প্রশ্ন সমাধান: সুলতানি যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন বর্ণনা করাে, সুলতানি যুগে বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বর্ণনা দাও, দিল্লি সালতানাতের আর্থসামাজিক অবস্থা, সুলতানি আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা, সুলতানি যুগের সামাজিক অবস্থা, সুলতানী আমলে উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক অবস্থা
ভারতবর্ষের ইতিহাসে দিল্লির সুলতানি যুগের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ছিল খুবই উন্নত এবং বিভিন্ন দিক থেকে ছিল অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুলতানি আমলে অনেক নিম্নবর্গের লোক নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার দ্বারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্ষমতা লাভ করতেন। দিল্লি সালতানাতের সময়ে ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ছিল চোখে ধরার মতো। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইবনে বতুতা বাংলা সফর করেন। তিনি বাংলাকে ধন-সম্পদের পরিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দিল্লি সালতানাতের আর্থসামাজিক অবস্থা : ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, দিল্লি সালতানাতের আর্থ- সামাজিক অবস্থা ছিল সচ্ছল। নিচে দিল্লি সালতানাতের আর্থ- সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
আরো ও সাজেশন:-
সুলতানি আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা : সুলতানি আমলের অর্থনৈতিক অবস্থা নিচে তুলে ধরা হলো-
১. কৃষি : সুলতানি যুগে অর্থনীতির প্রধান উৎস ছিল কৃষি। অনুকূল জলবায়ুর কারণে জমিতে প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপন্ন হত । কৃষকদের প্রধান ফসল ছিল ধান। এছাড়াও তারা তিল, আদা, সরিষা, পিয়াজ, রসুন, শসা, গম, ডাল ইত্যাদি ফসল উৎপন্ন করত।
২. শিল্প : সুলতানি যুগে কৃষির পাশাপাশি শিল্পের ও প্রসার ঘটতে থাকে। এযুগে কারিগরি ও শিল্পী শ্রেণির লোকেরা বংশানুক্রমে নিজ পেশায় যুক্ত ছিলেন। সুলতানি যুগে শিল্পের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে থাকে। এ যুগে যেসব শিল্প বিশেষ খ্যাতি ছড়িয়েছিল তার মধ্যে রেশম শিল্প ছিল অন্যতম।
৩. ব্যবসা-বাণিজ্য : সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলার ব্যবসা বাণিজ্য চলত। বাংলায় যারা একটু সচ্ছল ছিল তারা জাহাজ তৈরি করত। জাহাজ দিয়ে বিদেশিদের সাথে
বাণিজ্য চালাত। বাংলা ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ ছিল বলে এদেশ থেকে পণ্য সামগ্রী আমদানির চেয়ে রপ্তানি করা হতো বেশি ।
ফলে বাংলায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো।
৪. দ্রব্য সামগ্রী : সুলতানি আমলে বিত্তশালী লোকদের জন্য বিভিন্ন বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানি করা হতো এবং কৃষিজাত দ্রব্য
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
ও বস্ত্রসামগ্রী রপ্তানি করা হতো। বাংলায় দ্রব্য সামগ্রীর দাম ছিল অত্যন্ত সস্তা। ইবনে বতুতা বলেন যে, বাংলার মত প্রচুর চাউল এবং সস্তা খাদ্য সামগ্রী তিনি আর কোথাও দেখেন নি।
৫. গৃহপালিত পশু : সুলতানি আমলে পশুচারণের কোনো জমির অভাব ছিল না বলে লোকেরা বিভিন্ন পশু গৃহে লালন পালন করতো। এসব পশুর মধ্যে অন্যতম ছিল গরু ও মহিষ এছাড়াও তারা ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া ইত্যাদি লালন পালন করত। এসব পশু থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের দ্রব্য সামগ্রী প্রস্তুত করত।
৬. মুদ্রা : সুলতানি যুগে মুদ্রা ছিল রুপার। এটাকে টঙ্কা বলা হতো অর্থাৎ সুলতানি যুগে টাকাকে টঙ্কা বলা হতো। সব ধরনের বড় ব্যবসা বাণিজ্য চলত মুদ্রার বিনিময়ে আর ছোটখাট ব্যবসার ক্ষেত্রে বাড়ি ব্যবহার করা হতো।
→ সুলতানি যুগের সামাজিক অবস্থা : সুলতানি যুগের সামাজিক অবস্থা নিচে তুলে ধরা হলো-
১. শ্রেণি বিভেদ : সুলতানি যুগে সমাজের মধ্যে শ্রেণি বিভেদ ছিল। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে শ্রেণি বিভেদ ছিল প্রবল। তেমনি মুসলমানদের মধ্যেও তা বিদ্যমান ছিল। যেমন- দোকানদার, কৃষক, দাস-দাসী উচ্চ-নিম্ন শ্রেণির কর্মচারী ইত্যাদি ।
২. হিন্দুদের প্রকৃত অবস্থা : সুলতানি যুগে হিন্দুদের প্রকৃত অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তাদেরকে অধিক হারে কর প্রদান করতে হতো। তারা জমিতে উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক ভোগ করত আর বাকি অর্ধেক ভোগ করত সুলতান ।
৩. জুয়া খেলা ও মদ ব্যবসা : সুলতানি আমলে বিভিন্ন ধরনের মদ তৈরি হতো এবং মদগুলো প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করা হতো। সেখানকার লোকেরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে দুই ঈদ এবং রাতে অনুষ্ঠিত শরিয়ত মারফত ইত্যাদি অনুষ্ঠানের সময় তারা জুয়া খেলার আয়োজন করত এবং প্রচুর পরিমাণে মদ পান করত।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
৪. পোশাক পরিচ্ছদ ও খাদ্য : হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে যারা উচ্চ শ্রেণির তারা মাথায় সাদা পাগড়ি পড়ত। তারা লম্বা এক ধরনের কাপড় পরত এবং জুতা ব্যবহার করত। তারা সোনা, রুপা এবং পাথরের তৈরি অলঙ্কার পরিধান করতো। খাবারের ক্ষেত্রে হিন্দুরা নিরামিষ খাবার খেত আর মুসলমানরা
মাংস ভক্ষণ করত।
৫. বিনোদন : সুলতানি আমলে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক খেলা ছিল। যেমন- শিকারি, কুস্তি, পোলা ইত্যাদি। এসব খেলা খেলে লোকেরা আনন্দ লাভ করতো। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসব যেমন- ঈদ, হোলি, পূজা, দশরা ও শবে বরাত প্রভৃতি উৎসবে হিন্দু-মুসলিম একত্রে সকলে একসাথে আনন্দ করত।
৬. দাস প্রথা : সুলতানি যুগে সমাজে দাস প্রথা বিদ্যমান ছিল। সেকালে পণ্যের মতো বাজারে ক্রীতদাসদের ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। জানা যায় যে, আলাউদ্দিন খলজির অধীনে ৫০
হাজার দাস এবং ফিরোজ শাহের অধীনে ১ লাখ ৮০ হাজার ক্রীতদাস কর্মরত ছিল। এ থেকে বুঝা যায় যে, তখন সমাজে প্রচুর পরিমাণে দাস প্রথা বিদ্যমান ছিল ।
৭. নারীদের অবস্থা : সুলতানি যুগে মুসলিম নারীদের যথেষ্ট সম্মান ছিল। তাদের পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল। তবে হিন্দু নারীদের ক্ষেত্রে সতীদাহ প্রথা ও বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতানি যুগে বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজে ছিল বিভিন্ন পেশাজীবীর লোক এবং
অর্থনৈতিক দিক থেকে ছিল সমৃদ্ধশালী। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এ যুগের মানুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে এনেছিল। সর্বোপরি, সুলতানি যুগে সমাজে দাসদাসী, ধর্ম বৈষম্য থাকলেও হিন্দু- মুসলমান সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত অটুট।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- কোম্পানি সচিব ও একান্ত সচিব পার্থক্য
- আদর্শ কোম্পানি সচিবের গুণাবলি
- কোম্পানি সচিব বলতে কি বুঝ ও কোম্পানি সচিবের ভূমিকা আলোচনা কর
- একজন কোম্পানি সচিবের কি কি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন বিস্তারিত আলোচনা কর
- কর্পোরেট পরিচালনার পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর
- আধুনিক বিশ্বে কোম্পানি সচিবের গুরুত্ব কত খানি বিস্তারিত আলোচনা কর