প্রশ্ন সমাধান: মুতাজিলাদের মূলনীতিসমূহ আলোচনা কর, মুতাজিলাদের মৌলিক নীতিসমূহ আলোচনা কর, মুতাজিলাদের মূলনীতিসমূহ কী কী?, মুতাজিলাদের মৌলিক নীতিসমূহ বর্ণনা কর,মুতাজিলাদের মৌলিক নীতিসমূহ ব্যাখ্যা কর
উত্তর৷ ভূমিকা : মুতাজিলারা ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ যুক্তিবাদী সম্প্রদায়। তারা বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাকে জ্ঞানের যথার্থ উৎস হিসেবে মনে করতেন। তারা মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাহায্যে কুরআন ও হাদিসের জীবন দর্শনে বিচার করেন। তারাই ইসলামে স্বাধীন চিন্তাবিদ হিসেবে পরিগণিত হয়। পৌত্তলিকতার প্রভাব থেকে ইসলামকে রক্ষা করা এবং খোদার পবিত্র বাণী প্রচার করার জন্য তারা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
মুতাজিলা সম্প্রদায় : মুতাজিলা শব্দের অর্থ দল ত্যাগকারী। কাদারিয়া চিন্তা নিয়ে এবং খারিজিদের উগ্র ধর্মান্ধতা ও ধর্ম শিথিল মুরজিয়াদের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মুতাজিলা সম্প্রদায়ের উদ্ভব। মনীষী ওয়াসিল বিন আতা এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা, যিনি ছিলেন মনীষী হাসান আল বসরীর শিষ্য ।
মুতাজিলাদের মূলনীতি : মুতাজিলা মতবাদ পাঁচটি মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাই তাদের এই পাঁচটি মৌলিক নীতি গ্রহণ করতে হয়। নিম্নে এ পাঁচটি মূলনীতি আলোচনা করা হলো :
১. আল্লাহর একত্ব : আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। আল্লাহর প্রতি এ ধরনের বিশ্বাসকেই বলা হয় আল্লাহর একত্ব। আল্লাহর গুণাবলি তাঁর সত্তা থেকে অভিন্ন। কিন্তু মুতাজিলারাও আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নিরানব্বইটি গুণের উল্লেখ আছে। কিন্তু মুতাজিলারা মনে করেন, আল্লাহর সত্তা ছাড়া আর কোন গুণ থাকতে পারে না। তাই মুতাজিলারা বলেন, আল্লাহ্ কারো দ্বারা সৃষ্ট হন নি এবং তাঁর কোন অংশীদারও নেই।
২. সনাতন চিন্তাগোষ্ঠী মনে করেন, আল্লাহ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। তিনি ইচ্ছে মতো কোন কাজ ভালো ও কোন কাজ মন্দ বা কোনটা ন্যায় বা কোনটা অন্যায় তা করতে পারেন। আল্লাহর ন্যায়পরায়ণ হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তাদের এ মতবাদকে সমর্থন করতে পারেন নি। তারা বলেন যে, বুদ্ধি বা প্রজ্ঞার মাধ্যমে সৎ-অসৎ, ভালো-মন্দ এবং তাদের মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তারা কান্টের ন্যায় নৈতিকতাকে ধর্মতত্ত্বের প্রভাবমুক্ত করেন। মুতাজিলা চিন্তাবিদ আন নাজ্জামের মতে, আল্লাহ্ ইহকাল বা পরকালে কোন সৃষ্ট জীবের প্রতি এমন কিছু করতে পারেন না, যা সৃষ্টজীবের অমঙ্গল হতে পারে। মুতাজিলারা আল্লাহর ন্যায়নীতির সমর্থনে কুরআনের বাণীর উদ্ধৃতি দেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অন্যায় করেন না।” (সূরা ২২, আয়াত ১০)।
আরো ও সাজেশন:-
৩. পুরস্কারের অঙ্গীকার ও শাস্তির ভীতি : এ মতবাদ ও আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা উভয়ই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আল্লাহ ন্যায়বিচারক। তিনি পরকালে ধার্মিকদের পুরস্কার এবং পাপীদের শাস্তি প্রদান করবেন, পবিত্র কুরআনে এটা বর্ণিত আছে। মুতাজিলারাও বলেন, যারা সৎ তারা পুরস্কৃত হবেন এবং যারা অসৎ তারা শাস্তি পাবেন। আশারীয়গণ বিশ্বাস করেন, পুরস্কার এবং শাস্তি উভয়ই আল্লাহর দান। তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি এবং যাকে ইচ্ছা পুরস্কার দিতে পারেন। মুতাজিলারা বলেন, আল্লাহ তার বাণীকে কখনো পরিবর্তন করতে পারেন না, যদি করেন তা হলে
তার ন্যায়নিষ্ঠতা নিয়ে সংশয় দেখা দিবে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, “আল্লাহর বাণীর পরিবর্তন নেই।” (সূরা ১০, আয়াত ৬৪)
[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]
৪. বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মধ্যবর্তী অবস্থান : মুতাজিলাগণ বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মধ্যবর্তী অবস্থা গ্রহণ করে মুতাজিলা নাম ধারণ করেন। তারা বলেন, মানুষ যখন অত্যন্ত বেশি অপরাধ করেন তখন তার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকে না। তখন তাকে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস স্পর্শ করতে পারে না। তখন সে এ দুয়ের মধ্যবর্তী অবস্থা অবলম্বন করে।
৫. সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ : সনাতনী চিন্তাগোষ্ঠীর মতো মুতাজিলারাও সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধকে সমর্থন করেন। তারা বলেন যে, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এটা অবশ্যই পালনীয়। মুতাজিলা মতবাদসমূহ.ইসলামি ভাবধারার সম্পূর্ণ বিপরীতে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের মাধ্যমেও প্রচার চালায়। কুরআন সৃষ্ট মতবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আল মামুন দেশের সমস্ত কাজির নিকট নির্দেশনামা জারি করেন। তিনিই মুতাজিলাদের পতন ঘটান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত পাঁচটি মূলনীতি মুতাজিলাদের মেনে চলতে হয়। মুতাজিলারা বলেন, বুদ্ধির মাধ্যমেই ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসৎ এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তারা আরো বলেন, পরকালে ধার্মিকরা পুরস্কার এবং পাপীরা শাস্তি পাবেন। সুতরাং তাদের মূলনীতিকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার
করা যায় না।
প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com
আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও
- খিলাফত রাষ্ট্র ও আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য । খিলাফত রাষ্ট্র vs আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্র পার্থক্য
- What do you near by Business communication?, Explain the concept of business communication
- Describe the barriers to effective communication in business organization
- সমাজদর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের সম্পর্ক, সমাজদর্শ ও রাষ্ট্রদর্শনের সম্পর্ক, Relation between Social Philosophy & Political Philosophy
- দর্শনের বিষয়বস্তুকে প্রধানত কয় ভাগে ভাগ করা যায়?, দর্শনের বিষয়বস্তু হিসেবে অধিবিদ্যা আলোচনা করুন।
- দর্শনের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা কর