শিল্পের জীবন চক্র আলোচনা কর, শিল্পের জীবন চক্র ব্যাখ্যা কর

শিল্পের জীবন চক্র আলোচনা কর, শিল্পের জীবন চক্র ব্যাখ্যা কর ৷

ভূমিকা : বিপণন বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, প্রত্যেক পণ্যের একটা জীবন চক্র আছে । তাঁরা একটি পণ্যের জীবনে চারটি স্তরকে চিহ্নিত করেছেন। যথা :- প্রারম্ভিক স্তর, প্রবৃদ্ধি স্তর, পরিপক্ক স্তর এবং অবনতি স্তর ।

একইভাবে আমরা বলতে পারি একটি শিল্পেরও জীবন চক্র আছে শিল্পের জীবন চক্র তত্ত্বটি প্রদান করেছেন। তাঁর মতে শিল্পের জীবনে চারটি স্তর রয়েছে।
যথা— ১. প্রবর্তন পর্যায়, ২. সম্প্রসারণ পর্যায়, ৩. আবদ্ধ পর্যায় ও ৪. ক্ষয় পর্যায়।

এ জীবন চক্র একজন বিনিয়োগকারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিল্পের লাভার্জন ক্ষমতা প্রবৃদ্ধি স্তরে বেশি হয়ে থাকে। অবশ্য প্রত্যেক স্তরে প্রতিষ্ঠানের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ জীবন্ত চক্র একজন বিনিয়োগকারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিল্পের লাভার্জন ক্ষমতা প্রবৃদ্ধি স্তরে বেশি হয়ে থাকে। অবশ্য প্রত্যেক স্তরে প্রতিষ্ঠনের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

এক শিল্পের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন অন্য শিল্পকে প্রভাবিত করে থাকে। যেমন- সস্তা প্লাস্টিকের আবির্ভারের পর পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে আসে। সিনথেটিক টেক্সটাইলের জনপ্রিয়তা কটন টেক্সটাইলের জনপ্রিয়তাকে হ্রাস করে দেয়।

1

১. প্রবর্তন পর্যায় ৩. আবদ্ধ পর্যায় ২. সম্প্রসারণ পর্যায় ৪. ক্ষয় পর্যায়

১. প্রবর্তন পর্যায় : একটি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ স্তরে প্রযুক্তি নতুনভাবে ব্যবহার করে এবং পণ্য নতুন করে উৎপাদন করে । এ স্তরে শিল্পের খুব চাহিদা থাকে এবং নতুন পণ্য উৎপাদন করতে পারে । ফলে বেশি পরিমাণ লাভ করার একটি সম্ভাবনা থাকে। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান এ স্তরে পরস্পর পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং অনেক দুর্বল প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে হারিয়ে যায়।

এ সকল প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে প্রতিষ্ঠান যদি সফল হয় তবে যথেষ্ট পরিমাণ লাভ করার সম্ভাবনা থাকে। অন্যথায় লাভের পরিমাণ সামান্য এবং কখনও কখনও ঋণাত্মক। একজন বিনিয়োগ বিশ্লেষককে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় কোনো কোম্পানি টিকে থাকবে নাকি বাজার থেকে বিতাড়িত হবে তা চিহ্নিত করতে। পাইওনিয়ারিং স্তরের কোম্পানিগুলোকে উদীয়মান শিল্পও বলা হয়। এ ধরনের কিছু উদারহণ হল টেলি-কমিউনিকেশনস্, কম্পিউটার সফটওয়্যার, ইনফরমেশন টেকনোলজি ইত্যাদি ।

২. সম্প্রসারণ পর্যায় : শিল্পের জীবন চক্রের দ্বিতীয় স্তর হলো প্রবৃদ্ধি স্তর। যে সকল প্রতিষ্ঠান পাইওনিয়ার স্তর থেকে সফলতার সাথে উঠে আসে সে সকল প্রতিষ্ঠান এ স্তরে প্রতিযোগিতা করে থাকে। পূর্বের তুলনায় এ স্তরে প্রতিষ্ঠান বেশি উন্নতি লাভ করে এবং প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে। এ স্তরে শিল্পের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পায় এবং খরচও কমতে থাকে ।

প্রতিষ্ঠান স্থিতিশীলতা লাভ করে এবং বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। বিনিয়োগকারী বেশি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চায়। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি যথাযথভাবে কার্যকর হয়। মূলধনের ভিত্তি সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হয়। লভ্যাংশ বেশি পরিমাণে বাড়তে থাকে এবং বেশি আকৃষ্ট হয়।

৩. আবদ্ধ পর্যায় : এ স্তরকে পরিপক্ক স্তরও বলা হয় । সম্ভবত শিল্পের জীবন চক্রের বেশি সময় এ স্তরে অতিবাহিত করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি স্থির হয়ে যায়। বিক্রয় বাড়তে থাকে তবে তা পূর্বের তুলনায় কম হারে বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণকাল থেকে স্থবিরকালে প্রবেশ করে। মূলত সামাজিক রীতিনীতি, অভ্যাস এবং উন্নত প্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। টেলিভিশন ব্যবহার করে। তবে কোনো কোনো পণ্য অল্প সময়ের জন্য স্থবির হয়। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এবং পণ্যের গুণাগুণে নতুনত্ব নিয়ে এসে আবার শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়। এভাবে আবার নতুন জীবন চক্র শুরু হয়। একজন বিনিয়োগকারী পণ্যের এ সকল স্তর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ।

৪. ক্ষয় পর্যায় : শিল্প জন্মের মাধ্যমে শুরু হয় এবং মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়। একটি শিল্পের মৃত্যু তখনই ঘটে যখন ঐ পণ্যটির বাজারে আর কোন চাহিদা থাকে না। আরও নতুন নতুন পণ্য বাজারে আসে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিস্কৃত হয় তাই পুরোনো পণ্য বাজরে টিকতে পারে না। মানুষের রুচি, পছন্দ, অভ্যাসের ও পরিবর্তন হয়। তাই পুরাতন শিল্প বাজারে হতে বিতাড়িত হয়। যেমন- কম্পিউটারে আবিস্কারের ফলে টাইপরাইটার মেশিন বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রবৃদ্ধি স্তরে বেশি লাভ প্রদান করে, স্থবিরকালে মধ্যম মানের লাভ প্রদান করে এবং অবনতিকালে বাজার থেকে উধাও হয় ।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ শিল্পের জীবন চক্র আলোচনা কর, শিল্পের জীবন চক্র ব্যাখ্যা কর ৷

Leave a Comment