বাচ্চাদের শাসন করার সময় 4 টি ভুল কখনো করবেন না/How to rule kids,ইসলামে বাচ্চাদের শাসন করার নিয়ম,শিশুর যত্ন কিভাবে নেবেন, শিশুদের বুদ্ধি বাড়ানোর উপায়

Google Adsense Ads

বাচ্চাদেরশাসনকরারশরঈপদ্ধতিঃ চারাগাছটিকে যেমন সার-পানি, আলো-বাতাস দিয়ে পুষ্টি যোগাতে হয়। মানব শিশুকেও তেমন আদব-কায়দা, শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে সভ্যতার উপাদান সরবরাহ করতে হয়।

আগাছা তুলে না দিলে, বাড়তি ডালপালা ছেঁটে না দিলে চারাটি যেমন বৃক্ষ পরিণত হতে পারে না। তেমনি আদর-সোহাগের পাশাপাশি অনুশাসনের ছড়িটি না থাকলে মানব-শিশুটিও “মানুষ” হয়ে উঠতে পারে না।

তবে সার-পানি, আর ডাল ছাঁটার কথাই বলি, কিংবা শিক্ষা-দীক্ষা আর অনুশাসনের কথাই ধরি- প্রয়োগ করতে হয় সুক্ষ্ণ কৌশলে ও সযত্ন প্রয়াসে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে পরিচর্যাকারীকে হতে হয় একই সঙ্গে কুশলী ও সদা-সতর্ক।

কারণ, চারাগছ ও শিশুর পরিচর্যা এমনই নাযুক যে, সামান্য অবজ্ঞা ও অবহেলায় এবং সামান্য অমনোযোগিতা ও অসতর্কতায় উভয়ের জীবনে নেমে আসে চরম সর্বনাশ। অনেকে বাচ্চাদের বদ অভ্যাসের প্রেক্ষিতে রাগ বা শাসন করতে নারাজ। তাদের কথা হল, এখন কিছুই বলার দরকার নেই, বড় হলে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। এটা মারাত্মক ভুল। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. বলেছেন, বাচ্চাদের স্বভাব-চরিত্র যা গড়ার পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে গঠন হয়ে যায়। এর পর ভাল-মন্দ যেটাই হল তা মজবুত ও পাকাপোক্ত হতে থাকে, যা পরবর্তীতে সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সুতরাং বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক ছোটবেলা থেকেই বুঝাতে থাকবে। এক সময় সে বুঝবে এবং উত্তম চরিত্র নিয়ে বড় হবে।

(ইসলাহে খাওয়াতীন ২৫১-২৫২, তুহফাতুল উলামা-১/৪৮৩) আজকাল বাসা-বাড়িতে, স্কুল-কলেজে, এমনকি দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও (যারা শাসনের পক্ষে তাদের থেকে) বাচ্চাদের উপর শাসন নামের নির্যাতন চোখে পড়ে। সে শাসনের না আছে কোন মাত্রা, আর না আছে শাসিতের প্রতি হিতকামনা।

এতে একদিকে শাসনকারী নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার ধর-পাকড়ের সম্মুখীন করছে। অপরদিকে জুলূমের শিকার শিশু বা ছাত্র রাগে-ক্ষোভে হয়তো পড়া-লেখাই ছেড়ে দিচ্ছে বা আরো ঘোরতর অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাচ্চাদের শাসন করার ক্ষেত্রে শরী‘আত নির্দেশিত পন্থা ও সীমা উপেক্ষা করা।

(তুহফাতুল উলামা-১/৪৯৩) চলমান পরচায় পিতা-মাতা ও শিক্ষক কর্তৃক সন্তান ও ছাত্রদের শাসন করার সহীহ পদ্ধতি বাতলে দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।

আমীন। (১) কোন শিশু বা ছাত্র তার সাথীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তা শোনামাত্রই মেজাজ বিগড়ানো যাবে না।

কেননা, শরী‘আতে এক পক্ষের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা নেই। কাজেই উভয় পক্ষের কথা না শুনে কোনরূপ সিদ্ধান্ত নেয়া বা একজনকে শাস্তি দেয়া যাবে না। অন্যথায় খোদ ফায়সালাকারীই জালেম সাব্যস্ত হবে।

(ফাতাওয়া আলমগীরী, বৈরুত সংস্করণ-৩/৩০৯) (২) সবার কথা শোনার পর যখন ফায়সালা করার ইচ্ছা করবে, মনের মধ্যে কোনরূপ রাগ বা গোস্বা স্থান দেয়া যাবে না। কারণ, রাগের সময় বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। ফলে অধিকাংশ সময়ই রাগের মাথায় ফায়সালা ভুল প্রমাণিত হয়। এ কারণেই রাগান্বিত অবস্থায় ফায়সালা দেয়া বা শাস্তি প্রদান করা শরী‘আতে নিষেধ।

(বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৭১৫৮, মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-১৭১৭, তুহফাতুল উলামা-১/৪৮৬, ৪৯৮) সুতরাং

(ক) একেবারে ঠান্ডা মাথায়। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৭১৫৮, তুহফাতুল উলামা-১/৪৯০)

(খ) আল্লাহ তা‘আলাকে হাজির জেনে। (সূরা তাওবা, আয়াত-১০৫)

(গ) হাশরের ময়দানে জবাবদিহিতার কথা স্মরণে রেখে। (সূরা যিলযাল, আয়াত : ৮, বুখারী শরীফ হাদীস নং-৫১৮৮)

(ঘ) স্থান-কাল পাত্র বিবেচনা করে। (ফাতওয়া শামী-৪/৬০-৬১, কিতাবুল ফিকহু আলাল মাজহাবিল আরবা‘আ-৫/৩৫২, তুহাফাতুল উলামা-১/৪৮৫) যেমন পৃথক স্বভাবের কারণে কারো দুই থাপ্পড় আবার কারো জন্য দুই ধমক

(ঙ) অপরাধীর সংশোধনের নিয়তে। (সূরা হুদ, আয়াত-৮৮)

(চ) শরী‘আতের সীমার মধ্যে থেকে। যে শাস্তি সংগত মনে হয়-নির্ধারণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৯০)

(৩) শরী‘আতে নাবালেগ বাচ্চাকে বেত বা লাঠি দ্বারা প্রহার করার কোনো অবকাশ নেই। প্রয়োজনে ধমকি-ধামকি দিয়ে, কান ধরে উঠ-বস করিয়ে, এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখে বা বিকেলে খেলা বন্ধ রেখে শাস্তি দেয়া যেতে পারে।

একান্ত অপরাগতায় হাত দিয়ে প্রহার করার অনুমতি আছে (লাঠি বা বেত দিয়ে নয়)। কিন্তু কোনো ক্রমেই

(ক) তার সংখ্যা যেন তিনের অধিক না হয়। (ফাতাওয়া শামী-১/৩৫২)

(খ) চেহারা ও নাযুক অঙ্গে যেমন মাথায় পেটে ইত্যাদিতে আঘাত করা হয়। (আদ দুররুল মুখতার-৪/১৩)

Google Adsense Ads

(গ) যখম হয়ে যায় বা কালো দাগ পড়ে যায় এমন জোরে না হয়। (ফাতাওয়া শামী-৪/৭৯) কারণ, নাবালেগ বাচ্চাকে এই অপরাধে তিনের অধিক প্রহার করা এবং (বালেগ, নাবালেগ সবার ক্ষেত্রেই) মুখমন্ডল ও নাযুক অঙ্গে আঘাত করা হারাম।

আর বালেগ ছাত্রকে সংশোধনের উদ্দেশ্য তার অপরাধের ধরণ অনুযায়ী শরী‘আতের দন্ডবিধির আওতায় এনে (যা ২নং এ বর্ণিত হয়েছে) বেত ইত্যাদি দ্বারা সীমিত সংখ্যায় (সর্বোচ্চ ১০ (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৬৮৪৮, ৬৮৪৯, ৬৮৫০, কিতাবুল ফিকহ আলাল মাজহাবিল আরবা‘আ-৫/৩৫২)) প্রহার করা জায়িয আছে।

উল্লেখ্য, বেত হতে হবে গিঁটহীন, সরল ও মাঝারী ধরনের মোটা, যা ব্যাথা পৌঁছাবে কিন্তু দাগ ফেলবে না। (ফাতাওয়া শামী-৪/১৩) (৪) কোনো ধরনের অমানবিক শাস্তি দেয়া-যেমন, হাত-পা বেঁধে পিটানো, পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা, সিলিংয়ে ঝোলানো, কপালে পয়সা দিয়ে সূর্যের দিকে মুখ করে রাখা ইত্যাদি বিলকুল হারাম ও নাজায়িয।

(সূরা বাকারা আয়াত: ১৯০, বুখারী শরীফ, হাদীস নং-২৪৪৭, তুহফাতুল উলামা-১/৪৯২) (৫) ধমকি বা কড়া কথার মাধ্যমে হোক আর শরী‘আত অনুমোদিত প্রহারের মাধ্যমেই হোক- সতর্ক করার উত্তম তরীকা হল- সবার সামনে মজলিসে শাস্তি বিধান করা।

যাতে অন্যদের জন্যও তা উপদেশ হয়ে যায়। (সূরা নূর, আয়াত-২) এ ক্ষেত্রে যাকে শাস্তি দেয়া হবে, প্রথমে তাকে শাস্তি গ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেয়া। তাকে একথা বুঝানো যে, মানতে কষ্ট হলেও শাস্তির এই ব্যবস্থা মূলত তার কল্যাণের জন্য।

এর দ্বারা শয়তান তার থেকে দূর হবে। তার দুষ্টামীর চিকিৎসা হবে। আর শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হলে এ শাস্তি দ্বারা তার পিতা-মাতা যে মহান উদ্দেশ্যে তাকে উস্তাদের হাতে সোপর্দ করেছেন- তা পূর্ণ হবে এবং শয়তানের চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। ঠিক যেমন রোগীর কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও ডাক্তাররা তার অপারেশন করে

Google Adsense Ads

Leave a Comment