সূরা তাকাছুর সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল তাকাছুর আলমল ও ফজিলত, সূরা তাকাছুর কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত

আজকের বিষয়: সূরা তাকাছুর সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল তাকাছুর আলমল ও ফজিলত, সূরা তাকাছুর কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত

নামকরণ :

প্রথম শব্দ আততাকাসুরকে ( আরবী ———-) এই সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময় – কাল

আবু হাইয়ান ও শওকানী বলেন , সকল তাফসীরকার একে মক্কী সূরা গণ্য করেছেন । এ ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতির বক্তব্য হচ্ছে , মক্কী সূরা হিসেবেই এটি বেশী খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু কিছু বর্ণনায় একে মাদানী সূর বলা হয়েছে। যেমন :

ইমাম আবু হাতেম আবু বুরাইদার ( রা) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন । তাতে বলা হয়েছে : বনী হারেসা ও বনিল হারস নামক আনসরাদের দু’টি গোত্রের ব্যাপারে এ সূরাটি নাযিল হয়। উভয় গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রথমে নিজেদের জীবিত লোকদের গৌরব গাঁথা বর্ণনা করে। তারপর কবরস্থানে গিয়ে মৃত লোকদের গৌরব গাঁথা বর্ণনা করে তাদের এই আচরণের ফলে আল্লাহর এই বাণী ( আরবী ———————-) নাযিল হয়। কিন্তু শানেনূযুল বা নাযিল হওয়ার কারণ ও উপলক্ষ বর্ণনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা সামনে রাখলে এই রেওয়ায়াত যে উপলক্ষে বর্ণনা করা হয়েছে তাকে এই সূরা নাযিলের উপলক্ষ বলে মেনে নেবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বরং এ থেকে এই অর্থ গ্রহণ করা যায় যে , এই দু’টি গোত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে সূরাটি খাপ খেয়ে যায়।

ইমাম বুখারী ও ইবনে জারীর হযরত উবাই ইবনে কাবের ( রা) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন : “ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটিকে ( আরবী ———————-) ( বনী আদমের কাছে যদি দুই উপত্যকা সমান সম্পদ থাকে তারপরও সে তৃতীয় একটি উপত্যকা আকাংখা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে ভরে না। ) কুরআনের মধ্যে মনে করতাম। এমন কি শেষ পর্যন্ত আলহাকুমুত তাকাসুর সূরাটি নাযিল হয়। ” হযরত উবাই মদীনায় মুসলমান হয়েছিলেন বলে এই হাদীসটিকে সূরা আত তাকাসুরের মদীনায় অবতীর্ণ হবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু হযরত উবাইর এই বক্তব্য থেকে সাহাবয়ে কেরাম কোন অর্থে রসূলের এই বাণীকে কুরআনেরর মধ্যে মনে করতেন তা সুস্পষ্ট হয় না। যদি এর অর্থ এই হয়ে থাকে যে , তারা একে কুরআনেরর একটি আয়াত মনে করতেন তাহলে একথা মেনে নেয়া যেতে পারে না। কারণ সাহাবীগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কুরআনের প্রতিটি হরফ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এই হাদীসটিকে কুরআনের আয়াত মনে করার মতো ভুল ধারণা তাঁরা কেমন করে পোষণ করতে পারতেন ! আর কুরআনের মধ্যে হবার মনে যদি কুরআন থেকে হওয়া মনে করা হয়ে তাহলে এই হাদীসটির এ অর্থও হতে পারে যে , মদীনা তাইয়েবায় যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র কন্ঠে এই সূরা উচ্চারিত হতে শুনে মনে করেন , সূরাটি এই মাত্র নাযিল হয়েছে এবং রসূলের উপরোল্লিখিত বাণী সম্পর্কে তাঁরা মনে করতে থাকেন এটি এই সূরা থেকেই গৃহীত।

ইবনে জারীর , তিরমিযী ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হযরত আলীর ( রা) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন : “কবরের আযাব সম্পর্কে আমরা সব সময় সন্দেহের মধ্যে ছিলাম। এমন কি শেষ পর্যন্ত ‘ আলহা – কুমুত তাকাসুর ’ নাযিল হলো। হযরত আলীর (রা ) এই বক্তব্যটিকে এই সূরার মাদানী হবার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে , কবরের আযাবের আলোচনা মদীনায় শুরু হয়। মক্কায় এ সম্পর্কে কোন আলোচনাই হয়নি। কিন্তু একথাটি আসলে ঠিক নয়। কুরআনের মক্কী সূরাগুলেরা বিভিন্ন স্থানে এমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কবরের আযাবের কথা বলা হয়েছে যে , এ সম্পর্কে সন্দেহের কোন বিকাশই সেখানে নেই। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন সূরা আন’ আম ৯৩ আয়াত,আন নামল ২৮ আয়াত,আল-মূ’মিনূন ৯৯-১০০ আয়াত, আল মু’মিন ৪৫-৪৬ আয়াত । এগুলো সবই মক্কী সূরা। তাই হযরত আলীর (রা) উক্তি থেকে যদি কোন জিনিস প্রমাণ হয় তাহলে তা হচ্ছে এই যে , উপরোল্লিখিত মক্কী সূরাগুলো নাযিলের পূর্বে সুরা আত তাকাসুর নাযিল হয় এবং এই সূরাটি নাযিল হবার ফলে সহাবীগণের মথ্যে বিরাজিত কবরের আযাব সম্পর্কিত সংশয় দূর হয়ে যায়।

এ কারণে এই হাদীসগুলো সত্ত্বেও মুফাসসিরগণের অধিকাংশই এর মক্কী হবার ব্যাপারে একমত। আমার মতে এটি শুধু মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী জীবনের প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

এই সূরায় মানুষকে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাস ও বৈষয়িক স্বার্থ পূজার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এই ভালোবাসা ও স্বার্থ পূজার কারণে মানুষ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বেশী বেশী ধন – সম্পদ আহরণ , পার্থিব লাভ , স্বার্থ উদ্ধার , ভোগ প্রতিপত্তি , ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ এবং তার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একজন আর একজনকে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এসব অর্জন করার ব্যাপারে অহংকারে মতো থাকে। এই একটি মাত্র চিন্তা তাদেরকে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছে যার ফলে এর চেয়ে উন্নততর কোন জিনিসের প্রতি নজন দেবার মানসিকতাই তাদের নেই । এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেবার পর লোকদেরকে বলা হয়েছে , এই যেসব নিয়ামত তোমরা নিশ্চিন্তে সংগ্রহ করতে ব্যস্ত , এগুলো শুধুমাত্র নিয়ামত নয় বরং এগুলো তোমাদের জন্য পরীক্ষার বস্তুও । এগুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটি নিয়ামত সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ﴾

১) বেশী বেশী এবং একে অপরের থেকে বেশী দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করার মোহ তোমাদের গাফলতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷
﴿حَتَّىٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ﴾

২) এমনকি ( এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে ) তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও৷
﴿كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ﴾

৩) কখখনো না , শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে ৷
﴿ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ﴾

৪) আবার ( শুনে নাও ) কখখনো না শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে৷
﴿كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ﴾

৫) কখখনো না , যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে ( এই আচরণের পরিণাম ) জানতে ( তাহলে তোমরা এ ধরনের কাজ করতে না৷ ) ৷
﴿لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ﴾

৬) তোমরা জাহান্নাম দেখবেই ৷
﴿ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ﴾

৭) আবার ( শুনে নাও) তোমরা একেবারে স্থির নিশ্চিতভাবে তা দেখবেই ৷
﴿ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ﴾

৮) তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷

Leave a Comment