৫ম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ের শখের মৃৎশিল্প প্রবন্ধে শখের হাঁড়ির উল্লেখ আছে

চিত্রিত মৃৎপাত্র অর্থাৎ রং দিয়ে নকশা আঁকা এক ধরনের পাত্র হচ্ছে শখের হাঁড়ি। আকার-আকৃতির দিক থেকে সাধারণ হাঁড়ির মতোই, পার্থক্য শুধু গায়ে। সাধারণ হাঁড়িতে খুব একটা রং ও নকশা করা থাকে না; কিন্তু শখের হাঁড়ির গায়ে উজ্জ্বল রং দিয়ে দৃষ্টিনন্দন চিত্র আঁকা হয়। দৃশ্যমান করা হয় ফুল, লতা-পাতা, পাখি, মাছসহ নানা কিছু। শৌখিন কাজে ব্যবহৃত হয় বলে এর নাম শখের হাঁড়ি। হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে ধূসর রঙিন মৃৎপাত্র পাওয়া যায়, যা এক প্রকার শখের হাঁড়ি। ১৪০৬ সালে চীনা পর্যটক মা-হুয়ানের ভ্রমণসাহিত্যে প্রথম এই শখের হাঁড়ির উল্লেখ পাওয়া যায়।

আগে শখের হাঁড়ি খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হতো। ঘরের চালে পাটের তৈরি শিকায় ঝুলিয়ে রাখা হতো এই হাঁড়ি। তাতে রাখা হতো বিভিন্ন ধরনের খাবার। এ ছাড়া বিয়ে ও আচার-অনুষ্ঠানে মিষ্টি, পিঠাসহ শখের হাঁড়ি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে উপহার হিসেবে পাঠানো হতো। উৎসব, পালা-পার্বণ, পূজা ও গ্রামীণ মেলাগুলোতে শখের হাঁড়ি দেখা যায়।

গড়ন ও ব্যবহার ভেদে শখের হাঁড়ির বিভিন্ন রকমফের ও নাম রয়েছে। যেমন—মঙ্গল হাঁড়ি, সাপুড়ে হাঁড়ি, বালির হাঁড়ি, ঝরা হাঁড়ি, ফুল হাঁড়ি, জাগরণ হাঁড়ি, গর্ভ হাঁড়ি, আইবুড়ো হাঁড়ি, বাকু হাঁড়ি প্রভৃতি। এই হাঁড়িগুলোয় আবার অঞ্চলভেদে নকশার ভিন্নতা দেখা যায়। রাজশাহীর বাঁয়া, বসন্তপুর ও নবাবগঞ্জের বারোঘরিয়ায় তৈরীকৃত হাঁড়িতে হলদে জমিনের ওপর লাল, নীল, সবুজ ও কালো রঙে আঁকা হয় হাতি, ঘোড়া, মাছ, শাপলা, পদ্ম, রাজহাঁস, পাতিহাঁস, পেঁচা, কবুতর ইত্যাদি। নওগাঁর বাঙ্গালপাড়ায় তাদের শখের হাঁড়িগুলোতে লাল রঙের ওপর সাদা-কালো ও সরষে ফুলের রঙে আঁকা হয় মাছ, পাখি, পদ্মফুল। আবার গোয়ালন্দের হাঁড়িগুলোতে নকশি লতাপাতা ও ফুলের প্রাধান্য থাকে।

শখের হাঁড়ি রঙ করার জন্য বর্তমানে অ্যাক্রিলিক রঙ বেশি ব্যবহার করা হলেও অতীতে আতপ চালের গুঁড়ার তৈরি সাদা রং, চুলার কালো কয়লা, হাঁড়ি-পাতিলের নিচের কালো রং, লাল ইটের রং এবং সিঁদুর রং ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জিগাগাছের আঠা, বহেরা ফলের আঠা ব্যবহার করা হতো রঙের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি ও চকচকে করে তোলার জন্য।

শখের হাঁড়ি বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া গেলেও রাজশাহীর সিন্দুরকুসুম্বী, বায়া, হরগ্রাম এবং বসন্তপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার বারোঘরিয়া গ্রাম, ঝািনাইগাতি থানা, ঢাকার নয়ারহাট, কুমিল্লা, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ফরিদপুরের কোয়েলজুড়ি ও হাসরা, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, জামালপুরের বজরাপুর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার ইদ্রিলপুর, ময়মনসিংহের বাঙ্গাসুর ইত্যাদি স্থান উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঙ্গালপাড়া, নাটোর সদরের পালপাড়া, গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুরেও এসব হাঁড়ি তৈরি ও বাজারজাত করা হয়।

P.S.C

Leave a Comment