শিল্পের প্রকৃতি আলোচনা কর, শিল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী? বর্ণনা কর।

শিল্পের প্রকৃতি আলোচনা কর, শিল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী? বর্ণনা কর।

শিল্প বিশ্লেষণের কিছু পরিমাণগত দিকও রয়েছে। এ পরিমাপগত দিকগুলো বিনিয়োগকারীকে শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে থাকে ।

১. অতীত কার্যফল : একজন বিনিয়োগকারী ঐ শিল্পের অতীত বিক্রয়, প্রবৃদ্ধি, আয়, লাভ, মূল্য ইত্যাদি অবশ্যই বিবেচনা করবে।

২. প্রতিযোগী : বিনিয়োগকারী অবশ্যই এ শিল্পের প্রতিযোগীদেরকেও পর্যবেক্ষণ করবে। বর্তমানে যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে সে সকল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করবে। প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহে কোনো সমস্যা আছে কিনা, প্রকল্প বিনিয়োগে সমস্যা আছে কিনা, লাভ করার জন্য যথেষ্ট উৎপাদন আছে কিনা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।

৩. শিল্পের গঠন : শিল্পের আকার, গঠন, লাভার্জন ক্ষমতা ইত্যাদি বিনিয়োগকারী বিশ্লেষণ করবে। Porter এর মতে, শিল্পের লাভার্জন ক্ষমতা শিল্পের গঠনের একটি অপেক্ষক।

৪. সরকারের প্রভাব : সরকারের নীতি, পদ্ধতি, আইনকানুন কার্যক্রম ইত্যাদি শিল্পকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

৫. গঠনগত পরিবর্তন : অর্থনীতির গঠন প্রকৃতিও একজন বিনিয়োগকারীকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেমন- সাম্প্রতিককালে অনেক দেশ শিল্পনির্ভর সমাজব্যবস্থা থেকে টেলিকমিউনিকেশন নির্ভর সমাজব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন শিল্প টিকে থাকছে এবং পুরাতন শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় লৌহ শিল্প । নতুন শিল্পের মধ্যেও গঠনগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

১৯৮০ সালের প্রথম দিকে Personal Computer ছিল একটি নব উদ্দিপ্ত গতিশীল শিল্প। কিন্তু ১৯৮২ সালে IBM যখন বাজারে নতুন Personal computer ছাড়ে তখন এ শিল্পের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতমূলক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অনেক সরবরাহকারী সফটওয়্যার, প্রিন্টার, মেমোরি ইত্যাদি সরবরাহের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

৬. চাহিদা যোগানের বা সরবরাহের ফাঁক : একটি পণ্যের চাহিদা সাধারণত ধীরগতিতে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা সংস্থাপনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা অনিয়মিত বিরতিতে পরিবর্তিত হয়। ফলশ্রুতিতে, একটি শিল্পে কখনো নিম্ন সরবরাহ আবার কখনো উচ্চ সরবরাহ ক্ষমতা বিভিন্ন সময়ে পরিলক্ষিত হয়।

অতিরিক্ত সরবরাহ একক মূল্য আদায় কমানো মাধ্যমে শিল্পের মুনাফালভ্যতা হ্রাস করে । বিপরীতক্রমে, অপর্যাপ্ত সরবরাহ একক মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফালভ্যতা উন্নয়ন ঘটায় ।
সুতরাং স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে এই চাহিদা ও যোগানের বা সরবরাহরে ফাঁক একটি শিল্পের জন্য উত্তম নির্দেশক শিল্প বিশ্লেষণের অংশ হিসেবে তাই একজন বিনিয়োগকারীকে শিল্পের চাহিদা সরবরাহকে ফাঁক সম্পর্কে অবহিত এবং নির্ণয় করতে হবে।

৭. স্থায়িত্ব : বর্তমান এই দ্রুত বর্ধিষ্ণু প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের যুগে একটি শিল্পের স্থায়িত্বের মাত্রা শিল্প বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। স্থায়িত্ব শিল্পে উৎপাদিত পণ্য এবং ব্যবহৃত প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। যদি একজন বিশ্লেষক অনুভব করেন যে, বিশেষ কোনো শিল্পের প্রয়োজনীয়তা স্বল্প সময়েই ফুরিয়ে যাবে অথবা স্বল্প সময়ের মধ্যে ত্বরিত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে পণ্য সেকেলে হয়ে যাবে তাহলে এ ধরনের শিল্পে বিনিয়োগ করা অবশ্যই বোকামি হবে।

৮. শ্রম অবস্থান : বিশ্লেষণাধীন শিল্পের শ্রম অবস্থান অর্থনীতিতে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়, বিশেষ করে যেখানে শ্রম সংঘ অনেক বেশি শক্তিশালী। যদি কোনো একটি শিল্পে শ্রমিকরা বিদ্রোহমূলক মনোভাব দেখায় বা ঘন ঘন ধর্মঘটে যায়, তাহলে সে শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা লোপ পায় ।

৯. কাঁচামালের সরবরাহ : একটি শিল্পের মুনাফালভ্যতা নির্ণয়ে কাঁচামালের সহজলভ্যতা একটি প্রয়োজনীয় বিবেচ্য বিষয়। কোনো কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে প্রধান কাঁচামাল প্রাপ্তিতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না যখন তা স্থানীভাবেই প্রচুর পরিমাণ খাওয়া যায়। আবার কোনো শিল্পকে তাদের কাঁচামাল সরবরাহ ক্ষেত্রে স্থানীয় কতিপয় উৎপাদনকারী বা দেশের বাইরে হতে আমদানির উপর নির্ভলশীল হতে হয়। তাই শিল্প বিশ্লেষণ কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা এবং শিল্পের সম্ভাবনায় তার প্রভাব এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয় ।

১০. ব্যয় কাঠামো : শিল্প বিশ্লেষণ অপর একটি বিবেচ্য বিষয় হলো শিল্পের ব্যয় কাঠামো, যেমন- স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ব্যয়ের অনুপাত। স্থায়ী ব্যয় উপাদান যত বেশি হয় তত সমচ্ছেদ বিন্দুতে পৌছানোর জন্য বিক্রয় পরিমাণ বাড়বে। বিপরীতভাবে স্থায়ী ব্যয় পরিবর্তনশীল ব্যয়ের তুলনায় যত কম হবে সমচ্ছেদ বিন্দুর পরিমাণও তত কম হবে। নিম্ন সমচ্ছেদ বিন্দু উচ্চ নিরাপত্তা মার্জিন প্রদান করে।

একজন বিশ্লেষককে নিম্ন সমচ্ছেদ বিন্দু সম্পন্ন শিল্পকেই বেশি গুরুত্ব প্রদান করা উচিত ।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিনিয়োগকারী শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত উপাদনসমূহ যথাযথভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা বাঞ্ছনীয় ।

একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।

আর্টিকেলের শেষ কথাঃ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পটভূমি বিশ্লেষণ কর

Leave a Comment