বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর উপায়,দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর উপায়

বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অনেকের ঝামেলা মনে হলেও খুব সহজ। বিদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর অনেক সুবিধা আছে। বিদেশে থেকে টাকা পাঠানো কিছু নিয়ম রয়েছে যা অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা ছাড়াই আপনি সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর উপায়,দেশের বাইরে টাকা পাঠানোর উপায়,বিদেশ থেকে ইসলামী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর নিয়ম

এই অনুচ্ছেদে আমরা জানতে পারবো, কিভাবে বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংক একাউন্টে পাঠাতে পারবো, টাকা পাঠানোর জন্য কি কি বিষয় জানা লাগবে এবং কি কি সুবিধা রয়েছে।

বিভিন্ন কাজের সূত্রে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভর করেন দেশে থাকা তাদের পরিবার-পরিজনরা। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিশাল অংশই প্রচণ্ড পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন। এই কষ্টার্জিত টাকা দেশে পাঠানোর জন্য তারা বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। আগে এই মাধ্যমগুলোতে অনেক জটিলতা থাকলেও এখন ধীরে ধীরে তা সহজ হচ্ছে। পুরনো পরিষেবাগুলোর পাশাপাশি প্রযুক্তির উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সেবা। এই সেবাগুলোর ব্যবহার করে অনায়াসেই দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন প্রবাসীরা। চলুন, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সেরা কয়েকটি মাধ্যমের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।

বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সেরা কয়েকটি পরিষেবা-

বিকাশ

এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা  বিকাশ তাদের সেবার পরিধিকে দেশের বাইরেও প্রসারিত করেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের এই সহায়ক প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে আসা গ্রাহকদের টাকাগুলো তাদের হাতের মুঠোয় এনে দিতে সক্ষম হয়েছে। এর জন্য বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিকে সর্বপ্রথম সে দেশে বিকাশের অনুমোদিত, অংশীদার এবং তালিকাভূক্ত ব্যাংকের শাখা, মানি এক্সচেঞ্জ কিংবা এমটিও(মানি ট্রান্সফার অপারেটর) এজেন্ট-এর কাছে যেতে হয়। এই এজেন্টরাই টাকাটি বিদেশ থেকে সেই ব্যক্তিটির দেশে অবস্থানরত পরিচিতজনদের নিকট পাঠাতে সহায়তা করে।

বিকোশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানো যায়। আর প্রতি মাসে পাঠানো যায় সর্বমোট চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই অর্থ প্রদানে বিকাশকে কোনো প্রকার বাড়তি মূল্য দিতে হয় না। তবে সেই ব্যক্তিটির বাংলাদেশে পরিজনদের সেই টাকাটি ক্যাশ আউট করতে হলে বিকাশের নির্ধারিত খরচটি দিতে হয়। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি হাজারে ১৭.৫০ টাকা আর অ্যাপ ছাড়া ১৮.৫০ টাকা।

ওয়াইজ

নতুন হলেও ঝামেলামুক্ত নিরবচ্ছিন্ন মানি ট্রান্সফার ব্যবস্থার নাম ওয়াইজ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে অর্থ স্থানান্তরের জন্য এখন ওয়াইজ একটি সুপরিচিত নাম। অবাক করা বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে শুরু হলেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় বিশ মিলিয়নেরও বেশি। মোবাইল ফোনে এর অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা একে আরো যুগপোযোগী ও আরও সার্বজনীন করে তুলেছে। অনেকেই অন্য দেশ থেকে সেই দেশের মুদ্রা কিনে নিচ্ছেন ওয়াইজের বদৌলতে। 

ওয়েবসাইট থেকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় অবশ্যই ব্যবহারকারীর সঠিক তথ্য দিতে হবে। মুদ্রা বিনিময়সহ লেনদেনের সময় নামমাত্র চার্জ কাটে, যার জন্য প্রবাসীদের কাছে প্রথম পছন্দ ওয়াইজ। কোনো ব্যাংক বা এজেন্টের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। হাতের মুঠোফোনটাই সকল দায়িত্ব নিয়ে নেবে নিজের দেশে প্রিয়জনদের কাছে টাকা পাঠানোর। আর এই টাকার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাবে ২.৫% রেমিট্যান্স ।

ট্যাপট্যাপ সেন্ড

অতিরিক্ত ফি প্রদানের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে হলে ব্যবহার করতে হবে ট্যাপট্যাপ সেন্ড। মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকার ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি কর্তৃক অনুমোদিত, তাই এতে অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এদের কার্যক্রম শুরু হয়। ফান্ড টান্সফারে ট্যাপ করলেই মুহুর্তের মধ্যে তা পৌছে যায় প্রাপকের কাছে। এছাড়া সেরা মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে অচিরেই ট্যাপট্যাপ সেন্ড গ্রাহকদের প্রিয় পছন্দে পরিণত হয়েছে। 

যুক্তরাজ্য, কানাডা,  ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, বেলজিয়াম, স্পেন, ও নেদারল্যান্ডসের মত দেশগুলো থেকে অনায়াসেই টাকা পৌছে যায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছে। বিকাশসহ বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে ট্যাপট্যাপ। 

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২.৫% রেমিট্যান্স তো থাকছেই, পাশাপাশি ট্যাপট্যাপ সেন্ড অ্যাপ দিয়ে বাংলাদেশে টাকা পাঠালে ট্যাপট্যাপ থেকে বিশেষ বোনাসও দেয়া হয়। প্রথম অ্যাকাউন্ট খুলে নির্দিষ্ট প্রোমো কোড ব্যবহার করে ফান্ড পাঠালেই মিলবে এই বোনাস।

স্ক্রিল

বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সারদের অর্জিত টাকা হাতে পাওয়ার উপযুক্ত পেমেন্ট গেটওয়ে স্ক্রিল। জুমের মতো এটিকেও পেপালের বিকল্প ধরা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে অর্থ উত্তোলনের জন্য স্ক্রিল চাওয়া হয়। এটি বাংলাদেশের মত পেপ্যাল না থাকা দেশগুলোর জন্য রীতিমত হাফ ছেড়ে বাঁচা। প্রবাসীরাও এই সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারেন কোন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই। 

এর সুবিধাগুলোর মধ্যে অনেক কম মানি ট্রান্সফার ফি অন্যতম। তাছাড়া সঙ্গে আছে যথেষ্ট সুরক্ষার সাথে দেশে ফান্ড পৌঁছানোর নিশ্চয়তা। সাধারণ পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর মতো স্ক্রিলেরও মোবাইল অ্যাপ আছে। এই যাবতীয় সুবিধা পেতে অফিশিয়াল ওয়েবপেজ থেকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে নিলেই কাজ শেষ। তবে একটি সফল অ্যাকাউন্টের জন্য সরবরাহকৃত তথ্যগুলো অবশ্যই প্রমাণসাপেক্ষ হতে হবে।

একটি স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে টাকা দেওয়া যায়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা পাঠালে অ্যাকাউন্টটি ব্যবসায়িক হতে হবে। এখানে কোনো ফি নেই, কিন্তু গ্লোবাল পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করলে টাকা প্রদানপূর্বক ফি ১.২৫% পর্যন্ত কাটতে পারে।

মানিগ্রাম

বিদেশ থেকে দেশে ফান্ড সরবরাহের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ৩ লক্ষাধিক এজেন্ট সমৃদ্ধ মানিগ্রাম বেশ পরিচিত একটি নাম। পুরনো প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে অধিকাংশ প্রবাসীদের কাছে এর নির্ভরযোগ্যতা অনেক। এ পদ্ধতির জন্য প্রদানকারীর পরিচয়পত্র সহ কিছু কাগজপত্র এবং সেই দেশের মুদ্রার নির্দিষ্ট অর্থ নিয়ে মানিগ্রাম এজেন্টের কাছে যেতে হবে। ব্যাংক ও মোবাইল ওয়ালেট এই গন্তব্যে ডিজিটাল মুদ্রা মানিগ্রাম করা যায়। 

এর জন্য গ্রহণকারীর অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ওয়ালেট নম্বর প্রয়োজন হয়। মানিগ্রামের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড হলে প্রতি ১০০০ ইউএসডি(আমেরিকান ডলার)তে ব্যাংক চার্জ ৩২.৯৯ ইউএস ডলার) এবং ডেবিট কার্ড হলে ১.৯৯ ইউএসডি।

বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য আপনাকে সেখানে অবস্থিত এজেন্ট বা এক্সচেঞ্জ হাউসের সাহায্য নিয়ে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। এজন্য যে একাউন্টে টাকা পাঠাবেন সে একাউন্টের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম, ব্যাংক একাউন্ট মালিকের পুরো নাম ও ঠিকানা, সুইফট কোড ইত্যাদি লাগবে।

বাংলাদেশী নাগরিক যদি বিদেশে অবস্থান করে বৈধভাবে বাংলাদেশে টাকা পাঠায়, সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়। কারণ, সকল টাকা রেমিটেন্স হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক খাতে যুক্ত হয়।

প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে নিয়ম প্রায় একই। এই অনুচ্ছেদে আমরা জানতে পারবো কিভাবে আপনি বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি। নিচে আমরা জানবো বিদেশ থেকে টাকা সোনালী ব্যাংকে পাঠানোর জন্য কি কি লাগবে।

একনজরে যা যা লাগবে

  • সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর।
  • একাউন্ট মালিকের পুরো নাম ও ঠিকানা।
  • সোনালী ব্যাংকের শাখার নাম।
  • উক্ত শাখার সুইফট কোড।

সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর

সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর হচ্ছে প্রতিটি ব্যাংকের একাউন্ট নম্বরের মতোই। একটি ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর উক্ত ব্যাংকের ইউনিক নম্বর। একজন গ্রাহকের একাউন্ট নম্বর এবং অন্য জনের একাউন্ট নম্বর সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে।

যদি একাউন্ট নম্বর আলাদা আলাদা না হতো তাহলে একজন গ্রাহক যখন ব্যাংকের মাধ্যমে এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে টাকা পাঠাবে তখন সমস্যা সৃষ্টি হতো। তাই আপনি যখন বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠাবেন তখন একাউন্ট নম্বর যাতে সঠিক হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।

যদি কোনো কারণে আপনার দেওয়া একাউন্ট নম্বর আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরের সাথে না মিলে যায়, তাহলে আপনার টাকা অন্য একাউন্টে চলে যেতে পারে। তবে যদি উক্ত ব্যাংকে ভূল নম্বরের কোনো একাউন্ট নম্বর না থাকে, তাহলে আপনার টাকা লেনদেন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে।

একাউন্ট মালিকের পুরো নাম ও ঠিকানা

একটি গ্রাহকের একাউন্ট নম্বরের পাশাপাশি তার নাম ও ঠিকানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আপনি যখন বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবেন, তখন যে একাউন্টে টাকা পাঠাবেন সেই একাউন্টের মালিকের নাম ও ঠিকানা সঠিকভাবে না বসালে আপনার টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যাবে।

একজন গ্রাহকের একাউন্ট নম্বর ইউনিক হয়ে থাকে। তাই একাউন্টের মালিকের নাম ও ঠিকানা সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন কেননা আপনি যদি কোনো কারণে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টাকা পাঠান, সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে যাচাই করতে পারে। যাচাই করলে ব্যাংক যাতে বলতে পারে যে আপনি কোথায় টাকা পাঠিয়েছে এবং কার কাছে টাকা পাঠিয়েছেন।

সোনালী ব্যাংকের শাখার নাম

বিদেশে থেকে টাকা পাঠানোর আরোও একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো উক্ত ব্যক্তির শাখার নাম। আপনি যে ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন, কোন একাউন্টে টাকা পাঠাবে এবং কোন শাখায় টাকা পাঠাবেন সেটা জানা অত্যন্ত জরুরী।

বিদেশ থেকে যখন কেউ দেশে টাকা পাঠায়, তখন সেই টাকার দরকার থাকে। সেজন্য ব্যাংক তো সব জায়গায় আপনার টাকা পাঠাতে পারবেনা। আপনি সোনালী ব্যাংকের যে শাখায় একাউন্ট চালু করেছেন ব্যাংক শুধু সেই শাখায় টাকা পাঠাবে।

তাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর জন্য অবশ্যই আপনাকে শাখার নাম সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। যদি আপনি সঠিকভাবে শাখার নাম প্রদান না করেন, তাহলে আপনার টাকা উত্তোলন করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উক্ত শাখার সুইফট কোড

সুইফট কোড হচ্ছে এমন একটি কোড যা দিয়ে একটি ব্যাংক একাউন্ট কোন জেলায় তৈরি করা হয়েছে তা চিহ্নিত করা যায়। সুইফট কোড দরকার লাগে মূলত দেশ থেকে বিদেশে অথবা বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে।

কেউ ইচ্ছে করে যদি ভূল সুইফট কোড বসিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার টাকা লেনদেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া বিদেশ থেকে ডলার বা অন্যান্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রা পাঠাতে চাইলে অবশ্যই আপনার জেলার সুইফট কোড নির্ভুলভাবে প্রদান করবেন।

সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হলে উপরিউক্ত তথ্য জানা থাকলে আপনি বিদেশ থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। তাছাড়া উপরিউক্ত তথ্য ছাড়াও যদি অন্যসকল তথ্য লাগে তাহলে এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চের প্রতিনিধি আপনাকে জানিয়ে দিবে।

পরবর্তী ধাপে, আপনাকে দেশে টাকা পাঠাতে হলে আপনাকে উপরিউক্ত তথ্যগুলো লিখে নিতে হবে। আপনি ভুলেও যেতে পারেন, তাই অবশ্যই আপনাকে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কেননা, আপনি যদি একাউন্ট নম্বর ভুল করেন, তাহলে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর আগে অবশ্যই চেক করে নিয়ে তারপর সেন্ড করা উচিত।

সকল তথ্য কাগজে লিখে নেওয়ার পর আপনাকে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে চলে যেতে হবে। নিচের লিংকে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের তালিকা সম্পর্কিত একটি পিডিএফ দেওয়া হয়েছে।

মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের তালিকা

উপরে দেওয়া বাটনে ক্লিক করে আপনি আপনি বাংলাদেশের সকল মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখে নিতে পারেন। এর ফলে আপনি ভেরিফাই করে নিতে পারবেন, কেননা উপরিউক্ত তালিকার যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠালে আপনার পাঠানো টাকা নিরাপদে আপনার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির কাছে পৌছে যাবে।

আপনি যখন বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠাবেন, তখন আপনাকে সকল দরকারি তথ্য মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে প্রদান করতে হবে। সাথে সাথে ঐ প্রতিনিধি আপনার টাকা আপনার দেওয়া কাঙ্ক্ষিত একাউন্টে পাঠিয়ে দিবে।

উপরে উল্লেখিত যেকোন একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার মাধ্যমে আপনি, বিদেশ থেকে যেকোন সময় দেশে নিয়ে আসতে পারবেন।

বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুবিধা

বিদেশ থেকে সোনানী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর অনেক সুবিধা রয়েছে। কেননা, আপনি যদি একজন দেশপ্রেমিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই আপনাকে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাঠানো উচিত।

মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গুলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত। যার মাধ্যমে আপনি টাকা পাঠালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। ফলে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে দরকারী জিনিসপত্র ক্রয় করে থাকে। যদি বৈদেশিক মুদ্রা না অর্জিত হয়, তাহলে আমরা বিদেশ থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করতে পারবোনা। ফলে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিবে।

যদি আপনি বৈধ উপায়ে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠান, তাহলে আপনি দেশের উন্নয়নের জন্য ভূমিকা রাখলেন।

তাছাড়া, আপনি যদি বৈধ উপায়ে টাকা প্রেরণ করেন, তাহলে সোনালী ব্যাংক আপনাকে ২.৫% মুনাফা অর্জনের সুযোগ পাবেন।

তাছাড়া আপনি যদি বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে অর্থ বিদেশ থেকে পাঠান, তাহলে আপনার টাকা নাও পেতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় অনেক রিস্ক থাকে।

তাই আমরা মনে করি, বিদেশ থেকে সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে টাকা প্রেরন করা।

বিদেশ থেকে টাকা প্রেরণে খরচ?

আপনি যদি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিবন্ধিত মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কোনো অর্থের প্রয়োজন হবেনা।

আপনার টাকা যখন টাকা চলে আসবে, বাংলাদেশের সকল ব্যাংক আপনাকে ফ্রিতে কাজটি করে দিবে।

তবে একটা কথা হচ্ছে, টাকা প্রেরণের সময় মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার এমাউন্ট থেকে কিছু টাকা রেখে দিতে পারে।

বাংলাদেশে আপনি যখন অর্থ প্রেরণ করবেন, বাংলাদেশ সরকার আপনার মূল টাকার উপর ২.৫% মুনাফা দিয়ে থাকে।

তাই বলা যায়, বিদেশ থেকে টাকা প্রেরণ করলে কোনো চার্জের প্রয়োজন পড়ে না। উপরন্তু, টাকা যিনি পাঠান তার লাভ হয়ে থাকে।

রেমিটলি

সবচেয়ে কম চার্জে দেশে টাকা পৌছানোর সেরা মাধ্যম রেমিটলি। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকই এখন রেমিটলিতে লেনদেনের অনুমোদন দিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। এই ডিজিটাল রেমিট্যান্স সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে চার্জ নেয় ২.৯৯ ডলার। নির্দিষ্ট কোন ফিজিক্যাল লোকেশন না থাকায় এরকম কম খরচ নেওয়া হয়, যা এর ব্যবহারকারীদের বেশ সুবিধা দিচ্ছে। 

সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে- রেমিটলির মাধ্যমে যেকোনো দেশের মুদ্রার দারুণ এক্সচেঞ্জ রেটে পাওয়া যায়। এর ফান্ড ট্রান্সফারের দুটি মুডি আছে, যেগুলোর নাম- এক্সপ্রেস এবং ইকোনমি। এক্সপ্রেসে টাকা পাঠালে দ্রুত পৌছে যায়, যেখানে ইকোনমি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে অল্প ট্রান্সফার ফি প্রযোজ্য হয়। তবে কোনো ক্ষেত্রেই রেমিট্যান্স পাঠানো সময় সাপেক্ষ হয় না।

ফ্রিতে একটি রেমিটলি একাউন্ট তৈরি করে গ্রহণকারীর নাম ও ঠিকানার সঙ্গে পেমেন্ট-এর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করলেই মানি ট্রান্সফার সম্পন্ন হয়ে যাবে। এই ট্রান্সফারের আপডেট আবার পৌছে যাবে প্রদানকারীর মোবাইল ও ইমেইলে।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন

ফান্ড ট্রান্সফারের পুরনো পরিষেবাগুলোর মধ্যে এই সার্ভিসটি বেশ জনপ্রিয়। এখন মোবাইল অ্যাপ থাকায় পাঠানো টাকা প্রক্রিয়াধীন থাকার সময় আরও কমে এসেছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকগুলোই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে অর্থ প্রাপ্তির সুবিধা প্রদান করে থাকে। যাকে টাকা দেওয়া হচ্ছে এখানে তাকে যথাযথ তথ্য প্রদান করতে হয় নির্দিষ্ট লোকেশন থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য। টাকা প্রদানের জন্য এজেন্ট-এর কাছে যেয়ে অথবা ব্যবহারকারি নিজেই মুদ্রা টাকায় রূপান্তর করে দেশে তার পরিজনদের নিকট পাঠাতে পারেন।

জুম

বাংলাদেশে পেপাল মানি ট্রান্সফার গেটওয়ের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় জুম সার্ভিসকে। বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেমটি বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণের নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। এখানে লেনদেনটা হয় খুব দ্রুততার সঙ্গে। জুমের প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হলে এর ওয়েবসাইটের ইউজার ড্যাশবোর্ডের সাথে নিয়মিত হতে হবে, যা খুবই সহজ। 

সরাসরি ওয়েবসাইটে যেয়ে সাইন আপ করে নতুন প্রোফাইল তৈরি করলেই এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সকল প্রকার মানি ট্রান্সফার এর কাজগুলো করা যাবে। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে টাকা প্রদানের ক্ষেত্রে ৯৯৯ ডলার-এর জন্য ৫.৯ ডলার ফি দিতে হবে। এরপর থেকে ৯৯৯ ডলারের বেশি মানি ট্রান্সফার করলে ফি ধার্য হবে ৯.৯৯ ডলার।

বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এই পরিষেবাগুলো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর উপায়গুলো নির্ভরযোগ্য এবং সহজতর করেছে। বিশ্বের বড় বড় শহরগুলো থেকে ডলার ও পাউন্ডগুলো এখন খুব সহজেই বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলাদেশি টাকা হয়ে। টাকা প্রাপ্তির এই সহজলভ্যতা সৃষ্টি করছে কাজের সুযোগ। এতে করে গ্রামগঞ্জ ও মফস্বলের মানুষেরাও অংশ নিতে পারছে বিশ্ব মানের কাজগুলোতে। আর নিজের উপার্জনের অর্থপ্রাপ্তির মাধ্যমে হয়ে উঠছে স্বাবলম্বী।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment