রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা কী কী । রেওয়ামিল অসুবিধা লিখ । রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা কী কী । রেওয়ামিল অসুবিধা লিখ । রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর । রেওয়ামিল এর সীমাবদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা কী কী । রেওয়ামিল অসুবিধা লিখ । রেওয়ামিল সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর । রেওয়ামিল এর সীমাবদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

রেওয়ামিলের সীমাবদ্ধতা :-

আমরা দেখেছি রেওয়ামিলের উদ্দেশ্য হলো হিসাবগুলো লেখা ও এদের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই। ভুল মূলতঃ তিন ধরনের হতে পারে। যথা: প্রাথমিক হিসাব থেকে খতিয়ানে হিসাব লেখার ভুল, খতিয়ান থেকে রেওয়ামিলে হিসাব তোলার ভুল এবং যোগ বিয়োগের ভুল। এসব ভুল ধরা মোটামুটি সহজ এবং একটু সচেতন হলে এসব ভুল এড়ানো যায়। রেওয়ামিলের সুবিধা আলোচনা করলে দেখা যায় যে, এটা প্রস্তুত করা বিশেষ জরুরি কাজ। কিন্তু রেওয়ামিলের কিছু সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধাও রয়েছে।। এসব অসুবিধা বা সীমাবন্ধতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

১. রেওয়ামিল হিসাবের অংশ নয় :-

রেওয়ামিল কোনো হিসাব নয় বা হিসাবশাস্ত্রের কোনো অঙ্গও নয়। কারণ বিভিন্ন হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা প্রমাণ করার জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হলেও হিসাবরক্ষক যদি পূর্বেই হিসাবের বইগুলোতে লেখা লেনদেনের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারেন এবং এসব হিসাবের জের সরাসরি আর্থিক বিবরণীতে লেখেন, তাহলেও শুদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে রেওয়ামিল তৈরি না করলেও চলে।

২. সব ভুল রেওয়ামিলে ধরা পড়ে না :-

যদিও হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হয়, কিন্তু সব ভুল রেওয়ামিলে ধরা পড়ে না। রেওয়ামিলের দুদিকের যোগফল মিলে গেলেই বলা যাবে না হিসাব প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবে শুদ্ধ। নিচে যেসব ভুল রেওয়ামিলে ধরা পড়ে না সেগুলির উল্লেখ করা হলো।

ক. নীতিগত ভুল (Errors of principle) :-

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে কিছু নীতি আছে, যার মাধ্যমে হিসাবে ডেবিট-ক্রেডিট নির্ণয় করা হয়। এসব নীতিমালাকে না মেনে হিসাব রাখা হলে যে ভুল হয় তাকে নীতিগত ভুল ( Errors of principle) বলে।

এটা মূলত হিসাবরক্ষক কখনো হিসাবের বা লেনদেনের স্বরূপ না বোঝতে পেরে অনেক সময় এ ভুল করে থাকেন। হিসাবরক্ষক ইচ্ছে করেও এ ভুলে জড়াতে পারেন। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবেই এ ভুল হওয়া স্বাভাবিক। যেমন- একটা আসবারপত্র সামান্য মেরামত করা হলো। এটা নামিক হিসাব বলে খরচ হিসেবে মেরামত হিসাবে (Repairs account) ডেবিট হবে। এটা যদি বস্তুবাচক (Real Account) হিসাব ধরে আসবাবপত্র হিসাবে ডেবিট করা হয় তাহলে নীতিগত ভুল হবে।

কিন্তু এতে রেওয়ামিলের যোগফলে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না, অর্থাৎ যোগফল মিলে যাবে। আবার যদি রাজস্ব জাতীয় খরচ মূলধনী খরচ হিসেবে দেখানো হয় তাহলে এটাও নীতিগত ভুল হবে। আর উভয় খরচের দিক ডেবিট হওয়ায় রেওয়ামিল মিলে যাবে। এ ভুল ধরা পড়বে না। এমনিভাবে ব্যক্তিবাচক, বস্তুবাচক এবং নামিক হিসাব সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান না থাকলে নীতিগত ভুল হতে পারে যা রেওয়ামিলে ধরা পড়বে না।

খ. করণিক ভুল (Clerical errors) :-

লেনদেন হিসাবভুক্ত করার সময় বা লেখার সময় হিসাবরক্ষক কিছু ভুল করতে পারেন, একে করণিক ভুল বা হিসাব লেখার ভুল বলে।

এ ধরনের ভুল চার প্রকার হতে পারে। নিচে এগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো।

i. বাদ পড়ার ভুল (Errors of omission) :-

কোনো লেনদেন সংঘটিত হলেও জাবেদা বা খতিয়ানে আদৌ লেখা না হতে পারে। ফলে রেওয়ামিলে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। এভাবে কোনো লেনদেন হিসাবের বইতে লেখার সময় বাদ পড়লে বা আদৌ না লিখলে যে ভুল হয়, তাকে বাদ পড়ার ভুল বলে।

যেমন: সবুজ রায়হানের নিকট ৫,০০০ টাকার মাল ধারে বিক্রয় করল, কিন্তু ইহা বইতে লেখা হলো না। ১০,০০০ টাকার মাল কেনা হলো কিন্তু ইহা হিসাব বইতে লেখা হলো না। এসব কারণে রেওয়ামিলের কোনো দিকে টাকা লেখা হয়নি, ফলে রেওয়ামিল মিলে যাবে। সাধারণভাবে এ সমস্ত ভুল রেওয়ামিলে ধরা পড়বে না।

ii. লেখার ভুল বা কার্যমূলক ভুল (Errors of commission) :-

কোনো লেনদেনের মূল হিসাবটিই যদি ভুল অংকে লেখা হয়ে থাকে তাহলে যে ভুল হয় তাকে লেখার ভুল বলে।

মনে করুন, ক্রয় হিসেবে লেখার কথা ২,০০,০০০ টাকা, কিন্তু লেখা হয়েছে ৩,০০,০০০ টাকা। এতে ডেবিট জের ১,০০,০০০ টাকা বেশি হবে। অন্য দিকে প্রদেয় হিসেবে বা অন্য কোনো ক্রেডিট জের বিশিষ্ট হিসাবে ৩,০০,০০০ টাকার স্থলে ৪,০০,০০০ টাকা লেখা হলো অর্থাৎ‍ ১,০০,০০০ টাকা বেশি লেখা হলো। এতে রেওয়ামিল মিলে যাবে, কিন্তু ১,০০,০০০ টাকার একটা করে ভুল থেকে যাবে।

iii. পরিপূরক ভুল (Compensating errors) :-

হিসাবরক্ষকের অজ্ঞাতে একটি ভুল অন্য একটি ভুলের দ্বারা সংশোধিত হয়ে গেলে তাকে স্বয়ং সংশোধক বা পরিপূরক ভুল বলে।

মনে করুন, ক্রয় হিসাবে লেখার কথা ২,০০,০০০ টাকা কিন্তু লেখা হয়েছে ৩,০০,০০০ টাকা। এতে ডেবিট জের ১,০০,০০০ টাকা বেশি হবে। অন্য দিকে প্রদেয় হিসেবে বা অন্য কোনো ক্রেডিট জের বিশিষ্ট হিসাবে ৩,০০,০০০ টাকার স্থলে ৪,০০,০০০ টাকা লেখা হলো অর্থাৎ ১,০০,০০০ টাকা বেশি লেখা হলো। এতে রেওয়ামিল মিলে যাবে, কিন্তু দুজায়গায় ১,০০,০০০ টাকার একটা করে ভুল থেকে যাবে।

iv. বেদাখিলার ভুল (Errors of disposing) :-

হিসাবে প্রাথমিক বই (জাবেদা) থেকে খতিয়ানে তোলার সময় একটি হিসাবের পরিবর্তে অন্য একটি হিসাবের সঠিক দিকে একই টাকার অংক লেখা হলে যে ভুল হয়, তাকে বেদাখিলার ভুল বলে।

এতে রেওয়ামিল মিলে যাবে কিন্তু ভুল থেকে যাবে, যেমন: সালামের নিকট থেকে ১,০০০ টাকা পাওয়া গেল, কিন্তু এ ১,০০০ টাকা কালামের হিসাবের ক্রেডিট দিকে ভুলে লেখা হলো। এক্ষেত্রে রেওয়ামিল মিলে যাবে কিন্তু হিসাবে বড় একটা ভুল থেকে যাবে।

৩. রেওয়ামিল হিসাবের শুদ্ধতার অকাট্য প্রমাণ নয় :-

লেনদেন যখন সংঘটিত হয় তখন দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে উক্ত লেনদেনকে ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে দেখিয়ে একই অংকে লিপিবদ্ধ করা হয়। এর ফলে হিসাবগুলোর ডেবিট জের ও ক্রেডিট জেরের যোগফল সমান হয়ে থাকে।

এ থেকে ধারণা করা যায়, হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা মোটামুটি নিশ্চিত।

কিন্তু পূর্বোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখলাম মোট ৫ (পাঁচ) প্রকারের ভুল রেওয়ামিলের উভয় দিক মিলে গেলেও থেকে যেতে পারে। বুদ্ধিমত্তার সাথে বারবার হিসাব পরীক্ষা না করে বলা যায় না এসব ভুল থেকে রেওয়ামিল মুক্ত।

সুতরাং আমরা বলতে পারি, রেওয়ামিল হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতার মোটামুটি পরিচায়ক কিন্তু রেওয়ামিলের সমতা হিসাবসমূহের গাণিতিক শুদ্ধতার একমাত্র অকাট্য প্রমাণ নয়।

Leave a Comment