সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের চতুর্থ অধ্যায় টিকার উল্লেখ আছে

টিকা হচ্ছে সেসব জৈব রাসায়নিক যৌগ, যা দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে এবং কোনো একটি রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে সাহায্য করে।

টিকাকে অনাক্রম্যতা, প্রতিষেধক ও ইংরেজিতে ভ্যাকসিন (Vaccine) নামেও ডাকা হয়। টিকা ত্বকে সুচ ফুটিয়ে বা খাবার ড্রপ হিসেবে দেহে প্রবেশ করানো যায়।

এতে সাধারণত মৃতপ্রায় বা মৃত জীবাণু থেকে তৈরি হওয়া রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুসদৃশ উপাদান থাকে।

যেকোনো জীবাণুর দুটি বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রথমটি হচ্ছে রোগ সৃষ্টি করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেহের অভ্যন্তরে ওই একই রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য কিছু পদার্থ তৈরি করা।

টিকা তৈরির সময় ব্যবহৃত জীবাণুর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়; কিন্তু অন্য বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকে। ফলে এই জীবাণু দেহে রোগের কারণ হয় না, উল্টো রোগটি যেন না হয় তার জন্য বিশেষ পদার্থ তৈরি করতে থাকে। আরেকটি সুবিধা হলো এই জীবাণুগুলো মেমরি সেল গঠন করে। ফলে পরে একই জীবাণু আবার প্রবেশ করলে সহজে শনাক্ত করতে পারে এবং তাকে প্রতিরোধ করে।

এভাবে টিকা শরীরের ইমিউনিটি বাড়িয়ে দেয়। টিকা দেওয়ার সময়ের ওপর ভিত্তি করে এটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—রোগ হওয়ার আগে টিকা দেওয়া ও রোগ হওয়ার পরে টিকা দেওয়া।

বিশ্বে প্রথম টিকার ধারণা পাওয়া যায় চীনদেশ থেকে। দশম শতাব্দীতে ‘ভ্যারিওলেশন’ নামের এক চীনা চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল, যেখানে অসুস্থ রোগীর দেহ থেকে টিস্যু নিয়ে সেটা সুস্থ মানুষের দেহে বসিয়ে দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক ডা. এডওয়ার্ড জেনার আধুনিক ভ্যাকসিনেশন আবিষ্কার করেন।

এ জন্য তাঁকে ‘ফাদার অব ইমিউনোলজি’ বলা হয়। ১৮৮০ সালে লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেন এবং টিকাজগতে আমূল পরিবর্তন আনেন।

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে গুটিবসন্ত ও রাইন্ডারপেস্ট রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে পোলিও, হামসহ ২৫টি রোগ টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের টিকা। আমাদের দেশে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী এই টিকা দেওয়া কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিনা মূল্যে সর্বসাধারণের মধ্যে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে।

তবে ১৮ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী নারী, স্তন্যদানকারী মা, জ্বরে ভুগছেন বা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর চার সপ্তাহ পার হয়নি, অ্যালার্জি আছে এমন ক্ষেত্রে টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

J.S.C

Leave a Comment