প্রশ্ন সমাধান: সরকারি অর্থব্যবস্থা ও গুরুত্ব, সরকারি অর্থব্যবস্থা গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করো,সরকারি অর্থব্যবস্থা কি?, সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব,সরকারি আয়ের উৎসসমূহ, কর রাজস্ব কাকে বলে,
Finance বা ‘অর্থব্যবস্থা’ বলতে অর্থের তদারকি করাকে বুঝায়, যার মধ্যে বিনিয়োগ, ঋণ দেওয়া-নেওয়া, বাজেট, এবং সঞ্চয় ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকে। অর্থনীতিতে তিন ধরণের অর্থব্যবস্থা (Finance) বিদ্যমান। যেমন- ব্যক্তিগত (Personal), কর্পোরেট (Corporate), এবং সরকারি (Public)।
নিম্নে সরকারি অর্থব্যবস্থা, উহার গুরুত্ব এবং সরকারি রাজস্ব বা আয়ের উৎস সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
What is Public Finance?
সরকারি অর্থব্যবস্থা কি?
সরকারি অর্থব্যবস্থা বা Public Finance বলতে সরকারি কর্তৃপক্ষের আয় এবং ব্যয়ের একটি Study বা অধ্যয়নকে বুঝায়। সুতরাং ইকোনমিক্স এর যে অংশ সরকার ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের আয়-ব্যয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ইত্যাদি নীতি ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে তাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলে।
ফিলিপ ই টেলরের (Philip E. Taylor) মতে, “সরকারের প্রতিষ্ঠানের অধীনে একটি সংগঠিত গোষ্ঠী হিসাবে জনসাধারণের অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনাকারী শাস্ত্রকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলা হয়।”
প্রফেসর হিউ ডাল্টনের (Prof. Hugh Dalton) মতে, “সরকারি কর্তৃপক্ষের আয় ও ব্যয় এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলে।”
অর্থনীতিবিদ রিচার্ড এ মাসগ্রেভ (Richard A. Musgrave) এর মতে, “যে শাস্ত্র সরকারের আয়-ব্যয়ের সহিত জড়িত জটিল সমস্যাসমূহকে যৌক্তিকভাবে সমাধান করে তাকে সরকারি অর্থব্যবস্থা বলে।”
রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয় দেশের জাতীয় আয়ের পরিমাণ ও মানুষের জীবন যাত্রার মানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। রাষ্ট্রীয় আয় হ্রাস পেলে জনগণের আয় হ্রাস এবং রাষ্ট্রীয় আয় বৃদ্ধি পেলে জনগণের আয়ও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং দেশের আয় ও কর্মসংস্থানের স্তর নির্ধারণে সরকারি আয়-ব্যয়ের প্রভাব সম্পৃক্ত।
আরো ও সাজেশন:-
সরকারি অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব
বর্তমান বিশ্বে যে কোন দেশের অর্থনীতি পরিচালনার জন্য দক্ষ সরকারি অর্থব্যবস্থা অপরিহার্য। একটি দেশের সরকারি অর্থব্যবস্থার উপর নির্ভর করে ঐ দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা তথা অর্থনৈতিক কল্যাণ।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত সরকারি আয়-ব্যয় তথা সরকারি অর্থ ব্যবস্থার তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। তখন ভাবা হতো, যে সরকার অর্থনীতিতে কম ব্যয় করে কম আয় করে সে সরকাই উত্তম। সরকার অর্থনীতিতে যত কম হস্তক্ষেপ করবে ততই মঙ্গল। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা ভিন্ন। এখন অনেকটা বলা যায়, যে সরকার বেশি আয়-ব্যয় করে সেই সরকারই উন্নয়ন বান্ধব। তা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই বর্তমানে ঘাটতি বাজেট করে থাকে; যেখানে, সরকার আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি করে। এ ক্ষেত্রে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সরকার প্রচুর ব্যয় করে থাকে। এ সকল খাতে সরকারি ব্যয় ছাড়া উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব।
অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith) যখন অদৃশ্য হাত ধারণার কথা বলেন তখন বলা হয় বাজার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদের দক্ষ বন্টন হতে পারে, সরকারি হস্তক্ষেপের কোন প্রয়োজন নাই। তখন কিছু অর্থনীতিবিদ বলেছেন যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ না করে বরং মুক্ত বাজার নীতি বজায় রাখা উচিত।
এ ধারণা ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আংশিকভাবে বলবৎ ছিল। অন্যদিকে, কিছু অর্থনীতিবিদ এ বক্তব্যের বিপক্ষে ছিলেন। তাদের মতে, উৎকৃষ্ট প্রবৃদ্ধি এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষের কল্যাণ হতে পারে না তথা সুষম উন্নয় সম্ভব নয়। তারা বলেন যে, উৎকৃষ্ট প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রিয় পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিকি কার্যাবলীর সঙ্গে সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরি। তাই সরকারি অর্থ ব্যবস্থার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি অর্থ ব্যবস্থার গুরুত্ব বৃ্দ্ধির কারণ গুলো নিম্নরুপঃ
- সমাজের কতগুলো বিষয় যেমন প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারি অর্থব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।
- কতগুলো দ্রব্য আছে যা মানুষের অত্যন্ত ক্ষতিকর যেমন সিগারেট, এ্যালকোহল, অপিয়াম ইত্যাদি। সরকার এ সব পণ্যের উপর কর বা লেভী আরোপ করে এ সবের ভোগ ও উৎপাদন নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব বাড়তে পারে।
- উন্নয়নশীল দেশের শিশুগুলো অর্থাৎ নতুন গড়ে ওঠা শিল্পগুলো উন্নত দেশের প্রযুক্তির সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারে না। সরকার এ সব উঠতি শিল্পের বিকাশের জন্য এ সব শিল্পের প্রতিযোগী দ্রব্যের উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে।
- সরকার দেশের জনগণকে পণ্য দ্রব্য সরবরাহ করে থাকে। যেমন, রাস্তা, ব্রিজ, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এয়ারপোর্ট ইত্যাদি। সরকারি অর্থ ব্যবস্থা এ সবের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশের মানুষের কল্যাণ তথা অর্থনৈতিক উন্নয় করতে পারে।
- সরকার দেশের ধনী শ্রেণীর উপর কর আরোপ করে দরিদ্র শ্রেণীর জন্য আয় সৃষ্টিকারি উপাদান বৃ্দ্ধি তথা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পারে।
- সরকারি অর্থ ব্যবস্থা আয়ের অসমতা দূর করে ধনী দরিদ্র ব্যবধান কমিয়ে আনে যার ফলে, সুষম আয় তথা উন্নয়ন হয়। সরকার ধনী শ্রেণীর উপর অধিক হারে কর আরোপ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পারে। যেমন-খাদ্যে ভর্তূকী, ফ্রি-মেডিকেল সহয়তা , গৃহায়ন, শিক্ষা ইত্যাদি।
- সরকার উপযুক্ত বাজেট নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে যা সরকারি অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
- সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য উন্নয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। যেমন, পঞ্চবার্ষিক, দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা করে সম্পদ, কর ও সরকারি ঋনের সঠিক সমন্বয় সাধন করে থাকে।
- সরকার দেশের বেকাত্ব দূরীকরণ ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে। যেমন, কল-কারখানা, সরকারি ই-পিজেড, সরকারি পূর্ত কাজ ইত্যাদি।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
সরকারি আয়ের উৎসসমূহ
সরকার বার্ষিক রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের জন্য যে সমস্ত উৎস থেকে সম্পদ সংগ্রহ করে তাকে সরকারের আয়ের উৎস (Source of revenue) বলে। বাংলাদেশ সরকার মূলতঃ দুই ধরণের উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে। যেমন-
- কর-রাজস্ব (Tax revenue); ও
- কর-বহির্ভূত রাজস্ব (Non-tax revenue)।
কর রাজস্বঃ দেশের জনগণ কোনরুপ প্রত্যক্ষ প্রতিদানের আশা না করে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে যে অর্থ দেয় তাকে কর (Tax) বলে। পক্ষান্তরে, সরকার কর আরোপ করে যে রাজস্ব আদায় করে তাকে রাজস্ব (Revenue) বলে। বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস হলো কর। সরকারের রাজস্ব আয়ের ৮২% কর-রাজস্ব থেকে আসে। বাংলাদেশ সরকারের কর-রাজস্বের উৎসসমূহ নিম্নরুপঃ
- আয় ও মুনাফা কর (Income Tax and Profit Tax);
- মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax);
- আবগারি শুল্ক (Exercise Duty);
- আমদানি শুল্ক (Import duty);
- যানবাহন কর (Vehicle Tax );
- ভূমি রাজস্ব (Land revenue);
- সম্পূরক শুল্ক (Supplementary duty);
- নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রয় (Sale of non-judicial stamps); ও
- অন্যান্য কর ও শুল্ক (Other taxes and levies)।
Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Stories | উত্তর লিংক |
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেল | উত্তর লিংক |
কর-বহির্ভূত রাজস্বঃ কর ছাড়া অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত রাজস্বকে কর-বহির্ভূত রাজস্ব (Non-tax revenue) বলে। কর বহির্ভূত রাজস্বের প্রধান উৎসসমূহ নিম্নরুপঃ
- লভ্যাংশ ও মুনাফা (Dividends and profits);
- সুদ (Interest);
- প্রশাসনিক রাজস্ব (Administrative revenue);
- রেলওয়ায়ে (Railways);
- ডাক বিভাগ (Postal Department); ও
- পরিষেবা বাবদ প্রাপ্তি (Service Charge)।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- বিক্রয়ের উপরে করের প্রভাব বিস্তারিত আলোচনা কর
- ইজারার চলতি ও ইজারার অচলতি পার্থক্য । ইজারার চলতি vs ইজারার অচলতি পার্থক্য
- ইজারাদাতার অবশিষ্ট মূল্য সম্পর্কে আলোচনা কর
- ইজারা গ্রহীতার বইয়ের হিসাব সংরক্ষণের প্রক্রিয়া আলোচনা কর
- ইজারা দাতার প্রত্যক্ষ ইজারার অর্থায়ন পদ্ধতি ধারণা সহ আলোচনা কর
- ইজারা ও মালিকানা পার্থক্য । ইজারা vs মালিকানা পার্থক্য