সংকর জাতি বলা হয় ব্যাখ্যা দাও

সংকর জাতি বলা হয় ব্যাখ্যা দাও

বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন হচ্ছে বাঙালি জাতিকে কেন সংকর জাতি বলা হয়ে?

বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ব্যাখ্যা করো। আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই দুটো প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণভাবে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

আপনার খুব সহজেই এই আর্টিকেলটি পড়ে এই বিষয়ে সকল ধরনের তথ্য পেয়ে যাবেন।

বাঙ্গালী সংকর জনগোষ্ঠী কেন?

বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয় এর কারণ হচ্ছে একের অধিক জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণ আমাদের বাঙালি জাতির মধ্যে রয়েছে।

যেহেতু একাধিক জাতির সংমিশ্রণ এই জাতির মধ্যে রয়েছে সেহেতু বাঙালি জাতিকে সংকর জাতি বলা হয়ে থাকে।


আরো ও সাজেশন:-

আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ আকৃতিতে লম্বা এবং কেউবা খাটো হয়ে থাকেন। 

অপরদিকে জাপানি এবং চীনা নাগরিকদের মধ্যে আমরা যদি দেখি তবে তাদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য থাকে না।

অর্থাৎ প্রত্যেকটা জাপানি ব্যক্তি প্রায় দেখতে একই রকমের হয়ে থাকেন।

তাদের আকৃতি এবং গায়ের রং থেকে শুরু করে অনেক বিষয় একই রকমের হয়ে থাকে।

কিন্তু বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন টা কেন হয়ে থাকে।

বাঙালিদের মধ্যে এ ভিন্নতা দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে বাঙালিরা একক কোন নৃগােষ্ঠী থেকে আসেনি। বাঙালিরা মিশ্র জাতিগোষ্ঠী।

প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বিভিন্ন কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করতেন।

নৃতাত্ত্বিকদের মতে পৃথিবীর প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠীর কোন না কোন শাখা এসে মিলেছে

এই বাংলা ভূখণ্ডে। বাংলায় আগত জনগােষ্ঠীকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা যায়।

  • প্রাক আর্য বা অনার্য নৃগোষ্ঠী
  • আর্য নৃগোষ্ঠী

প্রাক আর্য বা অনার্য জনগােষ্ঠী

প্রাচীনকাল থেকেই অনার্য জনগােষ্ঠী বাংলা অঞ্চলে বসবাস করে এসেছে অর্থাৎ এই জনগােষ্ঠী বাংলার আদি জনগােষ্ঠী।

আর্যদের আগমনের পূর্ব থেকে এদেশে বসবাসকারী জনগােষ্ঠী অনার্য নামে পরিচিত। অনার্য জনগােষ্ঠী আবার চারটি প্রধান শাখায় বিভক্ত:

  • অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড
  • নেগ্রিটো
  • দ্রাবিড়
  • মঙ্গোলয়েড

অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড

এরা অস্ট্রেলিয়ার কাছের দ্বীপসমূহ থেকে আসা আদিম অধিবাসী।

ঐতিহাসিকদের মতে,অস্ট্রিকরাই এদেশের প্রাচীনতম বাসিন্দা। বর্তমানে বাঙালিদের মধ্যে এ নৃগােষ্ঠীর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

এদের গায়ের রং গাঢ় কালাে, মাথার গড়ন লম্বা, নাক প্রশস্ত, উচ্চতা বেটে ও মধ্যমাকার।

নেগ্রিটো

নিগ্রোদের মতাে দেহ গঠনযুক্ত এক আদিম জাতির এ দেশে বসবাসের কথা অনুমান করা হয়। এদের নেগ্রিটো বা নিগ্রোয়েড বলা হয়।

এদের আদি নিবাস ছিল আফ্রিকা। বিশেষ করে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে এবং মেলানেশিয়ায় এরা বসবাস করতাে। এদের গায়ের রং কালো, আকার খর্বাকৃতি, ঠোট পুরু ও উল্টানাে,  নাক খুবই চ্যাপ্টা।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]

দ্রাবিড়

অস্ট্রিক ধাচের তার একটি গােষ্ঠী হলো দ্রাবিড়রা। অস্ট্রেলিয় আদিম অধিবাসীদের সাথে এদের মিল রয়েছে বলে।

এদরকে আদি অস্ট্রেলীয় বলা হয়। এরা ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল থেকে এদেশে আসে। এদের গায়ের রং কালো থেকে বাদামি, এদের দেহ মধ্যমাকার, মাথা লম্বা,নাক চওড়া, চুল কালাে ও বাদামি এবং ঢেউ খেলানাে।

মঙ্গোলয়েড

পূর্ব এশিয়ায় মঙ্গোলীয় নরগােষ্ঠী বসবাস করে থাকে । এ জনগােষ্ঠী দক্ষিণ ও পশ্চিম চীন থেকে এদশে আগমন করে। এদের গায়ের রং পীতাভ থেকে বাদামী, আকৃতিতে বেটে, চুল কালাে ও ঋজু, মাথার আকৃতি গােল, নাক চ্যাপ্টা, চোখের পাতা সামনের দিকে ঝােলানাে। বাংলাদেশের চাকমা, গারাে,হাজং, মুরং,খাসিয়া, মগ, ত্রিপুরা, মিজো, মারমা ইত্যাদি ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীরা এই নরগােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

আর্য জনগােষ্ঠী

আর্যরা এদেশে বহিরাগত জনগােষ্ঠী। তারা বাংলায় আগমন করে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগে।

উত্তর ভারতের গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করে আর্যরা ক্রমে সমগ্র উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এদেশে আর্যরা বৈদিক সভ্যতার জন্ম দেয়।

এদের লম্বা মাথা, সরু ও মাঝারি নাক, গায়ের রং ফর্সা, পুরুষদের দাড়ি গােফ বেশি।

পরবর্তীসময়ে ধর্মপ্রচার ও ব্যবসা বাণিজ্য বা দেশজয়ের জন্য এদেশে বিভিন্ন দেশের মানুষ এসেছে।

এদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের আকর্ষণ করেছে বিভিন্ন দেশের মানুষদের। মধ্য এশিয়া, পারস্য, ও তুরস্ক থেকে আসা শক, তুর্কি, পাঠান, মােগল, ইরানি, আবিসিনীয়, আরব জনগােষ্ঠী এদেশে এসে বসবাস করার সুবাদে বাঙালি রক্তের সাথে তাদের সংমিশ্রণ ঘটেছে।

পরে ইংরেজ, পুর্তগিজ এবং ওলন্দাজদের সাথে এই অঞ্চলের মানুষের রক্ত ধারা মিশেছে। এভাবে দেখা যায়, বাঙালি কোন বিশুদ্ধ নৃগােষ্ঠীগত জাতি নয়। বাঙালি জাতি গঠনে নানা ধরনের নরগােষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। তাই বাঙালি হচ্ছে একটি সংকর জাতি।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment