চাইলে টেলিগ্রাম থেকেও আয় করতে পারেন,টেলিগ্রাম থেকে টাকা ইনকাম উপায়ে

বর্তমান সময়ের টেলিগ্রাম অ্যাপস অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। সাধারণত এই অ্যাপসটি সকলের কাছে মেসেজিং অ্যাপস হিসেবে পরিচিত। কিন্তু টেলিগ্রাম অ্যাপসটিতে এমন কিছু ফিচার আছে যার মাধ্যমে আপনারা টাকা ইনকাম করতে পারবেন। টেলিগ্রাম থেকে ইনকাম সম্পর্কে এই লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

২০১৩ সালের মার্চ মাসে এই অ্যাপ্লিকেশনটি প্রতিষ্ঠা করা হয় পরবর্তীতে একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে এই অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে-স্টোরে লঞ্চ করা হয়। তখন থেকে ইউরোপ অঞ্চলে ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম হিসেবে অ্যাপ্লিকেশনটি বেশ জনপ্রিয় ছিল।

কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশেও এই অ্যাপ্লিকেশনটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে এই অ্যাপ্লিকেশনটি থেকে আমরা টাকা ইনকাম করতে পারব। একটি মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে টাকা ইনকাম এর বিষয়টা একটু অগোছালো মনে হলেও এটা সত্য।

চাইলে টেলিগ্রাম থেকেও আয় করতে পারেন, টেলিগ্রাম থেকে টাকা ইনকাম উপায়ে, টেলিগ্রাম থেকে ইনকাম করতে চাচ্ছেন

টেলিগ্রাম অনেকের কাছে শুধুমাত্র ম্যাসেজিং অ্যাপ হলেও অনেকেই টেলিগ্রাম ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করছে। মূলত টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে সেখানে মেম্বার বাড়িয়ে টাকা আয় করছে।

টেলিগ্রাম কি?

টেলিগ্রাম হলো একটি ম্যাসেজিং অ্যাপ। যেটার মাধ্যমে খুব দ্রুত ম্যাসেজিং, অডিও কল, ভিডিও কল করতে পারবেন। টেলিগ্রাম একটি ২ ধাপের এনক্রিপটেড ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম। তাই ধরা হয়ে থাকে টেলিগ্রাম এইসময়ের সবথেকে সিকিউরড ফ্রি ম্যাসেজিং অ্যাপ। এটার অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস অ্যাপ ও পিসি তিনটি ভার্সন রয়েছে।

পার্সোনাল ম্যাসেজ পাঠানোর পাশাপাশি পাবলিক টেলিগ্রাম গ্রুপ কিংবা টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা যায়। টেলিগ্রাম চ্যানেলে অসংখ্য মানুষজন জয়েন করে থাকে। টেলিগ্রামের একটি মজার বিষয় হচ্ছে যেকোনো প্রকার এটাচমেন্ট ফাইল এটার মাধ্যমে পাঠাতে পারবেন।

হাই সিকিউরড, ফাস্ট ও ফ্রি হওয়ায় টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

টেলিগ্রাম অ্যাপ কোথায় ডাউনলোড করবেন?

টেলিগ্রামের অফিসিয়াল অ্যাপ আপনি প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারবেন। তাছাড়া আইফোনের জন্য অ্যাপল স্টোর ও পিসির জন্য টেলিগ্রাম ইনস্টল করতে পারবেন টেলিগ্রামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে।

টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয়

প্রথমেই বলে রাখি টেলিগ্রাম অফিসিয়ালি আপনাকে টাকা আয়ের কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। আপনি টাকা আয়ের জন্য শুধু টেলিগ্রামের কমিউনিটি ব্যবহার করবেন। টেলিগ্রামে ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের মতো মনিটাইজ করার কোনো সুযোগ নেই।

দিন দিন যেহেতু টেলিগ্রামের ইউজার বাড়ছে তাই টেলিগ্রাম থেকে টাকা ইনকামের সম্ভাবনা বাড়ছে। টেলিগ্রামে টাকা আয়ের জন্য আপনাকে প্রথমেই টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলতে হবে। শুধু চ্যানেল খুলে বসে থাকলেই হবে না, টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেম্বার বাড়াতে হবে।

টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা ও পরিচালনা

টেলিগ্রাম অ্যাপ থেকে টাকা ইনকাম করার পূর্বশর্ত হলো টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলা এবং চ্যানেলে মেম্বার বাড়ানো। টেলিগ্রাম চ্যানেল হলো অনেকটা ফেসবুক গ্রুপের মতো যেখানে মেম্বাররা বিভিন্ন কনটেন্ট দেখতে পারবে।

টেলিগ্রাম চ্যানেলের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়:

  • টেলিগ্রাম চ্যানেলের ভালো নাম দিতে হবে
  • চ্যানেল লোগো, ডেসক্রিপশন দিতে হবে
  • নিয়মিত চ্যানেলে কনটেন্ট দিতে হবে
  • মেম্বার বাড়ানোর জন্য শেয়ার করতে হবে
  • গিভওয়ে ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট দেওয়ার মাধ্যমে মেম্বার ধরে রাখতে হবে

এক্ষেত্রে শুরুতেই টাকা আয় করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। সঠিকভাবে কাজ করলে দ্রুতই আপনার ৪-৫ হাজার টেলিগ্রাম মেম্বার হয়ে যাবে। নিয়মিত আকর্ষণীয় কনটেন্ট পেলে মেম্বাররা টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটিভ থাকবে ও আপনার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জিত হবে।

টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয়ের বিভিন্ন উপায়

এতক্ষণ আমরা টেলিগ্রামের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পারলাম, পাশাপাশি টেলিগ্রাম চ্যানেল কিভাবে পরিচালনা করতে হয় সেটিও জানলাম।

এবার আমরা জানবো কি কি উপায়ে টেলিগ্রাম অ্যাপ থেকে টাকা আয় করা যায়। যেমন:

  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate)
  • প্রোডাক্ট রিসেলিং (Reselling)
  • পেইড প্রমোশন
  • পেইড মেম্বারশিপ
  • লিংক শর্টনার (Url Shortener)
  • রেফারেল লিংক

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মানে হলো কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনার মাধ্যমে ক্রয় করা। আপনার লিংকের মাধ্যমে কেও প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিলে কোম্পানি আপনাকে সেই প্রোডাক্টের উপর ভিত্তি করে মুনাফা দিবে, সহজ ভাষায় এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

অনলাইনে আয়ের অন্যতম সেরা উপায় হলো এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। কারণ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কোনো প্রকার ইনভেস্ট করার দরকার হয় না।

টেলিগ্রামে আপনার চ্যানেলে ৪-৫ হাজার মানুষ হলে সেখানে আপনি খুব সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলের নিশের সাথে মিলে এমন প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের অ্যাফিলিয়েট করার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই লাভবান হতে পারবেন।

অনলাইনে হাজার হাজার ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে যাদের রয়েছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম। জনপ্রিয় তিনটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম হলো:

  • Amazon
  • Flipcart
  • eBay

আপনি প্রথমেই এসব ই-কমার্স সাইটে গিয়ে “become an affiliate” অপশন থেকে অ্যাফিলিয়েট প্রোফাইল ওপেন করবেন। তারপর তাদের প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট লিংক আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে দিবেন। এক্ষেত্রে চ্যানেলে যত বেশি মেম্বার হবে ততো বেশি কমিশন পাওয়ার চান্স থাকবে।

প্রোডাক্ট রিসেলিং

প্রোডাক্ট রিসেলিং যদিও অনেকটাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মতোই। তবে প্রোডাক্ট রিসেলিং মানে হচ্ছে পণ্য রিসেলিং অর্থাৎ পুনরায় বিক্রি।



অনলাইনে এমন অনেক অ্যাপ ও ওয়েবসাইট রয়েছে যাদের মাধ্যমে আপনি প্রোডাক্ট রিসেলিং করতে পারবেন। আপনি চাইলে বাংলাদেশী দুটো সাইট থেকে প্রোডাক্ট রিসেলিং করতে পারেন। ১. আজকের ডিল ২. শপ আপ

প্রথমেই এ ধরনের ওয়েবসাইটে রিসেলার একাউন্ট করতে হবে। তারপর প্রোডাক্ট লিংক আপনার টেলিগ্রামে শেয়ার করবেন। সেই লিংক থেকে কেও প্রোডাক্ট কিনলে আপনি কমিশন পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার টেলিগ্রামে মেম্বার যত বেশি হবে ততোই ইনকাম করতে পারবেন।

পেইড প্রমোশন

আসুন প্রথমেই জেনে নিই পেইড প্রমোশন কি। এখন আমরা সবাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে পরিচিত। প্রায় সব কোম্পানিই এখন তাদের প্রোডাক্টের মার্কেটিং করে থাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।

আপনারা ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় দেখে থাকবেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটরেরা ভিডিওর মধ্যে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা কোম্পানির বিজ্ঞাপন করে দিচ্ছে, আমরা যেটাকে বলি স্পন্সর। মূলত এই স্পন্সর হলো পেইড প্রমোশন। অর্থাৎ আপনার ভালো পরিমান একটা ফ্যান- ফলোয়ার কিংবা কমিউনিটি আছে,কোম্পানিগুলো আপনার মাধ্যমে তাদের প্রচার করে থাকে।

বিস্তারিত আলোচনা করেছি, আশা করি সবকিছু আপনাদের কাছে ক্লিয়ার।


আরও পড়ুন:


আপনারা হয়তো জানেন, কোম্পানিগুলো খুবই ভালো এমাউন্ট সম্মানী দিয়ে থাকে এই পেইড প্রমোশনের জন্য।

এক্ষেত্রে আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে অনেক অনেক মেম্বার থাকে তাহলেই পেইড প্রমোশন করতে পারবেন। বেশি পরিমাণ মেম্বার হলেই অর্থাৎ আপনার একটি ভালো কমিউনিটি থাকলেই কোম্পানিগুলো আপনাকে দিয়ে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে চাইবে।

পেইড মেম্বারশিপ

আপনি যদি আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রিমিয়াম কনটেন্ট দিয়ে থাকেন তাহলে আপনি পেইড মেম্বারশিপ সিস্টেম চালু করতে পারেন। এ সিস্টেমে আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে মেম্বার হতে চাইলে টাকা দিয়ে মেম্বার হতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার চ্যানেলটি প্রাইভেট হতে হবে। সেই সাথে চ্যানেলে প্রিমিয়াম ও আকর্ষণীয় কনটেন্ট শেয়ার করতে হবে।

ধরুন আপনি আপনার চ্যানেলে বিভিন্ন প্রিমিয়াম একাউন্ট, প্রিমিয়াম ওয়ার্ডপ্রেস থিম/প্লাগিন, ব্লগার টেমপ্লেট, প্রিমিয়াম অ্যাপ শেয়ার করতে পারেন। আর আপনার চ্যানেলে মেম্বার হতে নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ ধরতে পারেন।

নির্দিষ্ট চার্জ পরিশোধ করলেই আপনার চ্যানেলে মেম্বার হতে পারবে ও কনটেন্ট দেখতে পারবে। এভাবে সঠিক ভাবে পেইড মেম্বারশিপের মাধ্যমে খুব সহজেই ভালো পরিমান ইনকাম করা সহজ।

লিংক শর্টনার

অনলাইনে এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে লিংক শর্ট করে টাকা আয় করা যায়। শর্ট করা লিংকে ক্লিক করলে মেইন কনটেন্ট দেখানোর পূর্বে ভিজিটরকে এডস দেখায়। মূলত এভাবেই লিংক শর্ট করে টাকা আয় করা যায়।

জনপ্রিয় কয়েকটি লিংক শর্টনার ওয়েবসাইট উল্লেখ করা হলো:

  • Adf.ly
  • ouo.io
  • Shorte.st
  • Adyou.me
  • Al.ly
  • Victly.com

আরও পড়ুন:


এসব ওয়েবসাইটে প্রথমেই পাবলিশার একাউন্ট করে নিতে হবে।

আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে যদি বিভিন্ন কনটেন্ট দিয়ে থাকেন তাহলে আপনি লিংক শর্ট করে দিবেন। এসব ওয়েবসাইট বেশিরভাগই ১০০০ ক্লিকে ১/২ ডলার দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার যদি ৪/৫ হাজার মেম্বার থাকে তাহলে সহজেই ইনকাম করতে পারবেন।

রেফারেল লিংক

অনলাইন ইনকাম নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করেন তারা কমবেশি রেফারেল লিংক সম্পর্কে জানেন। বিভিন্ন অ্যাপ রয়েছে যেগুলোতে একাউন্ট করলে বোনাস দেয়। এই বিষয়টাও অনেকটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মতোই।

রেফার কোড কিংবা রেফারেল লিংক ব্যবহার করলে কেউ একাউন্ট করলে সেটার কমিশন আপনি পাবেন।

বিশেষ করে নতুন অ্যাপ তাদের প্রচারের জন্য রেফারেল ইনকামের সুযোগ দেয়। আপনার রেফারেল লিংক দিয়ে কেও অ্যাপ ডাউনলোড করলেই আপনি পেয়ে যাবেন বোনাস!

এক্ষেত্রে আপনার রেফারেল লিংক টেলিগ্রাম চ্যানেলে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে যারা যারাই আপনার রেফারেল লিংক ইউজ করবে সেটার উপর আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

শেষ কথা

এভাবেই বিভিন্ন উপায়ে আপনি টেলিগ্রাম অ্যাপ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা টেলিগ্রাম থেকে আয়ের বিষয়ে

ঘরে বসে টাকা আয় করার কিছু পরামর্শ

Leave a Comment