লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা কি
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা (Balance of Payments Imbalance)
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা হল একটি পরিস্থিতি যেখানে একটি দেশের লেনদেনের ভারসাম্য (Balance of Payments – BOP) সমান থাকে না। এটি তখন ঘটে যখন একটি দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনের হিসাবের বিভিন্ন অংশে (যেমন: বাণিজ্যিক লেনদেন, মূলধন লেনদেন) আয়ের এবং ব্যয়ের মধ্যে অসমতা তৈরি হয়। এর মানে হল যে, একটি দেশ বিদেশে পণ্য বা সেবা রপ্তানি বা আমদানি করার পাশাপাশি অন্যান্য লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় বা অতিরিক্ত আয়ের সম্মুখীন হয়।
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতার প্রধান ধরনের:
১. বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit): যখন একটি দেশের আমদানি তার রপ্তানি থেকে বেশি হয়, তখন বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, দেশটি বেশি পণ্য ও সেবা আমদানি করছে এবং তার আয়ের পরিমাণ তার ব্যয়ের তুলনায় কম।
- উদাহরণ:
যদি দেশ A বছরে $100 বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু $150 বিলিয়ন মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে, তবে তার বাণিজ্য ঘাটতি $50 বিলিয়ন হবে।
২. বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus): বিপরীতভাবে, যখন একটি দেশের রপ্তানি তার আমদানি থেকে বেশি হয়, তখন বাণিজ্য উদ্বৃত্ত তৈরি হয়। এই অবস্থায় দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি আয় অর্জন করছে।
- উদাহরণ:
যদি দেশ B $200 বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে এবং $100 বিলিয়ন মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে, তবে তার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত $100 বিলিয়ন হবে।
৩. বৈদেশিক ঋণের ভারসাম্যহীনতা: একটি দেশ যদি বিদেশ থেকে ঋণ নেয় এবং সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারে বা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তবে এটি একটি ঋণ ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
- উদাহরণ:
যদি একটি দেশ কোনো আন্তর্জাতিক ঋণ নেয় এবং সেটা পরিশোধ করতে পারছে না, তাহলে তার অবশ্যপ্রাপ্ত ঋণ ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
৪. মূলধন প্রবাহের ঘাটতি বা উদ্বৃত্ত: একটি দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ (যেমন: বিদেশি ঋণ, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ, সরাসরি বিনিয়োগ) এবং আন্তর্জাতিক পুঁজি প্রবাহ এর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে।
- উদাহরণ:
যদি কোনো দেশ অতিরিক্ত পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করে বা বিদেশে বিনিয়োগ করতে থাকে, কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ দেশে প্রবাহিত না হয়, তবে এটি ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে।
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতার কারণসমূহ:
১. অতিরিক্ত আমদানি:
কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেশি হলে, তারা বেশি পরিমাণে পণ্য ও সেবা আমদানি করতে থাকে, যা তার বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার দিকে ঠেলে দেয়।
২. অফটার নীতি বা মুদ্রার অবমূল্যায়ন:
অনেক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার মূল্য কমিয়ে দেয়, যা দেশীয় পণ্যগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু, যদি দেশটির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য মুদ্রা অবমূল্যায়িত হয়, তবে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত বিদেশি ঋণ:
এক দেশ অতিরিক্ত পরিমাণে ঋণ গ্রহণ করলে, তার বৈদেশিক ঋণের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে এবং ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে।
৪. অপ্রতুল রপ্তানি:
যদি কোনো দেশ প্রযুক্তি বা গুণমানের কারণে তার রপ্তানি কম করতে থাকে, তাহলে এটি বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতার প্রভাব:
১. মুদ্রার অবমূল্যায়ন:
ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশটির মুদ্রার মূল্য কমে যেতে পারে, বিশেষত যদি বাণিজ্য ঘাটতি বড় হয়। এতে দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারানো:
দীর্ঘমেয়াদী ভারসাম্যহীনতা অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যেতে পারে এবং দেশটি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হতে পারে। - বৈদেশিক সম্পর্কের চাপ:
দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে, বিশেষত যখন এক দেশ অন্য দেশকে অতিরিক্ত আমদানি বা ঋণ গ্রহণের জন্য অভিযুক্ত করে।
উপসংহার:
লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচিত পুঁজি, বাণিজ্য এবং ঋণের উপর কড়া নীতি গ্রহণ করা যাতে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ এবং দেশীয় অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে।
উপসংহার : লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা কি
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।
আর্টিকেলের শেষ কথাঃ লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা কি
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News অনুসরণ করুন
আরো পড়ুন: