১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আলোচনা,১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও ফলাফল আলোচনা কর

প্রশ্ন সমাধান: ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে আলোচনা,১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি ও ফলাফল আলোচনা কর,৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কারণ ফলাফল ও গুরুত্ব

ভূমিকা : পূর্ব পাকিস্তানে যে সকল গণআন্দোলন হয়েছে তার মধ্যে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনকেই কেবল গণঅভ্যুত্থান রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ আন্দোলন সমগ্র বাঙালি কর্তৃক পরিচালিত ও তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে হয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলিই “৬৯” এর গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করেছে। এ আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান কতগুলো সুনির্দিষ্ট কারণ ও তাৎপর্যকে সামনে নিয়ে গড়ে উঠেছিল, যে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম স্তর বলা যেতে পারে।


১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের কারণ : নিচে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :


১. ছয় দফার প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মনোভাব : ৬ দফা কর্মসূচি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে পাকিস্তানি নেতারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। দক্ষিণপন্থি দলগুলোও এর অপব্যাখ্যা করে আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে চিহ্নিত করেন। এদিকে ৬ দফা দিন দিন পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে জনপ্রিয়তা লাভ করতে লাগল। এ ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান নিজেই ৬ দফার বিরুদ্ধে অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করার হুমকি দেন। তার নির্দেশে তাবেদার গভর্নর, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ কর্মীকে মামলায় জড়িত করে অযথা হয়রানি করেন। শেষপর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কয়েকজন বিশিষ্ট কর্মীকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হলো (১৯৬৬/৮মে)।


২. পাকিস্তানি রাজনীতির বৈশিষ্ট্য : পূর্ব পাকিস্তানের লোকেরা যখনই তাদের ন্যায্য দাবি উত্থাপন করে, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানি কায়েমি স্বার্থবাদীরা স্বার্থ রক্ষার জন্য হৈচৈ করে উঠেন এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের শান্ত করার জন্য সর্বপ্রকার দমননীতি গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের রাজনীতির একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, দেশের অর্থনৈতিক তৎপরতার পশ্চাতে সামরিক চক্রের অদৃশ্য খেলা সর্বদাই সক্রিয় ছিল। এ কারণেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের প্রবেশ ঘটতে পারেনি।
৩. ৬ দফা আন্দোলনকে চিরতরে দমন : পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করার জন্য নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর প্রতিবাদে ৭ জুন সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। দেশের সর্বত্র নাগরিক জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানি সরকার জনগণের এ স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘটকে মেনে নিতে পারলেন না। ধর্মঘটি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য এ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরীহ ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণ করা হয়। ফলে বহুলোক নিহত ও আহত হয়। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করেন।


৪. ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মধ্যে ভাঙন : জাতি যখন ৬ দফা পরবর্তী সংকটে পড়ে, তখন ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ এর মধ্যে বিভক্তি দেখা যায়। এর এক দলের নেতা মাওলানা ভাসানী। অন্য দলের নেতা পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়ালি খান। ওয়ালি খান সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। পূর্ব পাকিস্তানে ওয়ালি ন্যাপের নেতা ছিলেন অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ। মুজাফফর আহমদ ৬ দফাকে বিরোধিতা করেননি, কিন্তু ভাসানীপন্থিরা বিরোধিতা করেন। ফলে ৬ দফা আন্দোলন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।


৫. আগরতলা মামলা : পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এ সময় স্বৈরাচারী সরকার দেশদ্রোহিতার অজুহাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। অতঃপর শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করে কুমিল্লা সেনানিবাসে আটক রাখেন। শাসকগোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর অনুচরবর্গসহ ভারতের সাথে যোগাযোগ করে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন। এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বাঙালি জনসাধারণের কোনো ধারণা ছিল না। যাহোক পরে বিচারের জন্য পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এস.এ রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ আদালত গঠন করে ঢাকাতে বিচার শুরু হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে ষড়যন্ত্রের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার আগেই মামলা প্রহসনে পরিণত হয়।


৬. আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ : ১৯৬৮ সাল থেকে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৯৬৪ সালের পর থেকে আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে যে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠে, তা আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে একজন ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে এ পুঞ্জীভূত অসন্তোষের আগুন জ্বলে উঠে। তরুণ ও ছাত্রসমাজ আইয়ুব সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনের আওয়াজ তোলেন। আইয়ুব খান কর্তৃক পদচ্যুত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেড এ ভুট্টো এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি পিপলস্ পার্টি গঠন করে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। কারাবাসের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। তার নেতৃত্বে প্রথম দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে এ আন্দোলন নবজীবন লাভ করেছিল।


৭. উন্নয়ন দশক উদযাপন : ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খান তার শাসনকালকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উন্নয়ন দশক উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ উৎসব পালনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে, জনগণ এতে অংশগ্রহণ করেনি। সাধারণত মনে করা হয় যে, উন্নয়ন দশকের অপচয় এ সরকারের পতনকে আসন্ন করে তুলেছিল। জনগণের টাকা খরচ করে সরকারের পক্ষে ঢাকঢোল পিটানোর কোনো অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। পাকিস্তানের দু’অঞ্চলের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজমান ছিল তা বিবেচনা করে পাকিস্তানিরা এতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।


৮. গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন : দীর্ঘদিন থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক শাসন পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু জনগণের দাবি তারা সম্মিলিতভাবে পেশ করতে পারেনি বলে সফলকাম হয়নি। ১৯৬৯ সালে ৮ জানুয়ারি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ ঢাকাতে মিলিত হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ন্যাপ ও পিপলস্ পার্টি ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল ৮ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ঐক্য জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়।


৯. ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন : গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠনের পূর্বে পাকিস্তানের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের একাংশ নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় (১৯৬৯/৪ জানুয়ারি)। দেশে যখন নেতৃত্বের অভাব তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী যে গণআন্দোলন শুরু হয়, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফার ভিত্তিতে সে আন্দোলনে শরিক হয় এবং একে জোরদার করে তোলে।


১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য : নিচে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য আলোচনা করা হলো :


১. আগরতলা মামলার অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আগরতলা মামলার অবসান ঘটে। গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাগণ ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আইয়ুব-মোনায়েম চক্র কর্তৃক ‘আগরতলা মামলা’ নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় ও অটল থাকায় ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।


আরো ও সাজেশন:-

২. রাজবন্দিদের মুক্তি : ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষকরে বাঙালি জনগণের প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থানে থাকেন। প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মুখে পূর্ব বাংলার সরকার আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য রাজবন্দিদের বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় ।


৩. শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচিতি : ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের অন্যতম প্রভাব পড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে। তাছাড়া তিনি বাংলার জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয় পাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি (১৯৬৯) রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক গণসম্বর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।


৪. গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান : ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের তীব্রতা প্রশমনের জন্য প্রসিডেন্ট আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাওয়ালপিন্ডিতে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। এ বৈঠকে ৬ দফা কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ফলে গণআন্দোলন আবারও তীব্ররূপ ধারণ করে এবং প্রশাসন নিশ্চল হয়ে পড়ে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৫. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : এরূপ পরিস্থিতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অবশেষে ১০ মার্চ আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে রাওয়ালপিন্ডিতে পুনরায় গোলটেবিল বৈঠক বসে। এ বৈঠকে ১০ মার্চ তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়.
i. প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
ii. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে।
iii. সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।


৬. গোলটেবিল বৈঠক বর্জন : গোলটেবিল বৈঠকে গৃহীত তিনটি বিষয়ে আইয়ুব খান ও বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দ একমত হয়। কিন্তু ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় আওয়ামী লীগ গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। এ সময় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন। ফলে সাধারণ আইন শৃঙ্খলার আরো অবনতি ঘটে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

৭. আইয়ুব সরকারের অবসান : এ আন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে। এ সময় আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে সরিয়ে ড. এস. এন হুদাকে গভর্নর নিযুক্ত করে অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করেন। এতে গণআন্দোলন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয় বটে কিন্তু ইতোমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তিবৃদ্ধি করে ২৫ মার্চ
(৬৯) সারা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করে লৌহমানব আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট পদ তথা রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হন।

৮. ১৯৭০ সালের নির্বাচন : মূলত ১৯৬৯ এর গণআন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধিকার চেতনায় জাগ্রত করে তোলে। অপরদিকে, পূর্ব পাকিস্তানে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটতে থাকে। তাই শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

৯. জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : এ আন্দোলনের মাধমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ ঘটে। আর জাতীয়তাবোধ চেতনা থেকে তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগায়।

১০. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে : ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের সাথে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। মূলত ১৯৬৬ সালের ৬ দফার মাধ্যমে যে স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৬৯ সালে তা একধাপ এগিয়ে নেওয়া হয় এবং ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের শেষ পরিণতি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে যে চরম, শোষণ, নির্যাতন আরম্ভ করে, তারই প্রত্যক্ষ ফলাফল। তবে এ অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে একদিকে ছিল পশ্চিমা শোষকের অত্যাচার। অন্যদিকে, ছিল এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক সকল শ্রেণির সক্রিয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। আর বাংলার মুক্তিপাগল জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকেই সংঘটিত হয় গণআন্দোলন। তবে আন্দোলনে প্রত্যক্ষ কিছু অর্জিত না হলেও আইয়ুব খানের পতন ছিল একটি বড় সাফল্য। এ সাফল্যের প্রেরণা থেকে পরবর্তীতে বাঙালিরা শিক্ষালাভ করেন। যে শিক্ষা থেকে তারা মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment