রোজা ভঙ্গের কারণ ও রোজার মাকরুহ সমূহ পরিপূন আলোচনা

ইসলাম ধর্মের তৃতীয় স্তম্ভ রোজা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে সুবহে সাদিক থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সাওম বা রোজা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।

বিনা-কারণে যদি কেউ এ রোজা ভঙ্গ করে, তার জন্যে রয়েছে দুনিয়া-আখিরাতে লাঞ্ছনা!

তাই ইচ্ছাকৃত যদি কেউ রোজা ভঙ্গ করে, তার উপর কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়। আর অনিচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে কারও রোজা ভঙ্গ করতে হলে তার উপর কেবলই কাজা ওয়াজিব।

আমরা অনেকে জানি না রোজা পালনের সঠিক নিয়ম বা কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়। আসুন রোজার প্রয়োজনীয় কিছু বিধান জেনে নিই-

রোজা ভাঙে যেসব কারণে:

১. ইচ্ছাকৃত কিছু খেলে বা পান করলে

২. স্ত্রী সহবাস করলে

৩. কোনো বৈধ কাজ করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত খেলে

৪. নস্যি গ্রহণ করা, কানে বা নাকে ওষুধ বা তেল ঢোকালে

৫. ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করলে অথবা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে

৬. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে গেলে

৭. কামভাবে কাউকে স্পর্শ করার পর বীর্যপাত হলে বা হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত ঘটালে

৮. খাদ্য না এমন বস্তু খেলে যেমন : কাঠ, কয়লা, লোহা ইত্যাদি

৯. ধূমপান করলে

১০. আগরবাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছা করে নাকে ঢোকালে

১১. সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর সেহেরি খেলে

১২. ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে সময়ের আগেই ইফতার করে ফেললে

১৩. দাঁত দিয়ে বেশি পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে তা ভেতরে চলে গেলে

১৪. জোর করে কেউ রোজাদারের গলার ভেতরে কিছু ঢুকিয়ে দিলে

১৫. মুখে পান রেখে ঘুমালে এবং সে অবস্থায় সেহেরির সময় চলে গেলে

১৬. রোজার নিয়ত না করলে

১৭. ইনজেকশান বা স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে ওষুধ গ্রহণ করলে

রোযার কথা স্মরণ থাকাসত্বেও ইচ্ছে করে খেলে বা পান করলে তা যত কমই হোক রোযা বাতিল হয়ে যাবে, এমনকি মুখের ভিতরে থাকা কোন খাদ্যকনা বা দাত মাজার ব্রাশ মুখ থেকে বের করার পর আবার মুখে দিয়ে তাতে অবস্থিত তরল পদার্থ পান করলেও রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে। তবে যদি সে  তরল পদার্থ তার সাথে এভাবে মিশে থাকে যার ফলে তা বাইরের তরল পদার্থ বলে ধরা হয় না, তাহলে রোযা বাতিল হবে না।

খাওয়া বা পানাহার করার সময় যদি বুঝা যায় যে, আজানের সময় হয়েছে, তাহলে মুখের খাবার বা পানীয়‎ বের করে ফেলতে হবে, যদি কেউ ইচ্ছা করে তা গিলে ফেলে তাহলে তার ঐ রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে এবং তার উপর কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে।

ভুল করে কিছু খেলে বা পান করলে রোযা বাতিল হবে না।

ইনজেকশন বা সেলাইন দেয়ার কারণে রোযা বাতিল হবে না, অনুরূপভাবে স্প্রে মুখে প্রবেশ করানো, চোখ ও কানের ড্রপ ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের কারণে রোযা বাতিল হবে না।

দাঁতের ফাঁকে থাকা খাদ্যকনা ইচ্ছে করে গলাধকরণ করার কারণে রোযা বাতিল হবে না।

রোযাদার ব্যক্তিকে ফজরের আজানের আগে খিলাল করা জরুরী নয়, কিন্তু যদি বুঝা যায় যে, সে কারণে দাতের ফাঁকে থাকা খাদ্যকনা গলায় প্রবেশ করতে পারে তাহলে দাঁত ব্রাশ করা জরুরী।

মুখের ভিতর জমা থুথু ইচ্ছে করে গলাধকরণ করার কারণে রোযা বাতিল হবে না।

কাশ বা কফ গলার মধ্যে থাকা অবস্থায় গিলে ফেলার কারণে রোযা বাতিল হবে না; তবে যদি তা গলার উপরে মুখের ভেতর চলে আসে, তাহলে এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে তা গিলে ফেলা উচিত হবে না।

কোন রোযাদার ব্যক্তি যদি অত্যধিক তৃষ্ণার্ত হয় এবং এমন পর্যায়ে যায়, যে কারণে (তার ভয় হয় যে) পানি পান না করলে সে মারা যেতে পারে বা অনেক সমস্যা হতে পারে; তাহলে তা থেকে বাঁচার জন্য নুন্যতম পানি পান করা তার জন্য ওয়াজিব; কিন্তু রোযা বাতিল হয়ে যাবে; তবে যদি রমজান মাস হয়, তাহলে এহতিয়াতের ভিত্তিতে তারপর কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না এবং ইফতার পর্যন্ত সেভাবেই থাকতে হবে।

রোযা থাকা অবস্থায় খাদ্য চিবিয়ে বাচ্চা বা পাখিকে দেয়া অথবা রান্না করা খাদ্যের সাধ বুঝার জন্য তা চেখে দেখা ও অনুরূপ যেসব কাজে খাদ্য বা পানীয় গলার ভিতর প্রবেশ করে না, তাতে অসুবিধা নেই; যদিও ঘটণাক্রমে ঐ পদার্থ গলার ভিতর প্রবেশ করে থাকে; কিন্তু যদি আগে থেকে জানা থাকে যে, গলার ভিতর প্রবেশ করবে তাহলে তা করা যাবে না এবং তখন তা করার ফলে যদি গলার ভিতর প্রবেশ করে, তাহলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে; তখন তার কাজা আদায় করতে হবে এবং কাফ্‌ফারাও দিতে হবে।

দূর্বলতার কারণে রোযা ভাঙ্গা যাবে না, কিন্তু যদি দূর্বলতা এমন পর্যায়ের হয় যা সহ্যাতীত হয়ে পড়ে, তাহলে ভাঙ্গা যাবে।

সঙ্গম

সঙ্গমের কারণে রোযা ভঙ্গ হয়, যদিও শুধু খতনার স্থান পর্যন্ত প্রবেশ করানো হয় এবং ধাতু বের না হয়।

যদি খতনার স্থান পর্যন্ত প্রবেশ না করে এবং ধাতু বের না হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না; কিন্তু যার খতনার স্থান নেই তার যদি খতনার স্থান পর্যন্ত প্রবেশ না করে এবং ধাতু বের না হয়, তবুও তার রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

– যদি কেউ ইচ্ছে করে সঙ্গমের বাসনা পোষণ করে এবং তারপর সন্দেহ করা হয় যে, খতনার স্থান পর্যন্ত প্রবেশ করেছে কিনা, তাহলে তার উপর ১৫৫১ নং মাসআলা প্রযোজ্য হবে। কিন্তু যদি রোযা ভাঙ্গার কোন কাজ না করে থাকে, তাহলে কাফ্‌ফারা ওয়াজিব হবে না।

রোযার কথা ভুলে গিয়ে সঙ্গম করা হলে অথবা বাধ্য হয়ে সঙ্গম করতে হলে যদি তা মোকাবেলা করার ক্ষমতা অতিক্রম করে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না; কিন্তু যদি সঙ্গমের মাঝখানে ঐ ব্যক্তি সেরূপ ক্ষমতা ফিরে পায় বা রোযার কথা মনে হয়, তাহলে অনতিবিলম্বে তা থেকে বিরত থাকতে হবে নতুবা রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

মৈথুন বা হস্তমৈথুন

রোযাদার যদি হস্তমৈথুন করে রোযা বাতিল হয়ে যাবে।[1]

অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি বীর্য বের হয় রোযা ভঙ্গ হবে না।

রোযাদার যদি বুঝতে পারে যে, সে ঘুমালে বীর্য বের হতে পারে, তারপরও যদি ঘুমায় এবং বীর্য বের হয়, তবুও তার রোযা ভঙ্গ হবে না।

বীর্য বের হবার সময় রোযাদার যদি ঘুম থেকে জেগে উঠে, তাহলে তা বের হবার পথ রোধ করা জরুরী নয়।

রোযাদারের বীর্য বের হবার পর প্রসাব করতে পারবে, যদিও তাতে লিঙ্গের ভিতরকার কিছু বীর্য বের হয়।

বীর্য বের করার ইচ্ছায় যদি কেউ কোন কাজ করে এবং যদিও তাতে বীর্য বের না হয়, তবুও পুনরায় রোযার নিয়ত করতে হবে; যদি নিয়ত না করা হয়, তাহলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে; আর যদি নিয়ত করে থাকে, তবে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে রোযা পূর্ণ করতে হবে এবং তার কাযাও আদায় করতে হবে।

সঙ্গম বা মৈথুনের ইচ্ছা না করে যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে আনন্দ উপভোগ করে, যদি তাতে নিশ্চিত থাকে যে, বীর্য বের হবে না; কিন্তু ঘটনাক্রমে যদিও বীর্য বের হয়, রোযা ভঙ্গ হবে না; তবে যদি তাতে নিশ্চিত থাকে যে, বীর্য বের হবে এবং ঘটনাক্রমে যদি বীর্য বের হয়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) উপর মিথ্যারোপ করা

রোযাদার ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে যেকোনভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করে (যদিও অনতিবিলম্বে তার সে কথা উড্র করে নেয় বা তওবা করে তবুও) তার রোযা এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) স্থলাভিষিক্ত ও ফাতেমা যাহরার উপর মিথ্যারোপ করলেও রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

    রোযাদার যদি কোন হাদীস বর্ণনা করতে চায়, যার সত্যতা সম্পর্কে সে নিশ্চিত নয়, তা এভাবে বলতে হবে যাতে সরাসরি রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বা ইমামদের উদ্ধৃতিতে পরিণত না হয়।

    যদি কেউ কোন কিছু সত্য বলে নিশ্চিত হয়ে বর্ণনা করে, কিন্তু তারপর বুঝতে পারে যে, তাতে আল্লাহ বা তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ হয়েছে, তবে তার রোযা বাতিল হবে না।

    যদি কোন কিছু মিথ্যা বলে নিশ্চিত হয়ে বর্ণনা করে এবং তাতে আল্লাহ বা তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ হয়; কিন্তু তারপর বুঝতে পারে যে, তা মিথ্যা ছিল না, তখন যদি জেনে থাকে যে এ কাজের মাধ্যমে রোযা বাতিল হয় তাহলে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে সে রোযা পূর্ণ করতে হবে এবং পরে তার কাযাও আদায় করতে হবে।

    কেউ যদি কোন মিথ্যা বিষয় বানিয়ে আল্লাহ বা তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে তার রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে। কিন্তু যদি তা যার কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে তার নাম উল্লেখ করে বর্ণনা করা হয়, তাতে শরিয়তি বিধানে অসুবিধা নেই।

    ইচ্ছা করে হ্যাঁ বা না বলার মাধ্যমেও যদি আল্লাহ বা তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উপর মিথ্যারোপ করা হয়, এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে সে কারণে রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

    আল্লাহ বা তার রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে পূর্বে বর্ণিত কোন সত্য কথা বর্ণনা করার পর যদি রোযাবস্থায় তার বিপরীত স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে এহতিয়াতের ভিত্তিতে রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে; তবে যদি তা অন্যভাবে বলা হয় যা মিথ্যা বলে গণ্য না হয়, তাতে রোযা বাতিল হবে না।

    ধূলাবালি গলাধকরণ করা

    – ধূলাবালি ও অনুরূপ বস্তু হালাল হোক; যেমন : আটা; অথবা হারাম হোক; যেমন : মাটি ইত্যাদি গলাধকরণ করার কারণে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে রোযা বাতিল হয়ে যায়।

    ধূলাবালি ও অনুরূপ বস্তুর অতি সামান্য গলাধকরণ করার কারণে রোযা বাতিল হবে না।

    প্রচ- বাতাস বা তুফানের কারণে যদি ধূলাবালি উড়তে থাকে, তখন যদি রোযাদার ব্যক্তি তা থেকে নিরাপদে থাকতে পারা সত্বেও নিরাপদ আশ্রয়ে না যায় ও সে কারণে গলার মধ্যে ধূলাবালি প্রবেশ করে, এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে তার রোযা বাতিল হয়ে যাবে।

    এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে রোযাদার সিগারেট ও অনুরূপ পদার্থের ধূয়া থেকেও নিজেকে সতর্ক রাখবে যাতে তা গলায় প্রবেশ না করে।

    যদি তা থেকে সতর্ক না থাকা হয় এবং তা গলায় প্রবেশ করে এবং তাতে যদি সন্দেহ হয়, তাহলে সে রোযার কাজা আদায় করা উত্তম। কিন্তু যদি কেউ নিশ্চিত হয় যে, তা গলায় প্রবেশ করে নি, তাহলে তার রোযা সহীহ হবে।

    রোযার কথা ভুলে গিয়ে বা অসতর্কতার কারণে যদি ধূলাবালি গলায় প্রবেশ করে, তাহলে রোযা বাতিল হবে না।

    পুরো মাথা একবারে পানিতে ডুবালে রোযা বাতিল হয় না; কিন্তু তার ব্যাপারে অনেক নিষেধাজ্ঞা আছে।

    জুনুব বা হায়েয অবস্থায় ফজরের আজান পর্যন্ত থাকা

    জুনুব ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে ফজরের আজান পর্যন্ত গোসল বা তার দায়িত্ব পালন (যেমন : তায়াম্মুম) না করে থাকে, তাহলে সে রোযা পূর্ণ করতে হবে এবং পরে আরেকবার তার শরিয়তি কর্তব্যসরূপ রোযা রাখতে হবে।

    – রমজান মাসের কাজা রোযার ক্ষেত্রেও জুনুব ব্যক্তি ফজরের আগে গোসল করবে, যদি ইচ্ছা করে ফজরের আজান পর্যন্ত গোসল না করে থাকে, তাহলে সেদিন রোযা রাখতে পারবে না, যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত গোসল করা না হয়, তাহলে রোযা রাখা যাবে; কিন্তু এহতিয়াতের ভিত্তিতে তরক করা উত্তম।

    রমজান মাসের চলতি রোযা বা কাজা রোযা ব্যতীত অন্যান্য  ওয়াজিব ও মুস্তাহাব রোযার ক্ষেত্রে জুনুব ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে ফজরের আজান পর্যন্ত গোসল না করে থাকে, তাহলে অসুবিধা নেই (সেদিন রোযা রাখতে পারবে)।

    জুনুব ব্যক্তি যদি ইচ্ছা করে গোসল না করে থাকে এবং সে কারণে ফজরের আজানের সময় ঘনিয়ে আসে, তাহলে তায়াম্মুম করে রোজা রাখতে হবে এবং সে রোজা সহীহ হবে।

    রমজান মাসে যদি কোন জুনুব ব্যক্তি গোসল করতে ভুলে যায় একদিন বা কয়েকদিন পর তা মনে হয়, তাহলে যতদিন জুনুব অবস্থায় রোযা ছিল, ততদিনের রোযা কাজা করতে হবে। আর যদি দিনের সংখ্যা সম্পর্কে সন্দেহ হয়, তাহলে কম সংখ্যক দিনের কাজা আদায় করলেই যথেষ্ট হবে।

    গোসল বা তায়াম্মুম করার যদি সময় না থাকে তারপরও যদি কেউ ইচ্ছা করে জুনুব হয়, তাহলে সে বাতিল বলে পরিগণিত হবে এবং ঐ রোযার কাজা ও কাফ্‌ফারা উভয় দায়িত্ব পালন করতে হবে।

    গোসলের সময় নেই তা জেনেও যদি কেউ জুনুব হয় ও তায়াম্মুম করে অথবা সময় থাকা সত্বেও গোসল না করে, সে কারণে ফজরের আজানের সময় ঘনিয়ে আসে এবং তখন তায়াম্মুম করে তাহলে সে রোজা সহীহ হবে; যদিও সে গুনাহগার বলে বিবেচিত হবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর যদি বুঝা যায় যে, গোসল না করে ঘুমালে ফজরের আগে উঠা যাবে না, তাহলে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে গোসল না করে ঘুমানো  ঠিক হবে না; যদি তা না করে কেউ ঘুমায় এবং ফজরের আগ পর্যন্ত জাগতে না পারে, তাহলে সে রোজা পূর্ণ করতে হবে এবং তার কাজা ও কাফ্‌ফারা উভটিই আাদায় করতে হবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর যদি বুঝা যায় যে, গোসল না করে ঘুমালে ফজরের আগে উঠা যাবে, তারপর যদি কেউ ঘুমায় এবং জেগে উঠে ও পুনরায় ঘুমিয়ে যদি আজানের আগে জাগতে পারে, তাহলে ঘুমাতে পারবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর কেউ যদি বুঝতে পারে যে, গোসল না করে ঘুমালে ফজরের আগে উঠতে পারবে এবং তখন গোসল করার সিদ্ধান্ত নেয়; তারপর ঘুমানোর পর যদি সে জাগতে না পারে, তাহলে তার ঐ রোযা সহীহ হবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর যদি সন্দেহ হয় যে, গোসল না করে ঘুমালে ফজরের আগে উঠা যাবে না এবং উঠলেও গোসল করা কষ্টসাধ্য হবে, তখন ঘুমনোর পর যদি কেউ ফজরের আগে উঠতে না পারে, তাহলে এহতিয়াতের ভিত্তিতে তার উপর কাজা ওয়াজিব হবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর যদি নিশ্চিত হওয়া যায় বা ধারণা বা সন্দেহ করা যায় যে, গোসল না করে ঘুমালে ফজরের আগে উঠা যাবে কিন্তু তখন গোসল করার সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়; তারপর ঘুমানোর পর যদি সে ব্যক্তি জাগতে না পারে, তাহলে ঐ রোজা পূর্ণ করতে হবে এবং তার কাজা ও কাফ্‌ফারা উভটিই আাদায় করতে হবে।

    রমজান মাসের রাতে জুনুব হবার পর ঘুমিয়ে জাগনা হবার পর যদি নিশ্চিত হওয়া যায় বা ধারণা করা যায় যে, গোসল না করে পুনরায় ঘুমালে ফজরের আগে উঠা যাবে এবং তখন গোসল করা হবে; তারপর ঘুমানোর পর যদি এরূপ ব্যক্তি জাগতে না পারে, তাহলে ঐ রোজা পূর্ণ করতে হবে এবং তার কাজা আদায় করতে হবে; আর যদি তৃতীয়বার ঘুমানোর পর জাগতে না পারে, তাহলে ঐ রোজা পূর্ণ করতে হবে এবং তার কাজা আদায় করতে হবে; এবং এহতিয়াতে মুস্তাহাবের ভিত্তিতে কাফ্‌ফারাও দিতে হবে।

    রোযাদার ব্যক্তির দিনের বেলায় সপ্নদোষ হলে সাথে সাথে গোসল করা আবশ্যক নয়।

    কোন মহিলা রমজান মাসের কোন রাতে ফজরের আগে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়; কিন্তু যদি ইচ্ছা করে ফজরের আজান পর্যন্ত গোসল বা তার দায়িত্ব পালন (যেমন : তায়াম্মুম) না করে থাকে, তাহলে সে রোযা পূর্ণ করতে হবে এবং পরে তার কাজা আদায় করতে হবে; কিন্তু যদি তা কাজা রোযার ব্যাপারে ঘটে থাকে, তাহলে সে রোযা রাখা যাবে না।

    কোন মহিলা রমজান মাসের কোন রাতে ফজরের আগে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়; কিন্তু যদি ইচ্ছা করে গোসল না করে থাকে এবং সে কারণে ফজরের আজানের সময় ঘনিয়ে আসে, তাহলে তায়াম্মুম করে রোজা রাখতে হবে এবং সে রোজা সহীহ হবে।

    কোন মহিলা রমজান মাসের কোন রাতে ফজরের আগে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়; কিন্তু সময় না থাকার কারণে গোসল করতে না পারে, তাহলে তায়াম্মুম করে রোজা রাখতে হবে তবে তার জন্য ফজরের আজান পর্যন্ত জেগে থাকা আবশ্যক নয় এ ক্ষেত্রে সে রোজা সহীহ হবে।

    কোন মহিলা রমজান মাসের কোন রাতে ফজরের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়; কিন্তু গোসল বা তায়াম্মুম কোনটাই করার সময় না থাকে, তাহলে তার ঐ দিনের রোজা সহীহ হবে।

    কোন মহিলা রমজান মাসে ফজর নামাযের পর বা দিনের বেলায় বা মাগরিবের আগে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়, সেদিন রোযা রাখা যাবে না; সেদিন রোযা রাখা হলে তা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

    রমজান মাসে হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হওয়া কোন মহিলা যদি গোসল করতে ভুলে যায় এবং তার একদিন বা কয়েকদিন পর তা মনে হয়, তাহলে সেসব রোযা সহীহ হবে।

    কোন মহিলা রমজান মাসের কোন রাতে ফজরের আগে যদি হায়েয বা নিফাস থেকে পাক হয়; কিন্তু যদি ইচ্ছা করে গোসল না করে থাকে এবং সে কারণে ফজরের আজানের সময় ঘনিয়ে আসে এবং তায়াম্মুমও না করে, তাহলে সে রোজা পূর্ণ করতে হবে এবং পরে তার কাযাও আাদায় করতে হবে; কিন্তু যদি অবহেলা না করে বরং সুযোগের (গোসলের পরিবেশ সৃষ্টির) অপেক্ষায় থাকে, তাহলে তার রোযা সহীহ হবে।

    বেশি বা মাঝারি পর্যায়ের ইসতিহাযায় আক্রান্ত মহিলা যদি গোসল না করে, তবুও তার রোযা সহীহ হবে।

    মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ করার কারণে গোসল না করে রোযা রাখা সহীহ হবে। এমনকি রোযা থাকা অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ করা হলেও অসুবিধা নেই, রোযা বাতিল হবে না।

    এমালে বা অনুরূপ কোন কাজের কারণে রোযা বাতিল হয়, যদিও তা নিরুপায় ও অসুস্থতার কারণে হয়ে থাকে।

    ইচ্ছা করে বমির কারণে রোযা বাতিল হয়, যদিও তা অতি সহজ ও অসুস্থতার কারণে হয়ে থাকে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত বমির কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।

    রাতে কোন কিছু খাওয়ার কারণে যদি দিনে বমি হবার সম্ভাবনা থাকে এবং তা খাবার কারণে দিনের বেলা অনিচ্ছকৃতভাবে বমি হলেও সে রোযা সহীহ হবে।

    বমি যদি প্রাকৃতিকভাবে আসে, তাহলে তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকা সত্বেও রোধ করা আবশ্যক নয়।

    মাছি (বা মশা) যদি গলার অনেক ভিতরে প্রবেশ করে যখন পেটের মধ্যে প্রবেশ করানো হলেও তা খাওয়া বলে পরিগণিত হয় না, তখন তা বের করা জরুরী নয় এবং ঐ রোযা সহীহ হবে; কিন্তু যদি অল্প ভিতরে প্রবেশ করে, তাহলে তা বের করা জরুরী, যদিও সেজন্য বমি করতে হয়; এবং তখন রোযা সহীহ হবে; যদি তা বের করা না হয় অথবা পরে বমির মাধ্যমে বের করা হয, তাহলে রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে; কিন্তু বমি করা কষ্টকর হলে বমি করতে হবে না।

    যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ঢেকুর তোলার কারণে কিছু বাইরে চলে আসবে এবং তা বমি বলে পরিগণিত হবে, তাহলে ইচ্ছাকরে ঢেকুর তোলা যাবে না; কিন্তু কেউ যদি তাতে নিশ্চিত না হয়, তাহলে ঢেকুর তোলাতে শরিয়তি বিধানে অসুবিধা নেই।

    অনিচ্ছকৃত ঢেকুর তোলার কারণে যদি কিছু বাইরে চলে আসে, তা বাইরে ফেলতে হবে; কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভিতরে চলে যায়, অসুবিধা নেই রোযা সহীহ হবে।

    রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহের বিশেষ আহকাম

    রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহের কোন কিছু যদি রোযাদার ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে, তাহলে রোযা বাতিল হয়ে যাবে, কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে অসুবিধা নেই; তবে জুনুব ব্যক্তির আহকাম ১৬০২ নং মাসআলায় বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু মাসআলা না জানার কারণে এবং এ ব্যাপারে তার দোষ না থাকার কারণে যদি কোন কাজ হয়ে থাকে যা রোযা ভঙ্গ করে, তাহলে রোযা সহীহ হবে; তবে পানাহার ও সঙ্গম করা তার ব্যতিক্রম, তার মাসআলা জেনে করুক বা না জেনে করুক রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

    গলার মধ্যে কোন কিছু জোর পূর্বক ঢালার কারণে রোযা বাতিল হবে না, কিন্তু পানাহার ও সঙ্গম করতে বাধ্য করা হলে রোযা ভঙ্গ হবে; অন্যান্য ক্ষেত্রে এহতিয়াতে ওয়াজিবের ভিত্তিতে রোযা বাতিল বলে পরিগণিত হবে।

    কোন কাজ বা কোথাও যাবার কারণে যদি রোজা ভঙ্গের কোন কাজ হয়ে থাকবে তা জানা থাকে, তাহলে সে কাজ করা যাবে না বা সেখানে যাওয়া যাবে না; যদি তা করা হয় এবং সে কারণে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ ঘটে, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে। গলায় কিছু প্রবেশ করার ব্যাপারেও একই হুকুম।

    Leave a Comment