সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে মাস্কের উল্লেখ আছে

মাস্ক নাক ও মুখ ঢেকে রাখার জন্য এক ধরনের বর্ম বা আবরণ, যা ধুলাবালি ও নির্দিষ্ট কিছু জীবাণু থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। উনিশ শতকের শেষের দিকে মাস্ক আবিষ্কারের পর সেগুলো মূলত ব্যবহার করতেন ডাক্তার, নার্স ও কতিপয় পেশাজীবী মানুষ; কিন্তু করোনা মহামারিতে সেই মাস্ক হয়ে উঠেছে সর্বসাধারণের অবশ্যই ব্যবহার্য বস্তু।

মাস্ক হাঁচি-কাশি বা কথা বলার মাধ্যমে ছড়ায় যত রোগ যেমন—করোনা, টিবি, সাধারণ ফ্লু প্রভৃতি থেকে অনেকাংশে সুরক্ষা দেয়। মাস্ক ঠেকায় পরিবেশ দূষণের ক্ষতিও। কমায় পোলেন অ্যালার্জি, ডাস্ট অ্যালার্জি, পরোক্ষ ধূমপানজনিত ক্ষতির আশঙ্কা। সাধারণ থ্রি লেয়ার মাস্ক পরলেই বিপদের আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

প্রথম মাস্কের উদ্ভাবন করেন একজন ফরাসি সার্জন ডা. পল বার্জার। তিনি ছিলেন সে সময়কার প্যারিসের ‘ফাকাল্টে দে মেডিসিনে’র (মেডিসিন ফ্যাকাল্টি) ক্লিনিক্যাল সার্জারি আর প্যাথলজির অধ্যাপক। তিনি ১৮৯৭ সালের অক্টোবরে গজ দিয়ে ছয় স্তরের আয়তাকার মাস্ক তৈরি করেন। এর চারদিকে ছিল কঠোরভাবে জীবাণুমুক্ত করা লিনেন কাপড়ের অংশ। এটাই ছিল বিশ্বের প্রথম সার্জিক্যাল মাস্ক।

১৮৯৯ সালে যক্ষ্মা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের প্রসঙ্গ আসে। ১৯০৫ সালে বিজ্ঞানী হ্যামিলটন জানান, স্ট্রোপ্টোকক্কাস জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য থুতু তথা ড্রপলেটের মাধ্যমে। তিনি বললেন, স্কারলেট ফিভারও ছড়ায় ড্রপলেট দিয়ে। কাজেই নার্সদের মাস্ক পরতে হবে। ১৯১৮ সালে চিকিৎসক ওয়েভার জানান, ডিপথেরিয়া ঠেকাতেও মাস্কের বিকল্প নেই। ২০১৩ সালে গবেষকরা প্রমাণ করেন, ফ্লুর রোগী এবং তাঁর ধারেকাছে যাঁরা থাকেন তাঁরা সবাই যদি মাস্ক পরেন রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা ৬০-৮০ শতাংশ কমে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী কভিড-১৯ প্রতিরোধে পরতে হবে ত্রিস্তরীয় মাস্ক। একটি ত্রিস্তরীয় মাস্কের বাইরের স্তর তৈরি হয় পলিয়েস্টার জাতীয় উপাদানে, মাঝের স্তরে থাকে বুননহীন পলিপ্রপিলিন জাতীয় উপাদান এবং ভেতরের স্তরে সুতি। এ রকম মাস্ক পরলে ৯০ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়।

মাস্ক ব্যবহারে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। এটি এমনভাবে পরতে হয় যাতে নাক ও মুখ আঁটসাঁটভাবে মাস্কের মধ্যে থাকে। মাস্কের উল্টো পিঠ ও অন্যের ব্যবহৃত মাস্ক পরা যাবে না। এর ওপরে হাত দেওয়া ও কথা বলার সময় থুতনিতে নামানো যাবে না। কোনো কারণে মাস্কে হাত দেওয়ার প্রয়োজন হলে আগে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ডিসপোজেবল মাস্ক একবারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না। মাস্ক খোলার সময় প্রথমে পেছনের ফিতে খুলতে হবে। সঠিক নিয়মে মাস্ক ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ সুরক্ষা পাওয়া যায়।

S.S.C

3 thoughts on “সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে মাস্কের উল্লেখ আছে”

Leave a Comment