মুতাজিলাদের মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ কর,মুতাজিলাদের মতবাদ বর্ণনা কর, মুতাজিলাদের মতবাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর

প্রশ্ন সমাধান: মুতাজিলাদের মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ কর,মুতাজিলাদের মতবাদ বর্ণনা কর, মুতাজিলাদের মতবাদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর, মুতাজিলা সম্প্রদায়ের মতবাদসমূহ আলোচনা কর, মুতাজিলা সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা কর, মুতাজিলাদের মতবাদসমূহ ব্যাখ্যা কর

ভূমিকা : মুসলিম দর্শন গ্রিক দর্শন দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হয়েছে। আর গ্রিক দর্শনের প্রভাবে মুসলিম দর্শনে যেসব সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছে তাদের মধ্যে মুতাজিলা সম্প্রদায় অন্যতম। মুতাজিলা সম্প্রদায় ছিল খারিজি, মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায়ের পরবর্তী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায় সমকালীন যুক্তিবাদী ভাবধারাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে এ সম্প্রদায় একটি সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবাদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত। ওয়াসিল বিন আতা.ছিলেন এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা।


মুতাজিলাদের মতবাদসমূহ : মুতাজিলারা ইসলামের মৌলিক সমস্যাসমূহকে বুদ্ধির আলোকে বিচার ও বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। তাদের আলোচনাকে শিরোনামভুক্ত করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পাওয়া যায় :


১.আল্লাহর গুণাবলির স্বরূপ।
২.কুরআনের নিত্যতা।
৩.মানুষের স্বাধীনতা।
৪.দিব্যদর্শন।
৫.শুভ ও অশুভ।
৬.জগৎ সৃষ্টি।


১. আল্লাহর গুণাবলির স্বরূপ : ইসলামে আল্লাহর একত্বের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কালেমার প্রথম অংশ হলো ‘নেই কোন ইলাহা আল্লাহ ছাড়া’। অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাঁকে কোনকিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। আর তাই ইসলামে দ্বৈতবাদের কোন স্থান নেই। মুতাজিলারা আল্লাহর একত্বকে বুদ্ধির মাধ্যমে প্রমাণ করতে চান। তাঁদের মতে, আল্লাহর গুণাবলি পৃথক কোন সত্তা নয়। তাঁর সারসত্তা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তাঁর কোন পৃথক গুণের প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ যদি তাঁর সারসত্তা হতে পৃথক হয়, তাহলে এ গুণাবলি সহনিত্য বা অনিত্য। মুতাজিলারা বলেছেন, আল্লাহর সত্তা হতে তার গুণাবলি পৃথক করা সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলি অভিন্ন।


আরো ও সাজেশন:-

২. কুরআনের নিত্যতা : মুতাজিলারা আল্লাহর গুণাবলি নিত্যতার যেমন অস্বীকার করেন, তেমনি কুরআনের নিত্যতাকে অস্বীকার করেন। সাধারণ মুসলমানগণ বিশ্বাস করেন যে, কুরআন অন্যান্য পার্থিব বস্তুর মতো দেশকালে সৃষ্ট সাধারণ বস্তু নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে জিবরাঈল (আ) এর মাধ্যমে মহানবী (স) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় এটি সারা জগতের রবের অবতীর্ণ। জিবরাঈল (আ) এটি অবতীর্ণ করেছেন।” [২৬ঃ ১৯২, ১৯৩] তাই কুরআন কোন বিশেষ সময়ে সৃষ্ট কালিক ব্যাপার নয়। এটি অবতীর্ণ হওয়ার আগে লাহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। তাই এটি অনাদি ও অনন্ত। কিন্তু মুতাজিলারা বলেছেন, সমস্যাটি আল্লাহর গুণাবলির নিত্যতা সমস্যাটির অনুরূপ। কেননা আল্লাহ যদি একমাত্র নিত্য হন, তবে আর কিছু তার সহনিত্য হতে পারে না। আর তাই কুরআনের নিত্যতা আল্লাহর নিত্যতা ধারণায় পরিপন্থী।


৩. মানুষের স্বাধীনতা : মুতাজিলারা নিজেদেরকে আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতার ধারক বলে পরিচয় দেয়, আর আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতাকে প্রমাণের জন্য তারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেন। মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তারা কাদারিয়াদের মতবাদকে সমর্থন করে তাদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটলেও জাবারিয়াদের মতকে পুরোপুরি সমর্থন করেন না। তারা বলেছেন, আমাদের ইচ্ছার যে স্বাধীনতা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ স্বাধীনতা নিরঙ্কুশ নয়। আবার আমরা পূর্বনির্ধারিত অদৃষ্টের দ্বারা পরিচালিত হই না। তাদের এ মধ্যবর্তী অবস্থান সৈয়দ আব্দুল হাই তাঁর ‘Muslim Philosophy’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটে তুলেছেন। তাঁর মতে, জীবন, মৃত্যু, স্বাস্থ্যব্যাধি ও অন্যান্য বহিস্থ উত্থানপতন আল্লাহর দেয়া শক্তি বা কদর থেকে আসে। আর এ ব্যাপারে মানুষকে দায়ী করা চলে না। আর এজন্য সে শাস্তিও পাবে না। মানুষ এ জগতে স্বাধীন হলেও পরজগতে স্বাধীন নয়।

[ বি:দ্র: নমুনা উত্তর দাতা: রাকিব হোসেন সজল ©সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত (বাংলা নিউজ এক্সপ্রেস)]


৪. দিব্যদর্শন : সাধারণ মুসলমানরা বা রক্ষণশীল মুসলমানদের মতে, পরকালে আল্লাহর দর্শন ঘটবে। তাদের মতে, যারা বেহেশতে দাখিল হবেন তাদের জন্য সবচেয়ে খুশির খবর হলো যে, তারা আল্লাহর দর্শন লাভ করবেন। তবে মুতাজিলারা সাধারণ মুসলমানদের এ ধরনের ধারণাকে বুদ্ধির দ্বারা বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পান। তারা বলেছেন, আল্লাহর দর্শন এ ইঙ্গিত দেয় যে, একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব এবং সময়ে এ আল্লাহর অবস্থান থাকবে। আর এটি আল্লাহর ধারণার বিপরীত। কেননা আল্লাহ নিরাকার। তাছাড়া আল্লাহর অস্তিত্বকে দেশ ও কালের ছাঁচে ফেলা যায় না। কিন্তু আল্লাহ অসীম । তারা বলেছেন, আল্লাহর দর্শন তাই সম্ভব নয়, এমনকি বেহেশতেও নয়। তারা কুরআনের উদ্ধৃতি দেন, “দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্যই তিনি দৃষ্টিসমূহ পেতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী ও সুবিজ্ঞ।” (৬ঃ১০৩)


৫. ভ ও অশুভ : আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তাই তিনি মন্দ বা অকল্যাণের কর্তা হতে পারেন না। কিন্তু আমরা যে, অশুভ অকল্যাণ দেখতে পাই তার জন্য কে দায়ী। এ সম্পর্কে মুতাজিলাদের মধ্যে দু’ধরনের মত পাওয়া যায়। প্রাথমিক মুতাজিলারা মনে করেন যে, অকল্যাণ ও অনিষ্টের মূল কারণ হলো ঐশী ন্যায়পরায়ণতার অভাব নয়, বরং এ জগতে যা কিছু ঘটে তা সৃষ্ট জীবের জন্য মঙ্গলজনক।
কিন্তু পরবর্তীতে মুতাজিলারা ভিন্নমত দেন। তাঁদের মতে, আল্লাহ তাঁর প্রকৃতির বিরোধী কোনকিছু করে না। শুধু তাই নয়, বরং তিনি তাঁর সৃষ্ট জীবের প্রতি অকল্যাণকর কোনকিছু করতে পারেন না। আর তাই জগতে সংঘটিত অকল্যাণ ও অনিষ্ঠের জন্য তিনি দায়ী নন।


৬. জগৎ সৃষ্টি : জগতের সৃষ্টি সম্পর্কীয় মতবাদ মুতাজিলাদের মধ্যে তাদের মতবাদের পরিণত পর্যায়ে পরিলক্ষিত হয়। তাদের সৃষ্টি সম্পর্কীয় মতবাদে গ্রিক দর্শনের সাথে কুরআনের সমন্বয়ের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কুরআনে বলা হয়েছে যে, জগৎ এক বিশেষ সময়ে সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছেন, জগৎ চিরন্তন। মুতাজিলারা এ উভয় মতের সমন্বয় করতে গিয়ে বলেছেন, জগৎ সৃষ্ট আবার চিরন্তন। তারা বলেছেন, জগৎ প্রথমে নিশ্চল ছিল, পরে খোদা নিজ শক্তিপ্রয়োগে জগৎকে গতিশীল করেন। আর তখন হতে জগৎ দেশকালের আঁধারে আবর্তিত হতে থাকে। পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা বুদ্ধির মাধ্যমে ইসলামের বিষয়গুলো বিচার ও বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর ন্যায়পরাণয়তা ও তাঁর ক্ষমতার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা তারা করেছেন। এর ভিত্তিতে তারা বলেছেন, আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা আমাদের কাজের কারণ। আর এর উপর ভিত্তি করে বলতে পারি যে, আমরা আমাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত হব এবং মন্দ কাজের জন্য হব তিরস্কৃত। মোটকথা, মুতাজিলারা ইসলামের মৌলিক সমস্যা, আল্লাহর গুণাবলি, কুরআনের নিত্যতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা, দিব্যদর্শন, শুভ ও অশুভ, জগৎ সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক মত দেন।

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুলোতে ও

Leave a Comment