বাংলাদেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হলো দারিদ্র্য। এটি মানবজাতির উপর অভিশাপস্বরূপ। দারিদ্র্য শুধু সমস্যাই নয়,
অন্যান্য সমস্যার প্রধান কারণও বটে। বেকারত্ব স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, নিরক্ষরতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরাধ প্রবণতা, যৌতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, পারিবারিক ভাঙ্গন দুর্নীতি প্রভৃতি অসংখ্য সমস্যার প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। তাই দারিদ্র্যের প্রভাব সমাজ জীবনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
সমাজজীবনে দারিদ্র্যের প্রভাব কি রূপ? সংক্ষেপে লিখ, সমাজ জীবনে দারিদ্র্যের প্রভাবসমূহ আলোচনা কর
সমাজ জীবনে দারিদ্র্যের প্রভাব : নিম্নে সমাজ জীবনে দারিদ্র্যের প্রভাবসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ : বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হলো জনসংখ্যা। স্বাধীনতার সময় এ দেশে লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি কিন্তু ৪০ বছরে এখন জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এ জনসংখ্যা পুরো সমাজ জীবনের উপর আর্থসামাজিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
২. বেকারত্বের উচ্চ হার : একটি দরিদ্র দেশের আয় স্বপ্ন হবার কারণে সঞ্চয় কম। সঞ্চয়ের স্বল্পতার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই বিনিয়োগ কম। আর বিনিয়োগ হ্রাসের কারণে শ্রমের চাহিদা কমে গিয়ে বেকারত্ব দেখা দেয়। মাথাপিছু কম হওয়ার উৎপাদনে বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণে উৎপাদনে বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না । এসব বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে সমাজ জীবনে ।
৩. ভূমিহীনতা বৃদ্ধি : জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভূমি ভাগ হচ্ছে। ফলে দারিদ্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং উন্নয়ন ব্যবহৃত হচ্ছে।
৪. নিরক্ষতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের প্রায় ৪০ ভাগ লোক অশিক্ষিত। এ বিশাল সংখ্যক নিরক্ষতার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য সমাজে নিরক্ষতা বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করে ।
৫. শিল্পের অগ্রসরতা জন্য দারিদ্র্যকে দায়ী করা হয়। কারণ শিল্পোন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি ও পর্যাপ্ত মূলধন প্রয়োজন যা একটি দরিদ্র দেশের জন্য ব্যবস্থা করা কঠিন।
৬. উচ্চ জন্মহার : একটি দেশের স্বল্প আয় হতে উচ্চ জন্মহার দেখা দেয়, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে অধিক শ্রমের সরবরাহ নিশ্চিত করে। অতিরিক্ত শ্রমের সরবরাহের ফলে বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। বেকারত্বের উচ্চ হার দেশটিকে স্বল্প উৎপাদনশীলতা এবং স্বল্প আয়ের দিকে তাড়িত করে।
৭. বাসস্থানের ক্ষেত্রে : বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অন্যতম। নিম্নে দারিদ্র্যের কারণে সকলের বাসস্থান নেই। ফলে ভিক্ষা, ভাসমান লোক, বস্তি গড়ে ওঠে সামাজিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে।
৮. ভগ্ন স্বাস্থ্য : দারিদ্র্যের প্রভাবে আয় কম বলে পুষ্টিকর খাদ্যসহ পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে দরিদ্র্যের স্বাস্থ্যহীনতা, ভগ্ন স্বাস্থ্য, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দেয়। এসবের প্রভাবে কর্মস্পৃহা এবং কর্ম ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
৯. অন্যান্য : দারিদ্র্য সমাজে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি করে, অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে, কৃষিকে অনুন্নয়নের দিকে নিয়ে যায়, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা সৃষ্টি করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, দারিদ্র্যের কারণে বহুমুখী ও বহু মাত্রায় আর্থ-সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়। তাই বলা হয়, ” Poverty is the root cause of all Under development” বাংলাদেশে দারিদ্র্যের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে মনীষী A.S. Living stone বলেছেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ জনসাধারণের সমস্ত চিন্তা ও কর্মধারকে একটি নিষ্ঠুর বাস্তব সত্য নিরন্তর আচ্ছন করে রেখেছে। আর নিষ্ঠুর বাস্তব সত্য হচ্ছে দারিদ্র্যের নিষ্পেষণ” দারিদ্র্যের এসব প্রভাব বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যার কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
একাডেমিক শিক্ষা বিষয়ক লিখিত প্রশ্ন সমাধান পেতে ক্লিক করুন।