সূরা বাইয়্যিনাহ সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল বাইয়্যিনাহ আলমল ও ফজিলত, সূরা বাইয়্যিনাহ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত

আজকের বিষয়: সূরা বাইয়্যিনাহ সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল বাইয়্যিনাহ আলমল ও ফজিলত, সূরা বাইয়্যিনাহ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত

নামকরণ

প্রথম আয়াতের শেষ আল বাইয়েনাহ (আরবী —- )থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময় – কাল

এ সূরাটির মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। অনেক মুফাসসির বলেন , অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মক্কী সূরা ।আবার অনেক মুফাসসির বলেন অধিকাংশ আলেমের মতে এটি মাদানী সূরা।ইবনুল যুবাইর ও আতা ইবনে ইয়াসারের উক্তি মতে এটি মাদানী সূরা।ইবনে আব্বাস ও কাতাদাহর এ ব্যাপারে দু’ধরনের উক্তি পাওয়া যায়। এক উক্তি অনুযায়ী এটি মক্কী এবং অন্য উক্তি অনুযায়ী মাদানী সূরা। হযরত আয়েশা (রা )একে মক্কী গণ্য করেন।বাহরুল মুহীত গ্রন্থ প্রণেতা আবু হাইয়ান ও আহকামূল কুরআন গ্রন্থ প্রণেতা আবদুল মুনঈম ইবনুল ফারাস এর মক্কী হওয়াকেই অগ্রাধিকার দেন। অন্যদিকে সূরাটির বিষয় বস্তুর মধ্যে এমন কোন আলামত পাওয়া যায় না যা থেকে এর মক্কী বা মাদানী হবার ব্যাপারে কোন চূড়ান্ত ফায়সালা করা যেতে পারে।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

কুরআন মজীদের বিন্যাসের ক্ষেত্রে একে সূরা আলাক ও সূরা কদর এর পরে রাখাটাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সূরা আলাকে সর্বপ্রথম নাযিলকৃত অহী লিপিবদ্ধ হয়েছে।সূরা কদরে বলা হয়েছে সেগুলো কবে নাযিল হয়। আর এই পবিত্র কিতাবের সাথে একজন রসূল পাঠানো ছিল কেন তা বলা হয়েছে।

সর্বপ্রথম রসূল পাঠাবার প্রয়োজন বর্ণনা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে এই যে, আহলি কিতাব ও মুশরিক নির্বিশেষ দুনিয়াবাসীরা কুফরীতে লিপ্ত হয়েছে। একজন রসূল পাঠানো ছাড়া এই কুফরীর বেড়াজাল ভেদ করে তাদের বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। এ রসূলের অস্তিত্ব তাঁর রিসালাতের জন্য সুম্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে পরিগণিত হতে হবে এবং তিনি লোকদের সামনে আল্লাহর কিতাবকে তার আসল ও সঠিক আকৃতিতে পেশ করবেন। অতীতের আসমানী কিতাবসমূহে যেমন বাতিলের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছিল তেমন কোন মিশ্রণ তাতে থাকবে না এবং হবে পুরোপুরি সত্য ও সঠিক শিক্ষা সমন্নিত ।

এরপর আহলি কিতাবদের গোমরাহী তুলে ধরা হয়েছে , বলা হয়েছে তাদের এই বিভিন্ন ভুল পথে ছুটে বেড়ানোর মানে এ নয় যে , আল্লাহ তাদেরকে পথ দেখাননি। বরং তাদের সামনে সঠিক পথের বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে এসে যাবার পরপরই তারা ভুল পথে পাড়ি জমিয়েছে । এ থেকে স্বাভাবিকভাবে প্রমাণ হয় , নিজেদের ভুলের জন্য তার নিজেরাই দায়ী । এখন আবার আল্লাহর এই রসূলের মাধ্যমে সত্য আর এক দফা সুস্পষ্ট হবার পরও যদি তারা বিভ্রান্তের মতো ভুল পথে ছুটে বেড়াতে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্বের বোঝা আরো বেশী বেড়ে যাবে।

এ প্রসংগে বলা হয়েছে , মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব নবী এসেছিলেন তাঁরা সবাই একটি মাত্র হুকুম দিয়েছিলেন এবং যেসব কিতাব পাঠানো হয়েছিল সেসবে একটি মাত্র হুকুমই বর্ণিত হয়েছিল।সেটি হচ্ছে : সব পথ ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর বন্দেগীর পথ অবলম্বন করো। তাঁর ইবাদাত , বন্দেগী ও আনুগত্যের সাথে আর কারোর ইবাদাত – বন্দেগী , আনুগত্য ও উপাসনা আরাধনা শামিল করো না। নামায কায়েম করো এবং যাকাত দাও। চিরকাল এটিই সঠিক দীন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে। এ থেকেও স্বাভাবিকভাবে একথাই প্রমাণিত হয় যে, আহলি কিতাবরা এই আসল দীন থেকে সরে গিয়ে নিজেদের ধর্মে যেসব নতুন নতুন কথা বাড়িয়ে নিয়েছে সেগুলো সবই বাতিল। আর আল্লাহর এই নবী যিনি এখন এসেছেন তিনি তাদেরকে এই আসল দীনের দিকে ফিরে আসার দাওয়াত দিচ্ছেন।

সবশেষে পরিস্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে , যেসব আহলি কিতাব ও মুশরিক এই রসূলকে মেনে নিতে অস্বীকার করবে তারা নিকৃষ্টতম সৃষ্টি । তাদের শাস্তি চিরন্তন জাহান্নাম। আর যারা ঈমান এনে সৎকর্মের পথ অবলম্বন করবে এবং দুনিয়ায় আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করবে তারা সর্বোত্তম সৃষ্টি। তারা চিরকাল জান্নাতে থাকবে । এই তাদের পুরস্কার । আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও হয়েছে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ  

উচ্চারণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম  

অনুবাদ পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

لَمْ يَكُنِ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ مُنْفَكِّينَ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ الْبَيِّنَةُ98.1  

উচ্চারণ ৯৮.১। লাম্ ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি অল্ মুশ্রিকীনা মুন্ফাক্কীনা হাত্তা-তা”তিয়াহুমুল্ বাইয়্যিনাতু ।  

অনুবাদ ৯৮.১ কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করে তারা ও মুশরিকরা, তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ না আসা পর্যন্ত (নিজদের অবিশ্বাসে) অটল থাকবে।

 رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفًا مُطَهَّرَةً98.2  

উচ্চারণ ৯৮.২। রসূলুম্ মিনাল্লা-হি ইয়াত্লূ ছুহুফাম্ মুত্বোয়াহ্হারতান্।  

অনুবাদ ৯৮.২ আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রাসূল পবিত্র কিতাবসমূহ তিলাওয়াত করে।

فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ98.3  

উচ্চারণ ৯৮.৩। ফীহা-কুতুবুন্ ক্বাইয়িমাহ্  

অনুবাদ ৯৮.৩ তাতে রয়েছে সঠিক বিধিবদ্ধ বিধান।

 وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ98.4  

উচ্চারণ ৯৮.৪। অ মা-তার্ফারাক্বাল্লাযীনা ঊতুল্ কিতা-বা ইল্লা- মিম্ বা’দি মা-জ্বা-য়াত্হুমুল্ বাইয়িনাহ্।  

অনুবাদ ৯৮.৪ আর কিতাবীরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই কেবল মতভেদ করেছে।

 وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ 98.5

 উচ্চারণ ৯৮.৫। অমা-উমিরূ য় ইল্লা-লিইয়া’বুদুল্লা-হা মুখ্লিছীনা লাহুদ্দীনা হুনাফা-য়া অইয়ুক্বীমুছ্ ছলা-তা অইয়ু”তুয্ যাকা-তা অযা-লিকা দীনুল্ ক্বাইয়িমাহ্।  

অনুবাদ ৯৮.৫ আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।

 إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أُولَئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّةِ98.6

  উচ্চারণ ৯৮.৬। ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ মিন্ আহ্লিল্ কিতা-বি অল্মুশ্রিকীনা ফী না-রি জ্বাহান্নামা খ-লিদীনা ফীহা-; উলা-য়িকা হুম্ র্শারুল্ বারিয়্যাহ্।  

অনুবাদ ৯৮.৬ নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরী করেছে ও মুশরিকরা, জাহান্নামের আগুনে থাকবে স্থায়ীভাবে। ওরাই হল নিকৃষ্ট সৃষ্টি।

 إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ98.7  

উচ্চারণ ৯৮.৭। ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া ‘আমিলুছ্ ছোয়া-লিহা-তি উলা-য়িকাহুম্ খইরুল্ বারিয়্যাহ্।  

অনুবাদ ৯৮.৭ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই সৃষ্টির সর্বোৎকৃষ্ট।

 جَزَاؤُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّهُ 98.8  

উচ্চারণ ৯৮.৮। জ্বাযা-য়ুহুম্ ‘ইন্দা রব্বিহিম্ জ্বান্না-তু ‘আদ্নিন্ তাজরী মিন্ তাহ্তিহাল্ আন্হা-রু খ-লিদীনা ফীহা য় আবাদা-; রদ্বিয়াল্লা-হু ‘আন্হুম্ অরদু ‘আন্হু; যা-লিকা লিমান্ খশিয়া রব্বাহ্।  

অনুবাদ ৯৮.৮ তাদের রবের কাছে তাদের পুরস্কার হবে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। এটি তার জন্য, যে স্বীয় রবকে ভয় করে।

Leave a Comment