প্রশ্ন সমাধান: সমন্বয়সাধন কাকে বলে? সমন্বয়সাধনের সংজ্ঞা, সমন্বয়সাধনের গুরুত্ব আলোচনা কর , সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লেখ, সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
সমন্বয়সাধন ব্যবস্থাপনার কার্যাবলির মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কতিপয় বিভাগ থাকে, এক এক বিভাগের কাজ একেক রকম। সকল বিভাগের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা ব্যবস্থাপনার অন্যতম দায়িত্ব। সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ এবং বিভাগের মধ্যে গতিশীলতা আসে। সাধারণত ব্যবস্থাপক নিজেই সমন্বয়সাধনের কাজটি করে থাকেন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজের এবং বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা প্রয়োজন। ঢিলেঢালা সমন্বয়ের ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি কমে যায়। সে কারণে কার্যকর সমন্বয়সাধন ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে সমন্বয়ের সংজ্ঞা, প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
সমন্বয়সাধনের সংজ্ঞা (Definition of Coordination)
ব্যবস্থাপনার নানাবিধ কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়সাধন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণভাবে, সমন্বয়সাধনের অর্থ হলো সামঞ্জস্যবিধান করা। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য বিভিন্ন কর্ম প্রক্রিয়া, দল অথবা ব্যক্তিগণের মধ্যে একতা বা শৃঙ্খলার সমন্বয়ন। অন্যভাবে বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কার্যের বিশ্লেষণ এবং সেগুলোর মধ্যে ভারসাম্য স্থাপনের প্রক্রিয়াকে সমন্বয়সাধন বলে। এ সংজ্ঞায় যে ভারসাম্যের বিষয়টি বলা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে যখনই ভারসাম্য আসবে তখনই তাকে উত্তম সমন্বয়সাধন বলা হবে।
নিচে কতিপয় ব্যবস্থাপনা বিশারদের সংজ্ঞা দেওয়া হলো:
- বিখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশারদ ম্যাক ফারল্যাণ্ড-এর মতে, “সমন্বয়সাধন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নির্বাহী বা ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তাদের অধঃস্তনদের দলগত প্রচেষ্টার সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিক ধরন সৃষ্টি করেন এবং বিভিন্ন কার্যাবলির মধ্যে ঐক্য তৈরি করেন।”
- মুনি ও রেইলির মতে, “সাধারণ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মতৎপরতার মধ্যে ঐক্য তৈরির দলীয় প্রচেষ্টার সুশৃঙ্খল বিন্যাসকে সমন্বয়সাধন বলে।”
- জে. আর. টেরীর মতে, “নির্ধারিত উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমরূপ প্রচেষ্টা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই সমন্বয়সাধন।”
- Stoner, Freeman ও Gilbert-এর মতে “Coordination is the process of integrating the activities of separate departments in order to pursue organizational goal effectively.”
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ, উপ-বিভাগ, ব্যক্তি ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য আনার প্রক্রিয়াই হল সমন্বয়সাধন। প্রতিটি ব্যবসায়ী বা অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিটি কাজ এবং বিভাগের কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হয়। অন্যথায় ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না।
সমন্বয়সাধন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেল। এবার আসুন, আমরা এর প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লেখ।
আধুনিকালের সংগঠনগুলো বৃহদায়তন হয়ে থাকে। সমন্বয়ই হলো সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমের পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রেরণার মূল চাবিকাঠি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রশাসনিক সংগঠনে সমন্বয়সাধন করা একান্ত আবশ্যক।
সমন্বয় ব্যতীত কোনো সংগঠন টিকে থাকতে পারে না বা তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না । তাই আধুনিক ও বৃহৎ জটিল সাংগঠনিক ব্যবস্থায় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ।
© সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা : প্রশাসনিক সংগঠনগুলোতে অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে । আধুনিক বৃহৎ জটিল সাংগঠনিক ব্যবস্থায় সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিম্নে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন : সংগঠনে সমন্বয় একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে থাকে। তাই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়সাধন প্রয়োজন।
২. কাজের দ্বৈততা রোধ : প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ ও ব্যক্তি বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। কাজের দ্বৈততা রোধ করে সমস্ত বিভাগে দায়িত্বগুলো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার কাজ করে থাকে সমন্বয় ।
৩. সম্পদের সুসম ব্যবহার : পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সসীম আর চাহিদা বা অভাব অসীম। সীমিত সম্পদ দ্বারা বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়সাধন প্রয়োজন ।
৪. ঐক্য প্রতিষ্ঠা : ঐক্য প্রতিষ্ঠা যেকোনো সংগঠনের অন্যতম প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচিত। তাই সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় হিংসা বিদ্বেষ প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিভিন্ন বিভাগ ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫. যোগাযোগ স্থাপন : একটি বৃহত্তর প্রশাসনে বিভিন্ন ইউনিটের মাধ্যমে কাজ সম্পাদিত হয়ে থাকে। তাই একটি ইউনিটের সাথে অপর ইউনিটের যোগাযোগ স্থাপন করতে সমন্বয়সাধন প্রয়োজন ।
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৬. ভারসাম্য রক্ষা : যেকোনো প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মচারীদের দক্ষতা, আচরণের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তাই দক্ষতা ও আচরণের পার্থক্য দূর করে ভারসাম্য বজায় রাখতে সমন্বয়সাধন প্রয়োজন ।
৭. দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টন : দায়িত্ব ও কর্তব্য বণ্টনের মাধ্যমে প্রশাসনিক সংগঠন তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় । এক্ষেত্রে সমন্বয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৮. যথাযথ কর্মসূচি প্রণয়ন : সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রশাসনিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করে। আর সমন্বয়ই যথাযথ কর্মসূচি প্রণয়নের সুযোগ করে দেয়।
৯. গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি : যেকোনো সংগঠনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আর এ পরিবেশ বজায় রাখতে সমন্বয়সাধন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
১০. মতানৈক্যের অবসান : সমন্বয় মূলত একটি সামষ্টিক প্রচেষ্টা। বিভিন্ন দল বা বিভাগ কর্মে নিয়োজিত। ফলে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। তাই মতবিরোধ দূর করার জন্য সমন্বয়সাধন প্রয়োজন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংগঠনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংগঠনের নানা বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নাম সমন্বয়।
সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমের পরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রেরণার মূল চাবিকাঠি হলো সমন্বয়সাধন প্রক্রিয়া।
সুতরাং সমন্বয়সাধন হলো কোনো সংগঠনের বিভিন্ন অংশের কাজের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যা ঐ সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। তাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য সমন্বয়সাধন প্রয়োজন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লেখ
রচনা ,প্রবন্ধ | উত্তর লিংক | ভাবসম্প্রসারণ | উত্তর লিংক |
আবেদন পত্র ও Application | উত্তর লিংক | অনুচ্ছেদ রচনা | উত্তর লিংক |
চিঠি ও Letter | উত্তর লিংক | প্রতিবেদন | উত্তর লিংক |
ইমেল ও Email | উত্তর লিংক | সারাংশ ও সারমর্ম | উত্তর লিংক |
Paragraph | উত্তর লিংক | Composition | উত্তর লিংক |
CV | উত্তর লিংক | Seen, Unseen | উত্তর লিংক |
Essay | উত্তর লিংক | Completing Story | উত্তর লিংক |
Dialog/সংলাপ | উত্তর লিংক | Short Stories/Poems/খুদেগল্প | উত্তর লিংক |
অনুবাদ | উত্তর লিংক | Sentence Writing | উত্তর লিংক |
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর