মানুষ আনন্দমোহন বসু’র

বঙ্গীয় রেনেসাঁর অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির পথপ্রদর্শক, প্রথম র‌্যাংলার আনন্দমোহন বসু।


শিক্ষার নগর ময়মনসিংহে শত বছরের অধিককাল ধরে আলো ছড়ানো প্রধান প্রতিষ্ঠানের নাম আনন্দমোহন কলেজ। এই কলেজটির সাথে যে মানুষটির নাম জ্বলজ্বল করছে, তিনি হলেন আনন্দমোহন বসু। আনন্দমোহন বসু যে শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলেই তাঁর নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমনটি ভাবলে উনার কর্মকে শুধু খাটো করাই হবেনা, ইতিহাসের অনেককিছুই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এবং আমাদের অজানা থেকে যাবে ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা জানা না থাকলে, আমরা আমাদেরকেই বঞ্চিত করবো এক আলোছড়ানো কীর্তিমান মানুষের দীপ্তি থেকে। উনি শিক্ষায় অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি সমাজ, রাজনীতি, নারীর অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন।


আনন্দমোহন বসু ময়মনসিংহ বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার (তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা) ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের এক ভূস্বামী পরিবারে ১৮৪৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা পদ্মলোচন বসু ও মাতা উমা কিশোরী দেবী। পিতা পদ্মলোচন বসু ছিলেন ময়মনসিংহ জজ আদালতের পেশকার।


শিক্ষাজীবনঃ
ময়মনসিংহের ‘হার্ডিঞ্জ বঙ্গ বিদ্যালয়’এ আনন্দমোহন বসু’র শিক্ষা জীবন শুরু হয় এবং এখান থেকে ছাত্রবৃত্তি লাভ করে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৬২ সালে তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন এবং প্রথম শ্রেণীর বৃত্তি লাভ করেন। এরপর কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ, বিএ এবং এমএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করে উত্তীর্ণ হন। এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গনিত বিষয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করাকালীন পরের বছর ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ’ ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বৃত্তি পাওয়ার সুবাদে ইংল্যান্ডে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের পথ প্রশস্ত হয় তাঁর। তিনি ইংল্যান্ডে ক্যাম্ব্রিজ এর ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে উচ্চতর গণিত বিষয়ে লেখাপড়া করেন। ১৮৭৪ সালে সেখানে গণিত বিষয়ক সর্বোচ্চ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনটি বিষয়ে প্রথম শ্রেণি অর্থাৎ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ‘র‌্যাংলার’ (তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম) উপাধি লাভ করেন আনন্দমোহন বসু।

একই বছর বার-এট-ল ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরে আসেন এবং আইন পেশায় যোগ দেন। এর পূর্বেই ছাত্রাবস্থায় তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ভগবান চন্দ্র বসুর কন্যা এবং বিজ্ঞানাচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর বোন স্বর্ণপ্রভা দেবীকে বিয়ে করেন।


সামাজিক আনন্দমোহন বসুঃ
ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে ১৮৬৯ সালে সস্ত্রীক ব্রাহ্ম ধর্মমতে দীক্ষিত হন আনন্দমোহন বসু । দেশে ফিরে কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজের সাথে যুক্ত হন এবং ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত বিভিন্ন ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৮৭৮ সালে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধের বিষয়গুলোর অন্যতম একটি ছিল কেশবচন্দ্র সেনের নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে কুচবিহারের নাবালক মহারাজার বিয়ে। এ ক্ষেত্রে আনন্দমোহন ভিন্ন মতাবলম্বীদের নেতৃত্ব দেন এবং সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ নামে ব্রাহ্মসমাজের একটি নতুন ও প্রগতিশীল ধারা প্রতিষ্ঠা করেন।
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৩ বছর তিনি এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।


রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আনন্দমোহন বসুঃ
রাজনীতির ক্ষেত্রে আনন্দমোহনের দুটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ১৮৭৫ সালে কলিকাতায় ‘স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নিজ শহর ময়মনসিংহেও এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরের বছর একান্ত বন্ধু সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীসহ আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর সাথে মিলে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠন হিসেবে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘ভারত সভা’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন যথাক্রমে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং আনন্দমোহন বসু। পর্যায়ক্রমে এর কার্যধারায় দেশব্যাপী রাজনৈতিক আলোড়ন তৈরি হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’র যাত্রা শুরু হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’র প্রতিষ্ঠাকালে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখেন আনন্দমোহন বসু ।

১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চতুর্দশ অধিবেশনে তিনি সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে ১৮৯৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’র বঙ্গ প্রদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আনন্দমোহন বসু ১৮৮৫-৮৭ এবং ১৮৯৫-৯৭, ১৯০০ সালে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের রাজনৈতিক অপকৌশল ‘বঙ্গভঙ্গ’র তীব্র বিরোধিতা করেন আনন্দমোহন বসু এবং প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ‘বঙ্গভঙ্গ’ কার্যকর করার দিনে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত বঙ্গভঙ্গবিরোধী এক বিশাল জনসভায় সভাপতিত্ব করে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন তিনি ।


শিক্ষাক্ষেত্রে আনন্দমোহন বসুঃ
সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে আনন্দমোহন বসুর রয়েছে বিশেষ অবদান । ১৮৭৯ সালে কলকাতায় সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ময়মনসিংহের পৈত্রিক বাড়িতে সিটি কলেজের একটি শাখা স্থাপন করেন, যা কালক্রমে স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমানে ‘আনন্দমোহন কলেজ’ নামে পরিচিত।


১৮৮২ সালে ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশনের (হান্টার কমিশন) সদস্য করে। এর পর একে একে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও ‘ফেলো’ মনোনীত হন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরীক্ষা গ্রহণকারী সংস্থা থেকে পরীক্ষা গ্রহণকারী ও শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। ১৮৯২ সালের ভারত আইনের অধীনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গীয় আইন পরিষদে একজন সদস্য নির্বাচন করার অধিকার পায়। আনন্দমোহন বসু ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদে প্রথম প্রতিনিধি।
আনন্দমোহন বসু এবং আনন্দমোহন কলেজ
নিজ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসু ১৮৮৩ সালে ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরের রাম বাবু রোডস্থ তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ময়মনসিংহ ইনস্টিটিওশন (বর্তমান ‘সিটি কলেজিয়েট স্কুল’)। প্রতিষ্ঠাকালে এ বিদ্যালয়ে শহরের সর্বাধিক ছয়শত নয়জন ছাত্র ছিল। ময়মনসিংহে কোন কলেজ না থাকায় ১৮৯৯ সালে ‘ময়মনসিংহ সভা’ ও আঞ্জুমানিয়া ইসলামিয়া’ আনন্দমোহন বসুর কাছে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবী জানায়। এ দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিলের তৎকালীন সভাপতি আনন্দমোহন বসু ১৯০১ সনের ১৮ জুলাই ‘সিটি স্কুল’টিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে উন্নীত করেন এবং এবং একে কলকাতার সিটি কলেজের সাথে যুক্ত করেন। প্রাথমিক অবস্থায় কলিকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিলের আর্থিক সহযোগিতায় ময়মনসিংহ সিটি কলেজ পরিচালিত হতো, পরের বছর ১৯০২ সালের এপ্রিল মাসে এটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দ্বিতীয় গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইতোমধ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের অর্থ সাহায্যে কলেজের পুরোবাগে রাস্তার পাশে কলেজের জন্য পাকা ভবন নির্মিত হয়।

১৯০৬ সালে আনন্দমোহন বসুর মৃত্যুর পর ময়মনসিংহ সিটি কলেজ নানা সংকটের সম্মুখীন হয়। প্রথমত কলকাতা সিটি কলেজ কাউন্সিল অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ময়মনসিংহ সিটি কলেজকে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিযুক্তকরণের জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট দাবী পেশ করে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৮ সালের ৩১ মার্চ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলিকাতা সিটি কলেজ থেকে ময়মসসিংহ সিটি কলেজের সংযুক্তি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

এই অবস্থায় কলেজের কার্যক্রম এক প্রকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময়কার প্রিন্সিপাল বৈকুন্ঠনাথ চক্রবর্তী কলেজটি পুনর্গঠনের উদ্যোগে নেন এবং তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. জে. আর. ব্ল্যাকউডের শরণাপন্ন হন। মি. জে. আর. ব্ল্যাকউডের স্থানীয় শিক্ষাবিদ ও উদ্যমী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠন করে ‘ময়মনসিংহ কলেজ’ নামে কলেজটিকে পুনুজ্জবীত করেন। এ কমিটি কলেজের পরিচালনা ও যাবতীয় খরচের দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং কলেজের জন্য তহবিল ও নতুন জায়গা সংগ্রহের জোরালো প্রয়াস চালায়।

তৎকালীন ভারত সরকারের গ্রান্ট-ইন-এইড এর আওতায় অর্থ সাহায্য প্রাপ্তির জন্য বিভাগীয় কমিশনার এর সাথে কমিটি সাক্ষাৎ করে।
বিভাগীয় কমিশানার কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ৫৫,০০০/-(পঞ্চান্ন হাজার) টাকা বরাদ্দ দেন। পাশাপাশি কলেজের সার্বিক উন্নতির জন্য স্থানীয় কয়েকজন জমিদার ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগতভাবে ১,১৮,৩৯৫/- (এক লক্ষ আঠার হাজার তিনশত পঁচানব্বই) টাকা এককালীন অনুদান প্রদান করেন।


আনন্দমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠায় যাঁর ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য তিনি হলেন, ময়মনসিংহ জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট, আইনজীবী, আনন্দমোহন বসুর কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী বন্ধু, আঞ্জুমানে ইসলামিয়া এর সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি কলেজের জন্য কাঁচিঝুলীতে ২৬ বিঘা জমি প্রদান করেন এবং বন্ধু আনন্দমোহন বসুর নামে কলেজটির নামকরণের প্রস্তাব করেন।

মৌলভী হামিদ উদ্দিন ছাড়াও তাঁর জমির পাশ্ববর্তী আরো কয়েক বিঘা জায়গা স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ কলেজের জন্য দান করেন। সরকারি-বেসরকারি নানা উৎস থেকে সংগৃহীত অর্থ এবং জমি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজটি বর্তমান স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। নতুন ভবন নির্মানসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে ১৯০৮ সালের শেষের দিকে ‘ময়মনসিংহ কলেজ’ এর নাম পরিবর্তন করে মৌলভী হামিদ উদ্দিন আহমদ এর প্রস্তাবমতো কলেজের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা আনন্দমোহন বসুর নামানুসারে ‘আনন্দ মোহন কলেজ’ রাখা হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।

কয়েক বছরের মধ্যেই এটি প্রথম শ্রেণীর একটি কলেজে উন্নীত হয়। ফলে ১৯১৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এটিকে প্রথম গ্রেডের কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। কালের পরিক্রমায় আজো স্বমহিমায় বাংলাদেশের তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আনন্দমোহন কলেজ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

নারীর অগ্রযাত্রায় আনন্দমোহন বসু’র অবদানঃ
পশ্চাদপদ নারীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর সহযোগিতায় ১৮৭৬ সালে কলিকাতায় স্থাপন করেন ‘বঙ্গমহিলা মহাবিদ্যালয়’। যা পরে বিখ্যাত বেথুন স্কুলের সঙ্গে একীভুত হয়। আনন্দমোহন বসু ও দুর্গামোহন দাসের ঐকান্তিক চেষ্টায় বেথুন স্কুলের সর্বোচ্চ শ্রেণীর দু’ছাত্রী কাদম্বিনী বসু ও সরলা দাস কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেবার উপযুক্ত বিবেচিত হন। ১৮৭৮ সালে কাদম্বিনী বসু প্রথম এন্ট্রান্স পাস মহিলা হবার গৌরব অর্জন করেন। এর ফলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। আনন্দমোহন বসু কলিকাতায় ‘ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়’র একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।


কেবল তাই নয়, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী, দুর্গামোহন দাস, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের আন্দোলনে কারণে ১৮৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভের দাবি মেনে নেয় এবং ১৮৮২ সালে কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসু প্রথম মহিলা স্নাতক হবার সম্মান অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি ‘বেঙ্গল প্রভিনসিয়াল কমিটি’র মাধ্যমে ১৮৮১-৮২ সালে ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল স্থাপনের ব্যবস্থা করেন।

প্রগতিশীল সমাজকর্মী, নিবেদিত প্রাণ শিক্ষানুরাগী, বিচক্ষণ কর্মযোগী, উপমহাদেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতর পথ প্রদর্শক হিসেবে বঙ্গীয় রেনেসাঁর উত্তরণে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন আনন্দমোহন বসু, যার মধ্য দিয়ে তিনি যথার্থই হয়ে উঠেছেন কালোত্তীর্ণ এক মানুষ।


১৯০৬ সালের ২০ আগস্ট (বাংলা ১৩১৩ সনের ৪ ভাদ্র) সোমবার সূর্যাস্তের সময় কলিকাতাস্থ আপার সার্কুলার রোডের আচার্য বিজ্ঞানী জগদ্বীশ চন্দ্র বসুর বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ক্ষণজন্মা মানুষটি।
আনন্দমোহন বসু’র জন্মবার্ষিকীতে আমাদের অতল শ্রদ্ধা।

‘আনন্দমোহন বসুঃইতিহাসের অপ্রকাশিত অধ্যায়’
এ বছর বাংলা একাডেমির একুশে বই মেলায় আনন্দমোহন বসু’র জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘আনন্দমোহন বসুঃ ইতিহাসের অপ্রকাশিত অধ্যায়’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে ‘ভাষাচিত্র’। এই কীর্তিমান মানুষ এবং সেই সময়ের ইতিহাসের অনেক অজানা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আগ্রহী ব্যক্তিগন বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।

Leave a Comment