রাজা হাম্বুরাবি বিখ্যাত কেন,বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘হাম্মুরাবি’র উল্লেখ আছে

Hammurabi বাংলায়, হাম্মুরাবি (আনু. 1810 – আনু. 1750 BC) ছিলেন প্রথম ব্যাবলনিয়ান রাজবংশের আমরাইত গোত্রের ষষ্ঠ শাসক। তার পিতা সিন-মুবাল্লিত এর মৃত্যুর পর আঠারো বছর বয়সে তিনি ব্যাবিলন নগর রাষ্ট্রের সিংহাসনে বসেছিলেন। এই নগররাষ্ট্রের প্রথম রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা হিসেবে হাম্মুরাবি যখন দায়িত্ব নেন,

ব্যাবিলন তখন ছোট্ট একটি দেশ। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে এ রকম আরো অনেকগুলো নগর রাষ্ট্র ছিল, আর সেই সব রাজ্যের নিজেদের মধ্যেও লড়াই ছিল। তবে তার পূর্বপুরুষদের সময়ই বোরসিপ্পা, কিশ এবং সিপ্পার পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে ব্যাবিলনিয়ানরা আঞ্চলিক রাজশক্তি হয়ে ওঠার পথে খানিকটা এগিয়েছিল।

শামসি-আদাদ, লারসা, এশনুনা আর এলাম-এর মতো আরো কয়েকটি শক্তিশালী প্রতিবেশী রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতে প্রকৃতপক্ষে হাম্মুরাবিই ব্যাবিলনিয়ান নগর রাষ্ট্রকে ব্যাবিলনিয়ান সাম্রাজ্যে রূপান্তর করেছিলেন। সে অর্থে তাকেই বলা যায় ব্যাবিলনিয়ান সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট।

প্রাচীন ইতিহাসে হাম্বুরাবি, হাম্বুরাবি আইন প্রবর্তনের জন্য সুপরিচিত। তিনি নিজে দাবী করেন যে এই আইন তিনি সূর্য় দেব শামাশের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। আধুনিক আইনের তুলনায় হাম্বুরাবির প্রবর্তিত আইন বেমানান মনে হলেও তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থার বিবেচনায় এবং মানব সমাজে প্রথম লিখিত আইন হিসাবে এর গুরুত্ব অনেক। তৌরাতে বর্ণিত মূসা (আঃ) এর প্রবর্তিত আইনের সাথে এর অনেক মিল রয়েছে।

তাঁর রাজত্বকাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯২ থেকে ১৭৫০ অব্দ পর্যন্ত। প্রথম কয়েক দশক শান্তিপূর্ণভাবে রাজত্ব করেন। তারপর তিনি মনোনিবেশ করেন সাম্রাজ্য বিস্তারে। মেসোপটেমিয়ার রাজাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদকে সুকৌশলে তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি তাদের মধ্যে প্রথমে বন্ধুত্ব পাতিয়ে জোট kalerkanthoবেঁধে অন্যান্য শত্রু রাষ্ট্র দখল করেন। তারপর তিনি আকস্মিকভাবে নিজের সাম্প্রতিক মিত্র নগররাষ্ট্রের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তা অধিকার করে নেন।

এভাবে ক্ষমতা ও কূটবুদ্ধির প্রয়োগের ফলে সমগ্র মেসোপটেমিয়া তাঁর পদানত হয় এবং এতে তাঁর শাসনাধীনে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠে। সবার ঐক্যবদ্ধ শক্তির ফলে সেই সময় তাঁর সামরিক জোটের সেনাসংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজারে। তিনি নিজেও ছিলেন বীরযোদ্ধা।

অনেক যুদ্ধ তিনি নিজেই পরিচালনা করেছেন। তবে তিনি যুদ্ধ থেকে আইন প্রণেতা হিসেবে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। হাম্মুরাবির আইন নামে বিখ্যাত আইন সংকলনই পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে তাঁকে।

১৯০১ সালে এলামিদের প্রাচীন রাজধানী সুসা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে অমূল্য এই সংকলন। মোট ১২টি পাথরের টুকরায় খোদাই করে লেখা ২৮২টি আইনের এই সংকলন পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন লিখিত আইন সংকলন হিসেবে পরিচিত।

ব্যাবিলনের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আক্কাডিয়ান ভাষায় এবং কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা হয়েছিল এই আইনগুলো। বর্তমানে প্যারিসের ল্যুভ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো।

হাম্মুরাবি একজন প্রজাবৎসল রাজা ছিলেন। তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ব্যাবিলনের দক্ষিণে মরু অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একটি বৃহৎ খাল খনন করে জনগণের জলকষ্ট দূর করা। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র Samsu Iluna সিংহাসনে বসেন।

Leave a Comment