সাংখ্য দর্শন মতে প্রকৃতির গুণগুলো কী কী?,সাংখ্য মতে প্রকৃতির গুণ প্রমাণগুলো লিখ, সাংখ্য মতে প্রকৃতির কী কী গুণ রয়েছে

সাংখ্য দর্শন মতে প্রকৃতির গুণগুলো কী কী?,সাংখ্য মতে প্রকৃতির গুণ প্রমাণগুলো লিখ,সাংখ্য মতে প্রকৃতির কী কী গুণ রয়েছে

ভূমিকা : সাংখ্য দর্শন ভারতীয় দর্শনগুলোর মধ্যে প্রাচীন। সাংখ্য দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবর্তক হলেন মহর্ষি কপিল। সাংখ্য দর্শনের দুটি অর্থ আছে। যথা : প্রথমত, সম্যক জ্ঞান এবং দ্বিতীয়ত, সংখ্যাবোধক তত্ত্ব। সাংখ্য দর্শন হচ্ছে দ্বৈতবাদী দর্শন। কারণ সাংখ্য দার্শনিকগণের মতে, জগতের আদিকারণ বা আদিসত্তা হিসেবে দুটি সত্তায় বিশ্বাসী। যথা : ১. প্রকৃতি ও ২. পুরুষ।


প্রকৃতির গুণ : গুণ বলতে আমরা ধর্মকে বুঝি। কিন্তু সাংখ্য দর্শনে গুণকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ না করে একটি বিশেষ অর্থে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সাংখ্য দর্শন গুণ বলতে উপাদানকে বুঝায়। সাংখ্য মতে, সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এ তিনটি প্রকৃতির উপদান। একটি রজ্জু (দড়ি) যেমন তিনটি তারের সমষ্টি হতে পারে তেমনি প্রকৃতিও সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এ তিনগুণের সমষ্টি। নিম্নে সত্ত্ব, রজঃ এবং তমঃ প্রকৃতির এ তিনটি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :


সত্ত্বগুণ : সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, সত্ত্বগুণ সুখাত্মক, লঘু এবং প্রকাশক। আনন্দ, তৃপ্তি, প্রীতি প্রভৃতি সুখের যাবতীয় অবস্থা সত্ত্বগুণের কার্য। বায়ুর অবাধ সঞ্চরণ, অগ্নির অধোগতি প্রভৃতি লঘুতার পরিচায়ক। এ শ্রেণির যাবতীয় কার্যের জন্য সত্ত্বগুণ দায়ী। একইভাবে ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধির বিষয়বস্তুকে প্রকাশ করার শক্তি ঐ সকল বস্তুতে সত্ত্বগুণের অবস্থিতির জন্য সম্ভব হয়।


রজঃগুণ : সাংখ্য মতে, রজোগুণ দুঃখাত্মক, নিজে গতিমান এবং অন্য দ্রব্যে গতি সঞ্চারক। জগতের যাবতীয় দুঃখের কারণ হলো প্রকৃতির রজঃগুণ। সেরূপ সবরকমের সক্রিয়তা ও চঞ্চলতার কারণ এ রজঃগুণ। যে কোন কর্মপ্রচেষ্টা, চঞ্চলতা, উৎসাহ ও শক্তি এ রজঃগুণের লক্ষণ। সত্ত্ব ও তমোগুণ নিজে কোন কাজ করতে পারে না। এ রজঃগুণই তাদের সক্রিয় করে তোলে।


আরো ও সাজেশন:-


তমঃগুণ : সাংখ্য দর্শন মতে, তমোগুণ হলো মোহাত্মক, গুরু ও আবরক। গুরু ও আবরক বলে তমোগুণ সত্ত্বগুণের বিপরীতধর্মী। রজঃগুণের চঞ্চলতার বাধা সৃষ্টি করে বলে তমোগুণ রজঃগুণের বিপরীতধর্মী। তমোগুণ সত্ত্বগুণের প্রকাশের বাধা সৃষ্টি করে এবং রজোগুণের গতিকে বাধা দেয়। তবে সত্ত্ব বা রজঃ যদি প্রবল হয় তাহলে তমোগুণের বাধা অতিক্রম করে তারা কাজ করতে পারে। তমঃ হতেই জড়তা, ঔদাসীন্য, বিষাদ, নিষ্ক্রিয়তা প্রভৃতি জন্মে। এ কারণেই সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ যথাক্রমে শুক্লবর্ণ, লোহিতবর্ণ ও কৃষ্ণবর্ণের সাথে তুলনা করা হয়েছে।


সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এ তিনটি গুণের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতার ভাব বিদ্যমান। সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এ তিনটি গুণের সমবেত চেষ্টা ছাড়া কোন জিনিসের সৃষ্টি হতে পারে না। এ তিনটি গুণ পরস্পর বিরোধী হলেও তাদের পারস্পরিক সহযোগিতায় সকল দ্রব্য উৎপন্ন হয়। যেমন : সলিতা, তেল ও আগুন পরস্পর বিরোধী হলেও যেমন একত্রে মিলিত হয়ে প্রদীপের আলো উৎপন্ন করে তেমনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এ তিনটি গুণ পরস্পর বিরোধী হলেও একত্রে সকল দ্রব্য উৎপন্ন করে।

[ বি:দ্র: উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, সাংখ্য দর্শনের প্রধান মূল উপজীব্য বিষয় হচ্ছে প্রকৃতি ও পুরুষ। সাংখ্য দার্শনিকরা জগৎ এবং জগতের প্রত্যেক বিষয়ের মূল কারণ হিসেবে প্রকৃতিকে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং জগৎ সৃষ্টির অনাদি উপাদান-কারণ হিসেবে সাংখ্য দার্শনিকেরা যে মতবাদ প্রচার করেছে তা ভারতীয় দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে আছে।

Leave a Comment