক বছর পরে যে শ্রাদ্ধ পালন করা হয় তাকে সপিণ্ডীকরণ শ্রাদ্ধ বলে।

এ তিনটি ছাড়া আরো কয়েক প্রকার শ্রাদ্ধ আছে। যেমন—মহালয়া প্রভৃতি বিশেষ পর্ব উপলক্ষে এবং বিশেষ তিথিতে কারো মৃত্যু হলে তার উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম পার্বণশ্রাদ্ধ। পার্বণশ্রাদ্ধে সাধারণত পিতৃপক্ষের তিন পুরুষ ও মাতৃপক্ষের তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড দান (মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অন্নভোগ) করা হয়। একসঙ্গে একজন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে শ্রাদ্ধ করা হয় তার নাম একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান গয়ায় বিষ্ণুপাদপদ্মে শ্রাদ্ধ করাকে অনেকে বিশেষ পূণ্যের কাজ বলে মনে করেন। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি গয়াধামে গিয়ে পিতা-মাতার শ্রাদ্ধ করে থাকেন। শ্রাদ্ধ বিষয়ে শূলপাণির ‘শ্রাদ্ধবিবেক’ ও রঘুনন্দনের ‘শ্রাদ্ধতত্ত্ব’ দুটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্য গ্রন্থ।

J.S.C

Leave a Comment