সামাজিক সমস্যা বলতে কী বুঝ?, সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর, সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা দাও,সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর,সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট

প্রশ্ন সমাধান: সামাজিক সমস্যা বলতে কী বুঝ?, সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর, সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা দাও,সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর,সামাজিক সমস্যার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট

ভূমিকা : অপূর্ণতা হচ্ছে মানবসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সমস্যা। বিচিত্র এ মানবজীবন। জীবনের এ বৈচিত্র্যের মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা, প্রতিবন্ধকতা এবং নৈরাজ্য মানুষের স্বাভাবিক চলার গতিধারাকে ব্যাহত করে। সুষ্ঠু স্বাভাবিক উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে, যা সমাজ, রাষ্ট্র তথা ব্যক্তি জীবনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষিতে সমাজের অধিকাংশ মানুষ এর সংশোধন ও নিরসনের ইচ্ছা পোষণ করে। তখনই অনুরূপ অসুবিধাকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। মানবসমাজ বিকাশের সাথে সাথে সমস্যাও বিকাশলাভ ঘটেছে। পৃথিবীর কোন সমাজই সম্পূর্ণ সমস্যামুক্ত নয়।


সামাজিক সমস্যা : সাধারণভাবে সামাজিক সমস্যা বলতে আমরা বুঝি এমন একটি সামাজিক অনভিপ্রেত অবস্থা, যা সমাজের অধিকাংশ লোকের জন্য অনিষ্টকর এবং তাদের অভাব পূরণ ও সামাজিক ভূমিকা পালনের পথে অন্তরায়স্বরূপ। শাব্দিক অর্থে, ইংরেজি ‘Problem’ শব্দের বাংলা পরিভাষা হলো সমস্যা। আর ‘Problem’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Problema’ হতে, যার অর্থ হচ্ছে সমাজ কর্তৃক নিক্ষেপিত এমন একটি ঘটনা, যা সমাজস্থ মানুষের চিন্তাভাবনা বা মনোযোগ আকর্ষণের উপর অবাঞ্ছিত চাপ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, মানুষ যখন কোন নিক্ষেপিত ঘটনা দ্বারা বাধার সম্মুখীন হয়, তখন তা সমস্যারূপে পরিগণিত হয়। সমস্যার সাথে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং প্রচলিত সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত থাকায় ‘সামাজিক’ শব্দ দ্বারা সমস্যাকে বিশেষায়িত করা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনীষীগণ সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :


মনীষী সি. এম. কেস এর মতে, “A social problem means any social situation which attracts the attention of considerable number of competent observers within a society and appeals to them as calling for readjustment or remedy by social ie collective a some kind or other.” অর্থাৎ, “সামাজিক সমস্যা হলো এমন একটি অবস্থা, যা সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সচেতন ও যোগ্য পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সে অবস্থা সম্পর্কে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণের আবেদন ও অনুভূতি সৃষ্টি হয়।”
P. B. Horton & J. R. Leslie তাঁদের ‘Sociology of Social Problems’ গ্রন্থে বলেছেন, “Social problem is a condition affecting a significant number of people in ways, considered undesirable and about which it is felt something can be done though collective social action.” অর্থাৎ, “সামাজিক সমস্যা হলো সমাজ জীবনের এমন একটি অস্বাভাবিক অবস্থা, যা সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে এবং যার সম্পর্কে যৌথ সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।”


‘International Encyclopedia of Social Science’ গ্রন্থে Social Problem সম্পর্কে বলা হয়েছে, “Social problems are described must simply as perplexing questions about human societies proposed for solution.” সমাজকর্ম অভিধানের ব্যাখ্যানুযায়ী, “Social problems is conditions among people leading to social responses that violate some people’s values and norms and cause.emotional or economic suffering. Examples of social problems include crime, social inequality, poverty, racism, drug abuse, maldistributions or limited resources.” অর্থাৎ, “সামাজিক সমস্যা হলো জনগণের মধ্যে বিদ্যমান এমন অবস্থা, যা কিছু লোকের আদর্শ ও মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং আবেগীয় অথবা আর্থিক ক্ষতির কারণরূপে দেখা দেয়। সামাজিক সমস্যার উদাহরণের অন্তর্ভুক্ত হলো অপরাধ, সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, বর্ণবাদ, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার সীমিত সম্পদের অসম বণ্টন।”


সুতরাং, বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, সামাজিক সমস্যা হলো সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় হতে উদ্ভূত এমন এক অপ্রীতিকর অবস্থা, যা অধিকাংশ জনসংখ্যাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে সমাজ ও জনগণের মধ্যে হতাশা, নৈরাজ্য, উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং যার প্রতি জনগণের একটা নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠে। যেমন- আমাদের দেশের বিশেষ বিশেষ সামাজিক সমস্যা হলো যৌতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, কিশোর অপরাধ, জনসংখ্যাধিক্য, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি ।


সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য : যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সুখী জীবনযাপনের জন্য সমাজের উদ্ভব, সে সমাজে বসবাস করাকে বিস্ময় করে তোলে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা। সামাজিক সমস্যার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো :


১. সমাজ নিঃসৃত : সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সর্বাগ্রে চলে আসে, সেটি হলো এর উদ্ভবের ক্ষেত্র বা পরিবেশ। সামাজিক সমস্যা সমাজের অভ্যন্তরে উদ্ভব হয়, বিকাশলাভ করে এবং পরিপূর্ণতা পায়।


আরো ও সাজেশন:-

২. মূল্যবোধের অবক্ষয় : যে কোন ধরনের মূল্যবোধের অভাবের ফলে মানুষ নানামুখী সমস্যায় জড়িত হয়ে পড়ে। সামাজিক সমস্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়কে নির্দেশ করা হয়। মানুষ যখন মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলে, তখন ভালোমন্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং এভাবেই সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।


৩. মানসিক চাপ : সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সাথে খাপখাওয়াতে না পারলে এক ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপ মানুষকে সঠিক পথে, অর্থাৎ সমাজের কাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিচ্যুত রাখতে পারে।

৪. সমাজের শৃঙ্খলার প্রতি কুঠারাঘাত : সামাজিক সমস্যা সুষ্ঠু সমাজ জীবনের জন্য পরিপন্থি। সমাজের সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের প্রতি সামাজিক সমস্যা বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে। সামাজিক সমস্যা সর্বদা সমাজের শৃঙ্খলা বিপন্ন করে।


৫. স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে হুমকি : সমাজ জীবনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, অর্থাৎ সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা সবার মৌলিক সামাজিক অধিকার। কিন্তু সামাজিক সমস্যা মানুষকে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের পথ ব্যাহত করে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৬. বিভেদ সৃষ্টি : সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সমাজকে বিভক্ত করে ফেলে। এক শ্রেণীর মানুষ যাবতীয় সমস্যা উদ্ভবে ভূমিকা রাখে । শান্তিকামী মানুষ এবং সমস্যা উদ্ভবকারী মানুষ ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে।


৭. সামাজিক সংহতি বিনষ্ট : সামাজিক সমস্যা মানুষকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দান করে। বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত মানুষ সহমর্মিতা হারিয়ে ফেলে। এভাবে সমাজের সংহতি বিনষ্ট হয়।


৮. স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিনষ্ট : সামাজিক সমস্যা সমাজের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করে ফেলে। মানুষ বিভিন্ন সমস্যা হেতু তার কর্তব্যকর্মে অবহেলা করতে শিখে। সমাজের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি এর ফলে বিনষ্ট হয়।


৯. কর্মস্পৃহা হ্রাস : সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ স্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে পড়ে। মানুষের স্বাভাবিক কর্মস্পৃহা এর ফলে হ্রাস পেতে থাকে।


১০. কর্মক্ষমতা হ্রাস : মানুষ সমাজে সমস্যার আবর্তে পড়লে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় এরা সবচেয়ে বেশি সময় ও মেধা ব্যয় করে। এভাবে মানুষ কল্যাণমুখী কাজের ক্ষমতা, অর্থাৎ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।


১১. চিন্তার জগৎ প্রসার : সামাজিক সমস্যা মানুষকে চিন্তাশীল করে তোলে। বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলার জন্য মানুষ তার চিন্তাজগৎকে প্রসারিত করে তোলে।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

১২. আর্থিক ক্ষতি : সমাজের সব ধরনের সমস্যার সাথে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি জড়িত। সমস্যা মোকাবিলার জন্য যে কৌশল ও পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার জন্য অনেক আর্থিক মূল্যও দিতে হয়।


১৩. সমস্যা চক্রাকার : যে কোন ধরনের সমস্যাই চক্রাকার। একটি সমস্যার শেষ হতে না হতেই আরেকটি সমস্যার উদ্ভব হয় । মানুষের সমাজ জীবনে সমস্যার কোন শেষ নেই। মানুষ সবসময় কোন না কোন সমস্যায় জর্জরিত থাকে।


১৪. নতুন অভিজ্ঞতা : মানুষ সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সাথে পরিচিতি লাভ করে। এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না, যে সমাজ জীবনের সংস্পর্শে আসে নি এবং সমাজের সমস্যার সাথে পরিচিত হয় নি। মানুষ সমাজের বিভিন্ন সমস্যা থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে।


১৫. একই সামাজিক সমস্যার ভিন্ন রূপ : মানুষ সমাজ জীবনে একই ধরনের সামাজিক সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে উপলব্ধি করে। যেমন- বলা যেতে পারে, কৈশোরে মানুষ যে সামাজিক সমস্যায় পড়ে, সেটি ঐ সময়ের (ঐ বয়সের) জন্য গুরুতর হতে পারে। আবার একই সমস্যা বার্ধক্যে দেখা দিলে সেটি গুরুতর নাও হতে পারে।


১৬. সমাজের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত : সামাজিক সমস্যার কারণে সমাজের সমগ্র অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব ধরনের সামাজিক সমস্যা সমাজের বৃহৎ অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।


১৭. সামাজিক সমস্যার পরিমাপ : সামাজিক প্রপঞ্চ হিসেবে সামাজিক সমস্যা পরিমাপ করা যায়। সামাজিক সমস্যাকে এর গতিপ্রকৃতি ও ধরনের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়। সামাজিক সমস্যা গুরু, লঘু, মাঝারি বিভিন্ন এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।


১৮. সমাজ ও সামাজিক সমস্যা : সামাজিক সমস্যা পরিমাপ করা যায় এবং সমাজভেদে সামাজিক সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করে । শিল্পায়িত উন্নত সমাজের সমস্যা এবং কৃষিভিত্তিক অনুন্নত সমাজের সমস্যা এক নয়।


১৯. সামাজিক সমস্যার স্থায়িত্ব : কোন কোন সামাজিক সমস্যা স্থায়ী রূপ ধারণ করে আবার কোন কোন সামাজিক সমস্যা স্থায়িত্ব পায় না।


২০. সমস্যার সমাধান : সমাজভেদে সামাজিক সমস্যা ভিন্ন মাত্রা পায় এবং সমস্যার স্থায়িত্ব অনিশ্চিত। সামাজিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে সমাজ থেকে সব সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব নয়।


উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা এক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি, যা সমাজ দেহের অধিকাংশ সদস্যকে প্রভাবিত করে। মূলত সমাজ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সামাজিক সমস্যার শুরু হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে সামাজিক কাঠামো সহজ ও একমুখী থাকায় সমস্যাও ছিল সহজসরল ও একমুখী। প্রকৃতপক্ষে, সামাজিক সমস্যা সমাজবাসীর কাছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা আচরণ, যা সমাজের বেশিরভাগ মানুষের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এবং এর ফলে সমাজে নানারূপ উত্তেজনা, টেনশন, চাপ লেগেই থাকে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment