BCS গ্রন্থ সমালোচনা লালসালু,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা লালসালু, লালসালু কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি লালসালু,লালসালু বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা,লালসালু

প্রশ্ন সমাধান: BCS গ্রন্থ সমালোচনা লালসালু,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা লালসালু, লালসালু কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি লালসালু,লালসালু বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা,লালসালু

গ্রন্থ সমালোচনা: লালসালু
লেখক: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার এক্সামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গ্রন্থ-সমালোচনা। লিখিত পরীক্ষায় গ্রন্থ সমালোচনার উপর ১৫ নম্বর বরাদ্দ থাকে।

আবার ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর চরিত্র থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন থাকে। গল্প/উপন্যাস না পড়া থাকলে চরিত্র মনে রাখা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে উপন্যাসের কাহিনি জানলে একসাথে প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য কাজে দিবে।

‘লালসালু’

লালসালু সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ রচিত প্রথম উপন্যাস । উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে, দ্বিতীয় প্রকাশকাল ১৯৬০। এর পটভূমি ১৯৪০ কিংবা ১৯৫০ দশকের বাংলাদেশের গ্রামসমাজ হলেও এর প্রভাব বা বিস্তার কালোত্তীর্ণ । মূলত গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়। উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৪৮ সাল। এটি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রথম উপন্যাস। এটি পরে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

২০০১ সালে তানভীর মোকাম্মেল-এর পরিচালনায় উপন্যাসটি চলচ্চিত্ররূপ লাভ করে। প্রধান চরিত্র: মজিদ, খালেক ব্যাপারী, জমিলা, রহিমা, হাসুনীর মা, আক্কাস।

‘লালসালু’ একটি সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস। এতে আছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাঙ্ক্ষাকার দ্বন্দ্ব। গ্রামীণ সমাজের সাধারণ মানুষের সরলতাকে কেন্দ্র করে ধর্মকে ব্যবসার উপাদানরূপে ব্যবহারের একটি নগ্ন চিত্র উপন্যাসটির মূল বিষয়।


আরো ও সাজেশন:-

উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায়
মহব্বতনগর নামক এক গ্রামে এসে উপস্থিত হয় মজিদ নামের এক মোল্লা। অর্থকষ্ট ও অনাহারের হাত থেকে বাঁচতে এবং অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে নিজ গ্রাম ছেড়ে সে এই গ্রামে আসে। এসেই এক অদ্ভুত কাজ করে।
গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে সমবেত মানুষকে তিরস্কার করে,

“আপনারা জাহেল, বেএলেম, আনপড়াহ। মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন।”
সে গ্রামের এক প্রান্তে অবস্থিত ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করে এক ভাঙ্গা কবরকে এই পীরের মাজার বলে ঘোষণা দেয়। সে আরো জানায় স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এ মাজার তদারকির জন্য সে এই গ্রামে এসেছে। কবরটিকে এক টুকরা লাল কাপড় দিয়ে সে ঢেকে দেয় এবং ধীরে ধীরে সেখানে একটি মাজার প্রতিষ্ঠা করে।

লাল কাপড়ে ঢাকা সেই কবরকে ঘিরে গ্রামের মানুষের উৎসাহ বেড়ে যায়। মজিদ এমনভাবে প্রচারণা চালায় যাতে গ্রামবাসীর মনে এই কবরকে এতদিন অবহেলার কারণে অপরাধবোধ জাগ্রত হয়।
সবাই পীরের মাজার প্রতিষ্ঠা মজিদকে সাহায্য করে। সে সাহায্য এত বেশি ছিল যে, মাজার প্রতিষ্ঠার মজিদ ব্যক্তিগতভাবেও একটি সচ্ছল জীবন লাভ করে। এভাবেই মজিদ সেই গ্রামে বসতি স্থাপন করে।

মজিদ এই গ্রামেই বিয়ে করে। তার স্ত্রীর নাম রহিমা। স্ত্রীকে নিয়ে সে সম্মানের সাথে বসবাস করছিল। তার স্ত্রী কৃষক ঘরের মেয়ে। কর্মঠ, পরিশ্রমী কিন্তু দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নয়। তবে সে স্বামী ভক্ত। মজিদ যা বলে সে সেভাবেই চলে।
গ্রামবাসীর মত তারও ধারণা মজিদ অলৌকিক শক্তির অধিকারী। মজিদের ক্ষমতা, প্রভাব ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। সে বিচার সালিশ করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গ্রামের প্রধান ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এমনকি সে মানুষের পারিবারিক জীবনেও হস্তক্ষেপ করে। এক্ষেত্রে তার সহায়ক শক্তি গ্রামের মাতব্বর খালেক ব্যাপারী।

প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে মজিদ ধর্মকর্মের পাশাপাশি সমাজেরও কর্তা-ব্যক্তি হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে উপদেশ নির্দেশ দেয়- গ্রাম্য বিচার-সালিশিতে সে-ই হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রধান ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে মাতব্বর খালেক ব্যাপারীই তার সহায়ক শক্তি।

ধীরে ধীরে গ্রামবাসীর পারিবারিক জীবনেও নাক গলাতে থাকে সে। তাহেরের বাপ-মার মধ্যেকার একান্ত পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে তাহেরের বাপের কর্তৃত্ব নিয়েও সে প্রশ্ন তোলে। নিজ মেয়ের গায়ে হাত তোলার অপরাধে হুকুম করে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার এবং সেই সঙ্গে মাজারে পাঁচ পয়সার সিন্নি দেয়ার।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

অপমান সহ্য করতে না পেরে তাহেরের বাপ শেষ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয়। খালেক ব্যাপারীর নিঃসন্তান প্রথম স্ত্রী আমেনা সন্তান কামনায় অধীর হয়ে মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বী পিরের প্রতি আস্থাশীল হলে মজিদ তাকেও শাস্তি দিতে পিছপা হয় না। আমেনা চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তাকে তালাক দিতে বাধ্য করে মজিদ।

কিন্তু তবু মাজার এবং মাজারের পরিচালক ব্যক্তিটির প্রতি আমেনা বা তার স্বামী কারুরই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয় না।
গ্রামবাসী যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মজিদের মাজারকেন্দ্রিক পশ্চাৎপদ জীবন ধারা থেকে সরে যেতে না পারে, সে জন্য সে শিক্ষিত যুবক আক্কাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। মজিদ এমনই কুট-কৌশল প্রয়োগ করে যে আক্কাস গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

এক পর্যায়ে মজিদ দ্বিতীয় বিয়ে করে। নতুন বউ কিশোরী মেয়ে নাম জমিলা। সে এমনিতে সহজ-সরল কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের চঞ্চলতা। সে প্রথম থেকেই স্বামী মজিদকে এবং তার কর্মকাণ্ডকে মেনে নিতে পারে না।
সে যেন কিছুকেই ভয় পায় না। মাজারের প্রতি তার তেমন শ্রদ্ধা ভক্তি নেই। সেই প্রথম মজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এতে বিচলিত হয়ে উঠে মজিদ। তার অস্তিত্ব যেন সংকটে পরে।

নতুন বউকে শাসন করতে গিয়ে কঠোর হয়ে উঠে মজিদ কিন্তু পারে না। মজিদের মুখে জমিলার থুথু নিক্ষেপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এক ঝড়ের রাতে মাজার ঘরে বেঁধে রাখে।
ঝড় শেষ হলে মজিদ গিয়ে দেখে জমিলা মেঝেতে পরে আছে, তার মেহেদি রাঙানো একটি পা মাজারের কবরের সাথে লাগানো। অন্যদিকে শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে গ্রামবাসী মজিদের কাছে প্রতিকার চায়। কিন্তু মজিদ তাদের ধমক দেয়, ‘নাফরমানি করিও না, খোদার উপর তায়াক্কুল রাখো।’

এভাবে একের পর এক ঘটনার মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক গ্রাম, সমাজ ও মানুষের বাস্তব-চিত্র ‘লালসালু’ উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসটি শিল্পিত সামাজিক দলিল হিসেবে বাংলা সাহিত্যের একটি অবিস্মরণীয় সংযোজন। এভাবেই বিপর্যন্ত পারিবারিক জীবন, ফসলের ক্ষেত এবং দরিদ্র গ্রামবাসীর হাহাকারের মধ্য দিয়ে লালসালু উপন্যাসের কাহিনী শেষ হয়।
উপন্যাসে মজিদ কুসংস্কার, প্রতারণা এবং অবিশ্বাসের প্রতীক। প্রথাকে সে টিকিয়ে রাখতে চায়, প্রভু হতে চায়, অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হতে চায়।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

সে প্রতারণা করে সজ্ঞানে। যে কোন মূল্যে মাজারটিকে টিকিয়ে রাখতে চায়। কারণ তার ব্যবসা মাজার কেন্দ্রিক। এ জন্য গ্রামবাসী যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে না পারে যুবক আক্কাসের বিরুদ্ধে লাগে
আক্কাস যখন গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

মজিদ বিভিন্ন কূট-কৌশলে আক্কাসকে গ্রাম ছাড়া করে। একই ভাবে আধিপত্য হারানোর ভয়ে অন্য পীরকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়।

বাংলা কথাসাহিত্যে লালসালু একটি প্রথাবিরোধী উপন্যাস।

ধর্মকে যারা স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে বা শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে লালসালু উপন্যাসে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। ধর্মবিশ্বাসকে হেয় করা বা আক্রমণ করা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উদ্দেশ্য নয়।
ধর্মের নামে প্রচলিত কুসংস্কার, গোঁড়ামিকে আক্রমণ করা তাঁর উদ্দেশ্য। উপন্যাসে প্রতিবাদী চরিত্র জমিলা। ভণ্ডামীর সাহায্যে মজিদ যে শিকড় গেড়েছিল মহব্বতনগর গ্রামে, জমিলার বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মজিদের সে শিকড় নড়বড়ে হয়ে যায়।

ধর্মকে পুঁজি করে মজিদ যে অর্থবিত্ত প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করেছিল জমিলার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার উপর কলঙ্কের ছাপ লাগে। শেষ পর্যন্ত মজিদও অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই উপন্যাসে নানা পরিচর্যারীতির সচেতন ব্যবহার করেছেন। যেমন কবরের আচ্ছাদন হিসেবে মজিদ লাল রঙ ব্যবহার করেছে, যাতে লাল রঙের ঔজ্জ্বল্য সহজে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আর এ থেকেই লেখক উপন্যাসেরও নামকরণ করেছেন ‘লালসালু’। উপন্যাসে দেখিয়েছেন গ্রামের মানুষের কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে অসাধু ব্যক্তিরা কীভাবে সুবিধা নেয়।

এই কুসংস্কার ও পীর প্রথায় প্রচণ্ড আঘাত হানেন মাজারে জমিলার পা লাগিয়ে। এসবের পাশাপাশি উঠে এসেছে ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্ব সংকট ও টিকে থাকার সংগ্রাম।
সবকিছু মিলিয়ে লালসালু একটি অসাধারণ উপন্যাস।
সংগৃহীত

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment