BCS গ্রন্থ সমালোচনা কবি,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা কবি, কবি কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কবি,কবি বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা

আজকের গ্রন্থ সমালোচনা: BCS গ্রন্থ সমালোচনা কবি,বাংলা গ্রন্থ সমালোচনা কবি, কবি কাব্যের সার্থকতা আলোচনা,বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কবি,কবি বিসিএস গ্রন্থ সমালোচনা,

গ্রন্থ সমালোচনা : কবি
লেখক: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাসে নিম্নবর্গের জীবন ও চরিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। রাঢ়বাংলার কৃষক, কুলি-কামিন, কাহার, বাগধি, ডোম, বাউরি, চণ্ডাল প্রভৃতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য। লেখক তাঁর লেখায় বর্ণগত শ্রেণিবৈষম্যের পাশাপাশি নানা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিম্নবর্গের জীবনের অস্তিত্ব সংকট, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক আন্তক্রিয়া তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি নরনারীর সম্পর্ক বিশ্লেষণে বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। এ সকল বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে রচিত উপন্যাস ‘কবি’ ।

মূল চরিত্র: নিতাই, ঠাকুরঝি, বসন্ত।

উপন্যাসটি ডোম সম্প্রদায়ের একজন যুবকের কবিরূপে প্রতিষ্ঠা এবং দু’জন নারীর সঙ্গে তার সম্পর্কের কাহিনি নিয়ে রচিত।
উপন্যাসটি শুরু হয় এভাবে- ‘শুধু দপ্তরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।’

হিন্দু শ্রেণি ব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ডোম। অট্টহাস গ্রামের এমনই এক ডোম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ও বেড়ে উঠে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নিতাইচরণ। চোর-ডাকাত বংশের ছেলে সে।

নিতাইয়ের স্বভাব পূর্বপুরুষদের মত নয়। সে সৎ থাকতে চায়। এ প্রসঙ্গে তার জবানবন্দি- ‘আজ্ঞে প্রভু, চুরি জীবনে আমি করি নাই। মিছে কথাও আমি বলি না হুজুর, নেশা পর্যন্ত আমি করি না। ভাইয়ের সঙ্গেও এই জন্যে বনে না আমার। ঘর তো ঘর, আমি পাড়া পর্যন্ত ত্যাজ্য করেছি একরকম। আমি থাকি ইস্টিশানে রাজন পয়েন্টসম্যানের কাছে। কুলিগিরি করে খাই।’ পারিবারিক পেশা গ্রহণের জন্য চাপ আসলে সে ঘর বাড়ি ছেড়ে স্টেশনে থাকতে শুরু করে। সেখানে বন্ধুত্ব হয় স্টেশনের পয়েন্টসম্যান রাজালালের সাথে।

নিতাই কবিয়াল মানুষ। একদিন ঘটনাক্রমে গ্রামের মেলায় কবি আসরে সুযোগ পেয়ে নাম কামিয়ে ফেলে। তার এ খ্যাতি বিভিন্ন দিকে ছড়াতে থাকে। সে গান বাঁধে, শুনিয়ে বেড়ায় হাটে বাজারে মেলায়। এর মাঝেই কবিয়ালের জীবনে প্রেম আসে। এ প্রেম তাকে উচ্ছ্বসিত করে। তার গান, কবিতা নতুন করে উজ্জীবিত হতে থাকে। প্রেমিকা তার বন্ধু রাজার শ্যালিকা। সে ছিলো পাশের গ্রামের বধু। যাকে নিতাই ঠাকুরঝি বলে ডাকত। ঠাকুরঝি প্রতিদিন দুধ বিক্রি করার জন্য আসত।

ঠাকুরঝির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পায় এভাবে ‘চাঁদ তুমি আকাশে থাকো আমি তোমায় দেখবো খালি। ছুঁতে তোমায় চায়নাকো হে চাঁদ, তোমার সোনার অঙ্গে লাগবে কালি।’ ঠাকুরঝিও নিতাইকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু ঠাকুরঝি বিবাহিত। জাতও মিলবে না। ঠাকুরঝির সাথে সম্পর্কের দোটানায় ঘটনা পরম্পরায় এ প্রেমের কথা মানুষ জেনে যায়। জানাজানি হলে নিতাই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

অন্যত্র সে এক ঝুমুর দলে ঢোল বাজানোর কাজ পায়। যে দলের মেয়ে সদস্যরা দিনে গান গেয়ে নেচে, রাতে দেহ বেঁচে জীবন চালায়। সে নিজের কবিয়াল সত্তাকে চাপিয়ে রেখে ঐ দলের মত করে গান রচনা করে। এখানেও সে বেশ জনপ্রিয় হয়। ঝুমুর দলের সাথে সারাদেশে ঘুরে নেচে গেয়ে হাটে-মেলায় আসা মানুষদের আনন্দ দেয়। সেখানে পরিচয় হয় সেই দলের সবচেয়ে চৌকস সদস্য বসন্তের সাথে।


আরো ও সাজেশন:-

বসন্তের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠে। বিভিন্ন আসরে কবিয়াল গায়, বসন্ত নাচে। কবিয়াল বসন্তের সাথে গাঁটছড়া বাঁধে। প্রতিজ্ঞা করে মরণের আগে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। দিন যায় কবিয়ালের অভিজ্ঞতা বাড়ে। নামকরা কবিয়ালদের গানের সাথে তার পরিচয় হয়। বহুদূর পর্যন্ত নিজের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

ঝুমুর দলের মেয়েদের জীবিকা আসে তাদের রূপ ও দেহ অবলম্বন করে। রূপোপজীবী ব্যবসায় থাকলে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এক সময় বসন্ত রক্তব্যামোতে আক্রান্ত হয়। নিতাইয়ের কোলে মাথা রেখে সে মারা যায়। কাউকে না পেয়ে কবি একাই মরদেহ দাহ করে। কিন্তু পাপিকে আগুন ছোঁয়ানো ছিল মস্ত বড় পাপ। সবাই কবিকে বলে, তুমি এটা কি করলে? ভগবান যখন প্রশ্ন করবেন তখন কি জবাব দেবে তুমি?

কবিয়াল বলে- কোন জবাব দিব না, মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবো ।

বসন্তকে হারানো শোকে কাতর হয়ে নিতাই ঝুমুরদল ছেড়ে দেয়। কাশীসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। একসময় বাংলা মুল্লুক ছেড়ে হিমালয় পর্বতের দিকে যায়। ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন মানুষের দেশ। সেখানে বাংলা ভাষার গান কেউ শুনতে চায় না। নিরাশ হয়ে সে আবার নিজ গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে এসেই বন্ধু রাজার সাথে দেখা হয়। তার মাধ্যমেই জানতে পারে ঠাকুরঝিও মারা গেছে। নিতাই গ্রাম ছাড়ার পরপরই সে মারা যায়। এভাবে উপন্যাসে বিভিন্ন প্রকার গানের পাশাপাশি ভিন্ন ধারার জীবনযাত্রার আবহে একটি অন্যরকম প্রেমের কাহিনি রচিত হয়েছে।

উপন্যাসটিতে ব্যক্তির জীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির আড়ালে মানবজীবন-বিষয়ক অনেক বার্তা দিয়েছেন লেখক। সমাজ-সংসারে প্রতিদিনের আচার-আচরণের নিরীক্ষা ও দর্শনের খণ্ড চিত্র রূপ লাভ করেছে এতে। সংসারে ভালোবাসার যে কোনো বিকল্প নেই- সে কথা বহুভাবে বলা চেষ্টা করেছেন।

বলেছেন- ‘সংসারে সুখ ভালোবাসায়, মিষ্টি কথায়।’ এটিও বলেছেন, সাফল্য পেতে গেলে ধৈর্যনমনীয়তা আর সহজ ব্যবহার খুব প্রয়োজন।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

পরকীয়া এবং অবাধ যৌনাচার যে কারও জন্য সুফল বয়ে আনে না, তা বোঝানোর চেষ্টা আছে উপন্যাসে। নিতাই ঠাকুরঝিকে পায়নি; বসন্তকে পেয়েও হারিয়েছে চিরতরে। ঠাকুরঝি নিতাইকে ভালোবেসে হারিয়েছে সংসার, ইহকাল; যন্ত্রণা আর বিরহে মরতে হয়েছে তাকে। বসন্ত অবাধ যৌনজীবনের ফলস্বরূপ লাভ করেছে অপ্রতিরোধ্য রোগ আর শেষে মৃত্যু। বসন্তের পরিণতি বিষয়ে লেখক রক্তস্রোতের মধ্যে প্রবাহিত হইয়া ফেরে।

তার বক্তব্য: ‘ইহাদের জীবনের এই একটা অধ্যায়। এ অধ্যায় অনিবার্য, কাটাইতে হয় ইহাদের। এই জর্জরতার বিষই মানুষের মধ্যে ছড়াইতে ছড়াইতে আসিবেই। শুধু অনিবার্যই নয়, এই ব্যাধিতে জর্জরিত হইয়াই সমস্ত জীবনটা ধরা-বাঁধা হাতুড়ে চিকিৎসা। চিকিৎসা অর্থে- ব্যাধিটা বাহ্যিক অন্তর্হিত হয়; কিন্তু তাহারা পথ চলে। ডাক্তারও দেখায় না, কবিরাজও না। নিজেরাই চিকিৎসা করে।

মানবজীবনের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্কের উপলব্ধিও আছে উপন্যাসটিতে। বসন্ত যখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, তখন লেখক পরিবেশন করেছেন মানুষের প্রকৃতিলগ্নতার বাস্তব-পরিপ্রেক্ষিত। লিখছেন: ‘রাত্রির শেষ প্রহর অদ্ভুত কাল। এই সময় দিনের সঞ্চিত উত্তাপ নিঃশেষে ক্ষয়িত হইয়া আসে, এবং সমস্ত উষ্ণতাকে চাপা দিয়া একটা রহস্যময় ঘন শীতলতা ধীরে ধীরে জাগিয়া ওঠে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

সেই স্পর্শ ললাটে আসিয়া লাগে, চেতনা যেন অভিভূত হইয়া পড়ে। ধীরসঞ্চারিত নৈঃশব্দ্যের মধ্য দিয়া একটা হিমরহস্য সমস্ত সৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, নিস্তরঙ্গ বায়ুস্তরের মধ্যে নিঃশব্দ- সঞ্চারিত ধূমপুঞ্জের মতো। মাটির বুকের মধ্যে, গাছের পাতায় থাকিয়া যে অসংখ্য কোটি কীটপতঙ্গ অবিরাম ধক্ষনি তুলিয়া থাকে, তাহারা পর্যন্ত অভিভূত ও আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে রাত্রির এই শেষ প্রহরে।’

আখ্যানের নিপুণ বিন্যাস, চরিত্রগুলোর উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং গানের সহজ কথার সঙ্গে জড়িত সংলাপ ও বেদনা সব মিলিয়ে উপন্যাসটি তারাশঙ্করের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।

এই উপন্যাসের ক্লাসিক সংলাপ- ‘এই খেদ আমার মনে মনে, ভালবেসে মিটল না আশ-কুলাল না এই জীবনে। হায়! জীবন এতো ছোট কেনে? এ ভুবনে।’

বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য উপন্যাস ‘কবি’। ব্যক্তিজীবন, গোষ্ঠীজীবন কিংবা লোকায়ত জীবনের শিল্পভাষ্য এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য বলে মনে হয়। মূল চরিত্র নিতাই চরণের কবিপ্রতিভা এবং প্রণয়আবেগ গল্পটিকে দান করেছে পাঠকপ্রিয়তা।
বেদনাময় পরিণতি নিতাই-এর জীবনে বয়ে আনে অতল-অনিশ্চয়তা আর পাঠককে দাঁড় করায় নানান প্রশ্নের ।

এক কূলবধু আর এক বারাঙ্গনা- এই দুই ভিন্ন স্বভাবা নারী যেন বাহ্যিক পরিচয়কে ছাপিয়ে নিতাইয়ের কবি মানসে চিরন্তন নারী, চিরন্তন প্রেমিকার আসনে বসে তাকে কবিপদে অভিসিক্ত করেছে আর সেই সাথে ‘কবি’ উপন্যাসকে দিয়েছে ক্লাসিক মর্যাদা।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment