সৈয়দ বংশের শাসনকাল আলোচনা কর, শৈবাল বংশের শাসনকাল ও কৃতিত্ব তুলে ধর

সৈয়দ বংশের শাসনকাল আলোচনা কর, শৈবাল বংশের শাসনকাল ও কৃতিত্ব তুলে ধর

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতিহাসে নিয়ে আলোকপাত করলে সৈয়দ বংশের নাম এমনিতেই চলে আসে। খিজির খাঁ সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। 

তিনি যদিও উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো রাজবংশে জন্মগ্রহণ করেননি। নিজ যোগ্যতা বলে তিনি এক নব বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি খুব দক্ষতার সাথে তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। 

খিজির খা সৈয়দ বংশের উত্তরসূরি বলে দাবি করে সৈয়দ বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। প্রশ্নালোকে সৈয়দ বংশের উত্থান ও পতন শাসনকাল নিয়ে বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো।

সৈয়দ বংশের শাসনকাল : নিয়ে সৈয়দ বংশের শাসনকাল আলোচনা করা হলো :


আরো ও সাজেশন:-

১. খিজির খাঁ : শৈশবে খিজির খাঁ সুলতানের শাসনকর্তা মালিক নাসির-উল-মুলক মর্গান দৌলত কর্তৃত্ব লালিতপালিত হন। পরবর্তীতে সুলতান ফিরোজ শাহ তাকে সুলতানকে জায়গীরদার পদে নিযুক্ত করেন।

সুলতান ফিরোজের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অরাজকতার উদ্ভব হলে খিজির খাঁ মন্ত্র ইকবারের ভ্রাতা সারংখান কর্তৃক বন্দি হন। 

১৩৯৮ সালে তৈমুর লংয়ের ভারত অভিযানকালে তিনি তাকে সাহায্য করেন বিনিময়ে তৈমুর লং ভারত ত্যাগ করার প্রাক্কালে খিজির খাঁকে সুলতান এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে যান।

তিনি কামপিল, পাতিওয়ালা, গোয়ালিয়, এটোয়া ও মেওয়াট প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহী জমিদারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অভিযানের পরিচালনা করেন। ঐতিহাসিকদের মতে খিজির গানের আধিপত্য দিল্লি দোয়াব এবং পাঞ্জাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

কৃতিত্ব : বিজির খাঁ বিনয়ী, দয়ালু ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, “তিনি ছিলেন একজন মহান ও বিজ্ঞ শাসক ছিলেন ১৪২১ সালে খিজির খাঁ মৃত্যুবরণ করেন। প্রজাগণ তার মৃত্যুতে তিন দিন শোক পালন করেন।

২. মোবারক শাহ : খিজির খাঁ-এর মৃত্যুর পর মোবারক শাহ ১৪২১ সালে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পাঞ্জাব: নোয়ার ও রোহিলা খণ্ডে আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। 

তিনি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পূর্বের নিয়োগ অপরিবর্তিত রাখলেও অধিক ক্ষমতাশালী হওয়া থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে মালিক ও জায়গীরগণকে এক প্রদেশে হতে অন্য প্রদেশে বদলির ব্যবস্থা করেন।

কৃতিত্ব : মোবারক শাহ ছিলেন একজন মহানুভব ও প্রজারঞ্জক শাসক। ডার পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইয়াহিয়া-বিন- আহম্মেদ “তারিখ-ই-মোবারক শাহী” নামক বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থটি রচনা করেন। 

তিনি তৈমুরের দুর্বল উত্তরাধিকারীগণের প্রভুত্ব অস্বীকার করে মিশরে বিদ্যমান বলিফার প্রতি তিনি আনুগত্য প্রকাশ করেন। স্বাধীন শাসক হিসেবে তিনি মুইজউদ্দিন মোবারক শাহ উপাধি গ্রহণ করে নিজ নামে মুদ্রাঙ্কন করেন।

৩. মুহম্মদ শাহ : মোবারক শাহের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতৃপুত্র মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। শাসন ক্ষমতায় থাকলেও তিনি দেশকে অভ্যন্তরীণ অনৈক্য ও রাজনৈতিক কোন্দল হতে রক্ষা করতে সক্ষম হননি। 

গোয়ালিয়র সুলতান কর প্রদান হতে বিরত থাকে। জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ শৰ্কী দিল্লির কয়েকটি পরগণা দখল করে নেয়। 

ইতোমধ্যে মালয়ের শাসনকার্তা মাহমুদ খলজি দিল্লি দখল করতে অগ্রসর হলেন। মুহাম্মদ শাহ বাহলুল লোদীর সাহায্যে ১৪৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে। মুহাম্মদ শাহ ১৪৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

কৃতিত্ব : মোবারক শাহের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ শাহ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু তিনি মোবারক শহে অথবা বিজির খানের মতো শাসনকার্য পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

৪. আলাউদ্দিন আলম শাহ : মুহাম্মদ শাহের ব্যর্থ শাসনের পর আলাউদ্দিন আলম শাহ উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। আলাউদ্দিন আলম শাহ মাত্র ৫ বছর শাসন ক্ষমতায় টিকে ছিলেন।

তিনি অত্যন্ত নিরূপায় হয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। সাম্রাজ্যের ক্রমবর্ধমান গোলযোগ, অসন্তোষ ও অরাজকতা দূর করার কোনো ক্ষমতাই তার ছিল না। 

তিনি অত্যন্ত দুর্বল চিত্তের শাসক ছিলেন। তিনি ১৪৪৪ থেকে ১৪৫০ সাল পর্যন্ত শাসনকার্যে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো সফলতার গল্প প্রজাদের জন্য বয়ে আনতে পারেননি, বরং তাঁর সিংহাসনে টিকে থাকার জন্য তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। 

তাঁর মাধ্যমে খিজির খাঁ-এর প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ বংশের পতন ঘটে। শাসকদের বিচক্ষণতার অভাব, অযোগ্যতা ও উত্তরাধিকারী বিরোধ সব মিলিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং সৈয়দ বংশের পতন হয়।

১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে আলাউদ্দিন আলম শাহ স্বেচ্ছায় পাঞ্জাবের শাসনকর্তা বাহলুল লোদীর অনুকূলে দিল্লির মসনদ ত্যাগ করে বদায়নে অবসর জীবনযাপন করেন।

উপসংহার : উপরোল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বাংলার ইতিহাসে সৈয়দ বংশের উত্থান যেমন ঘটনাবহুল ছিল, তেমনি তাদের পতনও বেদনাদায়ক ছিল। 

খিজির খা যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে এ বংশের ভিত্তি স্থাপন করলেও তিনি শাসনক্ষেত্রে তেমন দক্ষতা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হন। 

এ দুর্বলতাকে পুঁজি করে পরবর্তীতে দুর্বল উত্তরাধিকারীদের শাসনামলে ষড়যন্ত্র চতুর্দিকে দানা বেঁধে উঠে। যার কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে খিজির খাঁনের প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ বংশের পতন হয় ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সৈয়দ বংশের শাসনকাল আলোচনা কর

Leave a Comment