প্রশ্ন সমাধান: ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গা কারণ বিশ্লেষণ কর,বিশাল কোলকাতা হত্যাযজ্ঞের কারণ বিশ্লেষণ কর,কোলকাতা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে লিখ,কলকাতা দাঙ্গা, ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গা
ভূমিকা : দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষে শাসনতান্ত্রিক জটিলতা বিরাজমান থাকায় ইংরেজ সরকার এর আশু সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সেসব পদক্ষেপের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা। ১৯৪৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এটলির ঘোষণা অনুযায়ী ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনার জন্য মন্ত্রিমিশন ২৪ মার্চ করাচি পৌঁছায়। অতঃপর দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর ১৯৪৬ সালের মে মাসে মন্ত্রিমিশন তাদের প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র ঘোষণা করে। মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার এ প্রস্তাবের ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং মুসলিম লীগ তাদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সরাসরি কার্যদিবস বা প্রত্যক্ষ কার্যদিবস ঘোষণা করে।
বিশাল কোলকাতা হত্যাযজ্ঞ : বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী ও লীগ সেক্রেটারি আবুল হাশেম মুম্বাই থেকে কলকাতায় ফিরে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এবং এ সভায় তিনি লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেন। ফলশ্রুতিতে কলকাতায় এক রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯৪৬ সালের এ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা যেমন ছিল ব্যাপক তেমনি ভয়ঙ্করও ছিল। এ দাঙ্গায় যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল তাতে প্রায় ৫,০০০ জন নিহত এবং ১৫,০০০ মানুষ আহত হয়। এছাড়া অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়। দাঙ্গা মোকাবিলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয় এবং কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় উভয়কে দায়ী করে।
বিশাল কোলকাতা হত্যাযজ্ঞের কারণ : ১৯৪৬ সালের ১৬ থেকে ১৯ আগস্টের মধ্যে কলকাতায় যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল তা একক কোন কারণে নয়, বরং এ দাঙ্গার পিছনে কতিপয় কারণ বিদ্যমান ছিল। এ দাঙ্গার পিছনে যেসব কারণগুলো সক্রিয় ছিল তা নিম্নরূপ :
১. হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের তিক্ততা : ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকেই হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত নীতি বা পদক্ষেপ এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের অসহযোগিতামূলক মনোভাব উভয় সম্প্রদায়ের সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত থাকা ঘৃণা বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ দাঙ্গার মধ্য দিয়ে।
২. পাকিস্তান দাবির প্রতি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ মনোভাব : দাঙ্গা সংঘটিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে মুসলমানদের পাকিস্তান নামক পৃথক রাষ্ট্রের দাবি। আর এ দাবির প্রতি ভারতবর্ষের সকল মুসলমানের ছিল অকুণ্ঠ, ঐক্যবদ্ধ সমর্থন এবং সংগ্রামী মনোভাব। ফলে তারা সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।
৩. নেতৃবৃন্দের উস্কানিমূলক বক্তৃতা : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ এর নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন অধিবেশন, সভাসমাবেশে যেভাবে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন তা ছিল অনেকটা আক্রমণাত্মক। এ উস্কানিমূলক বক্তৃতা উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তারা সংগ্রামের পথ বেছে নেয়।
৪. পত্রপত্রিকায় মিথ্যা প্রচার : এ সময়ে ভারতবর্ষে যেসব দলীয় পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হতো তাতে বেশিরভাগ উস্কানিমূলক, মিথ্যা খবর পরিবেশন করা হতো। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তের জন্ম হয় এবং তারা কোন কিছু যাচাইবাছাই না করেই দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৫. গোঁড়া ধর্মপন্থিকে উস্কানি ও অসহনশীলতা : হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে এ সময়ে অনেক
গোঁড়া ধর্মপন্থিরা নিজেদের সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য প্রচার করে থাকে। ধর্মপন্থি হওয়ায় তারা খুব সহজেই সাধারণ জনগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয় এবং মানুষের মাঝে সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত করতে সচেষ্ট হয়। মূলত গোঁড়া ধর্মপন্থিদের এরূপ উস্কানি ও অসহনশীল মনোভাব দাঙ্গা সংঘটিত
হতে সহায়তা করেছিল ।
দাঙ্গার ফলাফল : ১৯৪৬ সালে সংঘটিত এ দাঙ্গার ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এ দাঙ্গার ফলে ব্রিটিশ সরকার অনুধাবন করে যে, এ উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা তারা কেউ কাউকে যেমন বিশ্বাস করে না, তেমনি সহ্য করতে পারে না। ফলে তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয় এবং তারা ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান গঠনে মত দেয়। এছাড়া এ দাঙ্গার ফলে ভারতের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থিদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোলকাতা হত্যাযজ্ঞ ও ১৯৪৬ সালে প্রত্যক্ষ কার্যদিবস ছিল মূলত হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতির ফসল। এছাড়া এ কর্মসূচি ও দাঙ্গা ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি এদেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মনোভাবকেও যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছে। তাই দেখা যায়, ব্রিটিশরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এ উপমহাদেশে শাসনক্ষমতা দখল করেছিল তার পরিবর্তন ঘটে এবং তারা ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে এদেশের নেতাদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। সুতরাং ইতিহাসে প্রত্যক্ষ কার্যদিবস ও কলকাতা হত্যাযজ্ঞ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
CV | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক |
Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় কর্পোরেট গভারমেন্ট এর কোন সম্পর্ক আছে কি মতামত ব্যাখ্যা কর
- নন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর NEEDs কে কেন প্রধান চালিকাশক্তি বলা হয়
- পরিচালকের ক্ষমতার উপর বাধা নিষেধগুলো কি কি
- সিনিয়া নির্বাহীদের চাকরিচ্যুত বেতন সম্পর্কে বিধিমালা সমূহ কি কি
- নির্বাহী পরিচালকের পারিশ্রমিকের উপাদান সমূহ ব্যাখ্যা কর
- পারিশ্রমিকে কর্পোরেট গভর্নেন্স এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেন