করোনার এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সুষম খাবার গ্রহণে গর্ভবতী মা এবং তার অনাগত শিশু দু’জনই সুস্থ থাকতে পারেন। মনে রাখতে হবে, গর্ভকালীন কিংবা বুকের দুধের মাধ্যমে মা থেকে শিশুর শরীরে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গর্ভকালীনে মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশেই কমে যায়। তাই করোনার এ সময়ে গর্ভবতী অনেক মা নিজের এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন। আশার কথা হলো গর্ভকালীন সময়ে বা ডেলিভারির সময় মা থেকে বাচ্চাতে করোনার সংক্রমণ ছড়ায় না। নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় জানিয়েছেন কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের রেজিস্ট্রার ও বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা: সোনিয়া ইসলাম।
নয়া দিগন্ত : বর্তমানে করোনার এ সময়ে গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু?
ডা: সোনিয়া ইসলাম : গর্ভকালীন সময়ে প্রত্যেক মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেকাংশেই কমে যায়। তাই এ সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি খারাপ হতে পারে। আর করোনাভাইরাস একটি নতুন ভাইরাস হওয়াতে এটা নিয়ে এখনো বেশি গবেষণা করা যায়নি যে, এটা গর্ভকালীন সময়ে বাচ্চার কী কী ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু সাধারণত প্রায় সব ভাইরাসই গর্ভকালীন সময়ে কিছু জটিলতা তৈরি করতে পারে। আর এ জটিলতার মধ্যে এমনো হতে পারে যেমনÑ গর্ভপাত, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি (হার্টের, মস্তিষ্কের), সময়ের আগেই ডেলিভারি ইত্যাদি। এ জন্য গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের সচেতন থাকতে হবে যেন শুধু করোনা নয় অন্য কোনো ভাইরাসও সংক্রমণ না হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনে মহিলাদেরকে গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকার জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : করোনার এ সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ডা: সোনিয়া ইসলাম : হ্যাঁ, প্রথমত সচেতন থাকতে হবে। সেই সাথে কিছু নিয়মও মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের আমরা যেসব পরামর্শ দিই তার মধ্যে অন্যতম হলো একজন গর্ভবতী মহিলাকে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি, শাকসবজি, দুধ-ডিম, মাছ-গোশত এক কথায় সুষম খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি তাকে আয়রন-ফলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স খেতে হবে। তাকে নিয়মিত একটু শারীরিক ব্যায়াম যেমনÑ (হাঁটাহাঁটি, ফুসফুসের ব্যায়াম), মেডিটেশন করতে হবে এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। শরীরে দিনে ১৫-২০ মিনিট রোদ লাগাতে হবে। ঘন ঘন হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে (২০ সেকেন্ড), মাস্ক ব্যবহার করবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই বাইরে যাবে না।
নয়া দিগন্ত : করোনার এ সময়ে গর্ভবতী অনেক মা হাসপাতালে যেতেই ভয় পান। তারা কিভাবে বাসায় থেকেই সেবা নিতে পারেন?
ডা: সোনিয়া ইসলাম : সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদেরকে কমপক্ষে চারবার হাসপাতালে চেক-আপ করাতে যেতে হয়। কিন্তু করোনার এ সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (যেমন- রক্তপাত, অতিরিক্ত পেটে ব্যথা, পানি ভাঙা, খিঁচুনি ইত্যাদি) হলে হাসপাতালে যাবেন। প্রয়োজনে তারা বাসায় থেকে টেলিমেডিসিন সেবা নিবেন।
নয়া দিগন্ত : বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এমন খবরও প্রকাশ হচ্ছে যে, করোনার এ সময়ে হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলাদের উপস্থিতি কমে গেছে। এর সত্যতা আসলে কতটুকু?
ডা: সোনিয়া ইসলাম: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। বাস্তবতার নিরিখে এ খবরের সত্যতাও রয়েছে। আমরা নিজেরাও অবশ্য এমনটি লক্ষ করছি। তবে এর অনেকগুলো যৌক্তিক কারণও আছে। কেননা, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতামূলক অনেক সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে এবং টেলিমেডিসিন সেবা পাওয়ার কারণে হাসপাতালে গর্ভবতী মহিলাদের উপস্থিতি অনেকটাই কমেছে।
নয়া দিগন্ত : একজন গর্ভবতী মায়ের করোনা পজিটিভ হলে সে ক্ষেত্রে ওই মায়ের চিকিৎসাপদ্ধতি কী হবে?
ডা: সোনিয়া ইসলাম : দেখুন, করোনা একটি নতুন রোগ। কাজেই এ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রোগীর বয়স, লিঙ্গ, উপসর্গ এবং অন্যান্য আরো বিষয় বিবেচনায় নিয়েই চিকিৎসা দেয়া হয়। গর্ভবতী একজন মায়ের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তাই আরো বেশি সচেতন ও সতর্কতার দরকার হয়। তবে গরষফ ঃড় গড়ফবৎধঃব লক্ষণগুলোর জন্য গর্ভবতী মাকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। তাকে প্রচুর পরিমাণে পানি, সুষমখাদ্য এবং প্রয়োজনীয় মেডিসিন যেমনÑ চধৎধপবঃধসড়ষ, অহঃরযরংঃধসরহব খেতে হবে (তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে)। আর ঝবাবৎ লক্ষণের জন্য কিংবা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় অবশ্যই তাকে হাসপাতালে যেতে হবে। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার আর তা হলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য তার ডেলিভারির পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে হ্যাঁ, শুধুমাত্র প্রসবকালীন কোনো সমস্যার কারণেই তার সিজারিয়ান ডেলিভারি লাগবে। গর্ভকালীন সময়ে বা ডেলিভারির সময়ে মা থেকে বাচ্চাতে এ সংক্রমণ ছড়ায় না। কিন্তু প্রসব-পরবর্তী সময়ে বাচ্চাকে নার্সিংয়ের সময় ছড়াতে পারে। বুকের দুধের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায় না।
নয়া দিগন্ত : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ডা: সোনিয়া ইসলাম : আপনাকে এবং নয়া দিগন্তকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
- কেন আপনার ওষুধের বাক্সে প্যারাসিটামল থাকা উচিত,কীভাবে প্যারাসিটামলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চিনবেন
- শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যানিমে কী কী?, সর্বকালের সেরা ২০টি সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যানিমে
- ঠান্ডার লক্ষণগুলির জন্য প্যারাসিটামল ভালো,কীভাবে প্যারাসিটামলের লেবেল পড়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন
- যৌনমিলন করার উপকারিতা, নিয়মিত সহবাসের দশটি উপকারিতা,নিয়মিত সহবাসের উপকারিতা কী?
- hsc result 2024