কিভাবে প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তিবদ্ধ হয়
প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তি করার সময় বেশ কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে। সফলভাবে একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য পরিকল্পনা, আইনি আনুষ্ঠানিকতা, এবং অংশীদারদের মধ্যে স্পষ্ট বোঝাপড়া প্রয়োজন। নিচে এই চুক্তি করার ধাপগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:
১. বাজার গবেষণা ও অংশীদার নির্বাচন
- বাজার বিশ্লেষণ: প্রথমে টার্গেট দেশ এবং তার বাজারের চাহিদা, প্রবণতা, এবং প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিশদ গবেষণা করা হয়।
- উপযুক্ত অংশীদার খোঁজা: সম্ভাব্য ক্রেতা, সরবরাহকারী, এজেন্ট, বা ডিস্ট্রিবিউটরদের খোঁজ করা হয়।
- বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই: সম্ভাব্য অংশীদারদের আর্থিক অবস্থা, বাজারে সুনাম, এবং ব্যবসার অভিজ্ঞতা যাচাই করা হয়।
২. প্রাথমিক যোগাযোগ এবং আলোচনা
- প্রস্তাব পাঠানো: সম্ভাব্য অংশীদারদের কাছে পণ্যের বিবরণ এবং শর্তাবলীসহ প্রাথমিক প্রস্তাব বা অফার পাঠানো হয়।
- আলোচনা (Negotiation): মূল্য, পরিমাণ, গুণগত মান, পরিবহন পদ্ধতি, এবং অন্যান্য শর্ত নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৩. বাণিজ্যিক চুক্তির খসড়া তৈরি
- শর্তাবলী নির্ধারণ: পণ্য সরবরাহ, মূল্য পরিশোধের শর্ত, ডেলিভারি সময়, এবং গুণগত মান সম্পর্কিত শর্তাবলী নির্ধারণ করা হয়।
- আইনি পরামর্শ: স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করতে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া হয়।
৪. চুক্তি স্বাক্ষর
- উভয় পক্ষের সম্মতি: উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
- চুক্তির ধরণ: চুক্তিটি হয় সরাসরি বিক্রয়, লাইসেন্সিং, যৌথ উদ্যোগ (Joint Venture), বা সরবরাহ চুক্তি হতে পারে।
৫. শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- শুল্ক ও কর: আমদানি ও রপ্তানির শুল্ক, ট্যারিফ, এবং অন্যান্য কর সম্পর্কিত বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়।
- অনুমোদন ও লাইসেন্স: প্রয়োজনীয় আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স এবং অনুমোদন নেওয়া হয়।
৬. পণ্য পরিবহন ও লজিস্টিকস
- লজিস্টিকস পরিকল্পনা: পণ্য পরিবহনের পদ্ধতি (জাহাজ, বিমান, রেল, বা সড়কপথ) এবং ডেলিভারির সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়।
- ইনকোটার্মস (Incoterms): আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত শর্তাবলী, যেমন CIF (Cost, Insurance, and Freight), FOB (Free on Board) ইত্যাদি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৭. বীমা ব্যবস্থা
- বাণিজ্য বীমা: পণ্য পরিবহনের সময় ঝুঁকি কমানোর জন্য বীমা গ্রহণ করা হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: রাজনৈতিক, আর্থিক এবং পরিবহন-সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
৮. পরিশোধ ব্যবস্থা
- পরিশোধের পদ্ধতি: এলসি (Letter of Credit), অগ্রিম পরিশোধ, বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
- মুদ্রা বিনিময়: এক মুদ্রা থেকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তরের হার এবং সময় বিবেচনা করা হয়।
৯. মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিদর্শন
- পরিদর্শন ও যাচাই: পণ্য পাঠানোর আগে গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্বারা পরিদর্শন করা হয়।
- নথিপত্র প্রস্তুত: শিপিং ডকুমেন্ট, সার্টিফিকেট অফ অরিজিন, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি তৈরি করা হয়।
১০. চুক্তি বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন
- চুক্তির শর্ত মেনে সরবরাহ ও পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়।
- পরবর্তী মূল্যায়ন: চুক্তির সাফল্য ও সমস্যা চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তি একটি জটিল এবং বহুপর্যায়ের প্রক্রিয়া। এটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে বাজার বিশ্লেষণ, আইনি সহায়তা, পরিষ্কার শর্তাবলী, এবং যথাযথ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়।
উপসংহার : কিভাবে প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তিবদ্ধ হয়
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।
আর্টিকেলের শেষ কথাঃ কিভাবে প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তিবদ্ধ হয়
বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস সর্বশেষ আপডেট পেতে Google News অনুসরণ করুন
আরো পড়ুন: