শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে কী পরখ করতে দিয়েছিলেন?, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?,অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা কর

বিষয়: শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে কী পরখ করতে দিয়েছিলেন?, ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?,অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা কর

অপরিচিতা সৃজনশীল প্রশ্ন-১ 

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

মা মরা ছোট মেয়ে লাবনি আজ শ্বশুড় বাড়ি যাবে। সুখে থাকবে এই আশায় দরিদ্র কৃষক লতিফ মিয়া আবাদের সামান্য জমিটুকু বন্ধক রেখে পণের টাকা যোগাড় করলেন। কিন্তু তাতেও কিছু টাকার ঘাটতি রয়ে গেল। এদিকে বর পারভেজের বাবা হারুন মিয়ার এক কথা সম্পূর্ণ টাকা না পেলে তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন। বিষয়টি পারভেজের কানে গেলে সে বাপকে সাফ জানিয়ে দেয়, ‘সে দরদাম বা কেনাবেচার পণ্য নয়। সে একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে, অপমান করতে নয়। ফিরতে হলে লাবনিকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবে।’

ক. শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে কী পরখ করতে দিয়েছিলেন?

খ. ‘বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়াছে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য ব্যাখ্যা কর।

ঘ. অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়-বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

শম্ভুনাথ স্যাকরার হাতে এয়ারিং পরখ করতে দিয়েছিলেন।

খ. অনুধাবন

উক্তিটি দ্বারা যৌতুক নিয়ে অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় কন্যা সম্প্রদানে পিতার অসম্মতির মধ্য দিয়ে কথক অনুপমের অপমানের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।

অনুপম-কল্যাণীর বিয়ে শুরুর পূর্বে অনুপমের মামা কন্যাপক্ষ প্রদত্ত গহনাগুলো স্যাকরা দিয়ে পরখ করায়। এমন অবমাননাকর পরিস্থিতিতে অনুপমের ভূমিকা না থাকায় কল্যাণীর বাবা কন্যা সম্প্রদানের অসম্মতি জানান। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেয়া এমন ঘটনা সচরাচর লক্ষণীয় নয়। এখানে এই ঘটনাকে অনুপমের ভাষায় বিরল এবং সমাজে অপমানজনক।

গ. প্রয়োগ

পারভেজ এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত।

‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়ক অনুপম কেবল একটি কণ্ঠস্বর শুনে কল্পনাবিলাসী হয়ে পড়ে। এরপর সেই কণ্ঠস্বরের মেয়েটিকে আড়চোখে বার বার দেখে। মেয়েটির চঞ্চলতা, সাহসিকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা তাকে মুগ্ধ করে। উদার ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের এমন মেয়ে হয়তো আর দ্বিতীয়টি নেই, সে ভাবে, এর সাথেই কি আমার বিয়ে হবার কথা ছিল?

উদ্দীপকের পারভেজ সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী। পারভেজের বিয়েতে তার বাবা যৌতুক নিতে চাইলে সে তা অস্বীকার করে। সে বলে যে, সে কেনাবেচার পণ্য নয়। একজন মানুষকে সে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে। ফিরতে হলে তাকে নিয়েই সে বাড়ি ফিরবে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

“অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয় ।” মন্তব্যটি যথার্থ।

যারা যৌতুক দাবি করে তারা লোভী, নিষ্ঠুর, অমানুষ। বিয়েতে নিজেদের দাবিকৃত পণ না পেলে তাদের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সহজেই ধরা পড়ে। এমনকি চাহিদামাফিক যৌতুক না পেলে তারা বিয়ের আসর ত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করে না। তাদের এ ধরনের আচরণ সত্যিই অমানবিক।

‘অপরিচিতা’ গল্পে মামা অনুপমের বিয়েতে টাকা ও গহনা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন এবং কন্যার পিতা এতে সম্মত হন। বিয়ের দিন, বিয়ে অনুষ্ঠানের ঠিক কিছুক্ষণ আগে তিনি কন্যার বাবাকে কন্যার গা থেকে গহনাগুলো খুলে আনতে বলেন; তিনি তা স্যাকরা দিয়ে যাচাই করাবেন। মামা এ ধরনের আচরণ ও কথাবার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতারই পরিচয় দেন। উদ্দীপকের হারুন মিয়াও অনুপমের মামার মতোই লোভী। তিনিও কন্যাপক্ষের কাছে অঢেল যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু কন্যার পিতা তা দিতে অসমর্থ হলে তিনি বিয়ের আসর থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেন।

‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা এবং উদ্দীপকের হারুন মিয়া উভয়ই সমগোত্রীয়। তারা লোভী, হীন ও অমানবিক। এ কারণেই তারা একসূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

অপরিচিতা সৃজনশীল প্রশ্ন-২

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

জুয়েল আহমেদ বড় চাকরি করেন। মধ্যবিত্ত বাবার একমাত্র মেয়ে ফাতেমার সাথে তার বিয়ের দিন ধার্য হলো। পাত্র পক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ২ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে চাইল। এমন পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না ভেবে অসহায় পিতা রাজি হলেন। 

ক. অনুপম হাতজোড় করার পর কার হৃদয় গলেছে? 

খ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না কেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ,- ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের পুরোপুরি ভাব উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে, তুমি কি একমত? পক্ষে যুক্তি দাও।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

অনুপম হাতজোড় করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। 

খ. অনুধাবন

পাত্রপক্ষের যৌতুকের স্বর্ণালংকার যাচাই করার মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না।

কল্যাণী বধূ সাজে সেজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অথচ যৌতুক লোভী পাত্রপক্ষ তাদের গহনা যাচাই করতে চাইলে তাকে গহনাগুলো খুলে দিতে হয়। পাত্রপক্ষের এই হীন-মানসিকতার ফলে শম্ভুনাথ বাবু বিয়ে ভেঙে দেন এবং কল্যাণীও পণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ সমাজে সে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। 

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকে যৌতুকের বিষয়টি যেভাবে ফুটে উঠেছে তা রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

যৌতুকের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পে যথার্থরূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে বিয়ে হবে কী হবে না সেটা মুখ্য বিষয় নয়; বরং যৌতুকের গহনা খাঁটি ও পরিমাণে সঠিক কিনা সেটাই বেশি বিবেচ্য। এর ফলে বিয়ে ভেঙে গেলেও বরের যৌতুকলোভী মামার কিছু আসে যায় না।

উদ্দীপকেও যৌতুকের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে বিয়ে ভেঙে যায়নি; বরং ভালো ছেলে পেয়ে কনের পিতার যৌতুক প্রদানে নিরুপায় সম্মতি লক্ষ করা যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, উদ্দীপকটি গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরোপুরি নয়; বরং কেবলমাত্র যৌতুকের বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

‘অপরিচিতা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যেমন- তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ঘটকের চাটুকারিতা, যৌতুক, নায়কের কল্পনাবিলাসী চেতনা, নারীর অগ্রগতি, বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙে যাওয়া, নায়িকার বিয়ে না করে নারী জাতিকে শিক্ষিত করার ব্রত গ্রহণ এবং নায়কের ভুল বুঝে তা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি।

উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেবলমাত্র যৌতুকলোভী সমাজ ও শিক্ষিত যুবকের যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার হীন-মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এখানে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অন্যান্য বিষয় বা পরিমাণ অনুপস্থিত। উদ্দীপকের কনের পিতা যৌতুক প্রদানে রাজি এবং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কোনো উল্লেখ নেই।

‘অপরিচিতা’ গল্পের অনেকগুলো বিষয় থেকে উদ্দীপকে শুধু যৌতুকের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিধি আরো বিস্তর। এখানে কনের পিতা যৌতুক যাচাই করে দেখা পাত্রপক্ষের সাথে কোন সম্পর্ক করবে না বলে অসম্মতি জ্ঞাপন করে ও বিয়ে ভেঙে দেয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।


আরো ও সাজেশন:-

অপরিচিতা সৃজনশীল প্রশ্ন-৩

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

“দেখিলাম, এই সতের বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখনও শৈশবের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই।” 

ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠানো হয়েছিল? 

খ. স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন আনা হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে বয়সের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য? বর্ণনা দাও। 

ঘ. ‘এখনও কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই’- ‘অপরিচিতার’র কল্যাণীর আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য অনুপমের পিস্তুতো ভাই বিনুদাদাকে পাঠানো হয়েছিল। 

খ. অনুধাবন

যৌতুক হিসেবে নেয়া গহনাগুলো খাঁটি কি-না তা পরখ করার জন্য স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে আনা হয়েছিল।

‘অপরিচিতা’য় কল্যাণীর বিয়েতে নগদ স্বর্ণালংকার দেয়ার কথা ছিল। কিছুতেই ঠকবার পাত্র নয় বরের মামা। বিয়ের পূর্বেই তাই গহনাগুলোর গুণাগুণ পরখ করতে বাড়ির স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে যান। প্রমাণিত হয় কল্যাণীর বাবার দেয়া সকল গহনাই খাঁটি। 

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের নায়িকা কল্যাণীর ক্ষেত্রে অনেকাংশেই প্রযোজ্য।

‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর বিয়ের সময় বয়স ছিল পনের বছর। অর্থাৎ কেবল যৌবন এসে পরিপূর্ণ করেছে তার অবয়ব। অনুপমের ভাষায়, তার গতি সহজ, দীপ্তি নির্মল, সৌন্দর্যের সূচিতা অপূর্ব, তার কোনো জড়তা নেই। অর্থাৎ যৌবন প্রাপ্তা হলেও কিশোরী সুলভ বৈশিষ্ট্যও তার মধ্যে রয়েছে।

উদ্দীপকের মেয়েটির বয়স সতের। অর্থাৎ কল্যাণীর প্রায় সমান। তার মধ্যে যৌবনের সমস্ত আলো এসে পড়েছে অথচ আচরণে রয়েছে কৈশোরত্ব। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সুতরাং উদ্দীপকের বয়সের বিষয়টি কল্যাণীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে ধরে নেয়া যায়। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

উদ্দীপকের মানসিকতায় কৈশোরের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, অথচ ‘অপরিচিতা’র কল্যাণী এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা, সে ব্যক্তিত্বপূর্ণ হিসেবে গল্পে উপস্থিত হয়েছে।

‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী সতের বছরের তরুণী হলেও গল্পের শেষদিকে এসে তার ব্যক্তিসত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। যেখানে সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। দৈহিকভাবে সে উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ অথচ মানসিকভাবে সে অনেক দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী।

উদ্দীপকে সতের বছরের যে মেয়েটির উল্লেখ করা হয়েছে তার যৌবন উদীপ্ত আলোকে ভরপুর, বিবাহযোগ্য কিন্তু তার আচরণে রয়েছে মাত্র ছেড়ে আসা কৈশোরের বৈশিষ্ট্য, চঞ্চলতা। অর্থাৎ দেহ পূর্ণ হলেও সে আচরণে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি।

‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর মধ্যে যে ব্যক্তিসত্তার প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। কেননা, উদ্দীপকের মেয়েটি কৈশোর থেকে বর্তমানে সতেরো বছর বয়সে জেগে উঠতে না পারলেও কল্যাণী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুপ্রথা যৌতুকের রিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। সে ছিল স্টেশন মাস্টারের সাথে স্পষ্টবাদী আর বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অনড়। নারী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল, যা উদ্দীপকে উঠে আসেনি।  

অপরিচিতা সৃজনশীল প্রশ্ন-৪

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় রেহানা আক্তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। এখন তিনি সমাজসেবামূলক একটি সংস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করেন। 

ক. অনুপম হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর কার হৃদয় গলেছে? 

খ. কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে কেন?

গ. রেহানা আক্তারের সমাজসেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. “রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ”- কথাটির যৌক্তিকতা বিচার কর।



৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

অনুমপ হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে। 

খ. অনুধাবন

বিয়ের পিঁড়িতে বসেও পাত্রপক্ষের হীন মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে বিয়ে না করার পণ করেছে কল্যাণী।

বরপক্ষ বিয়ে বাড়িতে মেয়ের গায়ের গহনা খাঁটি কিনা এ নিয়ে সন্দেহ করে। এতে মেয়ের বাবা শম্ভুনাথ বাবু অপমানিত হন। তিনি মেয়েকে আর সে বাড়িতে বিয়ে দেননি। বাবার অপমান ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতায় ত্যক্ত হয়ে কল্যাণী আর বিয়ে করতে চায় না। বরং দেশব্রতে মনোযোগী হয়ে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেয়। 

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের রেহানা আক্তারের সেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণের দিককে নির্দেশ করে।

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, রেহানা আক্তারের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নি। সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেখানে তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করছেন। তাঁর এ ব্রত ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ব্রতকেই মনে করিয়ে দেয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে যাওয়ার বছর খানেক পর অনুপমের সাথে আবার দেখা হলেও আর বিয়ে করার কথা ভাবে না। সে মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে। একাকিত্ব কাটানো ও সমাজের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্যই কল্যাণী এ ব্রত গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যায়, সেবামূলক কাজের দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর মূল দিক বলে বিবেচিত।  

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ- উক্তিটি যৌক্তিক।

উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে, তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে গেলেও রেহানা আক্তার মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হননি। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করার ব্যাপারেও কোনো মত প্রকাশ করেননি। তিনি সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েনি। অনুপমের মামার পণ সম্পর্কে আদিখ্যেতা ও কল্যাণীর বাবার মনোবলের জন্য বিয়ে ভেঙে যায়। কল্যাণী তখন এলাকার মেয়ে শিশুদের পড়ালেখার ভার গ্রহণ করে। মানসিকভাবে কল্যাণী কখনোই নিজের কাছে পরাজিত হয়নি।

তৎকালীন সমাজের অজ্ঞতা ও গোঁড়ামিকে ছাপিয়ে কল্যাণী নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পায়, যা উদ্দীপকে চিত্রিত বর্তমান সমাজে রেহানা আক্তারের মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের প্রতিবন্ধকতাকে তারা দুজনেই জয় করেছে।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে উদ্দীপকের রেহানা আক্তার এবং ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী দুজনেরই মানসিক দৃঢ়তা একসূত্রে গাঁথা। কেউই সমাজের চাপিয়ে দেয়া অন্যায়ে দমে যায়নি। সুতরাং, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক।

অপরিচিতা সৃজনশীল প্রশ্ন-৫

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ

বিয়ে বাড়িতে যেন মহোৎসব শুরু হয়েছে। চারিদিকে মহাধুমধাম চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে বাবা-মা অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন।  

ক. মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য কী ছিল?

খ. মামা বাড়ির স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন এনেছিল?  

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের মিলগুলো নির্দেশ কর। 

ঘ. উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র- কথাটির সত্যতা বিচার কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জ্ঞান

মামার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তিনি কারো কাছে ঠকবেন না।

খ. অনুধাবন

গহনা আসল না নকল তা পরীক্ষা করার জন্য মামা বিয়ে বাড়িতে স্যাকরাকে সঙ্গে এনেছিল।

কল্যাণীর বিয়েতে বাবা নগদ পণের সাথে গহনা দিতে চান। এসব গহনা খাঁটি কিনা বা মেয়ের বাবা বরপক্ষকে ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য মামা স্যাকরাকে সঙ্গে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে আসেন। স্যাকরা সমস্ত গহনা দেখে খাঁটি প্রমাণ করেন। 

গ. প্রয়োগ

উদ্দীপকের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিয়ে-উৎসবের আয়োজনে ব্যাপকতা ও হঠাৎ করে বিরূপ পরিবেশ চিত্রণের মিল রয়েছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়িতে মহাধুমধাম চলছে। সবাই আনন্দে মহোৎসব জুড়ে দিয়েছে। সবার প্রাণে বয়ে চলেছে খুশির জোয়ার। কোথাও কোনো জড়তা বা কোলাহল চোখে পড়ে না। উৎসবমুখর পরিবেশে একটি বিয়ে বাড়ির চিত্র উদ্দীপকে দেখা যায়। পাশাপাশি কনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়াও এখানে লক্ষণীয়।

‘অপরিচিতা’ গল্পেও বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখরতা চোখে পড়ে। বরপক্ষের অতিরঞ্জিত আয়োজন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ব্যান্ড, বাঁশি, শখের কনসার্ট কোনোটাই বাদ যায় না। মেয়ের বাড়িতেও তার ছোঁয়া লাগে। কনেপক্ষের আতিথেয়তায় বরপক্ষ খুশি হয়। কিন্তু বিয়ে ভেঙে যাওয়াতে এ সবকিছুই লণ্ডভণ্ডের মধ্য দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের এ উভয় দিকই উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পে ফুটে উঠেছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা

উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র- কথাটি সঠিক।

উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ে বাড়ির উৎসবমুখর পরিবেশ এবং সবশেষে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে মা-বাবার কান্নার চিত্র। কিন্তু ‘অপরিচিতা’ গল্পে আরো নানা বিষয় বিস্তারিতভাবে ফুটে উঠেছে।

‘অপরিচিতা’ গল্পে দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে ভেঙে যাওয়ার চিত্র। এছাড়া যৌতুক নিয়ে অনুপমের মামার হীন মানসিকতা ও কল্যাণীর বাবার দৃঢ় মনোবল চোখে পড়ে। গল্পে কল্যাণীর ব্রত গ্রহণের বিষয়টিও চোখে পড়ে। কল্যাণী মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর ব্রত গ্রহণ করে, যা উদ্দীপকে দেখা যায় না। সর্বোপরি ‘অপরিচিতা’ গল্পে দুজন মানব-মানবীর সংসার-জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে মানসীর প্রতি প্রেমিক হৃদয়ের দুর্বার আকাক্সক্ষার স্বরূপ চিত্রিত হয়েছে, যার আভাসমাত্র উদ্দীপকে নেই।

সুতরাং, দেখা যায় ‘অপরিচিতা’ গল্পে বিস্তারিত বর্ণনার আড়ালে যৌতুক প্রথা, সামাজিকতা ও অপূর্ণতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে ফুটে ওঠেনি। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ও

Leave a Comment