‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে মাদুরের উল্লেখ আছে

মাদুর বা পাটি হল কাপড়ের উপাদানের টুকরার একটি জাতিবাচক শব্দ বা নাম, যা সাধারণত মেঝে বা অন্যান্য সমতল স্থানের স্থাপন করা হয়ে থাকে।

এর ব্যবহারের পরিসীমার মধ্যে রয়েছে:

  • একটি নিয়মিত বা সমতল স্থান প্রদানে সক্ষম, যেমন একটি কম্পিউটার মাউসপ্যাড হিসাবে।
  • মাদুরে তলদেশে থাকা কোন কিছু রক্ষা করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • অন্যদিকে মাদুরের উপরে থাকা কোন কিছু রক্ষা করতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

নরম মাদুরকাঠি দিয়ে তৈরি এক ধরনের বসার আসন মাদুর। এটি তৈরিতে মাদুরকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয় মারাথাগাছ। বিভিন্ন এলাকায় এটি মুর্তাবেত, মোড়াবেত, পাটিবেত প্রভৃতি নামে পরিচিত। সিলেট, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও টাঙ্গাইলে এ গাছ প্রচুর পাওয়া যায়। মূলত মাদুর বোনার কাজটি করেন বাড়ির মেয়েরা। তবে অনেক পুরুষকেও কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাদুর বুনতে দেখা যায়। যারা পাটি বা মাদুর তৈরিতে নিয়োজিত তাদের বলা হয় পাটিয়াল।

আমাদের এই দেশে মাদুরের গুরুত্ব অনেক। এটি মাটিতে বা মেঝেতে পেতে বসার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় বিছানায়ও ব্যবহার করা হয়। তাপের অপরিবাহিতা ও জলীয়বাষ্প শোষণক্ষমতা এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এ ছাড়া বিয়ে, ভাইফোঁটা, শ্রাদ্ধ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে মাদুরকে আসন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

বুননের ওপর ভিত্তি করে মাদুর এক রোখা, দুই রোখা ও মসলন্দ—এই তিন ধরনের হয়। এক রোখা মাদুর একবার বুনন দেওয়া হালকা মাদুর। এর গুণগত মান সব থেকে কম। দুই রোখা এক রোখা থেকে উন্নত। তবে মসলন্দ সব থেকে উন্নত মানের মাদুর। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার রামনগরের খোলাবাড়িয়া গ্রাম মসলন্দ মাদুরের জন্য বিখ্যাত। মসলন্দ মাদুরে বুননের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নকশা করা হয়। সাজসজ্জা দ্বারা সজ্জিত মাদুরকে নকশি পাটিও বলা হয়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মাদুর তৈরি করা হয়। তবে সিলেটের রাজনগর, বালাগঞ্জ, বড়লেখা ও মোল্লাবাজার, বরিশালের সোনাগাজী ও রামপুর, পটুয়াখালীর স্বরূপকাঠি, ফরিদপুরের সালাইর এবং মোহনগঞ্জের জৈনপুর মাদুর তৈরির জন্য বিখ্যাত।

মাদুর তৈরির ইতিহাস অনেক পুরনো। মোগল আমলেও মাদুরশিল্পের প্রচলন ছিল। ১৬০৫-২৭ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীর যখন দিল্লির সম্রাট ছিলেন, তখন তাঁর এক সুন্দরী বেগম তাঁকে একটি মসৃণ মাদুর উপহার দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। মোগল আমলে মসৃণ মাদুরের প্রচলন থেকেই মসলন্দ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।

সিন্ধু সভ্যতার সময়েও মাদুর ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। অথর্ব বেদে মাদুরের কথা বলা হয়েছে। মহাভারতে শুকনা ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বসার কথা উল্লেখ আছে। ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকার হস্তশিল্প হিসেবে মাদুরকে জিআই (ভৌগোলিক স্বীকৃতি) ট্যাগ দিয়েছে।

বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিকের মাদুর আসায় মাদুরকাঠির মাদুরের চাহিদা কমে গেছে। কারণ প্লাস্টিকের মাদুর দামে সস্তা এবং মাদুরকাঠির মাদুর থেকে বেশি টেকসই।

Leave a Comment