৮ম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ের ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে মৌচাকের উল্লেখ আছে

মৌচাক হলো মৌমাছির আবাসস্থল। মৌমাছিরা তাদের তলপেটের নিচে অবস্থিত গ্রন্থি থেকে বের হওয়া মোম দিয়ে মৌচাক তৈরি করে।

মৌচাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ষড়ভুজ প্রকোষ্ঠ থাকে। মৌচাকের ষড়ভুজ প্রকোষ্ঠ নির্মাণের সময় মোমের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৩.৬ থেকে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। মৌমাছির শরীরের তাপমাত্রা মোমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বড় ফ্যাক্টর। মৌমাছি এসব প্রকোষ্ঠে মধু সঞ্চয় করে।

এ ছাড়া ফাঁকা প্রকোষ্ঠে মৌমাছি ডিম পাড়ে, লার্ভা ও পিউপা সংরক্ষণ করে। মৌমাছি নিজেই দেহের ভেতরে মোম তৈরি করে। এই মোম প্রকৃতপক্ষে ফ্যাটি এসিডের ইস্টার। এর রাসায়নিক সংকেত হলো— C15H31COOC30H61।

শ্রমিক মৌমাছির দেহে আটটি ক্ষুদ্র গ্ল্যান্ড থেকে মোমশল্ক নিঃসৃত হয়। নিঃসরণের সময় মোমশল্ক থাকে স্বচ্ছ যা কালক্রমে সাদা ও পরে ঈষদচ্ছ বর্ণ ধারণ করে। সহস্রাধিক মোমশল্ক থেকে মাত্র এক গ্রাম মোম পাওয়া যায়।

মৌচাককে প্রকৌশলবিদ্যার অপূর্ব নিদর্শন বলা হয়। কারণ মৌমাছি ষড়ভুজ আকৃতির কক্ষ ব্যবহার করার মাধ্যমে অল্প পরিমাণ মোম ব্যবহার করে হালকা অথচ শক্ত মৌচাক তৈরি করতে পারে। এর ফলে এরা সীমিত জায়গায় অনেক মধু সঞ্চয় করতে পারে।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা নমনীয় অথচ কম জায়গা নেবে এমন কাঠামো তৈরির জন্য মৌচাকের গঠন অনুকরণ করে। উদাহরণস্বরূপ প্লেনের ইঞ্জিনিয়াররা মৌচাকের আদলে তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে দৃঢ় অথচ হালকা প্লেন তৈরি করে থাকে, যাতে তুলনামূলকভাবে কম জ্বালানি খরচ হয়।

মৌমাছি মৌচাক তৈরি করে একসঙ্গে কলোনি করে বসবাস করার জন্য। এ ছাড়া শীতকালে ফুলে মধু কম থাকে। তাই মৌমাছি গ্রীষ্মে মধু সংগ্রহে করে মৌচাকে সঞ্চিত করে রাখে, যাতে শীতের সময় দেহের চাহিদা পূরণ করতে পারে। প্রতিটি মৌচাকে অন্তত ১০ হাজার মৌমাছি থাকে, যার ফলে এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর মধুর প্রয়োজন হয়।

পাশাপাশি শীতে পরিবেশের তাপমাত্রার সঙ্গে দেহের তাপমাত্রার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এদের বেশি শক্তি গ্রহণ করে তাপ উৎপন্ন করতে হয়। মৌচাকের মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভূমিকা রাখে মধু। মৌয়ালরা ছুরি বা মেশিন দিয়ে প্রতিটি মৌচাকের কক্ষ থেকে মোমের আবরণ কেটে মধু সংগ্রহ করে।

Leave a Comment