দুর্ঘটনা বীম কী,বাংলাদেশের বীমা শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উপায়সমূহ বর্ণনা কর

Google Adsense Ads

দুর্ঘটনা বীম কী?

দুর্ঘটনা বলতে বুঝায় এমন ঘটনা যা অপ্রত্যাশিত ও অনাকাংখিত যার উপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, এমনকি যা হঠাৎ করে ঘটে। তাই দূর্ঘটনা কখন ঘটবে তাও কেউ বলতে পারে না।
(১৯০৩) মামলার রায় দান কালে বলেন, “দূর্ঘটনা হচ্ছে কোন অপ্রত্যাশিত খারাপ
ঘটনা বা অপ্রত্যাশিত ঘটনা যা আশা বা চিন্তা করা যায় না।”

এই অপ্রত্যাশিত ও অনাকাংখিত ঘটনার ফলে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার বিরুদ্ধে নিরাপত্তার জন্য যে বীমা করা হয় তাই দূর্ঘটনা বীমা। এ ধরনের বীমা মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য ও সম্পত্তির জন্যও করতে পারে।
এ ধরনের বীমা

প্রধানতঃ ক্ষতি পূরণের বীমা। দূর্ঘটনার কারণে কোন ব্যক্তি বা তার সম্পত্তির ক্ষতি হলে চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে বীমা গ্রহীতা। এ বীমার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত বিশ্বাস ও বীমাযোগ্য স্বার্থ আবশ্যক।

দূর্ঘটনা বীমার প্রকারভেদ ঃ দুর্ঘটনা বীমাকে প্রধানতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যথা
১. ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা
২. সম্পত্তি দুর্ঘটনা বীমা,
৩. দায় বীমা।

বিভিন্ন প্রকার দূর্ঘটনা বীমার সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলোক) ব্যক্তিগত দূর্ঘটনা বীমা : কোন দূর্ঘটনা বা রোগ ব্যাধির কারণে বীমা গ্রহীতা মারা গেলে বা সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য বীমা গ্রহীতা ও বীমাকারীর মধ্যে যে চুক্তি হয় তাকে ব্যক্তিগত দূর্ঘটনা বীমা বলে। ব্যক্তিগত বীমা আবার কয়েক প্রকার হতে পারে যা নিæে বর্ণনা করা
হলো ঃ

১. দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বীমা ঃ মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকির বিপরীতে এ ধরনের বীমা করা হয়। এ ধরনের বীমা অনুযায়ী যদি বীমাকৃত ব্যক্তি দুর্ঘটনায় মারা যায় বা দূর্ঘটনায় আহত হয়ে চুক্তিতে উলি−খিত সময়ের মধ্যে মারা যায় তার জন্য চুক্তি অনুযায়ী বীমা গ্রহীতা টাকা পাবার অধিকারী হবেন।

২. দূর্ঘটনা জনিত অক্ষমতা বীমা ঃ এরূপ বীমা পত্র অনুযায়ী চুক্তিতে উলি−খিত কোন দুর্ঘটনার কারণে বীমাকৃত ব্যক্তি সম্পূর্ণ বা আংশিক অক্ষম হয়ে গেলে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে বীমাকারীর নিকট থেকে সে ক্ষতিপূরণ পাবে।

৩. নির্দিষ্ট রোগ ও দূর্ঘটনা বীমা ঃ এ ধরনের বীমা পত্র অনুযায়ী বীমাগ্রহীতা বীমা চুক্তিভুক্ত নির্দিষ্ট কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়লে বীমার চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতি পূরণ পাবে।

৪. যেকোন প্রকার রোগ ও দূর্ঘটনা বীমা ঃ দূর্ঘটনা ব্যতিত যেকোন রোগে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে চুক্তি হলে তাকে যেকোন প্রকার রোগ ও দুর্ঘটনা বীমা বলে।

৫. চিকিৎসা ও হাসপাতাল খরচ বীমা ঃ দুর্ঘটনা বা কোন রোগের কারণে অসুস্থ স্থলে হাসপাতাল ও চিকিৎসার জন্য খরচ বহন করার প্রতিশ্র“তি যুক্ত বীমাকে চিকিৎসা ও হাসপাতাল খরচ বীমা বলে।

বাংলাদেশের বীমা শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উপায়সমূহ বর্ণনা কর

বাংলাদেশের বীমা সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ৫২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৫০ হাজার কোটি টাকা লাইফ বীমা কোম্পানির এবং ১১ দশমিক ৫০ হাজার কোটি টাকা নন-লাইফ বীমা কোম্পানির। মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানি ও ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানি।

২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং জিএনআই ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সে তুলনায় বাংলাদেশের বীমা বাজার স্থূল ও তাত্পর্যপূর্ণ নয়। লাইফ বীমা থেকে প্রতি বছর প্রথম ও নবায়ন প্রিমিয়াম হিসেবে ৯-১০ হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়ার আয় হয়, পক্ষান্তরে নন-লাইফ বীমা থেকে প্রতি বছর ৩-৪ হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম আসে।

বাংলাদেশের বীমাবাজারের প্রধান সমস্যাগুলো:

ক) বীমার প্রতি জনগণের আস্থা ও সচেতনতার দারুণ অভাব;

খ) বীমাবাজার সম্প্রসারিত নয়;

গ) উন্নত বীমাবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বীমাবাজারের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে;

ঘ) কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুশাসন ও শৃঙ্খলা নেই;

ঙ) আন্তর্জাতিক মানের বীমা প্রডাক্ট নেই;

চ) নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বীমা কোম্পানির সুসম্পর্কের অভাব;

ছ) কোম্পানিগুলো বীমা দাবি মেটাতে অনীহা ও কালক্ষেপণ করে;

জ) নিয়ন্ত্রক সংস্থায় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের অভাব;

ঝ) বীমা শিল্পে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না; এবং

ঞ) বীমা প্রেনিট্রেশন ও ঘনত্ব কম।

রূপকল্প: বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জীবন ও সম্পদকে বীমার আওতায় নিয়ে আসা।

বীমা পলিসি গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করা। বাংলাদেশের বীমাবাজার সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে বীমা ‘প্রেনিট্রেশন ২০২৪ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা।

মিশন: বাংলাদেশের বীমাবাজার আন্তর্জাতিক মানের উন্নত বীমাবাজারে পরিণত করা! ধাপে ধাপে দেশের সম্পদ ও জীবনের ঝুঁকি বীমার আওতায় এনে তার সুফল পাওয়া নিশ্চিত করা।

কর্মপরিকল্পনা: স্বল্প আয়ের লোকরা আর্থিকভাবে দুর্বল থাকে তাদের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বহনে।

বীমার মাধ্যমে ওইসব দরিদ্র লোকদের রক্ষা করা যেতে পারে। সমুদয় বীমা প্রচলনের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের লোকদের অর্থনৈতিক আস্থা অর্জনে তাদের আর্থিক দুর্বলতা লাঘব করা যেতে পারে। সমুদয় বীমা এক আন্তর্জাতিক মানের বীমা ধারণা। এটি পূর্ববর্তী ক্ষুদ্র বীমা ধারণা থেকে আরো ফলদায়ক ও কার্যকর বীমা প্রকল্প হিসেবে সারা পৃথিবীতে বিকাশ লাভ করছে।

Google Adsense Ads

একটি বীমা পলিসি ক্রয়ের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ও তার পরিবার জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ ও বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাসের নিশ্চয়তা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন আছে এবং এটি সারা দেশে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তবে ক্ষুদ্রঋণ এককভাবে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারে না।

ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ব্যাপক এবং এটা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করতে পারেননি। বরং দরিদ্র ব্যক্তি দরিদ্রই থেকে যায়, কারণ ক্ষুদ্রঋণের বিপরীতে কোনো ঝুঁকি বহন করা হয় না। বাংলাদেশ দুর্যোগকবলিত একটি দেশ। এখানে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা প্রতিনিয়ত লেগে থাকে। মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও অনেক। প্রতি বছর দুর্ঘটনায় অনেক লোক মারা যায়। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা কোনো ব্যক্তি কোনো দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলে বা মারা গেলে অথবা তার সামান্যতম সম্পদ কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ঋণ মওকুফ হয় না।

ফলে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা সমূহ বিপদের সম্মুখীন হয় এবং ঋণের বোঝার কারণে আরো দরিদ্র হয়ে পড়ে। সমুদয় বীমা এসব ঝুঁকি থেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাকে রক্ষা করতে পারে। ক্ষুদ্রঋণ মানুষকে সঞ্চয় করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না।

বরং সমুদয় বীমা মানুষকে সঞ্চয়ী হতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রতিটি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাকে সমুদয় বীমার আওতায় আনতে হবে তার সমূহ ঝুঁকি মোকাবেলা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য।

সমুদয় বীমা পরিকল্প বাংলাদেশে প্রচলন নেই। বীমা নামে কিছু পলিসি প্রচলিত আছে। সমুদয় বীমা চালু করতে হলে বর্তমান বীমা আইনের কিছুটা সংশোধন প্রয়োজন হবে

H.S.C

Google Adsense Ads

1 thought on “দুর্ঘটনা বীম কী,বাংলাদেশের বীমা শিল্পের সমস্যা ও সমাধানের উপায়সমূহ বর্ণনা কর”

Leave a Comment