দূষিত পানিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বিশুদ্ধ করণ পদ্ধতি

দূষিত পানিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বিশুদ্ধ করণ পদ্ধতি

বিশুদ্ধ পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় বিশুদ্ধ পানির সব জায়গায় সহজলভ্য হয়না তাই বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ এর মাধ্যমে আমাদের বিশুদ্ধ পানি পান করতে হয়। দূষিত পানি পান করা যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর ঠিক তেমনি বিশুদ্ধ পানি পান করা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। 

পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়াসমূহ:

ভূপৃষ্ঠে যে পানি পাওয়া যায় তাতে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, এমনকি রোগ সৃষ্টি করতে পারে, এরূপ জীবন ধ্বংসকারী জীবণু রয়েছে । তাই ব্যবহারের আগে পানি বিশুদ্ধ করে নিতে হয়।

ভূগর্ভের পানি সাধারণত রোগ জীবাণু মুক্ত, কিন্তু এই পানিতে আর্সেনিকের মতো নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কথা এখন আমরা সবাই জানি। পানি কীভাবে বিশুদ্ধকরণ করা হবে, সেটি নির্ভর করে এটি কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তার ওপর।

স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার জন্য অত্যন্ত বিশুদ্ধ পানি লাগলেও জমিতে সেচকাজের জন্য তত বিশুদ্ধ পানির দরকার হয় না। সাধারণত যেসব প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করা হয়, সেগুলো হলো-

১. পরিস্রাবণ, ২. ক্লোরিনেশন, ৩. ফুটন, ৪. পাতন ইত্যাদি;

নিচে এই প্রক্রিয়াগুলো বর্ণনা করা হলো:

[Note: Sample Answer: Md Rakib Hossain Sojol (Bangla News Express)]

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি গুলো তোমাদের সুবিধার্থে আলোচনা করা হলো। 

পরিস্রাবণ বা ফিল্টারিং প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

পরিস্রাবণ হলো তরল আর কঠিন পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া। পানিতে অদ্রবণীয় ধুলা বালির কণা থেকে শুরু করে নানারকম ময়লা আবর্জনার কণা থাকে। এদেরকে পরিস্রাবণ করে পানি থেকে দূর করা হয়।

পরিস্রাবণ বা ফিল্টারিং প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

এটি করার জন্য পানিকে বালির স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয় , তখন পানিতে অদ্রবণীয় ময়লার কণাগুলো বালির স্তুরে আটকে যায়। বালির স্তর ছাড়াও খুব সূক্ষ্মভাবে তৈরি কাপড় ব্যবহার করেও পরিস্রাবণ করা যায়।

বর্তমান সময়ে আমাদের অনেকের বাসায় আমরা যেসব ফিল্টার ব্যবহার করি, সেখানে আরো উন্নতমানের সামগ্রী দিয়ে পরিস্রাবণ করা হয়।

পানি ফোটানোর মাধ্যমেই ক্ষতিকর জীবাণু দূর করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত থাকতে ফিল্টারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে।

তাছাড়া যাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ফিল্টারে পানি বিশুদ্ধ করাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি।

বাজারে বিভিন্ন ধরণের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার মধ্যে অনেকগুলো জীবাণুর পাশাপাশি পানির দুর্গন্ধ পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম। বাজারে মূলত দুই ধরণের ফিল্টার পাওয়া যায়। যার একটি সিরামিক ফিল্টার এবং দ্বিতীয়টি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত রিভার অসমোসিস ফিল্টার। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সিরামিক ফিল্টার ব্যবহার করে থাকে।

ফিল্টার থেকে আপনি কতোটুকু বিশুদ্ধ পানি পাবেন সেটা নির্ভর করে ফিল্টারটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কিনা, তার ওপরে।

[Note: Sample Answer: Md Rakib Hossain Sojol (Bangla News Express)]

ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

ক্লোরিনেশন: যদি পানিতে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু থাকে, তবে তা অবশ্যই দূর করতে হবে এবং সেটি করা হয় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে। নানারকম জীবাণুনাশক পানি বিশুদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এদের মাঝে অন্যতম হচ্ছে ক্লোরিন গ্যাস (Cl2)।

ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

এছাড়া ব্লিচিং পাউডার [Ca(OCl)Cl] এবং আরও কিছু পদার্থ, যার মাঝে ক্লোরিন আছে এবং জীবাণু ধ্বংস করতে পারে, সেগুলো ব্যবহার করা হয় । আমাদের দেশে বন্যার সময় পানি বিশুদ্ধ করার জন্য যে ট্যাবলেট বা কিট ব্যবহার করা হয়, সেটি মূলত সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ( NaOCl), এর মাঝে যে ক্লোরিন থাকে, সেটি পানিতে থাকা রোগ জীবাণুকে ধংস করে ফেলে।

ক্লোরিন ছাড়াও ওজোন (O3) গ্যাস দিয়ে অথবা অতিবেগুনি রশ্মি দিয়েও পানিতে থাকা রোগ জীবাণু ধ্বংস করা যায় । বোতলজাত পানির কারখানায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করে পানিকে রোগ জীবাণুমুক্ত করা হয়।

পানির জীবাণু ধ্বংস করতে ক্লোরিন বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক। যদি পানি ফোটানো বা ফিল্টার করার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে পানি বিশুদ্ধিকরণ ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি পরিশোধন করা যেতে পারে।

সাধারণত দুর্গম কোথাও ভ্রমণে গেলে অথবা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বা জরুরি কোন অবস্থায় ট্যাবলেটের মাধ্যমে পানি শোধন করা যেতে পারে। সাধারণত প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট বা ১০ লিটার পানিতে ব্লিচিং গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

এভাবে পরিশোধিত পানিতে কিছুটা গন্ধ থাকলেও সেটা পরিষ্কার স্থানে খোলা রাখলে বা পরিচ্ছন্ন কোন কাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে গন্ধটি বাতাসে মিশে যায়।

[Note: Sample Answer: Md Rakib Hossain Sojol (Bangla News Express)]

ফুটন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

ফুটন: পানির ফুটন প্রক্রিয়ায় পানিকে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব । পানিকে খুব ভালোভাবে ফুটালে এতে উপস্থিত জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। ফুটন শুরু হওয়ার পর ১৫-২০ মিনিট ফুটালে সেই পানি জীবাণুমুক্ত হয়। বাসা বাড়িতে খাওয়ার জন্য এটি একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী প্রক্রিয়া।

ফুটন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

পানি বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে পুরানো ও কার্যকর পদ্ধতির একটি হল সেটা ফুটিয়ে নেয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পানি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট ধরে ফোটানো হলে এরমধ্যে থাকা জীবাণু, লার্ভাসহ সবই ধ্বংস হয়ে যায়।

তারপর সেই পানি ঠাণ্ডা করে ছাকনি দিয়ে ছেকে পরিষ্কার পাত্রে ঢেকে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন ওয়াটার এইডের পলিসি ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান আবদুল্লাহ আল মুঈদ। পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাচ অথবা স্টিলের পাত্র ব্যাবহার করার কথাও জানান তিনি।  সেইসঙ্গে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন সেইসব পাত্র বা যে গ্লাসে পানি খাওয়া হচ্ছে সেটি যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কিনা। মিস্টার মুইদ জানান সেদ্ধ করা পানি বেশিদিন রেখে দিলে তাতে আবারও জীবাণুর  আক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে তিনি ফোটানো পানি দুইদিনের বেশি না খাওয়ার পরামর্শ দেন।

পাতন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ

পাতন: যখন খুব বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়, তখন পাতন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করা হয় । যেমন : ঔষধ তৈরির জন্য, পরীক্ষাগারে রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পুরোপুরি বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়।

এই প্রক্রিয়ায় একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাপ দিয়ে সেটাকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। পরে ঐ বাষ্পকে আবার ঘনীভূত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ করা পানিতে অন্য পদার্থ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে ।

[Note: Sample Answer: Md Rakib Hossain Sojol (Bangla News Express)]

গ্লাসে তৈরিকৃত দূষিত পানি বিশুদ্ধ না করে পান করলে আমার যেসব সমস্যা হতে পারে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

দূষিত পানি পান করার ফলে সম্প্রতি ভয়াবহ হারে বেড়ে গেছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। দূষিত পানি পানেই এসব রোগের উৎপত্তি হয়। ময়লা-গন্ধযুক্ত পানি পান করলে শরীরে নানা জটিল রোগের আবির্ভাব ঘটে।

পানিতে মিশে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া রোগ ছড়ায়। কলেরাও একটি মারাত্মক রোগ। দূষিত জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে এ রোগ হয়।

পাতলা পায়খানার সঙ্গে প্রচুর বমি কলেরার লক্ষণ। সলমনেলা টাইফি এবং প্যারাটাইফি নামক পানিবাহিত জীবাণুর কারণে যে রোগটি হয় তাকে টাইফয়েড বলে। জন্ডিস একটি পানিবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ।

এটি লিভারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। জন্ডিসের ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ হলো পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর ও পেটব্যথা।

হেপাটাইটিস, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিসের মতো মারাত্মক ব্যাধির উৎস এই দূষিত পানি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অভিমত, এ রকম দূষিত পানি দীর্ঘদিন পান করতে থাকলে আরো জটিল রোগ, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে। কিডনি রোগ, আলসার, রক্তচাপ, অ্যাজমা, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।

এক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জনস্বাস্থ্যকে সম্পূর্ণভাবে হুমকিমুক্ত বলা যাবে না। আর তাই গ্লাসে তৈরিকৃত দূষিত পানি বিশুদ্ধ না করে পান করলে উল্লিখিত সমস্যাগুলো হতে পারে ।

[Note: Sample Answer: Md Rakib Hossain Sojol (Bangla News Express)]

Leave a Comment