👉প্রশ্নঃ মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরে আমরা কী কী ইবাদত করতে পারি?
✔উত্তরঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান টার্গেট। এ লক্ষ্যে আমাদের নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক :
👉(ক) নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং নিজের অধীনস্ত ও অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
👉(খ) লম্বা সময় নিয়ে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ পড়া। এসব সালাতে কিরাআত ও রুকু-সিজদা লম্বা করা। রুকু থেকে উঠে এবং দুই সিজদায় মধ্যে আরো একটু বেশী সময় অতিবাহিত করা, এসময় কিছু দু’আ আছে সেগুলে পড়া।
👉(গ) সিজদার মধ্যে তাসবীহ পাঠ শেষে দু’আ করা। কেননা সিজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের সবচেয়ে নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দু’আ কবুল হয়।
👉(ঘ) বেশী বেশী তাওবা করবে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়বে। ছগীরা কবীরা গোনাহ থেকে মাফ চাইবে। বেশী করে শির্কী গোনাহ থেকে খালেছ ভাবে তাওবা করবে। কারণ ইতিপূর্বে কোন শির্ক করে থাকলে নেক আমল তো কবুল হবেই না, বরং অর্জিত অন্য ভাল আমলও বরবাদ হয়ে যাবে। ফলে হয়ে যাবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
👉(ঙ) কুরআন তিলাওয়াত করবে। অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়নও করতে পারেন। তাসবীহ তাহলীল ও যিক্র-আযকার করবেন। তবে যিকর করবেন চুপিসারে, নিরবে ও একাকী এবং কোন প্রকার জোরে আওয়ায করা ছাড়া। এভাবে যিকর করার জন্যই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন :
{وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعاً وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالآصَالِ وَلا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ}
“সকাল ও সন্ধ্যায় তোমার রবের যিকর কর মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়ভীতি সহকারে এবং জোরে আওয়াজ না করে। এবং কখনো তোমরা আল্লাহর যিকর ও স্মরণ থেকে উদাসীন হয়োনা।” (আরাফ : ২০৫)
অতএব, দলবেধে সমস্বরে জোরে জোরে উচ্চ স্বরে যিক্র করা বৈধ নয়। এভাবে সম্মিলিত কোন যিকর করা কুরআনেও নিষেধ আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা করেন নি। যিকরের শব্দগুলো হল: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি।
👉(চ) একাগ্রচিত্তে দু’আ করা। বেশী বেশী ও বার বার দু’আ করা। আর এসব দু’আ হবে একাকী ও বিনম্র চিত্তে কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে।
দু’আ করবেন নিজের ও আপনজনদের জন্য. জীবিত ও মৃতদের জন্য, পাপমোচন ও রহমত লাভের জন্য, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতে নিম্নের এ দু’আটি বেশী বেশী করার জন্য উৎসাহিত করেছেন :
اَللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
” হে আল্লাহ! তুমি তো ক্ষমার আধার, আর ক্ষমা করাকে তুমি ভালবাস। কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী)
শেয়ার করুন
- বৃষ্টির আবহাওয়ায় আমার মোটরসাইকেলের যত্ন
- বাচ্চা নিতে কতবার সহবাস করতে হয়,বাচ্চা নেওয়ার জন্য কতবার সহবাস করতে হয়?
- কিভাবে মরিচা থেকে আপনার মোটরসাইকেলকে রক্ষা করবেন?, বাইকে মরিচা কিভাবে দূর করা যায় ?
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- hsc/এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র সংক্ষিপ্ত সাজেশন, ফাইনাল সাজেশন এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র, hsc logic 1st paper suggestion 100% common guaranty, special short suggestion hsc suggestion logic 1st paper
মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়। পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, নাজাত, বরকত ও মাগফেরাত। পবিত্র শবে কদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগি করবেন।
পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন নাজিল হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মসজিদসহ বাসাবাড়িতে এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। এ রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও আখেরি মোনাজাত করবেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা: কদর, আয়াত: ১-৩)
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
কোরআনে উল্লিখিত আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা শবে কদর বা কদরের রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে এ মাস উপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৪৪)
‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধান
বেশির ভাগ হাদিস বিশারদের মতে, লাইলাতুল কদর বা কদর রাত রমজানের শেষ দশকে রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে ছয় ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা আবশ্যক। কেউ যদি তাতে অক্ষম হয়, তবে সে যেন শেষ তিন বিজোড় রাতে (২৫, ২৭, ২৯) আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করে। আর তা-ও যদি সম্ভব না হয়, তবে সে যেন ২৭ রমজানের রাতে তা অনুসন্ধান করে।
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৭)
লাইলাতুল কদরের নিদর্শন
বিশুদ্ধ হাদিসে লাইলাতুল কদরের নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে। উবাই বিন কাব (রা.) দৃঢ় শপথ করে বলেন, তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের ২৭তম রজনি। এরপর তিনি মহানবী (সা.)-কে উদ্ধৃত করে বলেন, সেদিনের নিদর্শন হলো, সেদিন সূর্যোদয় হবে; কিন্তু তাতে আলোকরশ্মি থাকবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৬৭)
‘কদর’ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ আমল
হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমলের কথা তুলে ধরা হলো।
১. ভেতর ও বাহিরের পবিত্রতা:
লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত ভেতর ও বাহিরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন, ‘উত্তম হলো যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য; সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি-না মানুষের ভেতরটা সুন্দর না হয়। কারণ, মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে। ’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৮৯)
২. রাতে নামাজ ও ইবাদত
রাসুলুল্লাহ (সা.) কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫)
৩. ক্ষমাপ্রার্থনা
আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?
তিনি বলেন, তুমি বোলো, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫১৩)
৪. প্রতিটি বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা উত্তম। কেননা, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০১৭)
৫. জামাতের সঙ্গে এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করা
বিশেষ করে কদরের রাতে এশা ও ফজর নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী শবে কদরের ফজিলত লাভ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)