১১শ-১২শ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যপাঠ বইয়ের ‘অপরিচিতা’ গল্পে মৃদঙ্গের উল্লেখ আছে

মৃদঙ্গ সাধারণত মাটির তৈরি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। আগুনে পুড়িয়ে একে শক্ত করা হয়। মাটির তৈরি বলে এর শাস্ত্রীয় নাম ‘মৃদঙ্গ’ (মৃৎ + অঙ্গ)। বাংলায় মৃদঙ্গ ‘খোল’ নামে বেশি পরিচিত।

বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে মৃদঙ্গের উল্লেখ পাওয়া গেলেও এর উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। শিবপুরাণ অনুসারে, ত্রিপুরাসুর বধের পর শিব যখন তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন, তখন অসুরের রক্তে ভিজে যাওয়া মাটি দিয়ে ব্রহ্মা মৃদঙ্গের অনুরূপ বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন।

মোচাকৃতির লম্বা মতো ফাঁপা গোলাকার অংশটি মৃদঙ্গের মূল কাঠামো। মাটির তৈরি খোলটির দুই প্রান্ত কিছুটা সরু, পেটটা মোটা, লম্বায় কমবেশি পৌনে দুই হাত। দুই মুখের দুই দিক গরু বা মহিষের মোটা চামড়া দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। আচ্ছাদিত চামড়াকে টানটান রাখার জন্য উভয় মুখে চামড়ার বিনুনি বা চাক লাগানো হয়। দুই পাশের চাক দুুটিকে একাধিক চামড়ার রশি দিয়ে ডিজাইন করে টানা দেওয়া হয়।

টানা দেওয়া চামড়ার সঙ্গে কিছু কাঠের গুলি আটকানো থাকে, যাতে টানার বন্ধন শক্ত হয়। মৃদঙ্গের ডাইনামুখ ছোট এবং বায়ামুখ অপেক্ষাকৃত বড়। উভয় প্রান্তে একটা মোটা রশি বা কাপড় বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে বা মাটিতে রেখে বসে হাতের আঙুল ও তালু ব্যবহার করে এটি বাজানো হয়।

বাঁ দিকের ছাউনিতে গাব এবং ডান দিকের ছাউনিতে তাপ্পি লাগানো থাকে। এর ফলে দুই ছাউনিতে দুই রকম শব্দ হয়। দুই রকম শব্দের সমন্বয়ে মৃদঙ্গে সুন্দর তাল ওঠে।

প্রাচীনকালে আঙ্কিক, উর্ধ্বক ও আলিঙ্গ—এই তিন প্রকার মৃদঙ্গ ছিল। বর্তমানে আঙ্কিক ছাড়া উর্ধ্বক ও আলিঙ্গ মৃদঙ্গ দেখাই যায় না। কীর্তন গান ও মণিপুরি নৃত্যের সঙ্গে মৃদঙ্গ একটি অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্র। মধ্য যুগের ভক্তিরত্নাকর কাব্যে মৃদঙ্গ-করতালকে শ্রীচৈতন্যের সম্পত্তি বলা হয়েছে।

Leave a Comment