সূরা আলিফ-লাম-মীম সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল আলিফ-লাম-মীম আলমল ও ফজিলত, সূরা আলিফ-লাম-মীম কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত

আজকের বিষয়: সূরা আলিফ-লাম-মীম সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল আলিফ-লাম-মীম আলমল ও ফজিলত, সূরা আলিফ-লাম-মীম কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা আলিফ-লাম-মীম নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৩২ সূরা আল – আলিফ-লাম-মীম

নামকরণ

দুটি শব্দের সমন্বয়ে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। একটি শব্দ (হা-মীম) ও অপরটি (আস সাজদাহ) । অর্থাৎ এটি সেই সূরা যা শুরু হয়েছে হা-মীম শব্দ দিয়ে এবং যার মধ্যে এক স্থানে সিজদার আয়াত আছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত অনুসারে এর নাযিল হওয়ার সময়কাল হচ্ছে হযরত হামযার (রা) ঈমান আনার পর এবং হযরত উমরের (রা) ঈমান আনার পূর্বে। নবী করিম (সাঃ) প্রাচীনতম জীবনীকার মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব আল-কারযীর বরাত দিয়ে এই কাহিনী উদ্ধুত করেছেন যে, একদিন কিছু সংখ্যক কুরাইশ নেতা মসজিদে হারামের মধ্যে আসর জমিয়ে বসেছিল এবং মসজিদের অন্য এক কোণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একাকী বসেছিলেন। এটা এমন এক সময়ের ঘটনা যখন হযরত হামযা ঈমান এনেছিলেন এবং কুরাইশরা প্রতিনিয়ত মুসলমানদের সাংগঠনিক উন্নতি দেখে অস্থির হয়ে উঠছিলো ।

এই সময় ‘উতবা ইবনে রাবী’ আ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর ) কুরাইশ নেতাদের বললেন, ভাইসব, আপনারা যদি ভালো মনে করেন তাহলে আমি গিয়ে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) সাথে আলাপ করতে এবং তাঁর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারি। সে হয়তো তার কোনটি মেনে নিতে পারে এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। আর এভাবে সে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে। উপস্থিত সবাই তার সাথে একমত হলো এবং ‘উতবা উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বসলো। নবী (সা) তার দিকে ফিরে বসলে সে বললোঃ ভাতিজা, বংশ ও গোত্রের বিচারে তোমার কওমের মধ্যে তোমার যে মর্যাদা তা তুমি অবগত আছো। কিন্তু তুমি তোমার কওমকে এক মুসিবতের মধ্যে নিক্ষেপ করেছো। তুমি কওমের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছো। গোটা কওমকে নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছো। কওমের ধর্ম ও তাদের উপাস্যদের সমালোচনা করেছো এবং এমন কথা বলতে শুরু করেছো যার সারবস্তু হলো, আমাদের সকলের বাপ দাদা কাফের ছিল।

এখন আমরা কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন। আমি তোমার কাছে কিছু প্রস্তাব রাখছি প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে চিন্তা করে দেখো। “হয়তো তার কোনটি তুমি গ্রহন করতে পার।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আবুল ওয়ালীদ, আপনি বলুন, আমি শুনবো। সে বললো : ভাতিজা , তুমি যে কাজ শুরু করেছো তা দিয়ে সম্পদ অর্জন যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তাহলে আমরা সবাই মিলে তোমাকে এতো সম্পদ দেব যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী হয়ে যাবে। এভাবে তুমি যদি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কামনা করে থাকো তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নিচ্ছি, তোমাকে ছাড়া কোন বিয়য়ে ফায়সালা করবো না। যদি তুমি বাদশাহী চাও তাহলে আমরা তোমাকে আমাদের বাদশাহ বানিয়ে নিচ্ছি। আর যদি তোমার ওপর কোন জিন প্রভাব বিস্তার করে থাকে যাকে তুমি নিজে তাড়াতে সক্ষম নও তাহলে আমরা ভালো ভালো চিকিৎসক ডেকে নিজের খরচে তোমার চিকিৎসা করিয়ে দেই। “উতবা এসব কথা বলছিলো আর নবী (সা) চুপচাপ তার কথা শুনছিলেন। অতপর তিনি বললেন : আবুল ওয়ালীদ, আপনি কি আপনার সব কথা বলেছেন ? সে বললো : হ্যাঁ ।

তিনি বললেন : তাহলে এখন আমার কথা শুনুন । এরপর তিনি “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে এই সূরা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন । উতবা তার দুই হাত পেছনের দিকে মাটিতে হেলার দিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে শুনতে থাকলো। সিজদার আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করে তিনি সিজদা করলেন এবং মাথা তুলে বললেন : হে আবুল ওয়ালীদ, আমার জবাবও আপনি পেয়ে গেলেন। এখন যা ইচ্ছা করেন।” উতবা উঠে কুরাইশ নেতাদের আসরের দিকে অগ্রসর হলে লোকজন দূর থেকে তাকে দেখেই বললো : আল্লাহর শপথ ! ‘উতবার চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে । যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল এটা সেই চেহারা নয়। সে এসে বসলে লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করলো: কি শুনে এলে সে বললো: “আল্লাহর কসম !

আমি এমন কথা শুনেছি যা এর আগে কখনো শুনিনি। আল্লাহর কসম! এটা না কবিতা, না যাদু, না গননা বিদ্যা। হে কুবাইশ নেতৃবৃন্দ, আমার কথা শোন এবং তাকে তার কাজ করতে দাও। আমার বিশ্বাস, এ বাণী সফল হবেই। মনে করো আরবের লোকেরা যদি তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে তাহলে নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত তোলা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যাবে এবং অন্যরাই তাকে পরাভূত করবে। পক্ষান্তরে সে যদি আরবদের বিরুদ্ধে বিজয় হয় তাহলে তার রাজত্ব তোমাদেরই রাজত্ব এবং তার সম্মান ও মর্যাদা তোমাদের সম্মান ও মর্যাদা হবে।” তার এই কথা শোনা মাত্র কুরাইশ নেতারা বলে উঠলো : “ওয়লীদের বাপ, শেষ পর্যন্ত তোমার ওপর তার যাদুর প্রভাব পড়লো” উতবা বললো : “আমি আমার মতামত তোমাদের সামনে পেশ করলাম। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা করতে থাকো।” ( ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪)

আরো কতিপয় মুহাদ্দিস বিভিন্ন সনদে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তবে তাতে শব্দগত কিছু মতপার্থক্য আছে । ঐ সব রেওয়ায়েতের কোন কোনটিতে এ কথাও আছে যে, নবী (সা) তিলাওয়াত করতে করতে যে সময়

আরবী : ………………………………………………………………………………

( এখন যদি এসব লোক মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এদেরকে বলে দাও আমি তোমাদেরকে আদ ও সামূদ জাতির আযাবের মত অকস্মাত আগমনকারী আযাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি।) আয়াতটি পড়লেন তখন উতবা আপনা থেকেই তার মুখের ওপর হাত চেপে ধরে বললো : “আল্লাহর ওয়াসে- নিজের কওমের প্রতি সদয় হও।” পরে সে কুরাইশ নেতাদের কাছে তার এ কাজের কারণ বর্ণনা করেছে, এই বলে যে, আপনারা জানেন, মুহাম্মাদের (সা) মুখ থেকে যে কথা বের হয় তা সত্যে পরিণত হয়। তাই আমি আমাদের ওপর আযাব নাযিল না হয় এই ভেবে আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম। ( বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৪র্থ খন্ড,পৃষ্ঠা ৯০-৯১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬২)।

আলোচ্য বিষয় ও মূল বক্তব্য :

‘উতবার এই কথার জবাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বক্তব্য নাযিল হয়েছে তাতে সে নবীকে (সা) যে অর্থহীন কথা বলেছে সেদিকে আদৌ দৃষ্টিপাত করা হয়নি। কারণ, সে যা বলেছিলো তা ছিল প্রকৃতপক্ষে নবীর (সা) নিয়ত ও জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর হামলা। তার গোটা বক্তব্যের পেছনে এই অনুমান কাজ করছিল যে, তাঁর নবী হওয়া এবং কুরআনের অহী হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই অনিবার্য রূপে তাঁর এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি হয় ধন-সম্পদ এবং শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের প্রেরনা, নয়তো তাঁর জ্ঞান-বুদ্ধিই লোপ পেয়ে বসেছে (নাউযুবিল্লাহ)। প্রথম ক্ষেত্রে সে নবীর (সা) সাথে বিকিকিনির কারবার করতে চাচ্ছিলো।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সে এ কথা বলে নবীকে (সা) হেয় করছিলো যে, আমরা নিজের খরচে আপনার উম্মাদ রোগের চিকিৎসা করে দিচ্ছি।এ কথা সুস্পষ্ট যে, বিরোধীরা যখন এ ধরনের মূর্খতার আচরণ করতে থাকে তখন তাদের এ কাজের জবাব দেয়া শরিফ সম্ভ্রান্ত মানুষের কাজ হয় না। তার কাজ হয় তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা।

কুরআনের দাওয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য মক্কার কাফেরদের পক্ষ থেকে সে সময় চরম হঠকারিতা ও অসৎচরিত্রের মাধ্যমে যে বিরোধিতা করা হচ্ছিলো ‘উতবার বক্তাব্য উপেক্ষা করে এখানে সেই বিরোধিতাকে আলোচ্য বিষয় হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো, আপনি যাই করেন না কেন আমরা আপনার কোন কথাই শুনবো না। আমরা আপনাদের মনের গায়ে চাদর ঢেকে দিয়েছি এবং কান বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের ও আপনার মাঝে একটি প্রাচীর আড়াল করে দাড়িয়েছে, যা আপনাকে ও আমাদের কখনো এক হতে দেবে না।

তারা তাঁকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো, আপনি আপনার দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যান, আপনার বিরোধিতায় আমাদের পক্ষে সম্ভবপর সবই আমরা করবো।

তারা নবীকে (সা) পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে যে কর্মসূচী তৈরি করেছিলো তা হচ্ছে, যখনই তিনি কিংবা তাঁর অনুসারীদের কেউ সর্বসাধারণকে কুরআন শুনানোর চেষ্টা করবেন তখনই হৈ চৈ ও হট্টগোল সৃষ্টি করতে হবে এবং এতো শোরগোল করতে হবে যাতে কানে যেন কোন কথা প্রবেশ না করে।

কুরআন মাজীদের আয়াত সমূহের উল্টা পাল্টা অর্থ করে জনসাধারণের মধ্যে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ করা পূর্ণ তৎপরতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছিলো। কোন কথা বলা হলে তারা তাকে ভিন্ন রূপ দিতো। সরল সোজা কথার বাঁকা অর্থ করতো। পূর্বাপর প্রসংগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক স্থানের একটি শব্দ এবং আরেক স্থানের একটি বাক্যাংশ নিয়ে তার সাথে নিজের পক্ষ থেকে আরো অধিক কথা যুক্ত করে নতুন নতুন বিষয়বস্তু তৈরী করতো যাতে কুরআন ও তার উপস্থাপনকারী রাসূল সম্পর্কে মতামত খারাপ করা যায়।

অদ্ভুত ধরনের আপত্তিসমূহ উত্থাপন করতো যার একটি উদাহরণ এ সূরায় পেশ করা হয়েছে। তারা বলতো, আরবী ভাষাভাষী একজন মানুষ যদি আরবী ভাষায় কোন কথা শোনায় তাতে মুজিযার কি থাকতে পারে? আরবী তো তার মাতৃভাষা । যে কেউ ইচ্ছা করলে তার মাতৃভাষায় একটি বাণী রচনা করে ঘোষণা করতে পারে যে, সেই বাণী তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। মুজিযা বলা যেতো কেবল তখনই যখন হঠাৎ কোন ব্যক্তি তার অজানা কোন ভাষায় একটি বিশুদ্ধ উন্নত সাহিত্য রস সমৃদ্ধ বক্তৃতা শুরু করে দিতো। তখনই বুঝা যেতো, এটা তার নিজের কথা নয়, বরং তা ওপরে কোথাও থেকে তার ওপর নাযিল হচ্ছে।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ



بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আরবি উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

বাংলা অনুবাদ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

الم32.1

আরবি উচ্চারণ ৩২.১। আলিফ্ লা-ম্ মী-ম।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১ আলিফ-লাম-মীম।

تَنْزِيلُ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ32.2

আরবি উচ্চারণ ৩২.২। তান্যীলুল্ কিতা-বি লা-রইবা ফীহি র্মি রব্বিল্ ‘আ-লামীন্।
বাংলা আনুবাদ ৩২.২ এ কিতাব সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই।

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَا أَتَاهُمْ مِنْ نَذِيرٍ مِنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ32.3

আরবি উচ্চারণ ৩২.৩। আম্ ইয়াকুলূনাফ্ তার-হু বাল্ হুওয়াল্ হাক্ব কু র্মি রব্বিকা লিতুন্যির ক্বওমাম্ মা য় আতা-হুম্ মিন্ নাযীরিম্ মিন্ ক্বব্লিকা লা‘আল্লাহুম্ ইয়াহ্তাদূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৩ নাকি তারা বলে, ‘সে তা রচনা করেছে?’ বরং তা তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য, যাতে তুমি এমন কওমকে সতর্ক করতে পার, যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। হয়তো তারা হিদায়াত লাভ করবে।

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ 32.4

আরবি উচ্চারণ ৩২.৪। আল্লা-হুল্লাযী খলাক্বস্-সামা ওয়া-তি অল্র্আদ্বোয়া অমা-বাইনা হুমা-ফী সিত্তাতি আইয়্যা-মিন্ ছুম্মাস্ তাওয়া ‘আলাল্-‘র্আশ্; মা- লাকুম্ মিন্দূনিহী মিওঁ অলিয়্যঁও অলা- শাফী‘ইন্ আফালা-তাতাযাক্কারূন্। বাংলা আনুবাদ ৩২.৪ আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্য কোন অভিভাবক নেই এবং নেই কোন সুপারিশকারী। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ32.5

আরবি উচ্চারণ ৩২.৫। ইয়ুদাব্বিরুল্ আম্র মিনাস্ সামা-য়ি ইলাল্ র্আদ্বি ছুম্মা ইয়া’রুজু ইলাইহি ফী ইয়াওমিন্ কা-না মিক্ব দা-রুহূ য় আল্ফা সানাতিম্ মিম্মা-তা‘উদ্দূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৫ তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে। যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর।

ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ32.6

আরবি উচ্চারণ ৩২.৬। যা-লিকা ‘আ-লিমুল্ গইবি অশ্শাহা-দাতিল্ ‘আযীর্যু রহীম্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৬ তিনিই গায়েব ও হাযির সম্পর্কে জ্ঞাত, মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ32.7

আরবি উচ্চারণ ৩২.৭। আল্লাযী য় আহ্সানা কুল্লা শাইয়িন্ খলাক্বহূ অবাদায়া খল্ক্বল্ ইন্সা-নি মিন্ ত্বীন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৭ যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদা মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ32.8

আরবি উচ্চারণ ৩২.৮। ছুম্মা জ্বা‘আলা নাস্লাহূ মিন্ সুলা-লাতিম্ মিম্মা-য়িম্ মাহীন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৮ তারপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِنْ رُوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَا تَشْكُرُونَ32.9

আরবি উচ্চারণ ৩২.৯। ছুম্মা সাওয়্যা-হু অনাফাখ ফীহি র্মি রূহিহী অজ্বা‘আলা লাকুমুস্ সাম‘আ অল্ আব্ছোয়া-র অল্আফ্য়িদাহ্; ক্বলীলাম্ মা-তাশ্কুরূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৯ তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

وَقَالُوا أَئِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ بَلْ هُمْ بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ كَافِرُونَ32.10

আরবি উচ্চারণ ৩২.১০। অক্ব-লূ য় য়া ইযা- দ্বোয়ালাল্না-ফিল্ র্আদ্বি আ ইন্না-লাফী খল্ক্বিন্ জ্বাদীদ্; বাল্ হুম্ বিলিক্ব-য়ি রব্বিহিম্ কা-ফিরূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১০ আর তারা বলে, ‘আমরা যখন মাটিতে মিশে যাব তখন কি আবার নতুন সৃষ্টি হব’? বরং তারাতো তাদের রবের সাক্ষাৎকে অস্বীকারকারী।

قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ32.11

আরবি উচ্চারণ ৩২.১১। কুল্ ইয়াতাওয়াফ্ফা-কুম্ মালাকুল্ মাওতিল্লাযী উক্কিলা বিকুম্ ছুম্মা ইলা-রব্বিকুম্ র্তুজ্বা‘ঊন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১১ বল, ‘তোমাদেরকে মৃত্যু দেবে মৃত্যুর ফেরেশতা যাকে তোমাদের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে’।

وَلَوْ تَرَى إِذِ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُو رُءُوسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ32.12

আরবি উচ্চারণ ৩২.১২। অলাও তারা য় ইযিল্ মুজ্ব রিমূনা না-কিসূ রুয়ূসিহিম্ ‘ইন্দা রব্বিহিম্; রব্বানা য় আব্ছোর্য়ানা-অসামি’না র্ফাজ্বি’না না’মাল্ ছোয়া- লিহান্ ইন্না-মূক্বিনূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১২ আর যদি তুমি দেখতে, যখন অপরাধীরা তাদের রবের সামনে মাথানত হয়ে থাকবে! (তারা বলবে) ‘হে আমাদের রব, আমরা দেখেছি ও শুনেছি, কাজেই আমাদেরকে পুনরায় পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’।

وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ 32.13

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৩। অলাও শিনা লাআ-তাইনা- কুল্লা নাফ্সিন্ হুদা-হা-অলা-কিন্ হাক্ব ক্বল্ কওলু মিন্নী লাআম্লায়ান্না জ্বাহান্নামা মিনাল্ জ্বিন্নাতি অন্না-সি আজ্ব মা‘ঈন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৩ আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’।

فَذُوقُوا بِمَا نَسِيتُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَذَا إِنَّا نَسِينَاكُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ32.14

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৪। ফাযূকু বিমা-নাসীতুম্ লিক্বা-য়া ইয়াওমিকুম্ হা-যা-ইন্না নাসীনা-কুম্ অযূকু ‘আযা- বাল্ খুল্দি বিমা-কুন্তুম্ তা’মালূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৪ কাজেই তোমরা তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতকে যে ভুলে গিয়েছিলে, তার স্বাদ তোমরা আস্বাদন কর। নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ভুলে গিয়েছি, আর তোমরা যা করতে, তার জন্য তোমরা স্থায়ী আযাব ভোগ কর।

إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ32.15

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৫। ইন্নামা-ইয়ুমিনু বিআ-ইয়া-তিনা ল্লাযীনা ইযা-যুক্কিরূ বিহা- র্খারূ সুজ্জ্বাদাঁও অসাব্বাহূ বিহাম্দি রব্বিহিম অহুম্ লা- ইয়াস্তাক্বিরূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৫ আমার আয়াতসমূহ কেবল তারাই বিশ্বাস করে, যারা এর দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ করে। আর তারা অহঙ্কার করে না।

تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ32.16

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৬। তাতাজ্বা-ফা-জুনূবুহুম্ ‘আনিল্ মাদ্বোয়া-জ্বি‘ই ইয়াদ্‘ঊনা রব্বাহুম্ খাওফাঁও অ ত্বোয়ামায়াঁও অ মিম্মা-রযাক্ব না-হুম্ ইয়ুন্ফিকুন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৬ তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ32.17

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৭। ফালা- তা’লামু নাফ্সুম্ মা য় উখ্ফিয়া লাহুম্ মিন্ ক্বর্ রতি আ’ইয়ুনিন্ জ্বাযা-য়াম্ বিমা-কা-নূ ইয়া’মালূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৭ অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।

أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا لَا يَسْتَوُونَ32.18

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৮। আফামান্ কা-না মুমিনান্ কামান্ কা-না ফা-সিক্বন্ লা-ইয়াস্তায়ূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৮ যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মত? তারা সমান নয়।

أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ32.19

আরবি উচ্চারণ ৩২.১৯। আম্মাল্ লাযীনা আ-মানূ অ ‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি ফালাহুম্ জ্বান্না-তুল্ মাওয়া-নুযুলাম্ বিমা-কা-নূ ইয়া’মালূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.১৯ যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের বাসস্থান হবে জান্নাত, তারা যা করত তার আপ্যায়ন হিসেবে।

وَأَمَّا الَّذِينَ فَسَقُوا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا أُعِيدُوا فِيهَا وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تُكَذِّبُونَ32.20

আরবি উচ্চারণ ৩২.২০। অআম্মাল্লাযীনা ফাসাকুফামাওয়া-হুমুন্ নার্-; কুল্লামা য় আরদূ য় আইঁ ইয়াখ্রুজু মিন্হা য় উ‘ঈদূ ফীহা- অ ক্বীলা লাহুম্ যূকু ‘আযা-বান্ না-রিল্লাযী কুন্তুম্ বিহী তুকায্যিবূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২০ আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন; যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর, যাকে তোমরা অস্বীকার করতে।

وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ32.21

আরবি উচ্চারণ ৩২.২১। অলানুযীক্বন্নাহুম্ মিনাল্ ‘আযা-বিল্ আদ্না-দূনাল্ ‘আযা-বিল্ আক্বারি লা‘আল্লাহুম্ ইর্য়াজ্বি‘ঊন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২১ আর অবশ্যই আমি তাদেরকে গুরুতর আযাবের পূর্বে লঘু আযাব আস্বাদন করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ 32.22

আরবি উচ্চারণ ৩২.২২। অমান্ আজ্লামু মিম্মান্ যুক্কিরা বিআ-ইয়া-তি রব্বিহী ছুম্মা ‘আরদ্বোয়া ‘আন্হা-; ইন্না-মিনাল্ মুজ্ব রিমীনা মুন্তাক্বিমূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২২ আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَلَا تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِنْ لِقَائِهِ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِبَنِي إِسْرَائِيلَ32.23

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৩। অলাক্বদ্ আ-তাইনা- মূসাল্ কিতা-বা ফালা-তাকুন্ ফী র্মিইয়াতিম্ মিল্ লিক্ব-য়িহী অ জ্বা‘আল্না-হু হুদাল্ লিবানী য় ইস্রা-ঈল্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৩ আর আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহে থেকো না। আর আমি ওটাকে বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতস্বরূপ করেছিলাম।

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ32.24

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৪। অ জ্বা‘আল্না-মিন্হুম্ আইম্মাতাইঁ ইয়াহ্দূনা বিআম্রিনা-লাম্মা-ছবারূ; অকা-নূ বিআ-ইয়া-তিনা- ইয়ূক্বিনূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৪ আর আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ32.25

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৫। ইন্না রব্বাকা হুওয়া ইয়াফ্ছিলু বাইনাহুম্ ইয়াওমাল্ ক্বিয়া-মাতি ফীমা- কা-নূ ফীহি ইয়াখ্তালিফূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৫ নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মাঝে সে বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে।

أَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْقُرُونِ يَمْشُونَ فِي مَسَاكِنِهِمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ أَفَلَا يَسْمَعُونَ32.26

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৬। আওয়ালাম্ ইয়াহ্দি লাহুম্ কাম্ আহ্লাক্না-মিন্ ক্বব্লিহিম্ মিনাল্ ক্বরূনি ইয়াম্শূনা ফী মাসা-কিনিহিম্; ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-ইয়া-ত্; আফালা-ইয়াস্মা‘ঊন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৬ এটা কি তাদেরকে হিদায়াত করল না যে, আমি তাদের পূর্বে কত প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি যাদের বাসভূমিতে তারা চলাফেরা করে? নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে। তবুও কি তারা শুনবে না?

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَسُوقُ الْمَاءَ إِلَى الْأَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا فَنُخْرِجُ بِهِ زَرْعًا تَأْكُلُ مِنْهُ أَنْعَامُهُمْ وَأَنْفُسُهُمْ أَفَلَا يُبْصِرُونَ32.27

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৭। আওয়ালাম্ ইয়ারাও আন্না- নাসূ কুল্ মা-য়া ইলাল্ র্আদ্বিল্ জুরুযি ফানুখ্রিজু বিহী র্যা ‘আন্ তাকুলু মিন্হু আন্‘আ-মুহুম্ অআন্ফুসুহুম্ আফালা-ইয়ুব্ছিরূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৭ তারা কি লক্ষ করে না যে, আমি শুকনো ভূমিতে পানি প্রবাহিত করি। অতঃপর তা দিয়ে শষ্য উদগত করি, যা থেকে তাদের গবাদি পশু ও তারা নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করে? তবুও কি তারা লক্ষ্য করবে না।

وَيَقُولُونَ مَتَى هَذَا الْفَتْحُ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ32.28

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৮। অইয়াকুলূনা মাতা-হা-যাল্ ফাত্হু ইন্ কুন্তুম্ ছোয়া-দিকীন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৮ আর তারা বলে, কখন হবে এ ফয়সালা? তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল।

قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنْفَعُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِيمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنْظَرُونَ32.29

আরবি উচ্চারণ ৩২.২৯। কুল্ ইয়াওমাল্ ফাত্হি লা-ইয়ান্ফা‘ঊল্লাযীনা কাফারূ য় ঈমা-নুহুম্ অলা-হুম্ ইয্নজায়ারূন্ ।

বাংলা আনুবাদ ৩২.২৯ বল, ফয়সালার দিনে কাফিরদের ঈমান গ্রহণ তাদের কোন উপকার করবে না। আর তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে না।

فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانْتَظِرْ إِنَّهُمْ مُنْتَظِرُونَ 32.30

আরবি উচ্চারণ ৩২.৩০। ফা‘আরিদ্ব্ ‘আন্হুম্ ওয়ান্তার্জি ইন্নাহুম্ মুন্তাজিরূন্।

বাংলা আনুবাদ ৩২.৩০ অতএব তুমি তাদের থেকে বিমুখ থাক, আর অপেক্ষা কর, নিশ্চয় তারা অপেক্ষমাণ। গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ



আস সেজদাহ্ , (আরবি: سورة السجدة‎‎, (সিজদা) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ৩২ তম সূরা। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩০ টি।

111

নামকরণঃ

১৫ আয়াতের সাজদাহর যে বিষয়বস্তু এসেছে তাকেই এ সূরার শিরোনাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

নাযিল হবার সময়কালঃ

বর্ণনাভঙ্গি থেকে বুঝা যায়, এর নাযিল হবার সময়টা হচ্ছে মক্কার মধ্যযুগ এবং তারও একেবারে শুরুর দিকে। কারণ পরবর্তী যুগে নাযিলকৃত সূরাগুলোর পশ্চাতভূমিতে যেমন জুলুম- নিপীড়নের প্রচণ্ডতা দেখা যায় এ সূরাটির পটভূমিতে সে ধরনের প্রচণ্ডতা অনুপস্থিত।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে , তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত সম্পর্কে লোকদের সন্দেহ দূর করা এবং এ তিনটি সত্যের প্রতি ঈমান আনার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানানো। মক্কার কাফেরদের মধ্যে নবী (সা) সম্পর্কে আলোচনা চলছিল যে, এ ব্যক্তি অদ্ভূত সব কথা বানিয়ে বানিয়ে শুনাচ্ছে। কখনো মরার পরের খবরও দেয় এবং বলে মরে পঁচে মাটিতে মিশে যাবার পর তোমাদের আবার উঠানো হবে। সবার হিসেব-নিকেশ হবে এবং দোজখ হবে ও বেহেশত হবে। কখনো বলে , এসব দেব-দেবী, ঠাকুর-টাকুর এসব কিছুই নয়। একমাত্র এক ও একক আল্লাহই উপাস্য। কখনো বলে , আমি আল্লাহর রাসূল। আকাশ থেকে আমার কাছে অহী আসে। যে বাণী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি এসব আমার বাণী নয় বরং আল্লাহর বাণী। এ ব্যক্তি আমাদের এ অদ্ভূত কাহিনী শুনাচ্ছে । এসব কথার জবাব দেয়াই হচ্ছে এ সূরার মূল আলোচ্য বিষয়।

এর জবাবে কাফেরদেরকে বলা হয়েছে, নিঃসন্দেহে এগুলো আল্লাহর কালাম ও বাণী। নবুওয়াতের কল্যাণ বঞ্চিত গাফলতির নিদ্রায় বিভোর একটি জাতিকে জাগিয়ে দেবার জন্য এ কালাম নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এর অবতীর্ণ হবার বিষয়টি যখনি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন তখন তোমরা একে মিথ্যা বলতে পারো কেমন করে ?

তারপর তাদেরকে বলা হয়েছে , এ কুরআন তোমাদের সামনে যেসব সত্য পেশ করে , বুদ্ধি-বিবেক ব্যবহার করে নিজেরাই চিন্তা করে বলো এর মধ্যে কোনটা তোমাদের মতে অদ্ভূত। আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা দেখো, নিজেদের জন্ম ও গঠনাকৃতি সম্পর্কে চিন্তা করো – এসব কিছু কি এ কুরআনে এ নবীর মাধ্যমে তোমাদের যেসব শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার সত্যতার প্রমাণ নয় ? বিশ্ব- জাহানের এ ব্যবস্থা তাওহীদের সত্যতা প্রমাণ করে, না শিরকের ? এ সমগ্র দেখে এবং তোমাদের নিজেদের জন্মের ব্যাপারটি দৃষ্টি সমক্ষে রেখে তোমাদের বুদ্ধি- বিবেক কি একথাই বলে যে, যিনি বর্তমানে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি পুনর্বার তোমাদের সৃষ্টি করতে পারবেন না ?

এরপর পরলোকের একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঈমানের পুরস্কার ও কুফরের পরিণাম বর্ণনা করে লোকদের কে অশুভ পরিণামের মুখোমুখি হবার আগে ত্যাগ ও কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়েছে । তাদেরকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে, এভাবে নিজেদের পরিণাম শুভ ও সুন্দর হবে।

তারপর তাদেরকে বলা হয়েছে , আল্লাহ মানুষের ভুলের দরূন তাকে আকস্মিকভাবে চূড়ান্ত ও শেষ শাস্তি দেবার জন্য পাকড়াও করেন না, এটা তার মহা অনুগ্রহ। বরং এর পূর্বে তাকে ছোটখাটো কষ্ট, বিপদ-আপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন করেন। তাকে হালকা হালকা ও কম কষ্টকর আঘাত করতে থাকেন। এভাবে তাকে সতর্ক করতে থাকেন, যাতে তার চোখ খুলে যায়। মানুষ যদি এসব প্রাথমিক আঘাতে সতর্ক হয়ে যায় তাহলে তা হবে তার নিজের জন্য ভালো।

এরপর বলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ব্যক্তির কাছে কিতাব এসেছে, দুনিয়ায় এটা কোন প্রথম ও নতুন ঘটনা নয় । এর আগে মূসার (আ) এর কাছেও তো কিতাব এসেছিল। একথা তোমরা সবাই জানো। এটা এমন কী কথা যে, তা শুনেই তোমরা এভাবে কানখাড়া করছো !বিশ্বাস করো এ কিতাব আল্লাহরই পক্ষ থেকে এসেছে এবং মূসার (আ) এর যুগে যা হয়েছিল এখন আবার সেসব কিছুই হবে, একথা নিশ্চিত জেনো। আল্লাহর এ কিতাব কে যারা মেনে নেবে এখন নেতৃত্ব তারাই লাভ করবে। একে যারা প্রত্যাখ্যান করবে তাদের জন্য নিশ্চিত ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নেই।

তারপর মক্কার কাফেরদেরকে বলা হয়েছে , নিজেদের বাণিজ্যিক সফরকালে তোমরা অতীতের যেসব জাতির ধ্বংস প্রাপ্ত জনপদ অতিক্রম করে থাকো তাদের পরিণাম দেখো। নিজেদের জন্য তোমরা কি এ পরিণাম পছন্দ করো ? বাহিরের অবস্থা দেখে প্রতারিত হয়ো না। আজ তোমরা দেখছো মুহাম্মদ (সা) এর কথা কতিপয় ছেলে- ছোকরা , গোলাম ও গরীব মানুষ ছাড়া আর কেউ শুনছে না এবং চারদিক তার বিরূদ্ধে কেবল বিদ্রুপ , তিরস্কার ও নিন্দাবাদ ধ্বনিত হচ্ছে।

এ থেকে তোমরা ধারণা করে নিয়েছো, এ বক্তব্য-বিষয় টেকসই হবে না, কিছু দিন চলবে তারপর খতম হয়ে যাবে। কিন্তু এটা কেবল তোমাদের দৃষ্টিভ্রম। তোমরা দিনরাত দেখছো আজ একটি জমি নিষ্ফল পড়ে আছে, সেখানে পানি ও লতাপাতার চিহ্নমাত্র নেই। জমিটি দেখে কেউ কল্পনা করতে পারে না যে, এর গর্ভে সবুজ শ্যামলিমার বিশাল ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। হঠাৎ পরদিন বৃষ্টিপাত হতেই ঐ মরা মাটির বুকে দেখা দেয় অভাবিত পূর্বে জীবন প্রবাহ এবং সর্বত্র সবুজের বিচিত্র সমারোহ।

উপসংহারে নবী (সা) কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে , এরা তোমার কথা শুনে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে এবং জিজ্ঞেস করছে, জনাব! আপনার সেই চূড়ান্ত বিজয় কবে অর্জিত হবে ? তার সন- তারিখটা একটু বলেন না। ওদেরকে বলো , যখন আমাদের ও তোমাদের ফায়সালার সময় আসবে তখন তা মেনে নেয়ায় তোমাদের কোন উপকার হবে না । মানতে হয় এখন মানো। আর যদি শেষ ফায়সালার অপেক্ষা করতে চাও তাহলে বসে বসে তা করতে থাকো।

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ

    প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

    আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

    Leave a Comment