শরীরে শক্তি বাড়ায় কাঁচা ছোলা
ছোলা বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে অতি পরিচিত একটি উপাদান। রোজার মাসে ইফতারের পাতে ছোলা থাকবেই। এছাড়াও সারাবছর ঘরে কিংবা বাইরে ছোলা খাওয়া হয়। মুড়ি মাখায় ছোলার উপস্থিতি সবচাইতে বেশি দেখা যায়। রাস্তার পাশের দোকান থেকে এক প্লেট ছোলা খেয়ে বিকেলের নাস্তা সেরে ফেলা মানুষ পাওয়া যাবে অসংখ্য। আবার ব্যায়ামবিদ কিংবা স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই সকালে একমুঠ ভেজানো কাঁচা ছোলা খান।
তবে বহুল প্রচলিত এই খাবারের পুষ্টিমান, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই অনেকেরই।
তাই খাদ্য ও পুষ্টি-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হলো সেগুলো সম্পর্কে।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয় যে, যে সকল অল্পবয়সী নারীরা বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে:
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালিতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় ও ছোলার শাকে। ডায়াটারি ফাইবার খাবারে অবস্থিত পাতলা আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কাঁচা ছোলার যত উপকারিতা
রক্ত চলাচল:
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা, শিম এবং মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় ।
ক্যান্সার রোধে:কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তাই নিয়মিত ছোলা খান এবং সুস্থ থাকুন।
কোলেস্টেরল কমায়:
ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:
ছোলায় খাদ্য-আঁশও আছে বেশ। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।
রক্তের চর্বি কমায়:
ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমায়।
অস্থির ভাব দূর করে:
ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
রাতে জলে ভেজানো ছোলা খালি পেটে খান নিয়মিত
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে:
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায়, হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯% কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ করে:
কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
জ্বালাপোড়া দূর করে:
সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে এই ছোলাতে। সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমায়।
ডায়াবেটিসে উপকারী:
১০০ গ্রাম ছোলায় আছে: প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে।
মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে:
এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়।
রমজানে:
রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার হলো ছোলা। আমাদের দেশে ছোলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়। দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম।
পরিশেষে : নিয়মিত ছোলা খাওয়ার জাদুকরী উপকার, অসাধারণ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার ছোলা ও বাদাম
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট
স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ