সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা কিভাবে নির্ধারিত হয়?, সমাজে কিভাবে ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা হয়?, ব্যক্তির মর্যাদা কিভাবে নির্ধারিত হয় সমাজে?

প্রশ্ন সমাধান: সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা কিভাবে নির্ধারিত হয়?, সমাজে কিভাবে ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা হয়?, ব্যক্তির মর্যাদা কিভাবে নির্ধারিত হয় সমাজে?

মানবজীবনে মর্যাদা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেকেই স্বীয় মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন। মানুষ সামাজিক জীব। আর এ মর্যাদা হলো সমাজেরই সৃষ্টি। সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক মানুষেরই একটা সামাজিক পরিচিতি বা সামাজিক অবস্থান রয়েছে। আর এ সামাজিক পরিচিতি বা অবস্থানই হলো মর্যাদা। যেমন- সমাজে কোন একজন ব্যক্তি কারও পুত্র, কারও স্বামী, কারও বাবা, আবার কারওবা বন্ধু।

সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারিত হওয়ার স্বরূপ : মানবজীবনে মর্যাদা অত্যন্ত মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর জন্য মানুষের আকুতির অন্ত নেই। সমাজে অনেকেই বিষয় সম্পত্তিকে অগ্রাহ্য করে মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে মানুষ এ মর্যাদার অধিকারী হয় বিভিন্নভাবে।

মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় তার বংশ, জন্ম, সামাজিক বর্ণবিন্যাস, সামাজিক প্রথা, লিঙ্গ, বয়স, সামাজিক অবস্থান ও পরিচিতি এবং ব্যক্তিগত গুণাবলি ও কীর্তিকলাপের ভিত্তিতে। মর্যাদা নির্ধারণের এ ভিত্তি অনুসারে সমাজে মানুষের মর্যাদাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের একটি হলো আরোপিত মর্যাদা (Ascribed Status) এবং অপরটি হলো অর্জিত মর্যাদা (Achieved Status). মানুষ জন্মসূত্রে বা সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে তাকে আরোপিত মর্যাদা বলা হয়।

এ মর্যাদা নির্ধারিত হয় মূলত সামাজিক প্রথা, বিধিবিধান অনুযায়ী, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস বা বর্ণবিন্যাস, বংশ বা পরিবার, লিঙ্গ এবং বয়সের দ্বারা। যেমন- প্রাচীন হিন্দুসমাজ ছিল শ্রেণিবিন্যস্ত সমাজ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এ চারটি বর্ণে সমাজ বিভক্ত ছিল। তন্মধ্যে ব্রাহ্মণদেরকে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন বা উচ্চবর্ণের মনে করা হতো। অপরদিকে, শূদ্ররা ছিল সর্বাপেক্ষা নিম্ন বর্ণের। এদেরকে সামাজিকভাবে অবজ্ঞার চোখে দেখা হতো। সমাজে এদের মর্যাদা স্বীকার করা হতো না বললেই চলে।


আরো ও সাজেশন:-

কোন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ বর্ণে জন্মগ্রহণ করলেই সে অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতো, আর শূদ্র বর্ণে জন্মিলে সে মর্যাদা হতে বঞ্চিত হতো। আবার কেউ যদি অভিজাত বা বিখ্যাত বংশ বা পরিবারে জন্মগ্রহণ করত তাহলে সে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতো অর্থাৎ সে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হতো।

কিন্তু তার জন্ম যদি সাধারণ বংশে বা অখ্যাত বংশে হতো তাহলে সে উৎকৃষ্ট মর্যাদার অধিকারী হতে পারত না। সাধারণত বদ্ধ বা রক্ষণশীল সমাজেই আরোপিত মর্যাদা প্রথা প্রচলিত। আরোপিত মর্যাদার ক্ষেত্রে লিঙ্গ এবং বয়সও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- সামাজিক ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা, মানমর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। অনেক বাবা-মাও পুত্রসন্তানকে তাদের সম্পদ, অর্থনৈতিক আশ্রয় এবং বৃদ্ধকালীন অবলম্বন মনে করে এবং কন্যাসন্তানকে পরিবারের দায় মনে করে থাকে।

বিশেষ করে প্রাচীন সমাজে নারীদেরকে অত্যধিক অবমূল্যায়ন করা হতো। আবার বয়সের দ্বারাও মর্যাদা নির্ধারিত হয় । সমাজে ছোটদের চেয়ে বয়সে বড়রা অধিক মর্যাদা ভোগ করে। সমাজ ছোটদের তুলনায় বড়দেরকে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

এভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে সমাজে আরোপিত মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। মর্যাদার আরেকটি দিক হলো অর্জিত মর্যাদা। মানুষ তার ব্যক্তিগত গুণাবলি এবং কীর্তিকলাপের মাধ্যমে যে মর্যাদা লাভ করে তাকে অর্জিত মর্যাদা বলে। এ মর্যাদা মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, যোগ্যতা-দক্ষতা, কর্মপ্রচেষ্টা ও ক্ষমতা, প্রতিভা- প্রবণতা, অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা ইত্যাদির দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

আধুনিক সমাজে অর্জিত মর্যাদার প্রাধান্য অত্যধিক। বর্তমানে অর্জিত মর্যাদাকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করা হয় এবং অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমান সমাজে মানুষের মর্যাদা কোন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় অর্থাৎ বর্তমানে মর্যাদা স্থির বা ধ্রুব নয়; এটা পরিবর্তনশীল।

মানুষ তার নিজের যোগ্যতায় মর্যাদার অধিকারী হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সমাজে এ সত্যকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ব্যক্তিগত জ্ঞান-প্রজ্ঞা, মেধা-প্রতিভা, বিদ্যা-বুদ্ধি, কর্মদক্ষতা প্রভৃতির দ্বারা তার মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। আধুনিক যুগে আরোপিত মর্যাদা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এখন অর্জিত মর্যাদাই মুখ্য। বর্তমানে মানুষের মর্যাদার নির্ণায়ক তার জন্ম বা সামাজিক প্রথা নয়। এক্ষেত্রে তার কর্মদক্ষতাই গুরুত্বপূর্ণ ।


Paragraph/Composition/Application/Email/Letter/Short Storiesউত্তর লিংক
ভাবসম্প্রসারণ/প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ/ রচনা/আবেদন পত্র/প্রতিবেদন/ চিঠি ও ইমেলউত্তর লিংক

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মর্যাদা মানুষের জীবনের এক পরম অর্জন। এটি জীবনের ভূষণও বটে। তবে মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বিভিন্নভাবে সমাজে এ মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে। সমাজে মানুষের মর্যাদা একদিকে যেমন তার জন্ম ও সামাজিক প্রথা বা রীতিনীতির দ্বারা নির্ধারিত হয়, তেমনি অন্যদিকে ব্যক্তিগত গুণাবলি ও অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার দ্বারাও নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে দ্বিতীয় দিকটিকেই অত্যধিক মূল্যায়ন করা হয় এবং গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment